বাত: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে মানবদেহে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তথা ইমিউন সিস্টেম। শরীরকে পাহারা দেওয়া এর কাজ। তবে কখনো এই ইমিউন সিস্টেমই শরীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তখন শরীরের গিঁট, মাংসপেশিসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা হয়।
অনেকের ধারণা, বাতজাতীয় রোগগুলো শুধু বৃদ্ধকালে হবে। এটা ভুল। শিশু থেকে ৬০-৭৫ বছর বয়সী মানুষের বাত হতে পারে।
কারণ
l এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি ঠিক কী কারণে ইমিউন সিস্টেম শরীরকে উল্টো আক্রমণ করে বসে। আবার কারা এ বাতে আক্রান্ত হবেন সেটাও আগাম বলা যায় না। তবে কিছু কারণ বের হয়েছে অনেক দিনের গবেষণায়।
l ১০-২০ শতাংশ বাত বংশগত। মা-বাবা অথবা রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়ের থাকলে সন্তানদেরও আশঙ্কা থাকে।
l বিশেষ কিছু খাবার বা বিভিন্ন রোগে বিপাকজনিত কিছু জটিলতার কারণে বাত হতে পারে। যেমন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে গাউট বলে এক ধরনের বাত হয়। থায়াজাইড, এসপিরিন, পাইরাজিনামাইড ইত্যাদি ওষুধে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ে। রেনাল ফেইলিওর, হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম রোগেও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে বাত হতে পারে।
l হরমোনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, পরিবেশগত কারণ থাকতে পারে। অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা।
l মধ্যবয়সী নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া।
লক্ষণ
l সাধারণ লক্ষণ হলো ব্যথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জয়েন্ট ফুলে যায়। হাঁটু, মেরুদণ্ড ইত্যাদি বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত জয়েন্ট লালচে হতে পারে।
l রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে হাতের ছোট অস্থিসন্ধিগুলো আক্রান্ত হয় বেশি। এনকাইলোজিং স্পন্ডালাইটিসে আক্রান্ত হয় মেরুদণ্ড। যার ব্যথা হয় কোমর বা ঘাড়ে।
l আবার ৭০ ভাগ বাতের ব্যথা শুরু হয় পায়ের বুড়ো আঙুল থেকে।
l অন্যান্য লক্ষণে আছে—জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, হাড় ও জোড়ার আকারে পরিবর্তন এমনকি পঙ্গুত্ব। কিছু রোগী রক্তশূন্যতায়ও ভুগতে পারে।
পরীক্ষা
রক্তের রুটিন পরীক্ষা, বিশেষ অ্যান্টিবডি ও ফ্যাক্টর, এক্স-রে, অস্থিসন্ধির সাইনোভিয়াল ফ্লুইড (রস) পরীক্ষা, রিউমাটোলজি আল্ট্রাসাউন্ড বা মাসকুলোস্কেলিটাল আল্ট্রাসনোগ্রাম।
করণীয়
নিয়মিত ব্যায়াম, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এমন খাবার বর্জন বা কমানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে না থাকা, শিরদাঁড়ায় চাপ পড়ে এমন কাজ না করা, পিঁড়ি, মোড়া বা মেঝেতে না বসা, শক্ত ও সমান বিছানায় শোয়া, বেশি ওজন বহন না করা। এ ছাড়া সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি চালিয়ে গেলে ভালো। আবার উঁচু হিলের জুতাও বাদ দিতে হবে। ফ্ল্যাট প্যানের পরিবর্তে উঁচু কমোড ব্যবহার করতেও বলেন চিকিৎসকরা।
ইউরিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন কলিজা, মগজ, বুকের মাংস, গুর্দা, সামুদ্রিক মাছ, মাছের ডিম, হাঁসের মাংস, ডাল, ছোলা, শিম, ফুলকপি ইত্যাদিসহ উচ্চ শর্করা ও কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।
নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া।
আক্রান্ত স্থানে নির্দেশমতো গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসা
উপসর্গ দমাতে ব্যবহার করা হয় ব্যথানাশক ওষুধ। তবে কোন রোগে কোন ধরনের, কোন মাত্রার ব্যথার ওষুধ দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করবেন চিকিৎসক। এজন্য নিজে নিজে ব্যথার ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কোনো কোনো রোগীকে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’ জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ রয়েছে, যা রোগটিকে ভেতর থেকে বাধা দেয়। সম্প্রতি বাত রোগের বিশেষ কিছু উন্নত ওষুধ বেরিয়েছে, যাকে বলা হয় বায়োলজিকস। এগুলো কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও এর কোনো কোনোটি এখন বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে। বাতের ব্যথা সারানোর জন্য বাজারে বিভিন্ন চৌম্বকীয় পাথর বসানো চেইন বা ব্রেসলেটের ব্যবসা জমজমাট হলেও এসবের ভিত্তি নেই।
২৫ মার্চ, ২০২৪