শামসুল হুদা
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাদের সমবায় আন্দোলন হবে সাধারণ মানুষের যৌথ আন্দোলন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু সমবায়কে সরকারি দপ্তর বা অধিদপ্তরের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেননি। বরং তিনি এটিকে কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এক জায়গায় বলেছেন, সমবায় আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণাধীন হবে না। সমবায় হবে সমবায়ীদের। সমবায়ীরাই এর নেতৃত্ব দেবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে। বঙ্গবন্ধু এটাও বলেছিলেন যে, দুর্নীতিবাজ, সমাজের এলিট শ্রেণি এবং বড় কৃষকরা যেন সমবায়ের মধ্যে ঢুকতে না পারে। বড় কৃষকরা যদি সমবায়ের মধ্যে ঢোকে তাহলে প্রান্তিক কৃষকরা আরও প্রান্তিক হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমবায় ছিল প্রান্তিক মানুষের জন্য, ছিল দরিদ্র কৃষকের জন্য। বাংলাদেশের সমবায় আইন সংশোধনের বিষয়ে আমি কয়েকটি সুপারিশের কথা বলব। একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ থাকবে কিন্তু নিবন্ধনের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কথাটি যুক্ত হবে না। নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আইন থেকে বাদ দিতে হবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাজ থাকবে সমবায়ের নিবন্ধন করা এবং এর জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা থাকবে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ শুধু নিবন্ধনের বিষয়টি দেখবেন। যাতে সমবায়ীরা অতি সহজে নিবন্ধন পেতে পারেন। কৃষক-জেলে-তাঁতি-মৎস্যজীবী বা অন্য কোনো প্রান্তিক গোষ্ঠী, পাহাড়ের আদিবাসী বা জুমচাষিরা যে কেউ সমবায়ের জন্য নিবন্ধন পেতে পারেন। নিবন্ধন হতে হবে সর্বোচ্চ সহজ পদ্ধতিতে। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের বাইরে থেকে এমন একটি নিবন্ধন কমিশন গঠন জরুরি যেটা হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এরকম স্বাধীন কমিশন আমাদের রয়েছে। মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তথ্য কমিশন রয়েছে। সুতরাং এরকমই একটি স্বাধীন কমিশন হতে পারে ‘সমবায় কমিশন’। সেই কমিশনের প্রধান একজন সরকারি কর্মকর্তা হবেন এমন কোনো কথা নেই। কমিশনের চেয়ারম্যান এমন ব্যক্তি হতে হবে যিনি সমবায়কে বোঝেন, সমবায় সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন। কমিশনের মধ্যে সমবায়ীদের প্রতিনিধি থাকতে হবে। নারী সমবায়ীদের প্রতিনিধি এবং আদিবাসী সমবায়ীদের প্রতিনিধি থাকতে হবে। কমিশনের একটি কাজ হবে সমবায়ীদের গাইড করা ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। সরকারি ঋণ এবং সরকারের অনুদান এটা কোনোভাবেই নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকার বিষয় নয়। সরকারের ঋণ এবং অনুদান সরাসরি সমবায়ে যাওয়া উচিত নয়। সরকার অনুদান ও ঋণ দিতে চাইলে কৃষি ব্যাংকে দিতে পারে। অথবা সমবায়ের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক থাকতে পারে। অত্যন্ত সহজ শর্তে, কম সুদে বা বিনা সুদে সমবায়ীদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩
X