শিক্ষা অফিসার জাহেরের ঘুষ বাণিজ্য
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আবু জাহেরের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও এক শিক্ষককে যৌন হয়রানির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ডিপিএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২১ জন শিক্ষকের বকেয়া বিল আদায় করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতি ২১ হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাহের।  সূত্র জানায়, সুবর্ণচর উপজেলা থেকে ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) প্রশিক্ষণে বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের ২১ জন শিক্ষকের উচ্চতর গ্রেডে অর্থাৎ ডিপিএড স্কেলে বেতন নির্ধারণের পর তাদের বকেয়া বিল বাকি ছিল। এসব শিক্ষকের বকেয়া প্রাপ্তির জন্য একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ নভেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু জাহেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি তাকে জানান। আবু জাহের বিষয়টি জেনে বকেয়া বিল পাস করার আশ্বাস দেন। তবে বিল পেতে হলে সবাইকে ৯ হাজার টাকা করে ঘুষ দেওয়ার কথা বলেন। অগ্রিম দেড় হাজার টাকা করে দিলে তিনি বিলটি উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে পাঠাবেন বলেও জানান। তার দাবি অনুযায়ী ২১ জন শিক্ষকের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে তুলে সর্বমোট ৩১ হাজার ৫০০ টাকা আবু জাহেরকে দেওয়া হয়। ঘুষের টাকা হাতে পেয়ে গত ২৭ নভেম্বর তিনি বিলটি উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে পাঠান। সোনালী ব্যাংকের খাসের হাট শাখায় ৯ জনের এবং হারিছ চৌধুরী বাজার শাখায় ১২ জনের বিল উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস যাচাই করে দেখতে পায় অতিরিক্ত বিল দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ যে তারিখ থেকে শিক্ষকরা বকেয়া পাওয়ার কথা তার থেকেও পেছনের তারিখ ধরা হয়েছে। তখন ব্যাংক থেকে বিলটি ফেরত পাঠানো হয়। পরে শিক্ষকরা আবু জাহেরের সঙ্গে দেখা করলে তিনি ৯ হাজার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ৫ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। তাদের আশ্বাসের ভিত্তিতে বিলটি সংশোধন করে পুনরায় হিসাব রক্ষণ অফিসে পাঠান জাহের। গত ২৬ ডিসেম্বর ২১ শিক্ষকের একাউন্টে বকেয়া বিল জমা হলে ঘুষের বাকি টাকা পরিশোধের তাড়া দেন জাহের। ২৯ ডিসেম্বর সবাইকে নির্বাচনের ট্রেনিংয়ের দিন টাকাগুলো নিয়ে আসার জন্য বলেন। ভুক্তভোগী কয়েকজন শিক্ষক জানান, গত ২৯ জানুয়ারি চরবাটা সৈকত কলেজে নির্বাচনের প্রশিক্ষণের দিন কয়েকজন শিক্ষক রুমে রুমে গিয়ে ঘুষের বাকি ৪ হাজার টাকা করে আদায় করে নেন। ৩০ ডিসেম্বর উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু জাহেরকে ওই টাকাগুলো দেওয়া হয়। ঘুষের এসব টাকা জাহের ও নাছিম ফারুকী নামে আরেকজন শিক্ষক নেতা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ কালবেলার হাতে রয়েছে।
৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

৭ মাস ‘অনুপস্থিত’ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার নাজমিন সুলতানা গত সাত মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী হাজিরা খাতার হিসাব অনুযায়ী, সর্বশেষ গত জুন মাসের ৬ তারিখে তিনি অফিস করেছিলেন। এরপর আর অফিসে আসেননি।  একাডেমিক সুপারভাইজারের দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারণে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে একাডেমিক সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গেলে একাডেমিক সুপারভাইজার নাজমিন সুলতানার দেখা মেলেনি। অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক আবুল বশর জানান, নাজমিন সুলতানা অসুস্থ থাকায় দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারী জানান, নাজমিন সুলতানা ৬-৭ মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এর আগেও মাসে এক-দুই দিন অথবা দুই মাসে একবার ঢাকা থেকে সোনাগাজীতে আসতেন। শিক্ষা অফিসে এসেই উপস্থিতির হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দিনগুলোতে স্বাক্ষর করেন। এমনভাবে স্বাক্ষর করেন যেন তিনি মাসে একদিনও অনুপস্থিত থাকেন না। হাজিরা খাতা দেখলে মনে হবে তিনি প্রতিদিন উপস্থিত থাকেন। এটা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারও জানেন। শিক্ষা অফিসার সব জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে একাডেমিক সুপারভাইজার নাজমিন সুলতানার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।  উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল আমিন বলেন, একাডেমিক সুপারভাইজার নাজমিন সুলতানা অসুস্থ থাকায় দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। আমাকে মৌখিকভাবে শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। লিখিতভাবে কোনো ছুটি নেননি। গত ডিসেম্বর মাসে একদিন সোনাগাজী এসেছিলেন। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টা জানিয়েছি। জেলা শিক্ষা অফিসার বিষয়টা সম্পর্কে জানেন। জেলা শিক্ষা অফিসার শফি উল্লাহ জানান, একাডেমিক সুপারভাইজার নাজমিন সুলতানা ছুটি না নিয়ে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিছুদিন আগে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটির আবেদন করেছে। ছুটি মঞ্জুর হয়েছে কিনা জানি না। একাডেমিক সুপারভাইজার না থাকায় সোনাগাজী মাধ্যমিক শিক্ষার কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে।  উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, আমি সোনাগাজীতে এক বছরের বেশি সময় ধরে আছি। কিন্তু একাডেমিক সুপারভাইজার নাজমিন সুলতানাকে কখনো দেখিনি। একাডেমিক  সুপারভাইজারের অনুপস্থিতির কারণে এ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলেছি একাডেমিক সুপারভাইজারের অনুপস্থিতির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবগত করার জন্য। প্রয়োজনে আমিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাব।
২৬ জানুয়ারি, ২০২৪
X