যমুনার বুকে দৃশ্যমান বঙ্গবন্ধু রেলসেতু
যমুনার বুকে পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে এ সেতুর পুরো ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সুপার স্ট্রাকচার পুরোই দৃশ্যমান হয়েছে। চলছে এডজাস্টমেন্টের কাজ। তবে উভয়পাশের স্টেশন নির্মাণ, স্লিপারবিহীন রেলপথ স্থাপনসহ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। রেলসেতুতে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণও শেষের দিকে। আগামী ডিসেম্বরেই সেতুটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।  সোমবার (৬ মে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।  ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেনচার। ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেনচার। এ ছাড়া সেতুর উভয়প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের প্রায় কর্মীরা নিয়োজিত আছেন।  রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে যমুনার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এ সেতুটি ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত সূচিত করবে। ঢাকার সাথে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে সেটা আর থাকবে না। নির্মাণের পর সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহন খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজেই ঢাকাসহ সারা দেশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।  বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লি. এর সাব স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম কালবেলাকে বলেন, সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে সবকটি বসানো হয়েছে। প্রতি দুটি পিলারের মাঝখানে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। সেতুর উপরে রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার।  তিনি বলেন, ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৯০ শতাংশ ও ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডব্লিউডি-১ প্যাকেজে ২ হাজার ৯৭৯ ও ডব্লিউডি-টু প্যাকেজে ২ হাজার ৮৪১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন।  প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুটির নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ইতোমধ্যে সেতুর ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু এডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। এলাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেইনে কাজ, কালভার্টগুলো শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজ চলছে। ছোট ছোট কিছু পেরিমিটার ফেল্ট বাকি আছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।  ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।  ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে।
০৭ মে, ২০২৪

দুলাভাইয়ের দেওয়া বিষ পানে শ্যালকের মৃত্যুর অভিযোগ
স্ত্রীর ওপর ক্ষোভ মেটাতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া  কিশোর শ্যালককে বিষপান করিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বুধবার (১ মে) রাতে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুত্যু হয় শ্যালকের।  এ ঘটনার পর দুলাভাই ও তার পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না গ্রামের কাচারিপাড়ায়।  নিহত শ্যালকের নাম সাগর হোসেন। সে ওই গ্রামের ভ্যান চালক আমিরুল ইসলামের ছেলে। অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম রাধানগর ঘোপপাড়া গ্রামের আজিজুলের ছেলে। স্থানীয় সাগান্না ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান এ খবর নিশ্চত করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে রবিউল তার স্ত্রী আলেয়া বেগমকে বাপের বাড়ি ফেলে রাখে। এ নিয়ে দুই পরিবারে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে রবিউল আবার দ্বিতীয় বিয়ে করে বসলে প্রথম স্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে তীব্র মনোমালিন্য ঘটে। তিনি আরও জানান, রবিউল প্রথম স্ত্রীর পরিবারকে শায়েস্তা করতে সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত ১৯ এপ্রিল ঘুরতে যাওয়ার নাম করে শ্যালক সাগর হোসেনকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় সে। তাকে স্থানীয় আমেরচারা বাজারে নিয়ে কোমল পানীয় স্পিডের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে সেবন করতে দেয়। কিশোর সাগর দুলাভাইয়ের দেওয়া স্পিড পান করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রথমে তাকে ঝিনাইদহ ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যার দিকে মারা যায় সাগর। মৃত্যুর আগে সাগর পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দিয়ে গেছে বলে সাগরের মা কোহিনুর বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শাহিন উদ্দীন জানান, এমন অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। অভিযোগ পেলে ও মৃত্যুকালীন জবানবন্দির কোনো তথ্য প্রমাণ থাকলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে সাগরের মৃতদেহ কাচারিপাড়ায় দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সাগরের পিতা আমিরুল ইসলাম ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
০২ মে, ২০২৪

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন ডা. আতিকুর
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন প্রখ্যাত বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর আগে গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ সাহাবুদ্দিন তাকে আগামী ৪ বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান দুই মেয়াদে সফলভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশ্বদ্যিালয়ের মেডিকেল টেকনোলজি অনুষদের ডিন ও বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি মেডিসিন) বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।  উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।  এ দিকে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ ও অফিসের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানকে শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এ দিকে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ব্লকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুারালে এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম খুরশিদুল আলম, বিএসএমএমইউ স্বাচিপের সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়াদার টিটো, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. বেলাল সরকার, সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন সুমন, ডা. জাহান শামস নিটোল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের গ্রামের বাড়ি সিলেটে। তিনি ১৯৬৯ সালের ১৫ মে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বক্ষব্যধির ওপর এমডি এবং ২০১৪ সালে আমেরিকান কলেজ অফ চেস্ট ফিজিশিয়ান্স থেকে এফসিসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন।  প্রথিতযশা বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় রয়েছে অন্যন্য সাধারণ অবদান। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান রোগীদের কাছে অত্যন্ত অমায়িক ও সজ্জন চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। দেশী-বিদেশী জার্নালে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাসমূহ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীণ চিকিৎসকদের মানসম্মত গবেষণাধর্মী থিসিস সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তিনি গাইড হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন জার্নালে ৪৭টি বৈজ্ঞানিক প্রকাশনাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।  অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক জনপ্রিয় শিক্ষক ও উপ-উপাচার্য মরহুম অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপনের স্মরণে গঠিত জাকারিয়া স্বপন স্মৃতি সংসদের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পালমোনারি হাইপারটেনশন সোসাইটি, ডিপিএলডি ফাউন্ডেশন এবং পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন সোসাইটি এ তিনটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-এর মেম্বার সেক্রেটারি, ইনস্টিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড (আইআরবি)-এর সদস্য এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব স্পোর্টস মেডিসিনের সম্মানিত কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, ইথিক্যাল রিভিউ বোর্ড (ইআরবি)-এর সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পালমোনলজি বিষয়ের ফাউন্ডার কোর্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ান্স অফ বাংলাদেশ, দ্য চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, এজমা অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রনকোলোজি অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল পালমোনলজি, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি এবং পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-এর সম্মানিত আজীবন সদস্য।  অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিভিন্ন সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয়  জাতীয় সংবাদপত্রের চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য ও সচেতনামূলক বিভিন্ন  বিষয়ে নিয়মিত কলাম লিখেন।  ব্যক্তিজীবনে তিনি ২ কন্যা সন্তানের পিতা। তার সহধর্মিণী ডা. কাজী রাহিলা ফেরদৌসি একজন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা চালু করল রাকাব
ডেটা ছাড়াই রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সেবা প্রদান এবং রাকাব মোবাইল অ্যাপে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক মিলনায়তনে প্রধান অতিথি থেকে এই সেবার উদ্বোধন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাকাবের চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. রইছউল আলম মণ্ডল, আইসিটি বিভাগের যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক (এটুআই প্রোগ্রাম) মোল্লা মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রূপ রতন পাইন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাকাব এর অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। আশা করেন যে, বিশেষায়িত ব্যাংকটি তার মানসম্পন্ন, সম্ভাবনাময় ও কল্যাণমুখী সেবা প্রদানের মাধ্যমে অতি শিগগিরই সফলতা অর্জন করবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাকাব পরিচালনা পর্ষদের চেয়ার‌ম্যান রইছউল আলম মন্ডল বলেন, এটুআই প্রোগ্রামের কেন্দ্রীয় ই-পেমেন্ট সিস্টেম ekpay এর মাধ্যমে রাকাবের সেবা প্রদান এবং রাকাব মোবাইল অ্যাপে ফ্রি- ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রমের সংযোজনের মধ্য দিয়ে অনগ্রসর এলাকায় আধুনিক ব্যাংকিং সেবাদানে রাকাব আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এর ফলে গ্রাহকগণ নিরবচ্ছিন্ন ই-ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, কৃষি ও গ্রমীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পল্লী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রাকাব বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কৃষকের দোরগোড়ায় অনলাইন ব্যাংকিং ও স্মার্ট মোবাইল অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানে রাকাব অঙ্গীকারবদ্ধ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাধারণত রাকাব মোবাইল অ্যাপসহ সকল অ্যাপ ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেট প্যাকেজের মেয়াদ বা ডেটা প্যাক না থাকলে অ্যাপ ব্যবহার করা যায় না। তবে রাকাবের গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ডেটা ছাড়াই ব্যাংকটি শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু করল। এখন থেকে রাকাবের গ্রামীণফোনের গ্রাহকরা ডেটা ছাড়াই রাকাব মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবে। এই সুবিধা পেতে গ্রাহককে শুধু ইন্টারনেট কানেকশন চালু রাখতে হবে। ডেটা ছাড়া ফ্রি ইন্টারনেটের মাধ্যমে রাকাব মোবাইল অ্যাপ ছাড়াও রাকাব লেন্স এর সকল সেবা পাওয়া যাবে। এই ফ্রি ইন্টারনেট সেবার মধ্য দিয়ে রাকাব ই-ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য, রাকাবের ৩৮৩টি শাখার আওতায় প্রায় ৫০ লাখ গ্রাহককে সুষ্ঠুভাবে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। ব্যাংকটি দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে গত জুন ২০২৩ এ ৭২.৬৭ কোটি এবং অর্থবার্ষিক সমাপনী ডিসেম্বর ২০২৩ এ ৬৯.২৪ কোটি টাকা শাখা পর্যায়ে পরিচালনা মুনাফা অর্জন করে।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাঙালির পক্ষে উঠে দাঁড়িয়েছেন শেখ মুজিব
উত্তাল ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না, তিনি তখন সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত। কিন্তু অভ্যুত্থানের সময়ে তাঁর ভাবমূর্তি সর্বক্ষণই উপস্থিত ছিল। বস্তুত অভ্যুত্থানের লক্ষ্যগুলোর ভেতর একটি ছিল আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবের মুক্তি। মামলাতে অন্যরাও অভিযুক্ত ছিলেন; তাঁদের ওপর, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর বিদ্রোহী সদস্যদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছিল, এবং মামলার সময় সেসব কাহিনি বের হয়ে আসায় পূর্ববঙ্গের মানুষ পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বাঙালি-বিদ্বেষী ঔপনিবেশিক চরিত্র সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হয়ে উঠছিল; অভিযুক্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের তো অবশ্যই, শেখ মুজিবের প্রাণদণ্ডাদেশ হয় কি না তা নিয়ে বিশেষভাবেই উদ্বিগ্ন ছিল মানুষ। স্থলবুদ্ধির সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ধারণাই করতে পারেনি যে, প্রকাশ্য বিচারে এই মামলার পরিণতি পাকিস্তানি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ওপর কত বড় আঘাত হিসেবে আসতে পারে। জনমনে এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল যে মামলার মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন শেখ মুজিব, এবং তাঁকে সরিয়ে দেবার জন্যই মামলার সঙ্গে তাঁকে যুক্ত করা হয়েছে, এবং তাঁর অপরাধ তিনি বাঙালির পক্ষে উঠে দাঁড়িয়েছেন। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে অনেক গবেষণা ও গ্রন্থ রচনা হয়েছে; সেখানে এবং তাঁর নিজের লেখা আত্মজৈবনিক রচনাগুলোতেও বাঙালির জাতীয় মুক্তির ব্যাপারে তাঁর উপলব্ধি ও অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। তাঁর কাজ সম্পর্কে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা হবে। অভ্যুত্থানের পরিণতিতে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পেয়েছেন। একজীবনে তিনি জনপ্রিয়তার যে শীর্ষে গিয়ে পৌঁছেছিলেন, অন্য কোনো বাঙালি নেতার পক্ষে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি টিকে থাকবে, যেমন ভিন্নতর এক পরিপ্রেক্ষিতে চিত্তরঞ্জন দাশের ‘দেশবন্ধু’ উপাধি আজও টিকে আছে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন চেয়েছিলেন বাঙালির রাজনীতিকে আগ্রাসী ভারতীয় রাজনীতি থেকে আলাদা করবেন; কিছুটা এগিয়েও ছিলেন; কিন্তু ১৯২৫ সালে তাঁর অকালমৃত্যুতে বাংলার রাজনীতির ওই স্বতন্ত্র ধারাটি আর টিকে থাকতে পারেনি; কংগ্রেসের ও মুসলিম লীগের সর্বভারতীয় রাজনীতির ক্রমবর্ধমান স্রোতের বিপুলতার ভেতর হারিয়ে গেছে। হতাশাজনক সেই ঘটনার পরিণতি ঘটেছে ১৯৪৭ সালের মর্মান্তিক দেশভাগে। দেশভাগের পরপরই বোঝা যাচ্ছিল যে ক্ষমতা হস্তান্তর ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু মানুষের মুক্তি আসেনি। মুক্তির জন্য মীমাংসা প্রয়োজন ছিল দুটি জরুরি প্রশ্নের; একটি জাতির, অন্যটি শ্রেণির। এই দুটি প্রশ্নে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সরব ছিল; কিন্তু দুই বুর্জোয়া দলের রাজনীতির দাপটে প্রশ্ন দুটি তাদের গুরুত্ব ধরে রাখতে পারেনি। পূর্ববঙ্গের মানুষ যে নতুন একটি ঔপনিবেশিক শাসনের কব্জায় পড়ে গেছে এ ব্যাপারে অত্যন্ত সরব হয়ে উঠেছিলেন দুজন; মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমান। মওলানার বয়স বেশি, অভিজ্ঞতাও অধিক, তিনি ছিলেন সবার আগে; মুজিব এসেছেন পরে। প্রথমে তাঁরা একসঙ্গেই ছিলেন, কিন্তু পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, যেটা অবধারিত ছিল; কারণ মওলানা ভাসানী জাতি ও শ্রেণি, এই উভয় প্রশ্নের মীমাংসার দাবি তুলেছিলেন, শেখ মুজিবের দৃষ্টি ছিল মূলত জাতি প্রশ্নের মীমাংসার ওপরই। মেহনতি মানুষদের দুঃখ শেখ মুজিব বুঝতেন, সে দুঃখে সর্বদাই তিনি কাতর থাকতেন। বাংলার মানুষের বঞ্চনা ও বেদনার কথা তিনি যেভাবে বলতেন তাঁর বয়সী অন্য কোনো জাতীয়তাবাদী নেতা সেভাবে বলেননি। বাঙালির দুঃখ ঘোচানোর জন্য তিনি প্রয়োজন মনে করেছিলেন পাঞ্জাবি শাসনের বন্ধন থেকে মুক্তিলাভ। মওলানাও তাই মনে করতেন, পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার কথা তিনিই প্রকাশ্যে সর্বপ্রথম তুলেছেন; কিন্তু জাতীয় মুক্তির আন্দোলনকে তিনি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে। শেখ মুজিবের অবস্থান ছিল ভিন্ন। উনিশশ একাত্তরের ৭ মার্চের সেই অবিস্মরণীয় বক্তৃতায় তিনি ঠিকই বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁর বিবেচনায় পূর্ববঙ্গের জন্য দুটোই ছিল আবশ্যক, তবে প্রথমে প্রয়োজন ছিল স্বাধীনতার। সেই লক্ষ্যেই তিনি লড়ছিলেন। পাকিস্তানি শাসকেরা মুক্তির দাবির চেয়ে স্বাধীনতার দাবিকেই অধিক বিপজ্জনক মনে করতেন। কারণ মুক্তি জিনিসটা দূরবর্তী, সুদূরপরাহতও বলা চলে; কবে আসবে জানা যায় না, আসবে কি না তাই বা কে জানে, এবং মুক্তির সংগ্রামে কেবল পাঞ্জাবি বুর্জোয়ারা নয়, উঠতি বাঙালি বুর্জোয়ারাও যে বাধা দেবে এটাও তো ছিল সুনিশ্চিত। শাসকেরা তাই মুক্তির সংগ্রামকে নয় স্বাধীনতার সংগ্রামকেই ভয় করতো। ৭ মার্চে তাদের শঙ্কা ছিল মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন কি না তা নিয়ে। মুজিবের ওপর চাপ ছিল, বিশেষ করে ছাত্রদের; পাকিস্তানি শাসকেরা সেটা জানত। মুজিব যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না এতে তাদের ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে। তারা ভেবেছে আপাতত তো বিপদ কাটল, পরে দেখা যাবে কী হয়। তাছাড়া মুজিব তো আলোচনার পথ বন্ধ করে দেননি, তিনি শর্ত দিয়েছেন কয়েকটি। সেনাবাহিনীর মধ্যে উগ্রপন্থিদের সঙ্গে মধ্যপন্থিরাও ছিল; যারা সামরিক পদ্ধতিতে শেষ রক্ষা হবে না বলে মনে করত এবং রাজনৈতিক সমাধানের কথা ভাবত। তবে আইয়ুব খান তো ঘোষণাই দিয়ে রেখেছিলেন যে ছয় দফা দেওয়ার পরে মুজিবের সঙ্গে অস্ত্রের ভাষাতেই তিনি কথা বলবেন। তাঁর চেলা মোনায়েম খাঁও ওই পথেরই পথিক হতে চেয়েছিলেন। আপাত বিবেচনায় ছয় দফাতে অবশ্য ভয়ংকর কিছু ছিল না; দফাগুলোর ভিত্তিতে তো ছিল লাহোর প্রস্তাবের আদি রূপরেখা, যেখানে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি হিসেবে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক একদিন লাহোরে গিয়ে ওই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন, যার ওপর ভর করে অসংশোধনীয় রূপে এককেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে, যে-রাষ্ট্র আদি প্রস্তাবের একেবারে প্রাথমিক শর্তটিই নাকচ করে দিতে চেয়েছিল। ২৬ বছর পরে বাংলারই অপর এক নেতা ওই লাহোরে গিয়েই ছয় দফা কর্মসূচি উত্থাপন করে আদি প্রস্তাবটিকেই পুনরুজ্জীবিত করার দাবি জানিয়েছিলেন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা প্রমাদ গুনেছিল; ছয় দফাতে তারা এককেন্দ্রিক পাকিস্তানের ধ্বংসের বীজ দেখতে পেয়েছিল। পাকিস্তান যে ভাঙবে সেটা অনিবার্যই ছিল; কিন্তু আপসরফা করে একটি ফেডারেল কাঠামো দাঁড় করিয়ে আরও কিছুদিন হয়তো তাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো, এবং তাতে ক্ষয়ক্ষতিটা কম ঘটত। কিন্তু নব্য-ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসকেরা অতটা ছাড় দিতেও প্রস্তুত ছিল না। তাদের পাকিস্তান এককেন্দ্রিক এবং সে পাকিস্তানে পূর্ব শোষিত হবে পশ্চিমের দ্বারা। ছয় দফা সেই ব্যবস্থায় আঘাত করেছে। পাকিস্তানের শাসকেরা মুজিবকে তাই এক নম্বর শত্রু বিবেচনা করে কেবল কারাবন্দি করেই নিশ্চিন্ত হয়নি, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে প্রাণনাশ ঘটানো যায় কি না দেখতে চেয়েছিল। সেই পদক্ষেপে অবশ্য সম্পূর্ণ উল্টো ফল ফলেছে, সারা বাংলা জুড়ে স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতার দাবিই উঠেছে। আইয়ুব বলেছিলেন যে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের কোনো উপায়ই নেই, কারণ ওটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদ যে এক সময়ের ‘লড়কে লেঙ্গে’ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের চেয়েও অনেক বেশি প্রবল হয়ে উঠতে পারে, এবং বলপ্রয়োগে দমন করতে গেলে তার প্রবলতা যে বাড়বে বৈ কমবে না, এই জ্ঞান রাষ্ট্রশাসকদের ছিল না। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে নতিস্বীকার করতে হলো। নতি নয়, পরাজয়ই। আগরতলা মামলা প্রত্যাহৃত হলো, শেখ মুজিবসহ মামলার সব অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেলেন, এবং শেখ মুজিব বাঙালি জাতীয়তাবাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বেরিয়ে এলেন। আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডেকেছিলেন; মুক্ত না হলে তিনি যোগ দেবেন না, মুজিব এই শর্ত দিলেন; আইয়ুব খান সেই শর্ত মেনে নিতে এবং গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ শেখ মুজিবের সঙ্গে করমর্দনে বাধ্য হলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের কাছে এটি আইয়ুবের প্রথম পরাজয়। দ্বিতীয় ও শেষ পরাজয়টি ঘটল যখন তিনি বাধ্য হলেন পদত্যাগে। পুনরায় প্রেসিডেন্ট হবার চেষ্টা করবেন না, অর্থাৎ নির্বাচনে দাঁড়াবেন না, এরকমের ঘোষণায় কাজ হয়নি; তাকে প্রেসিডেন্টের পদই ছাড়তে হয়েছে। ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭ মার্চ, ২০২৪

‘দুর্নীতি প্রতিরোধে সব সেবা ডিজিটাইজেশন করছে সরকার’
রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও স্টার্ট-আপদের অংশগ্রহণে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচতনতা বৃদ্ধি শীর্ষক সেমিনার হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের সভাকক্ষে এ সেমিনার হয়। এতে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারি সেবা ডিজিটাইজেশনের বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মোখতার আহমেদ। বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় হাই-টেক পার্কের আওতাধীন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. মোখতার আহমেদ বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকার সব সেবা ডিজিটাইজেশন করছে। ফলে বর্তমানে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় যে কোনো তথ্য জনগণ জানতে পারে। এ ছাড়া জি আর এস বা অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারি যে কোনো সেবা নিয়ে অভিযোগ থাকলে অনলাইনে দাখিল করা যায়। এর মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি দ্রুত প্রতিকার পাবেন বলে আমরা আশা করি।
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জটিল রোগের চিকিৎসা দেশেই সম্ভব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশ দিন দিন উন্নত বিশ্বের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, আমাদের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিলে বাংলাদেশ থেকে এখন জটিল সব রোগেরই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নাভা ও নোহা নামক দুই শিশুর জোড়া মাথার সফল অস্ত্রোপচার প্রসঙ্গে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। আমাদের দেশে প্রচুর শিক্ষার্থী প্রতিবছর মেডিকেলে পড়ালেখা শেষ করে চিকিৎসক হচ্ছেন। আমাদের চিকিৎসকরা মেধাবী এবং দক্ষ। শুধু একটু সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে এবং তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী ভরসা দিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশ থেকে কোনো রোগীকে আর আগামীতে বিদেশ যেতে হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগেই আমরা ভুটানের ক্যান্সার আক্রান্ত এমন এক মেয়েকে চিকিৎসা দিয়ে ভালো করেছি যার চিকিৎসা ভারত ও ব্যাংককেও সম্ভব হয় নাই। কাজেই বাংলাদেশ পারে না এমন কোনো কাজ নাই। এখন বাংলাদেশেই সব রোগের চিকিৎসা সুবিধা আছে। সামন্ত লাল সেন বলেন, বিএসএমএমইউতে নাভা ও নোভা নামের দুটি শিশুর জোড়া মাথা আলাদা করার অপারেশন সাকসেসফুল হলো আজ। এটি সাধারণ কোনো কাজ নয়। এখানে আমাদের অভিজ্ঞ বড় একটি চিকিৎসক দল টানা ১৩ ঘণ্টার বেশি সময় অপারেশন করে এই অসাধ্য সাধন করেছেন। এই অপারেশন ভারত বা বাইরের দেশে করতে গেলে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হতো। কিন্তু এই দুই অবুঝ শিশুর চিকিৎসা ব্যয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বহন করেছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে আমাকে বিএসএমএমইউয়ে আসতে বলেছেন। এর আগেও বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরাই মাথা জোড়া লাগা শিশুর সফল অপারেশন করেছি। সুযোগ পেলে আমরা যে আসলেই পারি এগুলো হচ্ছে তারই প্রমাণ। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, নাভা-নোভার মা এবং অন্যান্য সিনিয়র চিকিৎসকরা।
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

শেখ মুজিব মেডিকেলের সামনে মিলল নবজাতকের মরদেহ
ফরিদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তার ডিভাইডারের ওপর থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ডিভাইডারের মাঝে কাপড়ে মোড়ানো মৃত নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, সকালে মানুষ রাস্তা পার হওয়ার সময় ডিভাইডারের মাঝে কাপড়ে মোড়ানো একটি বস্তু দেখতে পায়। কাপড়টি একটু সরানোর পর একটা নবজাতকের মাথা ও পা দেখতে পেয়ে ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে কোতোয়ালী থানার পুলিশ এসে নবজাতকের মরদেহ নিয়ে যায়। কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গির হোসেন কালবেলাকে জানান, পুলিশ কন্ট্রোল থেকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রাস্তার ডিভাইডারের ওপর থেকে কাপড়ে মোড়ানো একটি নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করি। মরদেহটি হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন অনুষ্ঠিত
সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বানৌজা শেখ মুজিব ঘাঁটিতে ম্যারাথনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান গতকাল ভোরে শেখ হাসিনা সরণিতে বানৌজা শেখ মুজিব ঘাঁটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। ম্যারাথনটি ভোর ৫টায় শুরু হয়ে ৩০০ ফুট রাস্তা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে একই রাস্তায় ফেরত এসে শেখ হাসিনা সরণিতে শেষ হয়। ফুল ম্যারাথনে এলিট দৌড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন কেনিয়ার যোসেফ কিয়েংগো মুনিয়োকি এবং মহিলা বিভাগে ইথিওপিয়ার লেনসা দেবেলে জালেটা। ফুল ম্যারাথনে সাফ দৌড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন ভারতের আনিস থাপা মাগার এবং মহিলা বিভাগে নেপালের সন্তোষী শ্রেষ্ঠা। এ ছাড়া ফুল ম্যারাথনে বাংলাদেশি দৌড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন মো. আল আমিন এবং মহিলা বিভাগে পাপিয়া খাতুন। হাফ ম্যারাথনে বাংলাদেশি দৌড়বিদদের মধ্যে পুরুষ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন মো. সোহেল রানা এবং মহিলা বিভাগে পৃথি আকতার। সমাপনী অনুষ্ঠানে ম্যারাথন আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২৭ জানুয়ারি, ২০২৪
X