কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ পিএম
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তাবলিগ জামাতের ঘটনা নিয়ে আজহারীর স্ট্যাটাস

তাবলিগ জামাতের ঘটনা নিয়ে আজহারীর স্ট্যাটাস
মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি : সংগৃহীত

এবার তাবলিগ জামাতের ঘটনা নিয়ে স্ট্যাটাস দিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।

পোস্টে লিখেছেন, তাবলিগের নেতৃত্বস্থানীয় মুরুব্বিদের বলবো, দেশের সবচেয়ে বড় দাওয়াতি প্ল্যাটফর্ম তাবলিগ জামাতের এ সংকটে, আপনাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। আপনারা আলোচনায় বসুন। তবে ফলপ্রসূ আলোচনার পূর্বশর্ত হলো : দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করতে পারা। একে-অপরকে ছাড় দেবার মানসিকতা রাখা। মনে রাখবেন, বিষয়টা কেবল আর দলীয় গণ্ডিতে আটকে নেই। এটার সাথে এখন বাংলাদেশের মুসলিমদের ভাবমূর্তি জড়িত।

কালবেলার পাঠকদের জন্য মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘সাত সকালে ঘুম ভাঙতেই এমন একটা খবর শুনে, রীতিমতো আঁতকে উঠেছি। অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে ভীষণ। আহারে, আমার দেশে এক মুসলিম-ভাইয়ের হাতে আরেক মুসলিম-ভাই র*ক্তাক্ত! এই দৃশ্য কেমন করে সহ্য করি!

মদিনার আউস ও খাযরাজ গোত্রের ভেতর ছিল শত বছরের শত্রুতা। দা-কুড়াল সম্পর্ক বললেও কম হবে। সেই শত্রুতা ঘোচাতে নবিজির এক ঘণ্টাও সময় লাগেনি। কেননা, তিনি সমস্যার একেবারে গোড়ায় হাত দিয়েছিলেন। নবিজি দেখলেন, দুই গোত্রের মাঝেই ভীষণ-রকম ইগো-প্রবলেম, নিজেকে সেরা ভাববার বিশ্রী প্রবণতা। নবিজি তাই শুনিয়ে দিলেন তাওহিদের সবক : ‘শোনো, তোমরা কেউই বড় নও। বড়ত্ব একমাত্র আল্লাহর শান। তাই একবার যখন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব মেনেই নিয়েছ, তখন আর নিজেকে ছোটো ভাবতে বাধা কোথায়? আল্লাহর ইচ্ছার সামনে নিজেদের সঁপে দাও। সব ভেদাভেদ ভুলে যাও।’

নবিজির এই আপ্তবাক্য সেদিন স্ফুলিঙ্গ হয়ে, জ্বালিয়ে দিয়েছিল সমস্ত শত্রুতা আর ইগো। আউস আর খাযরাজ হয়ে গেল ভাই ভাই। এক দেহ, এক প্রাণ।

তাবলিগের নেতৃত্বস্থানীয় মুরুব্বিদের বলব, দেশের সবচেয়ে বড় দাওয়াতি প্ল্যাটফর্ম তাবলিগ জামাতের এই সংকটে, আপনাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। আপনারা আলোচনায় বসুন। তবে ফলপ্রসূ আলোচনার পূর্বশর্ত হলো : দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করতে পারা। একে-অপরকে ছাড় দেবার মানসিকতা রাখা। মনে রাখবেন, বিষয়টা কেবল আর দলীয় গণ্ডিতে আটকে নেই। এটার সাথে এখন বাংলাদেশের মুসলিমদের ভাবমূর্তি জড়িত।

আপনারা খুব ভালো করেই জানেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যমগুলো ওত পেতে থাকে কখন এদেশের মুসলিমদের একহাত নেওয়া যায়। সেখানে আপনারাই যদি বল ঠেলে দেন ওদের কোর্টে, সেটা খুবই দুঃখজনক। গতকালের ঘটনা নিঃসন্দেহে তাদের সুবিধা দেবে। তারা এই ইস্যু ব্যবহার করে, এদেশের ইসলামি আ*ন্দো*লন ও দলগুলোকে বিতর্কিত করবার চেষ্টা চালাতে পারে।

সেইসাথে এই ঘটনা তাবলিগের দায়িত্বশীলদের সামনে, আত্মসমালোচনার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আপনারা কোন সবক দিলেন সাথীদের? আপনারা কি তাদের ‘এক উম্মাহ’ কনসেপ্ট শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন? আপনারা যথাযথ তারবিয়‍্যাত দিতে পারেননি বলেই, সাথীরা আজ সত্যিকার শত্রু চিনতে ভুলে গিয়ে, নিজেদেরই শত্রু ভেবে বসে আছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তাবলিগের দুপক্ষ যার যার মতো কাজ করছে, কিন্তু এমন মারামারি তো হচ্ছে না। কারণ তাদের মধ্যে উম্মাহ স্পিরিট আছে। উম্মাহ স্পিরিটকে যত বড় করে তোলা যাবে, দলীয় স্বার্থ তাদের কাছে তত নগণ্য হয়ে উঠবে।

শামের দিকে দৃষ্টি ফেরান। সেখানকার বিজয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে-ঐক্য। অন্তত ১০টা বড় বড় গ্রুপ সেখানে লড়াই করেছে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। প্রত্যেকটা গ্রুপই চিন্তা ও মননে আলাদা। কিন্তু মুসলিমদের স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে, ক্ষমতার লোভ বিসর্জন দিয়ে তারা এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। দিকে দিকে যখন মুসলিমদের ঐক্যের সুবাতাস বইছে, তখন আমার মাতৃভূমিতে কেন ভেদাভেদের কালোছায়া?

তাবলিগের সাথীভাইদের বলবো, আল্লাহর ওয়াস্তে সংযত হোন। আল্লাহকে ভয় করুন। মুসলিম ভাইয়ের র*ক্ত ঝরানো আর যা-ই হোক, নবিজির উম্মতের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। ওটা স্রেফ আসাবিয়্যাত তথা দলবাজি। আর আসাবিয়্যাতের পরিণতি কত ভয়াবহ, তা নবিজির জবানিতেই শুনুন : ‘যে আসাবিয়্যাতের দিকে ডাকে, সে আমার দলভুক্ত নয়। যে আসাবিয়্যাতের জন্য লড়াই করে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর আমার দলভুক্ত নয় সে-ও, যে আসাবিয়্যাতের ওপর মৃত্যুবরণ করে। (সুনান আবু দাউদ : ৫১২১)’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্রিজে থাকা লাশের কবরের হিসাব কীভাবে নেওয়া হবে?

জিয়া নামের কারণে বিটিভির কালো তালিকায় নির্মাতা জিয়াউদ্দিন

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটিরকম্পিউটার ফ্যাকাল্টির নতুন ডিন ড. সৈয়দ আখতার

মুন্সীগঞ্জে নানা আয়োজনে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

পিআর নিয়ে যে অবস্থান নিল জামায়াত

ঠাকুরগাঁও ব্যাংকার্স ক্লাবের সভাপতি প্রশান্ত সামির, সম্পাদক জিল্লুর রহমান

বিপিএলের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ হলেন সাব্বির ফয়েজ 

আপনারা কি তামাশা করেন, প্রশ্ন আবিদের

ডাকসু কেউ ভিক্ষা দেয়নি, ছাত্ররা আদায় করে নিয়েছে :  সিবগাতুল্লাহ

১০

দেব-শুভশ্রীর পাল্টাপাল্টি জবাব, নায়িকার সম্মানহানি চাননি নায়ক

১১

চবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর স্থানীয়দের সাত দফা দাবি

১২

ডাকসু নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই : ঢাবি প্রশাসন

১৩

দেশে স্বৈরাচার ঠেকাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে : মনি

১৪

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়ার সমাধিতে যুবদলের শ্রদ্ধা

১৫

নিজ হাসপাতালে পড়ে ছিল চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ

১৬

হ্যারি পটার সিরিজে নতুন চমক

১৭

এলাকাবাসীর মাঝে হিজড়াদের মিষ্টি বিতরণ

১৮

বিশ্বকাপজয়ী মার্টিনেজ নয়, অখ্যাত এক বেলজিয়ানের ওপর ভরসা ম্যানইউর

১৯

জশনে জুলুসকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে চলছে দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা

২০
X