বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ০২:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছয় মাসে নিহত ৩০১২ সেনা

মিয়ানমার জান্তা কঠিন চ্যালেঞ্জে

মিয়ানমার জান্তা কঠিন চ্যালেঞ্জে

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মিয়ানমারে ৩ হাজারের বেশি জান্তা সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার নামে পরিচিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। তাদের দাবি, বিপুলসংখ্যক এই প্রাণহানি ছাড়াও ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে আরও ৪ হাজার জান্তা সেনা আহত হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দি ইরাবতি। ইরাবতির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় প্রতিদিনই জান্তা সরকারের বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ রকম অবস্থায় সেনাদের মনোবল ধরে রাখার এক কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর গণতন্ত্রের দাবিতে রক্তাক্ত সংগ্রামে লিপ্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির বিরোধী দলগুলো গড়ে তোলে একটি সমান্তরাল সরকার, যেটি ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট বা এনইউজি নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আসছে এনইউজি। আর এ কারণে এটি মিয়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার বলে পরিচিত। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে নিজেদের সশস্ত্র শাখা এবং বিদ্রোহী মিত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় মিয়ানমারের ৩ হাজার ১২ জান্তা সেনা নিহত এবং আরও ৪ হাজার ২১ সেনা আহত হয়েছে বলে এনইউজি দাবি করেছে।

এনইউজির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জান্তা বাহিনী এবং এনইউজির পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস ও সহযোগী সশস্ত্র সংস্থাগুলোর (ইএও) মধ্যে মোট ৯৩৫টি সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত দি ইরাবতির এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সংঘর্ষে পিডিএফ গ্রুপ এবং মিত্র ইএও বাহিনী ৩০টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন এনইউজির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি উ মং মং সোয়ে। তিনি বলেছেন, দখলে নেওয়া এসব ঘাঁটির মধ্যে কায়াহ প্রদেশে ১০টি, সাগাইং অঞ্চলে ছয়টি এবং দেশের নিম্নাঞ্চলে ১৯টি ঘাঁটি রয়েছে।

এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো জান্তা সরকারের ১৫টি পুলিশ স্টেশন এবং জান্তার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ১০টি ফাঁড়িও দখল করে নেয়। একই সঙ্গে জান্তাপন্থি পিউ সাউ হতি নামে একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর ১৪টি ঘাঁটিও দখল করে নেওয়ার দাবি করেছে এনইউজি। এদিকে বছরের প্রথম ছয় মাসে জান্তা ঘাঁটি এবং সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে প্রায় ২৫৫টি ড্রোন হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো। এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় ৩০ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ এবং প্রায় ৮০০টি বিস্ফোরক ডিভাইসের পাশাপাশি ২০৩টি সামরিক-গ্রেডের অস্ত্রও জব্দ করে প্রতিরোধ বাহিনী।

এদিকে সংঘর্ষের সময় জান্তা সেনাদের হামলায় ঠিক কী পরিমাণ প্রতিরোধ যোদ্ধা হতাহত হয়েছে, তার সংখ্যা প্রকাশ করেনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে একই সময়কালে অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সংঘর্ষ এবং সরকারি বাহিনীর অভিযানের সময় অসংখ্য প্রতিরোধ যোদ্ধা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুধু কায়াহ প্রদেশেই চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ২২২টি সংঘর্ষে ৬৬৭ সরকারি সেনা এবং ৯৯ প্রতিরোধ যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে প্রগ্রেসিভ কারেনি পিপল ফোর্স (পিকেপিএফ) জানিয়েছে। জাতিগত এই মানবাধিকার গোষ্ঠীটি ওই প্রদেশে সরকারের নৃশংসতা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।

এ ছাড়া স্থল সংঘর্ষের জবাবে জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে জান্তা বাহিনী ওই প্রদেশে বেসামরিক এবং প্রতিরোধ বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে ৩৩৮টি বিমান হামলা চালিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, লড়াইরত প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো ইয়াঙ্গুন, বাগো, মান্দালেই এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলে অবস্থিত পাঁচটি জান্তা বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে এবং মিয়ানমারের সাতটি জান্তা অস্ত্র কারখানায় ১২টি হামলা চালিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব সামরিক কমান্ডের সদর দপ্তরসহ পাঁচটি সামরিক বিভাগের অবকাঠামোগুলোতে ১৩টি বোমা হামলা চালিয়েছে।

উ মং মং সোয়ে বলেছেন, ‘২০২৩ সালের শুরু থেকে জান্তার ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ শুরুর মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় সামরিক কমান্ড এবং ডিভিশনের ঘাঁটিতে থাকা সরকারি বাহিনীও এখন আর তাদের ঘাঁটিতে নিরাপদ বোধ করছে না।’ তিনি বলেন, পিডিএফ এবং ইএও শিগগির সরকারি বাহিনীর ঘাঁটিগুলোতে আরও আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে। দি ইরাবতি বলছে, পিডিএফ এবং ইএও গোষ্ঠীগুলো সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ অব্যাহত রাখার কারণে জান্তা সরকার ও বাহিনী এখন প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

এ ছাড়া গত জুনের শেষের দিক থেকে শান এবং কাচিন প্রদেশে আরও অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় ক্রমবর্ধমান হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে এসব গোষ্ঠী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্যক্তিগত মিলে মজুত করা ছিল সরকারি চাল

অনূর্ধ্ব-১৭ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ / ভারতের বিপক্ষে বিকেলে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

সড়কে খানাখন্দ, দুর্ভোগ লাখো মানুষের

নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি মানসী

কলকাতায় টানা ৩ দিন দুর্যোগের সতর্কতা

২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ : কোন দেশে কত ম্যাচ জানিয়ে দিল আইসিসি

সপ্তাহের সেরা সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি, পদ প্রায় ১৬০০

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

জুমার খুতবার সময় কি মোবাইল ব্যবহার করা যাবে?

দুপুরের মধ্যে ৭ জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১০

ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিচ্ছে ফিফা, যেভাবে করবেন আবেদন

১১

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিবের যোগদান

১২

লিড প্লাটিনাম সনদ পেল ওয়ালটন

১৩

ইরানের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞা

১৪

মসজিদে হারাম ও নববিতে আজ জুমা পড়াবেন যারা

১৫

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর প্রথম সামরিক মহড়ায় ইরান

১৬

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন ফাঁদ তৈরি করছে উত্তর কোরিয়া

১৭

শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৮

২২ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

২০
X