বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় চালানো হয় সহিংসতা। যানবাহন ও স্থাপনায় আগুন, হাতবোমা, পেট্রোল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্নভাবে নাশকতা চালায় একদল দুষ্কৃতকারী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসে, ভয়াবহ ওইদিনের তাণ্ডবে মূল ভূমিকা পালন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বোমাবাজি, যানবাহনে আগুনসহ সব ধরনের নাশকতায় এই নয়নের সম্পৃক্ততা মিলেছে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে, ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন যুবদলের এই নেতার নেতৃত্বে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক বড় নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর আগেই তাকে গ্রেপ্তারে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কালবেলাকে বলেন, ‘২৮ অক্টোবর ও এর পর থেকে নাশকতার ঘটনাগুলোতে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় সব আসামিই জিজ্ঞাসাবাদ ও জবানবন্দিতে জানিয়েছে, রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে তারা নাশকতা করেছে। প্রযুক্তিগত তদন্ত এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করেও তারা দেখেছেন, এই নয়ন সব নাশকতার নেপথ্যে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।’
ডিবিপ্রধান বলেন, ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন এবং এরপরও এই নয়ন তার অনুসারীদের নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছেন বলে তথ্য এসেছে।
এ জন্য তাকে গ্রেপ্তারে ডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ডিবি সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন, এই নয়নের ওপরের স্তরে রয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। মূলত পলাতক ওই নেতার নির্দেশেই নয়ন মাঠ পর্যায়ে নাশকতা বাস্তবায়ন করছেন। টুকুকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, রবিউল ইসলাম নয়ন ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কাকরাইলে ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়ে আলোচনায় আসেন। ওই ছবি ভাইরাল হয়ে গেলে গোয়েন্দারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে শনাক্ত করে। শুধু তাই নয়, সেদিনের সহিংসতার মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। এরপর বিভিন্ন সময় বাসে আগুন দেওয়াসহ রাজধানীতে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার সমন্বয় করেন নয়ন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল বিএনপি। সে লক্ষ্যে বাসে, ট্রেনে আগুন দেওয়াসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা চালানো হয়। এসব নাশকতার ঘটনায় বিএনপি, যুবদল এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বেশ কিছু নেতার নাম পাওয়া যায়, যারা নাশকতার নির্দেশ দিতেন। তবে এসব সহিংসতা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ করেন রবিউল ইসলাম নয়ন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ককটেল, গান পাউডার, হাতবোমাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য সংগ্রহ করে সেগুলো আবার নেতাকর্মীদের কাছে বণ্টনের দায়িত্ব তার কাছে। কোন এলাকায় কতগুলো ককটেল পৌঁছানো হবে, কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাবে, এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেয় সে। গাজীপুরে রেললাইন কেটে একজন নিহতের ঘটনাতেও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং রবিউল ইসলাম নয়নের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিজ সংগঠনে ‘ডিয়ারিং নেতা’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে নয়নের। মাগুরা থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ঢাকায় এসে ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর পর্যায়ক্রমে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৩-১৪ সালেও সহিংসতা ও নাশকতায় তার নাম সামনে এসেছিল। বাসে আগুন দেওয়ার একাধিক ঘটনায় নয়নকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ওই সময়ে। এতকিছুর পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ‘পলাতক’ নয়ন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নির্বাচন বানচালের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। নাশকতার মামলায় গত ১০ ডিসেম্বর আদালত তাকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি।
আর্কাইভ 
| ২৬ নভেম্বর ২০২৫ 