মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরে মেঘনা নদীজুড়ে আতঙ্কের নাম কানা জহির। মেঘনায় চলাচল করা বাল্কহেড থেকে বিট (টাকা) তোলার মধ্য দিয়ে তার উত্থান হলেও এখন এই নদীপথে প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে কানা জহিরের নাম জড়িত। হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে দুই ডজন মামলা থাকলেও তাকে গ্রেপ্তারে নেই পুলিশের কোনো তৎপরতা। ফলে, মেঘনা এলাকায় নদী ও স্থলভাগে মূর্তিমান আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কানা জহির। এতে অতিষ্ঠ মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুরের মানুষ।
একসময় বিভিন্ন ডাকাত দলের হয়ে কাজ করলেও বহুল আলোচিত মেঘনা নদীর ত্রাস বাবলা বাহিনীর প্রধান বাবলা ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই কানা জহির।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর মো. জহির ইসলামই এখন মেঘনার আতঙ্ক কানা জহির। জন্ম থেকে তার ডান চোখ অন্ধ হওয়ায় তার নাম হয় কানা জহির। সবাই তাকে এ নামে চেনে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, চাঁদপুরের বেলতলী, চর আব্দুল্লা ও মোহনপুর পুলিশ ফাঁড়ির আশপাশে চলে তার অপকর্ম। মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি ও মেঘনা নদীতে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ সব ধরনের অপকর্ম পরিচালনা করে তার বাহিনী। জহির মেঘনা নদীর গজারিয়া, বকচর ও ষাটনল থেকে শুরু করে মোহনপুর পর্যন্ত পথে চলাচলকারী বাল্কহেড থেকে পুলিশের নাম করে ‘বিট’ তোলে। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ইজারা নেওয়া বালুমহালের পাশ থেকে জোর করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। এ নিয়ে নদীপথে গোলাগুলিও চলে।
কানা জহির একা নয়, তার রয়েছে এক বাহিনী। জহির ও তার ছোট ভাই এবং বাহিনীর অন্য সদস্যরা নদীপথে অপকর্ম করে। পুলিশের অভিযান ও নজরদারির অভাবে রাতের বেলা মাদক, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, চলন্ত নৌযানে ডাকাতি করে। এ ছাড়া মেঘনা তীরে চর বেষ্টিত বিভিন্ন গ্রামে গরু চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের অন্যায়-অত্যাচার চালায় কানা জহিরের বাহিনী।
জহিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে তার ভাই আঙুল কাটা শাহিন। সশস্ত্র শাহিন ও জহির দিনের বেলা অবস্থান করে কালিরচরসহ আশপাশের কয়েকটি চরে। বকচর থেকে কালিরচর পর্যন্ত শাহিনের, কালিরচর থেকে নাসিরাচর ও মোহনপুর জহিরের আর ষাটনল থেকে বেলতলী পর্যন্ত নয়ন অবৈধ কর্মকাণ্ড তদারকি করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কানা জহির একসময় বাবলা ডাকাতসহ কয়েকটি ছোট-বড় ডাকাত গ্রুপের হয়ে কাজ করত। পরে জহির ও তার ভাই শাহিন নিজেরাই তৈরি করে একটি সশস্ত্র ডাকাত দল, যার নাম হয় কানা বাহিনী। চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ডাকাতির বখরা আদায় করা তাদের মূল কাজ।
জহিরসহ একাধিক বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। চরাঞ্চল দুর্গম হওয়ার সুযোগে এসব এলাকা এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। একজন জানান, অস্ত্র ঠেকিয়ে রাতের বেলা নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে জহির ও তার বাহিনী। কেউ তাদের বাধা দিলে গুলি করে স্পিডবোট দিয়ে স্থলভাগে নিরাপদে চলে যায়। প্রতিদিন নদীপথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ইজারাকৃত বালুমহালের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের ড্রেজার। কয়েক মাস আগে টঙ্গীবাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটকও হয়।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, কানা জহির একজন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার। তার বিরুদ্ধে গজারিয়া, ষাটনল, মতলব উত্তর, চাঁদপুর ও লৌহজংয়ে ১৫টি মামলা রয়েছে। চরাঞ্চলের ওই জায়গাগুলো দুর্গম হওয়ার তাকে গ্রেপ্তার করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা যে কোনো উপায়ে তাকে গ্রেপ্তার করব।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর ও সিরাজদিখান সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, কানা জহিরকে গ্রেপ্তারে আমরা সবসময় সোচ্চার। কয়েকদিন আগেও ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছে। জহির নদীপথে থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে তার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছি।