রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মিলনুর রশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ছাত্রলীগ। এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধীন ফাউন্ড্রিশপ চেম্বার থেকে তাকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় উপস্থিতির তুলনা দেখিয়ে একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্ষোভের মুখে পড়েন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই কর্মকর্তার এমন ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নীরেন্দ্রনাথ মুস্তাফিকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির হোসেন এবং গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুফতি মাহমুদ রনি।
জানা গেছে, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তার জীবনকর্মসহ বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করেন মিলনুর রশিদ। এরই অংশ হিসেবে গত ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হেয় করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো জানাজার ওই ছবিটি শেয়ার করেন তিনি। এতে রুয়েটসহ রাজশাহীজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। শুধু ওই কর্মকর্তাই নন; সাঈদী মারা যাওয়ার পর ‘আল্লামা সাঈদীকে জান্নাতের মেহমান করে নিন’—এই শিরোনামে একটি বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করেন রুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সাবেক শিবির নেতা আহসান হাবীব।
রুম থেকে বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে মিলনুর রশিদ বলেন, ছাত্রলীগ আমার কক্ষে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও জোরপূর্বক কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি এখন কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের উদ্দেশ্যে নয়; বরং নিজের ফেসবুকে বিষয়টি রেখে দেওয়ার জন্য শেয়ার করা হয়েছে। সত্য কথা বলতে ফেসবুক সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না, বুঝি না। তবে কোনো কিছু ভালো লাগলে আমার ফেসবুকে শেয়ার করি।
রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, অভিযুক্ত রুয়েট কর্মকর্তার এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে সোমবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কক্ষে যান। এ সময় মিলনুর রশিদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে চরম অসদাচরণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা তাকে কক্ষ থেকে বের দিয়ে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘পরে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রবিউল আওয়ালের সঙ্গে কথা বলি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করি। ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা ক্যাম্পাসে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য, রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মুফতি মাহমুদ রনি বলেন, ‘আমাকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। আপনার কাছেই শুনলাম। আগে চিঠিটা হাতে পাই, তারপর বলতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে (বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার তুলনা করে ছবি শেয়ারের বিষয়টি) কিছুই জানি না। না জেনে মন্তব্য করা তো ঠিক নয়।’
রুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জাতির জনকের বিষয়ে কোনো আপস নয়, যারা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাকর বক্তব্য কিংবা কার্যকলাপ করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। প্রতিবেদন হাতে পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ও সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন