

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রীসহ হেভিওয়েটদের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত শেষ করতে আরও দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশনের দুই মাসের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে আদেশ দেন। এর আগে গতকাল সকালে এ মামলায় গ্রেপ্তার ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল ছেড়ে যাওয়ার সময় প্রিজনভ্যানে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে জাতীয় সংগীত গাইতে শোনা যায়। গতকাল দুপুর ২টার পর তাদের প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। প্রিজনভ্যানে তুলতেই জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন পলক। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সুর মেলান।
এর আগে গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তায় এই ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম, সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প-বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। তবে অসুস্থ থাকায় আনা হয়নি সাবেক এমপি ফারুক খানকে।
এর মধ্যে সালমান, আনিসুল, ইনু ও পলকের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা ফরমাল চার্জ দিয়েছে প্রসিকিউশন। ইনুর মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণও চলছে। এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আর আনিসুল ও সালমানের ফরমাল চার্জে আনা হয় কারফিউ দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুবলীগের সভাপতিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন সূত্র। শিগগির ফরমাল চার্জ দেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে। গতকাল ট্রাইব্যুনালের কাছে এ মামলার অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তদন্ত শেষ করতে আরও দুই মাস সময় চাইলে আগামী বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে গত বছরের ১৭ অক্টোবর সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জন হেভিওয়েটের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় ৪৫ জনের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর পৃথক মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। ওইদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে দুই মাস সময় চাইলে এ আদেশ দেওয়া হয়। এর আগেও তদন্ত শেষ করতে একাধিকার সময় নেওয়া হয় প্রসিকিউশন থেকে।
মন্তব্য করুন