বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার বৈধ নয়। তাদের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমাদের স্পষ্ট কথা, এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। আমরা নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আমাদের দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। গতকাল শনিবার বরিশাল শহরে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ভোটাধিকার প্রয়োগ, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এ সমাবেশ হয়।
কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বেলস পার্ক মাঠে বিকেল ৪টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের অন্যায় দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য সুখকর নয়। কারণ তারা আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে গুম করে রাখে। এজন্যই কি আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম?
মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। শুধু ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। আজকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে দেশে সংকটকে
দীর্ঘ করেছে সরকার। তিনি আরও বলেন, আজ শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বিদায়ের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। আজকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের নতুন সংগ্রাম হয়েছে। তারা আমাদের ইলিয়াস আলী, সুমন, থেকে শুরু করে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। তাদের সন্তানরা এখনো অপেক্ষা করে তাদের বাবা-ভাই ফিরে আসবে। শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে সরকার ১৪ বছর ধরে নির্যাতন করছে।
সমাবেশে বরিশাল জেলা ও মহানগর, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দুপুরের মধ্যেই মাঠে জড়ো হন। তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর পক্ষে একটি বিশাল মিছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিএনপির সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমরানুল হক চাকলাদারের পক্ষ থেকে একটি মিছিল বিশাল এ তারুণ্যের সমাবেশে উপস্থিত ছিল। সমাবেশ স্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন টানানো হয়। একই দিনে বেলস পার্ক থেকে আধা কিলোমিটার দূরে নগর ভবন ও শহীদ মিনারের সামনে যুবলীগও সমাবেশ করেছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম খান ফারুক, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, ছাত্রদলের সহসভাপতি তানজিল হাসান, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি প্রমুখ। এ ছাড়া বিগত আন্দোলনে পুলিশ ও সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ আব্দুর রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম, দুই সন্তান কালু মিয়া ও মিরাজ আহমেদ, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি জান্নাতুল উর্মি (ছাত্রী), রাতুল আহমেদ (চাকরিপ্রার্থী), আবুল কালাম আজাদ রিপন (চাকরিচ্যুত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা), সাংবাদিক মামুনুর রশিদ নোমানী (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় কারাভোগী) বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলে দেশে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তারা বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থী আলেম মানুষ—তাকে মেরেছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তিনি কি মারা গেছেন?’ সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে বলে যে ভোট হয়ে গেছে। কারণ তারা জানে জনমতের প্রতিফলন হলে তারা ১০টি আসনও পাবেন না। এত অন্যায় করেছে।
সুইস ব্যাংক থেকে টাকা সরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পর শোনা গেল সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিরা অনেক টাকা সরিয়ে ফেলেছে। লোকে এসব বলাবলি করে। আসলে সবাই এসব বোঝে।
তিনি বিদ্যুতের সমালোচনা করে বলেন, আজকে সরকার বিদ্যুতের কথা বলে। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে প্রকল্প করে টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করা। আজকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু সরকার আরাম-আয়েশ করছে। তারা কাগজ-কলম, চাল-ডাল সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। তারা যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে এ অবস্থা চলতে থাকবে।
বিএনপি মহাসচিব সমাবেশের প্রশংসা করে বলেন, এ তরুণ সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের সাহস বাড়ে। যেন তরুণ বয়সে ফিরে যাই। আজকে এই ফ্যাসিস্ট ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরব না মর্মে উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে যুবদলের সভাপতি টুকু বলেন, আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব বলেন, কোনো বাধা বিপত্তি তরুণদের দমাতে পারেনি। ইনশাআল্লাহ তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই বর্তমান অবৈধ সরকারের পতন ঘটবে। ছাত্রদল সভাপতি শ্রাবণ বলেন, তরুণদের সঙ্গে নিয়েই দেশের মানুষের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য দাবি আদায় করা হবে।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ২৬ আগস্ট ২০২৫ 