আরিফিন তুষার, বরিশাল
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৪, ০৩:১৬ এএম
আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ০৮:৫৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল সিটি করপোরেশন

ওষুধে মশা নয়, মরে তেলাপোকা

ওষুধে মশা নয়, মরে তেলাপোকা

৫৮ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বরিশাল নগরীর বাসিন্দাদের তাড়া করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। খাল, নালা, নর্দমাজুড়ে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। নগরবাসী বলছেন, সিটি করপোরেশন থেকে যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তাতে মশা মরছে না; বরং বিভিন্ন ড্রেন ও খালে থাকা তেলাপোকা বাড়িতে এবং রাস্তায় এসে মারা যাচ্ছে।

এদিকে নগরীর বেশিরভাগ ওয়ার্ডে এখনো পৌঁছায়নি বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম। শহরে নামমাত্র ওষুধ ছিটানোতেই তাদের কাজ সীমাবদ্ধ রেখেছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও বলেছেন, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, মাইকিং করা না হলেও নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, মশার উপদ্রবে অজু করাসহ মসজিদে নামাজ পড়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে মুসল্লিদের। পাড়ামহল্লার প্রতিটি বাড়িতেই মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ব্যবহার করা হচ্ছে কয়েল, মশা মারার ব্যাট, অ্যারোসলসহ নানা পদ্ধতি। এমনকি নগরীর নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রেও আছে মশার চরম উপদ্রব।

বিসিসির টিকাদান কেন্দ্রে আশা অভিভাবক নাছিমা বলেন, ব্যাপক মশা এখানে। টিকাদান কেন্দ্রটি অপরিষ্কার। চারপাশে জঙ্গল। এ অবস্থার মধ্যেই ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে টিকা নিতে আসছেন অভিভাবকরা। দ্রুত টিকাদান কেন্দ্রটি পরিষ্কার করাসহ মশা মারার ওষুধ ছিটানোর দাবি জানান তিনি।

নগরীর রূপতলী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, ছয়তলায় একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকি। মশার উৎপাত এতই বেশি যে, সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েকে মশারির মধ্যে রাখতে হয়। মশার জ্বালায় বাসায় কোথাও একটানা বসে থাকা যায় না। মশার কামড়ে স্বাভাবিক কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, নগরীর অন্য এলাকার তুলনায় এটি নিম্নাঞ্চল। সারা বছরই এ ওয়ার্ডে পানি জমে থাকে। এর মধ্যে নতুন নতুন বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। নির্মাণাধীন এসব ভবনে জমে থাকা পানি ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

অন্যদিকে রূপাতলী হাউজিং এলাকার পাশেই বাস টার্মিনাল। সেখানে টায়ার, টিউব ও যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। টার্মিনালের রাস্তার দুই পাশের ড্রেন ও নালায় অসংখ্য প্লাস্টিকের কাপ, পানির বোতল, করশিটের বাক্স, ডাবের খোসা, ঠোঙা জমে আছে। এখানে ব্যাপক মশা জন্মায়।

নতুন বাজার কালীমন্দির গলির বাসিন্দা ফারজানা বলেন, নতুন বাজার হলো মশার কারখানা। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হলে মশা যেভাবে ঘিরে ধরে, মনে হয় উড়িয়ে নিয়ে যাবে। দিনেও মশা কামড়ায়। ২৪ ঘণ্টা কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বাচ্চাদের মশারির মধ্যেই রাখতে হয়।

বান্দ রোড এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, আগে দেখতাম সন্ধ্যা হলে মশার উৎপাত শুরু হয়, এখন দিন-রাত সমানতালে মশা কামড়ায়। সন্ধ্যার পর তা চরমে পৌঁছে। সন্ধ্যার পর কয়েল ছাড়া ঘরে থাকা যায় না।

২৪ নম্বর ওয়ার্ডের আশেকপুর এলাকার গৃহিণী নার্গিস বলেন, ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়লেও এ এলাকায় কোনো ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। এমনকি লিফলেট বা মাইকিং করে স্থানীয়দের সচেতনও করা হয়নি। দুবছর আগে কিছু কিছু মশা মরার ওষুধ ছিটানো হলেও এখন আর দেখা যায় না। একই এলাকার গৃহিণী ফাতেমা বলেন, মেয়র এ পর্যন্ত ডেঙ্গুর কোনো খবর নেননি। এমনকি মশা মারার কোনো ওষুধও দেননি।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী মিরাজ হোসেন বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান করি। এ মার্কেটে আছে ৮৩টি দোকান। ডেঙ্গুর উপদ্রব বাড়লেও এ মার্কেটে এখন পর্যন্ত ছিটানো হয়নি কোনো ওষুধ।

মার্কেটের অন্য ব্যবসায়ী হাবিব উল্লাহ বলেন, দিনে মশা কম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে বসা যায় না। বাধ্য হয়ে কয়েল জ্বালিয়ে দোকান করতে হয়। বছর দুয়েক আগে মার্কেটের আশপাশ দিয়ে মশা মরার ওষুধ ছিটানো হলেও বর্তমানে সেই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি শাহ্ সাজেদা বলেন, নগরীর সবখানেই মশার উৎপাত। সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম চললেও মশা কমছে না। মশা নির্মূলে আগাম ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ৩০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন মাত্র ১০০ কর্মচারী। আধুনিক সরঞ্জাম বলতে রয়েছে ১০টি ফগার মেশিন। আর রয়েছে ৪৫টির মতো হস্তচালিত স্প্রে। তবে যারা এসব পরিচালনা করছেন, তাদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ। ফলে তারা জানেন না কোথায় কোন প্রজাতির মশা রয়েছে, কোন মশার জন্য কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা কতটুকু, তা-ও তাদের জানা নেই।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের মশক নিধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, মশক নিধনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রোগ্রাম নিয়েছি। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি টিম মশার লার্ভা শনাক্তে কাজ করে। শনাক্ত হলে সেখানে হ্যান্ড স্প্রে ব্যবহার করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া বিকেলে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনে স্প্রে করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এডিস মশার লার্ভা শনাক্তে বরিশালে কোনো ল্যাব নেই। যে কারণে মশার লার্ভা শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তবে মশার লার্ভা শনাক্তের জন্য বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে একজন কর্মকর্তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে দেওয়া হয়নি।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, মশার কামড় থেকে বাঁচাতে ঘরে সবাইকে মশারি ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া বাড়ির আশপাশে যাতে মশার বংশবিস্তার করতে না পারে, এজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সীমান্তে গুলিতে যুবকের মৃত্যু, পরিবার বলছে ‘হার্ট অ্যাটাক’ 

মির্জা ফখরুলের সঙ্গে চায়না রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

ভল্ট ভেঙে ১৫ লাখ টাকা চুরি, নৈশপ্রহরীর দুই সহযোগী রিমান্ডে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরল করোনাকালীন নিয়ম

নরসিংদীতে অটোরিকশাচালকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার

বেড়েছে স্বর্ণের দাম, কত টাকা ভরি আজ

ঋতুপর্ণার জন্য কবিতা লিখলেন ফেরদৌস

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না হওয়া প্রসঙ্গে যা বললেন ড. ইউনূস

একীভূত হচ্ছে ৫ ব্যাংক

‘পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সরকার এখনই আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে’

১০

ইরানে ইন্টারনেট চালু করলেন ইলন মাস্ক

১১

গাজীপুরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

১২

মোসাদের দুই গুপ্তচরকে আটক করেছে ইরান

১৩

কেন ভারত ইসরায়েল, আর পাকিস্তান ফিলিস্তিন নয়

১৪

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে মাউশির নতুন নির্দেশনা

১৫

বঙ্গোপসাগরের এক কোরাল ২৪ হাজারে বিক্রি 

১৬

আবারও ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বাড়ছে অর্থের পরিমাণ

১৭

জেইউডিও’র নতুন সাধারণ সম্পাদক ফারিম আহসান

১৮

কাপ্তাইয়ে প্রকাশ্যে যুবককে গুলি করে হত্যা

১৯

‘চোকার্স’ বলে বিদ্রুপ অস্ট্রেলিয়ার, লর্ডসে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জবাব বাভুমাদের

২০
X