কালবেলা প্রতিবেদক, গাজীপুর
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১০:০৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

১৬ বছর অনুপস্থিত সেই ৩ শিক্ষক ফের নিয়োগ পাচ্ছেন

কালিয়াকৈর সরকারি কলেজ। ছবি : কালবেলা
কালিয়াকৈর সরকারি কলেজ। ছবি : কালবেলা

গাজীপুরে ১৬ বছরে একদিনও ক্লাসে না গিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সরকারি কলেজে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন বহিষ্কৃত ৩ শিক্ষক। কালিয়াকৈর সরকারি কলেজের বহিষ্কৃত এই ৩ শিক্ষককে ফের নিয়োগ দেওয়ার খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। অনুপস্থিত থাকার তথ্য মন্ত্রণালয়ে গোপন করে নানা দেনদরবার শেষে ওই ৩ শিক্ষক যোগদান করতে কলেজে যান। তবে কৌশলগত কারণে তাদেরকে যোগদান করানো হয়নি।

দুর্নীতির অভিযোগে ১৬ বছর আগে কালিয়াকৈর সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রভাষক মো. জাহাঙ্গীর আলম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ের প্রভাষক কিশোর কুমার সরকার এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক ফাতেমা পারভীনকে বরখাস্ত করা হয়।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে সরকারিকরণ করা হয়। বর্তমানে ওই কলেজের নাম কালিয়াকৈর সরকারি কলেজ। উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভূগোল বিভাগের প্রভাষক হিসেবে এ কলেজে যোগ দেন।

এরপর ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে এমপিওভুক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে ২০০৪ সালের ১৮ জুন নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। একই বছর ২৩ জুন প্রভাষক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। অফিস তথ্য মতে তিনি ২০০৮ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে পরবর্তী সময়ে কলেজে উপস্থিত থেকে আর কোনো কার্যক্রমে অংশ নেননি।

বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে কলেজ গভর্নিং বডি ২০০৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে উপাধ্যক্ষ পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক গঠিত তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রভাষক পদের এমপিওভুক্তিও বাতিল করা হয়।

কলেজ সূত্র জানায়, কলেজটি জাতীয়করণের জন্য ২০১৩ সালের ২৯ জুন পরিদর্শনকালেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এরপর থেকে তিনি আর কখনোই কলেজে যাননি। এই দীর্ঘ সময় পর সম্প্রতি তিনি কলেজে যোগদান করতে যান। তবে যোগদান করতে পারেননি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কলেজটির নামের বিষয়ে প্রথম থেকেই আমি এর বিরোধিতা করি। এ কারণে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আমার বিরুদ্ধে লাগেন। দুদকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। থানা, পুলিশ সুপার, জেলা দায়রা জজ আদালতসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এ সব মিথ্যা মামলা আমি লড়তে থাকি।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে প্রভাষক কিশোর কুমার সরকার নিয়োগের পর দুই মাস অনিয়মিতভাবে কলেজে উপস্থিত থাকেন। শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করণের সময়ও তিনি কলেজে নিয়মিত হাজির হননি। ফলে তার এমপিওভুক্ত হননি। তাকে কারণ দর্শানোসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নোটিশের জবাব না দেওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক কিশোর কুমার সরকারকে প্রভাষক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তিনিও কলেজে যোগদান করতে গিয়েছিলেন।

কিশোর কুমার বলেন, যেসব অভিযোগ দিয়ে আমাদের বরখাস্ত করা হয়েছে তার সবই মিথ্যা। নানাভাবে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। ২০০৪ সালের ২৩ জুন কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অতিরিক্ত প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান ফাতেমা পারভীন। নিয়োগের পর থেকেই তিনি কলেজ যাননি। পরে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ২০১১ সালে ১৩ আগস্ট প্রভাষকের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা জানান, বরখাস্ত হওয়া তিন শিক্ষক চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছেন। তিনটি মামলা এখনো চলমান। তার আগেই তথ্য গোপন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অ্যাডহক নিয়োগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ৩০ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ‘জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০’ মোতাবেক ওই তিন শিক্ষককে অস্থায়ীভাবে আত্তীকৃত ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ কালিয়াকৈর সরকারি কলেজের জনবল কাঠামো মোতাবেক ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের জায়গায় বিসিএস ক্যাডার মো. হাবিবুল্লাহ ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিসিএস ক্যাডার ফাতেমা পারভীনের জায়গায় মোসা. রুবা ইয়াসমিন।

কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন জানান, ওই তিনজন যেহেতু বরখাস্ত তাই তাদের নাম বা পদ সৃজনের শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়নি। তারপরও তারা বিগত সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে পদ সৃজন করেন। পরবর্তীতে তাদের এডহক নিয়োগা না দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুফিয়া বেগম বলেন, বরখাস্তকৃত ৩ শিক্ষককে যেসব বিষয়ে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন। যার কারণে নির্দেশনা আসলেও এই মুহূর্তে তাদের এই কলেজে যোগদান করানোর কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয় ও মাউশিকে লিখিতভাবে জানাব।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, ওই তিন শিক্ষকের যোগদানের বিষয়টি আবার রিভিও করা উচিত বলে মনে করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পল্লবী থানা হেফাজতে জনি হত্যা : দুই পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল

গানের টিজারেই ঝড় তুললেন হৃতিক আর জুনিয়র এনটিআর

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস জিনিয়াসে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সাফল্য 

মিরপুরে পিচ পরিদর্শনে হেমিং, চোখে পড়ল ‘পুঁই বাগান’

ত্বকের যেসব লক্ষণে বুঝবেন শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ছে

তারেক রহমানের নির্দেশে বৃদ্ধ দম্পতিকে সহায়তা

আরপিও চূড়ান্তে ইসির মুলতবি সভা শুরু

আপন বোন ও তার প্রেমিককে খুন করল ভাই

শোয়েবুর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

ওমানে প্রবাসীদের জন্য রেসিডেন্স কার্ড চালু

১০

নির্বাচনে ৮০ হাজারের বেশি সেনাসদস্য দায়িত্বে থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১১

আবারও বড়সড় বিপদের মুখে এয়ার ইন্ডিয়া

১২

বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গ্রন্থের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উপলক্ষে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সেমিনার

১৩

সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম ফের ৩ দিনের রিমান্ডে

১৪

সাইফ-কারিনার দুই ছেলের রক্তে মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৫

এনইউবি–আল-আজহার যৌথ কর্মশালা: আধুনিকতা–পরাধুনিকতার কাব্যতাত্ত্বিক মানচিত্র

১৬

সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় মালয়েশিয়ায় প্রতিবাদ সভা

১৭

প্লট দুর্নীতি  / শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য আজ

১৮

ইয়ামালের জোড়া গোলে বার্সার গাম্পার ট্রফি জয়

১৯

হত্যাচেষ্টার মামলায় জামিন পেলেন শমী কায়সার

২০
X