কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিচার বিলম্বিত হওয়া একদিনও উচিত নয় : সলিমুল্লাহ খান

বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। ছবি : কালবেলা
বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান। ছবি : কালবেলা

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আপনারা দেখেছেন লাশ গুম করেছে। তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। কিন্তু তাদের বিচারের জন্য আমাদের এক বছর কেন অপেক্ষা করতে হবে। এই বিচার বিলম্বিত হওয়া একদিনও উচিত নয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অনেক বেশি সময় নিচ্ছে। তারা বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা যথাযথ মনে করি না।’

সোমবার (২৮ জুলাই) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ আসিফ হাসান স্মরণে নর্দান ইউনিভার্সিটির অডিটরিয়ামে ‘শহীদ আসিফ ও রক্তাক্ত জুলাই : প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আসিফ নর্দান ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আসিফের বাবা মাহমুদ আলম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন- নর্দান ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য লাবিবা আব্দুল্লাহ এবং শিক্ষাবিদ ড. মীর মনজুর মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় কোরআন তেলাওয়াত এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় এ স্মরণসভা। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নর্দানের অবদান ও শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণমূলক ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রকাশ করা হয়।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, জুলাই যোদ্ধা ও আহত শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসাসেবায় ভূমিকা রাখায় কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মানুষ মানুষকে স্মরণ করে। যদি আমরা শহীদদের ভুলে যাই, তাহলে নিজেদের পরিচয় দেব অমানুষ হিসেবে। শহীদদের মনে রাখার অর্থ হচ্ছে, তাদের স্বপ্নের সঙ্গে বেইমানি না করা। আমি মনে করি না, তাদের স্বপ্ন শুধু কোটা প্রথা বাতিলের। তাদের লক্ষ্য ছিল সুদূরপ্রসারী। এ দেশে সব ধরনের বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার, গুম, খুনের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল তাদের। সেটি আমরা কতটা পূরণ করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘শহীদ শব্দের একটা অর্থ হচ্ছে সাক্ষী। আসিফসহ যারা শহীদ হয়েছেন, তারা কি সাক্ষী দিয়েছেন? আমাদের দেশে একসময় আইয়ামে জাহেলিয়াত নেমে এসেছিল, এটা হচ্ছে তাদের প্রথম সাক্ষ্য। তারা রক্ত এবং প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছে, এই আইয়ামে জাহেলিয়াতকে বাংলাদেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়নি, এটা হচ্ছে দ্বিতীয় সাক্ষ্য। আমাদের যা ছিল তা দিয়ে আমরা লড়াই করেছি। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র থেকে দেশের ছাত্র-জনতা মনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়েছেন। এই আন্দোলনের শুরুতেই ছাত্ররা যে নামকরণ করেছে, তাতে গভীর তাৎপর্য রয়েছে। এটা শুধু কোটাবিরোধী নয়, এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে জাতিসংঘের হিসেবে শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে এক হাজার ৪০০ জন। তার আগের ১৫ বছরে কত প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, কত মানুষকে গুম করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কত প্রাণ দিয়েছে তারও হিসেব নিতে হবে এবং বিচার করতে হবে। আমাদের এ দাবি জানাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই থেকে আমাদের নেওয়ার মতো অনেক শিক্ষা আছে। যেটাকে আপনারা জুলাই সনদ বলছেন। সে সনদ লিখেছি আমরা রক্ত দিয়ে। এখন সেটা স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, আমাদেরই আদায় করে নেওয়ার ব্যাপার। যদি এই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হয়, যদি স্বৈরাচার আবার ফিরে আসে অথবা নতুন কোনো স্বৈরাচার তৈরি হয়, তাহলে জুলাই পরাজিত হবে। জুলাইযোদ্ধাদের কাজ হচ্ছে উন্নত মম শির।’

সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দেশের শিক্ষক, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, আপনারা যাই বলেন না কেন, আমি ভেতর থেকে সাক্ষী আছি- এটা খুব গৌরবজনক ছিল না। ছাত্ররা যেভাবে এগিয়ে এসেছে, সেভাবে শিক্ষকরা এগিয়ে আসেননি। যারা এগিয়ে এসেছেন, যেসব গুণী শিক্ষক আপনারা পেয়েছেন, এটা অনেকটা বিরল ঘটনার একটি।’

নর্দান ইউনিভার্সিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজকের ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্যে নর্দান ইউনিভার্সিটিকে ধন্যবাদ। যারাই এই অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছে, অবদান রেখেছে প্রত্যেকের স্বীকৃতি চাই। এখানে লোভের বিষয় নেই। এটা হচ্ছে ইতিহাসের প্রতি সত্যের প্রতি অঙ্গীকারের জন্য। যে লক্ষ্যের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। সে লক্ষ্য পূরণে ২০২৪ সালে আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা তৈরি করেছি। মানুষ যেন তার সম্পূর্ণ মানবিক মর্যাদা ফিরে পায় সেজন্য আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।’

প্রধান অতিথি শহীদ আসিফ হাসানের বাবা মাহমুদ আলমের পক্ষে বক্তব্য দেন আসিফের ভাই রাকিব হাসান। শহীদ আসিফকে স্মরণ করায় পরিবারের পক্ষ থেকে নর্দান ইউনিভার্সিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্বীকৃতি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি জানান তিনি।

ট্রাস্টিজ বোর্ডের সদস্য লাবিবা আব্দুল্লাহ আমন্ত্রিত অতিথি ও আয়োজক সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উপদেষ্টা ড. মিজানুর রহমান, রেজিস্ট্রার কমান্ডার (অব.) মো. মোস্তফা শহীদ বিএন এবং অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের ডিন ড. মো. মারুফ উল ইসলাম।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারায়ণগ‌ঞ্জে রাতে আগুন, পুড়লো ২০ বসতঘর

মানুষ যখন জাগবে তখন ইতিহাস বদলাবে : তাসনিম জারা

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনা জটিল হবে : এহসানুল হুদা

একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটাই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না : আমীর খসরু

ভুক্তভোগীর নয়, আ.লীগ নেতার মামলা নিলেন ওসি

ভাত খাওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের তর্ক, অতঃপর...

বিএসএফের বাধায় আটকে আছে বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে থাকা ৭ অঙ্গীকারনামা

আমরা আর গুম-খুনের ব্যবস্থায় ফেরত যাব না : তাসনিম জারা

আ.লীগকে ফেরানোর চক্রান্ত হলে দেশবাসী প্রতিহত করবে : জাগপা

১০

মাদ্রাসাছাত্রকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষক কারাগারে

১১

জাল সনদে সাবেক এমপির স্ত্রীকে নিয়োগ, অধ্যক্ষ হাজতে

১২

যুক্তরাজ্যে মাল্টিপল ভিসার আবেদন খালেদা জিয়ার

১৩

স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শটগান ও গুলি উদ্ধার

১৪

‘ভুল’ ঢাকতে ভুলের বৃত্তে বিওএ!

১৫

বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৬

সিঙ্গাপুরে সাঁতারু সামিউলের রেকর্ড

১৭

প্রধান উপদেষ্টাকে সৌদি যাওয়ার আমন্ত্রণ

১৮

ব্যক্তি স্বার্থে অনৈতিকভাবে কাউকে কিছু করতে দেওয়া হবে না : চসিক মেয়র

১৯

পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন নয় : চরমোনাই পীর

২০
X