ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার (১৮ অক্টোবর) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
ইউট্যাব মনে করে, এ ঘটনা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান রোববার (১৯ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থানে কার্গো ভিলেজে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইউট্যাব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। দেশের প্রধান প্রবেশদ্বার ও অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বারবার এমন দুর্ঘটনা, বিশেষ করে কার্গো ভিলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আগুন লাগার ঘটনা কেবল একটি দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। এটি দেশের ভাবমূর্তি, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে বিপুল পরিমাণ আমদানি করা পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি এবং বিমান চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা জাতীয় অর্থনীতির জন্য এক বিশাল ধাক্কা।
তারা বলেন, আমরা মনে করি, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বারংবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা, অব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তার দুর্বলতার পরিচায়ক। এই অগ্নিকাণ্ড দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগের অভাব রয়েছে।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যখন দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে, ঠিক তখনই দেশের স্পর্শকাতর একটি স্থানে এমন বিপর্যয়মূলক ঘটনা ঘটল। ইউট্যাব দৃঢ়ভাবে মনে করে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার হীন উদ্দেশে এই অগ্নিকাণ্ড আগামী সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। এ ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক শক্তির যোগসূত্র রয়েছে কিনা, তা দ্রুত, নিরপেক্ষ এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের দাবি জানাচ্ছে ইউট্যাব। আমরা মনে করি, কেবল অগ্নিকাণ্ডের কারণ নির্ণয় করাই যথেষ্ট নয়, এর পেছনে যদি কোনো অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা বা দেশবিরোধী শক্তির মদদ থাকে, তবে তা খুঁজে বের করে দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
তারা আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। আমরা মনে করি, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটন করে এই ঘটনায় জড়িত সব দায়ীকে চিহ্নিত করে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সব ত্রুটি ও দুর্বলতা দ্রুত চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, অনতিবিলম্বে কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিমান চলাচল স্বাভাবিক করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত আমদানি-রপ্তানিকারকদের তালিকা তৈরি করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। কার্গো ভিলেজসহ বিমানবন্দরের সব স্থানে অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিশ্চিত করতে হবে এবং তা নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, তার জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নেতারা বলেন, ইউট্যাব বিশ্বাস করে, জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকার এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করবে না। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থাকে দ্রুত ও কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ইউট্যাব আশা করে, সরকার এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এর পেছনে থাকা প্রকৃত কারণ এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করবে।
মন্তব্য করুন