কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিশ্ব ইতিহাসে পার্বত্য শান্তি চুক্তি একটি বিরল ঘটনা : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ইতিহাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি একটি বিরল ঘটনা বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল শনিবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয় পক্ষ বা বহিঃশক্তির মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক শান্তির দলিলটি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম আধুনিকতার ছোয়া বিবর্জিত পশ্চাৎপদ পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন এবং পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের সমান সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা নেন। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালের জুন মাসে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহে পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণের নির্দেশনা প্রদান করেন।’

তিনি বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বাঙালি-পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। খুন, অত্যাচার-অবিচার, ভূমি জবরদখল এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এ অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তোলে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারও ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ঐতিহাসিক এই শান্তি চুক্তির চরম বিরোধিতা করে পার্বত্য অঞ্চলকে পুনরায় অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল। এ অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের সেই হীন উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়নি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আলোকে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করেছি। এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো ও মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। আমরা গত বছর পার্বত্য অঞ্চলে একই দিনে ৪২টি সেতু উদ্বোধন করেছি। এ অঞ্চলের সব বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি। রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। ভূমিবিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ভূমি কমিশন কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলায় উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না সেসব এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে এ অঞ্চলের নারী ও শিশুদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্যবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং গবেষণাসহ তাদের সাথে সমতল ভূমির জনগণের সেতুবন্ধন স্থাপনের লক্ষ্যে ঢাকার বেইলি রোডে প্রায় ২ একর জমির ওপর একটি শৈল্পিক ও নান্দনিক কমপ্লেক্স ‘শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ পিছিয়ে পড়া কোনো জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সমঅংশীদার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। আমি আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে পুলিশের গাড়িতে আগুন

কপ৩০ সম্মেলন / জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকাতে ব্রাজিলের চেষ্টা

আজ সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর / ‘বাংলার মানুষ কাঁদো, ভোলার গাছে গাছে ঝুলছে মানুষের লাশ’

সব জায়গায় একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার কতটা ঝুঁকি

সৌদিতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বিসিবিকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য গামিনির

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকে দুর্বৃত্তদের আগুন

অক্টোবরে সড়কে ঝরেছে ৪৬৯ প্রাণ

যা আগে ক্রিকেটে দেখা যায়নি, তা ঘটবে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে

আড়াই কোটির টাকার হেরোইনসহ মাদক কারবারি আটক

১০

‘ফ্যামিলি ম্যান ৩’ থেকে সরে যাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন পরিচালক সুপর্ন

১১

চাকরির ইন্টারভিউতে যে ১২টি সাধারণ ভুল আমরা করি

১২

গুণগত ব্যবস্থাপনায় ইউল্যাবের আইএসও ৯০০১:২০১৫ অর্জন

১৩

উত্তরায় মাইক্রোবাসে আগুন

১৪

নতুন নিরাপত্তা চুক্তি করল অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া

১৫

কারাভোগের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে মির্জা ফখরুলের স্ট্যাটাস 

১৬

সাদমান-জয়ের ফিফটিতে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে প্রথম সেশন

১৭

হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নদীতে মিলল ব্যবসায়ীর মরদেহ

১৮

মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ

১৯

গাজীপুরে রাতভর ৩ বাসে আগুন, টহল জোরদার

২০
X