গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি মামলায় সাজা দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান সোমবার (১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে একজন সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। কিন্তু আমরা দেখলাম, তথাকথিত শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা মনে করি ড. ইউনূস ন্যায়বিচার পাননি। তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসা ও আক্রোশের শিকার হয়েছেন। কেননা, ইতোপূর্বেও ঠুনকো অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে এ সরকারের আমলে একাধিক মামলা করা হয়েছে।
ইউট্যাবের নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণের মাধ্যমে নষ্ট করেছে। দেশে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানবাধিকার নাই। বিচার বিভাগের ওপর ফ্যাসিস্ট সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপ করছেন। দেশের বড় বড় অপরাধীরা সরকারের কৃপায় ছাড়া পেয়ে যায় আর ড. ইউনূরে মতো বরেণ্য ব্যক্তিদের রাজনৈতিক উদ্দেশে আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।
তারা বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, কিন্তু বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে তা হাস্যকর। তাকে সাজা দেওয়ার পেছনে দূরভিসন্ধি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। মূলত সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করে দেশের চলমান পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অন্যতম ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এটি।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ২০২২ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা। শুধু তাই নয়, অতি সম্প্রতি শেখ হাসিনা বরাবর শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা স্বাক্ষর করে আরও একটি নতুন চিঠি দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা প্রেসিডেন্ট, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের মতো ব্যক্তিত্ব। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এসব বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিদের খোলা চিঠিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ড. ইউনূসকে সাজা দিয়েছে। যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করবে বলে মনে হয়।
নেতারা বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গত প্রায় ১৫ বছরে দেশের মানুষের ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ ঠিকমতো ভোট দিতে পারেনি। সরকার তার অনুগত প্রশাসনযন্ত্রকে দিয়ে দিনের ভোট রাতেই কেটেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসবের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের ২৪ মে বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক না হলে নতুন ভিসানীতির ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার পর সরকারের মন্ত্রী-এমপি এবং তার কিছু অনুগত আমলার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতা আড়াল করতেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি এটা সরকারের শীর্ষ মহলের নির্দেশেই হয়েছে যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন