কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংবিধান কবর দেওয়ার কথা বললে কষ্ট লাগে : মির্জা আব্বাস

রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবনির্বাচিত নেতাদের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন মির্জা আব্বাস। ছবি : কালবেলা
রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবনির্বাচিত নেতাদের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন মির্জা আব্বাস। ছবি : কালবেলা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, শহীদের রক্তের বিনিময়ে লেখা সংবিধান। সে সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয়, তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীতে আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নবনির্বাচিত নেতাদের মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশের সংবাদপত্র আগেও স্বাধীন ছিল, বরাবরই স্বাধীন। কিন্তু সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই, মালিকপক্ষ যা বলে তাদের তাই করতে হয়। এর বাইরে কিছু করার নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা আব্বাস বলেন, দুদিন আগেও পতিত স্বৈরাচারের দোসরকে সচিবালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে আপনারা কি সংস্কার করবেন? জাতির মনে প্রশ্ন জাগে, আমার মনেও প্রশ্ন জাগে।

তিনি বলেন, আমি বলতে বাধ্য, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, সম্মুখ সারি থেকে যুদ্ধ করেছি। যুদ্ধে আমার কাছের অনেক বন্ধু-বান্ধব শহীদ হয়েছেন। শহীদের রক্তের বিনিময়ে লেখা সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয় তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে। ওই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য। তবে সংবিধান রাফ খাতা নয়, যে ছুড়ে ফেলব। যদি নতুন কোনো সংবিধান লিখতে হয় তাও তো লিখতে হবে, আগের অমুক সালের সংবিধান বাতিল করে এ সংবিধান জারি করা হলো। সুতরাং এই সংবিধানকে সংশোধন করা যাবে। সংবিধানে সংশোধন স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। এই সংবিধানকে যারা মিস ইউজড করেছে, যারা অপব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। মাথাব্যথা হলে কি মাথা কেটে ফেলতে হয়? মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হয় না, ঔষধ খেতে হয়৷

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ভুল বুঝবেন না। কবর দিয়ে দেব, মেরে ফেলব, কেটে ফেলব- কথাগুলো কিন্তু ফ্যাসিবাদের মুখের কথা। এ কথাগুলো কিন্তু ভালো কথা নয়। জাতি তাকিয়ে আছে তোমাদের দিকে, আমরাও তাকিয়ে আছি তোমাদের দিকে। তোমাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা) মুখ থেকে এ ধরনের কথা আমরা আশা করি না।

তিনি বলেন, জাতির কাছে প্রশ্ন জাগে, আমারও জাগে আওয়ামী লীগকে আবার ফিরে আসার রাস্তা করে দিচ্ছি? এই যে আজকে বৈষম্যমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে, এই কিছুক্ষণ আগে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যারা নাকি আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে ৫ আগস্ট। এককভাবে তারা এই আন্দোলনকে নিজেদের করে নিতে চায় কিন্তু আপনারা দেখেছেন, আমরাও জানি, আমরাও দেখেছি, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিভু নিভু তখন কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামনে এগিয়ে আসে, সাধারণ মানুষ সামনে এগিয়ে আসে, আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের বিএনপির রাজনৈতিক কর্মীই ৪৬২ জন মারা গেছে এর মধ্যে। নিশ্চয় নেতৃত্বে একজন থাকবে, পিছনে হাজারো লোক থাকবে কিন্তু এককভাবে কেউ কারো দাবি করা ঠিক না৷ এতে কিন্তু জনমনে বিভেদ সৃষ্টি হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কিছু লোক বাইরে থেকে সরকার গঠন করে ফেলেছেন- মনে হয় এরকম। তারা আবার বলেনও, এদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়। তাদের কথাবার্তায় যে ঝাঁঝ, আজকে আমাদের ছাত্র ভাইদের কথাবার্তাও একই রকম। আমরা তা হলে ৭১ সালে কি করলাম? আমার প্রশ্ন এই জায়গায়, ৭১ সালে জাতি কি করল? আমরা কি অন্যায় করেছিলাম? আমি জানি, একটা পক্ষ বলবে, হ্যাঁ, ঐদিন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে অন্যায় করেছেন। বলতে পারেন, স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আমরা কি অন্যায় করেছিলাম যুদ্ধ করে? এই দেশকে স্বাধীন করে?

কথাবার্তা বলার সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, আমাদের একটা ভালো প্রতিবেশী নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, মাথায় রাখতে হবে, আমাদের দেশের পাশে যারা আছে তারা আমাদের স্থির থাকতে দিতে চায় না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা ওদের সুযোগ দিতে চাই না, সুযোগ দিব না। আজকে বাংলাদেশ নিয়ে কত কথা বলতেছে, কেউ চট্টগ্রাম নিয়ে যায়, কেউ লালমনিরহাট নিয়ে যায়, কেউ দিনাজপুর নিয়ে যায়, হরিলুটের মাল বাংলাদেশ। না, সম্ভব না।

এই যে আগুন, আনসার বিদ্রোহ এসব বিষয় এমনি এমনি হচ্ছে না, কেউ না কেউ উসকানি দিচ্ছে। তারা সচিবালয়েই বসে আছে। তারা আজকে উপদেষ্টাদের সহযোগী হয়ে আছেন। সবাইকে কিন্তু আমরা চিনি, বলেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রেস কনফারেন্সের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, অহংকার আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না, হাসিনা অহংকার করেছিল, পতন হয়ে গেছে। অহংকারী কথাবার্তা বলত, পতন হয়ে গেছে সুতরাং এমন কথা না বলাই ভালো। এমন কথা না বলাই ভালো যা আল্লাহ পছন্দ করেন না, দেশের মানুষ পছন্দ করেন না৷ জাতির ভিতরে দয়া করে আপনারা বিভক্তি আনবেন না। এত কষ্টের অর্জন, হাসিনার পতন সেই কষ্টের অর্জনকে দয়া করে কয়েকজন লোকের ইশারায় কথা বলে, বালখিল্যতা করে জাতিকে বিভক্ত করবেন না- এটা আমার অনুরোধ।

মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি কখনো ক্ষমতা যাওয়ার কথা বলে না, সে কথা ভাবে না। আমাদের দল ভোটাধিকারের কথা বলে। দেশের মানুষের অধিকারের জন্য আমরা জীবন দিয়েছি, জেল খেটেছি। নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, এটা বিএনপি বা আমরা ভাবি না। এ কথা ভাবে সাধারণ মানুষ।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাড়ল আকরিক লোহার দাম 

মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে বিপিএল খেলা পাক ক্রিকেটারের নামে স্ট্যান্ড

আস্ত কাঁচা মাছ চিবিয়ে খান তিনি

যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বহুমাত্রিক যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

পারমাণবিক অস্ত্রাগার উন্নত করছে চীন, নেপথ্যে কী?

কিউবা মিচেল-তপুদের দায়িত্বে আর্জেন্টাইন কোচ

গোপনে বিয়ে করলেন জিয়া মানেক

উপদেষ্টা মাহফুজের বাবা ইউনিয়ন বিএনপির সম্পাদক নির্বাচিত 

রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণে একই পরিবারের দগ্ধ ৩

উড্ডয়নের সময় এফএ-১৮ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, ককপিটে ছিলেন ২ পাইলট

১০

ভবদহের চার দশকের দুঃখের অবসান হতে যাচ্ছে

১১

এইচএসসি পাসেই এনজিওতে চাকরির সুযোগ

১২

সালমানকে নিয়ে অভিমান প্রকাশ করলেন ঐশ্বরিয়া

১৩

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রথম ভর্তি পরীক্ষা আজ

১৪

এশিয়া কাপে কোন বোলারকে মিস করবে ভারত, জানালেন হরভজন

১৫

গণমাধ্যমের অনুকরণে স্যাটায়ার পেজে বিভ্রান্তি

১৬

ধূমপান না করেও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে, যে লক্ষণ দেখে বুঝবেন

১৭

ডাকসুর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কারা এগিয়ে 

১৮

ডাকসুর ভিপি-জিএস প্রার্থীদের পরিচয়

১৯

কলম্বিয়ায় হেলিকপ্টার ও বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৮

২০
X