নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, প্রবাসীরা অনেক কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠান, জমিজমা-সম্পত্তি কেনেন। দেশে এসে আবার প্রতারিত হন। এই প্রতারণা যে সব সময় সরকার করে তা নয়, অনেক সময় তার আত্মীয়স্বজনরাও এই কাজ করে। সরকার মূলত প্রবাসীদের বিষয় নিয়ে চিন্তা করে না। বরং প্রবাসীদের পাঠানো টাকা কীভাবে পাচার করতে পারবে, সেই টাকা দিয়ে কীভাবে নিজেদের বাড়ি-গাড়ি করতে পারবে- সেই চিন্তা তাদের। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে প্রবাসীদের উপকার হবে না।
রোববার (১০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ’-এর আয়োজনে ‘দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, প্রবাসীদের সম্ভাবনা, সংকট ও সুরক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি ও প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নুরুল হক নুর বলেন, একটা ভয়ংকর বিপর্যয়ের মধ্যে দেশ। দেশে-বিদেশে কোথাও এ দেশের নাগরিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা নেই। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের নারী শ্রমিকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই আবার সেখানে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের বাইরে বিপদে পড়লেও দূতাবাসের পক্ষ থেকে সেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, নেপাল থেকে শ্রমিকরা ৭৮ হাজার টাকায় মধ্যপ্রাচ্যে, মালয়েশিয়ায় গেলেও আমাদের দেশ থেকে যেতে তাদের ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা লাগে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে এমপি-মন্ত্রী-আমলা সবাই জড়িত, সবাই-ই কমিশন নেয়। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে দেশ চলছে, অর্থনীতি টিকে আছে- তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অনুরোধ করব, দেশ-জাতির জন্য প্রবাসীদের সহযোগিতা করুন, তাদের পাশে দাঁড়ান। প্রবাসীরা ভালো থাকলে দেশ ভালো থাকবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন বলেন, আমাদের প্রবাসী ভাইদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি চলে, রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। জোট সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়া প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় খুলেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, কোভিডের সময় বিদেশে থাকা সকলেই দেশে টাকা পাঠাল, রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন হলো। সেই রিজার্ভের অর্থ কীভাবে কোথায় নেওয়া যায়, সেটি নিয়ে নয়-ছয় করে এখন রিজার্ভ সংকট তৈরি করেছে। নানাভাবে দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরা যে দুর্ভোগে আছে সেটা দেখা যায় বিমানবন্দরে, দেশের বাইরে। এতো কষ্ট করে টাকা পাঠায় অথচ বিমানবন্দরসহ দূতাবাসগুলোতে তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়।
গণঅধিকার পরিষদের এই অংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, আজকে দেশে ও প্রবাসে কোনো বাংলাদেশি ভাল নেই। সরকার প্রবাসীদের সঙ্গে দাসের মতো ব্যবহার করছে। এয়ারপোর্ট ও বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। আমরা সব সময় প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও বিনা খরচে তাদের লাশ দেশে আনার বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রেখে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদ সবসময় প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে পাশে থাকবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, সরকার প্রবাসীদের কষ্ট নিয়ে চিন্তিত নয়। আমি ছয় বছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে ছিলাম। আমি দেখেছি প্রবাসীদের কী কষ্ট। দেশের অর্থনীতি, রিজার্ভ টিকে আছে প্রবাসীদের কারণে। তাই আমাদের প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
প্রবাসী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মালয়েশিয়াপ্রবাসী আল মামুনের সভাপতিত্বে এবং আইয়ুব আল আনসারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি জার্মানপ্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার মো. কবীর হোসেন।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন- যুবঅধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি জাফর আহমেদ, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রবাসী সেবা ডেস্কের সমন্বয়ক শিহাব উদ্দিন শিহাব, সোহাগ হোসেন, ইমরানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের কষ্ট লাঘবে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ১০টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়।
সেগুলো হলো-
১. প্রবাসে মারা যাওয়া সকল বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃতদেহ রাষ্ট্রীয় খরচে দেশে নিতে হবে। অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ এবং অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ পরিবহন ব্যয়সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২২ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কূটনৈতিক দূতাবাসগুলোতে বুথ খুলে জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া ও ভোটার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
৩. বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রবাসীদের জন্য যুগোপযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ও পেনশন সুবিধা চাই।
৫. পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালালমুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা চাই। পাসপোর্ট সংশোধন সহজ প্রক্রিয়ায় ও দ্রুততার সঙ্গে চাই।
৬. প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চাই।
৭. জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য (৫ শতাংশ) বিশেষ বরাদ্দ চাই।
৮. বিদেশে কাগজপত্রবিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণে সরকারের সহযোগিতা চাই।
৯. বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাংলাদেশি দূতাবাস ও শ্রম কল্যাণ উইং চাই।
১০. অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান, সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা চাই।
মন্তব্য করুন