বেনজীর পরিবারের ৮ ফ্ল্যাট, জমিতে তত্ত্বাবধায়ক
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা আরও আটটি ফ্ল্যাট এবং ২৫ একর ২৭ কাঠা জমি দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর কালবেলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে তৃতীয় দফায় গত ১২ জুন বেনজীর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ওই ৮ ফ্ল্যাট এবং জমি জব্দ করার আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া গত ২৩ ও ২৬ মে দুই দফায় বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬২১ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জা। তার নামে প্রায় ৫২১ বিঘা জমি খুঁজে পেয়েছে দুদক। বাকি ১০০ বিঘার মতো জমি রয়েছে বেনজীর, তার তিন মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীর এবং স্বজন আবু সাঈদ মো. খালেদের নামে। জীশান মীর্জার নামে মাদারীপুরের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজায় ২৭৬ বিঘা জমি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৩৪৫ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। বেনজীর পরিবারের সদস্যদের নামে গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। তার মধ্যে তিনটি তার স্ত্রীর নামে এবং একটি ছোট মেয়ের নামে। র‌্যানকন আইকন টাওয়ারে এ চার ফ্ল্যাট কেনা হয় একই দিনে।
২৮ জুন, ২০২৪

বেনজীরের স্থাবর সম্পদ দেখতে তত্ত্বাবধায়ক
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৬২১ বিঘা সম্পত্তি ও চারটি ফ্ল্যাট দেখভালে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে বেনজীর আহমেদকে দুদক তলব করলেও শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় ২৩ জুন নতুন তারিখ ঘোষণা করেছে দুদক। এর আগে গত ২৮ মে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। সেই নোটিশে বেনজীরকে ৬ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ক্রোক করা স্থাবর সম্পদ দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করেছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পর শুনানি শেষে আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়। দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সময় দিয়েছেন। অন্যসব মামলা যেভাবে তদন্ত হয়, এটিও সেভাবেই হচ্ছে। দুদকের তলবে হাজির না হলে সাধারণত আর একটা তারিখ দেওয়া হয়। সেভাবেই বেনজীর আহমেদকে সময় দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ৬২১ বিঘা স্থাবর সম্পদ ঢাকা, সাভার, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কক্সবাজারে রয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জে থাকা ২৮টি পুকুর দেখভালে জেলার মৎস্য কর্মকর্তাকে, কক্সবাজারের সম্পত্তি দেখভালে জেলা প্রশাসককে এবং সাভারের স্থাবর সম্পদ দেখভালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অন্য স্থাবর সম্পদগুলো দেখভালে জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট দেখভালে দুদকের পরিচালককে (সম্পদ ব্যবস্থাপনা) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৩ ও ২৬ মে দুই দফায় বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬২১ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক বেনজীরের স্ত্রী জিশান মীর্জা। তার নামে প্রায় ৫২১ বিঘা জমি খুঁজে পেয়েছে দুদক। বাকি ১০০ বিঘার মতো জমি রয়েছে বেনজীর, তার তিন মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীর এবং স্বজন আবু সাঈদ মো. খালেদের নামে। বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে মাদারীপুরের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজায় ২৭৬ বিঘা জমি পাওয়া গেছে। ২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন সময় ১১৩টি দলিলে এসব জমি কেনা হয়। দলিলমূল্য দেখানো হয় মোট ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ৮৩টি দলিলে ৩৪৫ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। যার দলিলমূল্য দেখানো হয়েছিল ১৬ কোটি ১৫ টাকার কিছু বেশি। এ ছাড়া বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে গুলশানে যে চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। তার মধ্যে তিনটি তার স্ত্রীর নামে এবং একটি ছোট মেয়ের নামে। দুটি ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩৫৩ বর্গফুট, দাম ৫৬ লাখ টাকা করে। বাকি দুই ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ২৪৩ বর্গফুট করে, দাম সাড়ে ৫৩ লাখ টাকা করে। চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে একই দিন একই ভবনে। ভবনটির নাম র্যানকন আইকন টাওয়ার।
০৭ জুন, ২০২৪

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অবৈধ সরকার নির্যাতন, গুম, গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে দেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার হরণ করেছে।  সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বরগুনা জেলা জামায়াত আয়োজিত ভার্চুয়াল সহযোগী সদস্য সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জেলা সেক্রেটারি এসএম আফজালুর রহমানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল ও বরিশাল মহানগরী আমির জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিচারের নামে প্রহসন করে দ্রুত সাজা দিচ্ছে। নির্যাতন চালিয়ে নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করা হয়েছে। সরকারের দুঃশাসনে মানবাধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত।  এদিকে, চলমান অবরোধ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম। তা ছাড়া এখনো পুলিশি নির্যাতন চলছে জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জামায়াত-শিবিরের ১৫ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
১১ ডিসেম্বর, ২০২৩

তপশিল বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণঅধিকারের মিছিল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া-ফারুক)। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর কালভার্ট রোড থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে কিছুক্ষণ পল্টন মোড় অবরোধ করে রাখেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক হাসান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ইমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। যারা ইমানের এই পরীক্ষায় পাস করবে তারা ইতিহাস হবে। আর যারা সরকারের সাথে আঁতাত করবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এই সরকার এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে এমপি মন্ত্রিত্বের অফার দিচ্ছে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার জন্য।   তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, গণঅধিকার পরিষদ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো পাতানো নির্বাচনে যাবে না। যতই চাপ আসুক, যতই নির্যাতন আসুক আমরা প্রয়োজনে কেরানীগঞ্জ কারাগারে যাব, তবুও এই সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিব না। সরকার এখন লাগামছাড়া পাগলা ঘোরার মতন আচরণ শুরু করেছে। তারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফারুক হাসান আরও বলেন, সরকার আমাদের ভয় দেখাচ্ছে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য। আমি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি, কারাগারে যাব তবুও অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেনা-বেচা শুরু করেছে। বর্তমান সরকার হলেন নব্য রাজাকারের সরকার। যারা এ সরকারে অধীনে নির্বাচনে যাবেন তারাও নব্য রাজাকার। আমরা গণঅধিকার পরিষদ এই নব্য-রাজাকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিব না। গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব তারেক রহমান বলেন, আমরা আশ্চর্য হচ্ছি বিরোধী দল থেকে অনেকেই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছে। সরকার গণতান্ত্রিক একটা ফ্লেভার দেখিয়ে নির্বাচন আয়োজ করতে যাচ্ছে। অবশ্য কিছু পথভ্রষ্ট লোক সরকার বিরোধী আন্দলন থেকে বের হয়ে যাওয়াতে আমরা ধীরে ধীরে নিশ্চিত হচ্ছি কারা সত্যিকার অর্থে আন্দোলন করছে। আন্দোলন থেকে বিষাক্ত রক্ত বের হয়ে যাওয়ায় আরও শক্তিশালী আন্দোলন করা সম্ভব হবে। গণঅধিকার পরিষদের নেতা মোজাম্মেল মিয়াজির সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, গণঅধিকার পরিষদ নেতা কর্নেল (অব.) মিয়া মসিউজ্জামান, মাহবুব জনি, অ্যাডভোকেট শিরিন আকতার, ইসমাইল আহমেদ বন্ধন, জিয়াউর রহমান, আরিফ বিল্লাহ, মাহবুবুল হক শামীম, ইমাম উদ্দিন, আব্দুল্লাহ, ফায়সাল, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মুনতাসীর মাহমুদ প্রমুখ।
২৩ নভেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে
বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে এবার কথা উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট সরকার, রাজনৈতিক দল বা নির্দিষ্ট কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র চায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যা বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান করবে।  গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে করা এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।  প্রেস ব্রিফিংয়ে বেদান্তের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে কোনো ধরনের অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে কি না? যেমনটা দাবি করছে বিরোধী দলগুলো। জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, আমি গতকাল বা তার আগের দিন বা তার আগের দিন এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি।’ বেদান্তের এমন জবাবে আবারও জানতে চাওয়া হয়, আমরা প্রতিবারই উত্তর পাচ্ছি যে, আপনারা সবাই বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। এটি ঠিক আছে, কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনারা অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করেন কি না? হ্যাঁ বা না। জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনি অতীতেও আমাদের বলতে শুনেছেন যে, আমরা কোনো দেশে কোনো নির্দিষ্ট সরকার, রাজনৈতিক দল বা কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সমর্থন করি না এবং সে ক্ষেত্রে যেখানে নির্বাচন চলছে সেখানে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো—এই নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু উপায়ে অনুষ্ঠিত হবে যাতে দেশের জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা হবে।’  একই সময়ে আরেকটি প্রশ্ন করা হয়, যেখানে বেদান্তের কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমও সন্ত্রাস দমন প্রচেষ্টায় ইতিবাচকভাবে অবদান রাখছে। এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের অর্জনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন? জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি বিস্তৃতভাবে কথা বলব। আপনি আমাকে আগেও বলতে শুনেছেন যে, গত বছর আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন করেছি এবং অবশ্যই এই দেশের সঙ্গে আমরা সেই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই। আমরা আমাদের সম্পর্ক ও অংশীদারত্বকে আরও গভীর করতে চাই। কারণ বাণিজ্য, জলবায়ু সহযোগিতা, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে চাই এবং অন্যান্য আরও অনেক ক্ষেত্রেই সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে।’
১০ নভেম্বর, ২০২৩

তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির পোস্টমর্টেম
২০২২ সালের শেষাংশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলন শুরু করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। একই দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে আন্দোলন করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সবকটি রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ। ১৯৯৫-৯৬ সালের আন্দোলনের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয় বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ। এ সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ কোনো বিরোধী দল অংশ নেয়নি, একমাত্র ব্যতিক্রম, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দল ফ্রিডম পার্টি। নির্বাচনটি ‘১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন’ নামে সমধিক বিতর্কিত, যার আয়ুষ্কাল ছিল ১১ দিন। এ সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি এবং পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামি কর্নেল ফারুক (অব.)। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে পাস করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানের অধীনে সে বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ; বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে সরকার পরিচালনা করার দায়িত্ব সাংবিধানিক নিয়মে হস্তান্তর করে। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগেই বিচারপতি লতিফুর রহমানের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন আসনে জামায়াত-বিএনপি জোটের পক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষপাতিত্বের চিত্র ফুটে উঠে গণমাধ্যমে। পক্ষপাতিত্বপূর্ণ নির্বাচনটিতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নৈতিকতা হারায়; জিতে যায় জামায়াত-বিএনপি জোট। ২০০১ সালে সরকার গঠন করার পরপরই একদিকে জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের নেতৃত্বে তৈরি হয় দুর্নীতির হাওয়া ভবন। পরপর পাঁচবার তারা দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। তারেক রহমানের সরাসরি নেতৃত্বে এবং বেগম জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। সে হামলা চলাকালে হত্যার উদ্দেশ্যে সরাসরি গুলি করা হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি। গুলিতে নিহত হন তার দেহরক্ষী। মানবঢাল তৈরি করা জীবনরক্ষা করা হয় বঙ্গবন্ধুকন্যার। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে দীর্ঘকাল রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত এ গ্রেনেড হামলায় কেন্দ্রীয় নেতারাসহ নিহত হন ২৪ জন। অন্যদিকে সামনের জাতীয় নির্বাচনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামোর মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে জামায়াত-বিএনপি জোট প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ আজিজকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে প্রাক্তন বিএনপি নেতা বিচারপতি কে এম হাসানের নিয়োগকে নিশ্চিত করার জন্য বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানো হয়। প্রবল গণআন্দোলনের মুখে কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে না পেরে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সরকারের ক্ষমতা দখল করেন জামায়াত-বিএনপি জোট নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। এত কিছু করেও শেষরক্ষা হয়নি জামায়াত-বিএনপি জোটের। প্রবল গণআন্দোলনের মুখে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে দুই বছর ধরে সরকার পরিচালনা করেন অসাংবিধানিকভাবে। ক্ষমতা দখল করে ফখরুদ্দীন সরকার বাংলাদেশকে রাজনীতিশূন্য করার উদ্দেশ্যে কার্যকর করতে শুরু করেন ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’। রাজনীতি নিষিদ্ধ অবস্থায় রাজনৈতিক দল খুলতে সচেষ্ট হন নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস। আবারও ভূলুণ্ঠিত হয় তথাকথিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইজ্জত। কোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া কাজে আসেনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য হয় মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার। সে নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। জনপ্রতিনিধিত্বহীন বলে ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ বলে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। সে রায়ের ধারাবাহিকতায় সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বহুল অপব্যবহৃত ও বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে সর্বোচ্চ আদালত ঘোষিত অবৈধ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবৈধ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই থেকে শুরু করে দেশের সব নির্বাচনই কমবেশি বিতর্কিত হয়েছে। তথাকথিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর অধীনে আয়োজিত নির্বাচনগুলোরও প্রতিটি সূক্ষ্ম কিংবা স্থূল পরিসরে বিতর্কিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দেশে বারবার পরীক্ষিত হয়েছে, তা থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বারবার সাপলুডু খেলার চোরাগোপ্তা পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হলে অন্যান্য সব উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও সব সময়ের জন্য রাখতে হবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ পরিচালনায় রাজনীতি ভিন্ন অন্য কোনো শক্তির নাক গলানোর সুযোগ থাকতে পারে না। এ চাওয়া সহজ, বাস্তবায়ন করা কঠিন। এ কঠিন কাজটিতে বাধা দিতে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে মরিয়া হয়ে নেমেছে ৩ নভেম্বর, ১৫ ও ২১ আগস্টের খুনিদের দল, কানাডার আদালতে কয়েকবার সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত অবৈধ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সৃষ্ট দল বিএনপি। তারা এতকিছুর পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। ২০২২ সালের শেষ ভাগ থেকে শুরু হওয়া চলমান জামায়াত-বিএনপি জোটের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন প্রকৃত গণতান্ত্রিক শক্তিকে হটিয়ে আবারও দেশকে তার নিজস্ব গতিপথ থেকে বিচ্যুত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই চলবে। এ প্রশ্নে জামায়াত-বিএনপি-সুশীল অশুভ শক্তিকে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না। জনগণ সে ছাড় দিচ্ছেও না। বছরখানেকের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। আন্দোলনকারীদের জনসমাবেশে তাদের ক্ষমতালোভী, লুটেরা মানসিকতার নেতাকর্মী ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না। মির্জা ফখরুলের প্রতিদিনকার বাস্তবতাবিবর্জিত বক্তব্য হাস্যকর শোনায়। দেশ কোথায় চলছে আর তিনি কী বলছেন! গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে, বিচারপতি কমপ্লেক্সে, পুলিশ হাসপাতালে, অডিট ভবনে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করে, ৩০ জনের অধিক সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ চালায় এবং নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে পুলিশ হত্যা করে। জামায়াত-বিএনপির এ মহাসমাবেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির ইতি ঘটেছে। নির্বাচন নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচিত সরকারের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জামায়াত-বিএনপি অশুভ শক্তি যতদিন ক্রীড়াশীল থাকবে, ততদিন এ ব্যবস্থা অনায়াসে টেকসই হবে না। অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সব গণতান্ত্রিক শক্তি মিলে প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতির পরিচর্যা করতে হবে, তাকে সময় দিতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে। তবেই ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠবে প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা। লেখক : চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
০৪ নভেম্বর, ২০২৩

ড. মইনুল ইসলাম / তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরার সম্ভাবনা কতটা?
বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের নির্বাচনটি হয়েছিল ‘তিন জোটের রূপরেখা’ অনুসারে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে। ওই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যৌক্তিক হবে না। ১৯৯৬ সালে কেয়ারটেকার সরকার আইন পাস হওয়ার পর ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দল বা জোট নির্বােচনে পরাজিত হয়েছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এরশাদের নির্বাচনী বিপর্যয় প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনগুলোতে ভোটের মাধ্যমে জনসমর্থন পেয়ে আগেরবারের নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দল বা জোট পরের প্রতিবারই হারের বিষয়টি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য হতাশাজনক। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি দ্রুত জনপ্রিয়তা হারানোতে নির্বাচনে কারচুপি করতে গিয়ে মাগুরায় ধরা খেয়ে যায়, যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রবল আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করতে বাধ্য হয়। তাড়াহুড়ো করে পাস করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বিএনপি ইচ্ছাকৃতভাবে বেশ কয়েকটি মারাত্মক ত্রুটি রেখে দেয়। প্রথম চালাকি ধরা পড়ে  তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস কর্তৃক রহস্যজনকভাবে সেনা বাহিনীর চিফ অব স্টাফ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অগোচরে সামরিকবাহিনীর কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার ঘটনায়। ওই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও কয়েকজন উপদেষ্টার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার কারণে সরকার ওই সেনাবিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে সমর্থ হলেও চিফ অব স্টাফসহ ওই সময়ের বেশ কয়েকজন মেধাবী সেনা কমান্ডার ও অফিসার চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনটি অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছিল বলে দেশে-বিদেশে বহুল-প্রশংসিত হলেও পরাজয় মেনে নিতে পারেনি বিএনপি; তারা কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করে। এরপর আবারও রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে ব্যবহার করে বেগম জিয়া বিজয়ী দল আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন, যেটি এদেশে নিযুক্ত কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সহায়তায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন।  নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগেই রাষ্ট্রপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টারা, সামরিক বাহিনী, সিভিল আমলাতন্ত্রের ডিসি, এডিসি, ম্যাজিস্ট্রেট, ডিআইজি, এসপি, ডিএসপি, এএসপি, ওসি-সবার নির্বাচনকালীন ভূমিকাকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যবহারের ফন্দি-ফিকিরগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর আয়ত্তে চলে আসে। ক্ষমতাসীন সব রাজনৈতিক দল দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে পুরো প্রশাসনে নিজ নিজ দলের সমর্থকদের সক্রিয় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে মরিয়া প্রয়াস চালায়। বিজয়ী দল বা জোট ক্ষমতাসীন হয়ে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারের লাইসেন্স পাওয়ার ‘কালচার’ গড়ে ওঠা এবং রাষ্ট্রীয় সকল চাকরি, আকর্ষণীয় পদ, ঠিকাদারি, পদোন্নতি ও ব্যাংকঋণ নিজ নিজ দলের ধান্দাবাজ ও তদবিরবাজ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার রেওয়াজ চালু করা নিঃসন্দেহে দুর্নীতি ও নগ্ন দলবাজি। দেশের সংবিধান যদিও ঘোষণা করছে ‘জনগণই এই রাষ্ট্রের মালিক’ তবুও প্রকৃত বিচারে ক্ষমতার মেয়াদের পুরো পাঁচ বছর নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদেরকে জনগণের কাছে জবাবদিহির তোয়াক্কাই করতে হচ্ছে না। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান বিরোধী দলের প্রধানকে আরো সর্বনাশা একক ক্ষমতার অধিকারী করার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে সংবিধানের ৭০ ধারার ইচ্ছেমতো প্রয়োগের ক্ষমতা এই দুজনের হাতে অর্পণের মাধ্যমে। তাদের একক সিদ্ধান্তে এই দু’দলের যে কারোর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ মুহূর্তেই ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে। একদা বাঘা বাঘা নেতারা দু’দলেই একান্ত অনুগত অবস্থানে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন ৭০ ধারার ভয়ে। এদ্দিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে, ১৯৯১-২০০৬ পর্যায়ে দুর্নীতি, লুটপাট, দলবাজি, টেন্ডারবাজি, আত্মীয়-তোষণ, চাঁদাবাজি, মাস্তানি- এসবের তাণ্ডব ক্ষমতাসীন দল বা জোটের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ও ক্রোধকে পুঞ্জীভূত করছিল নির্বাচনী মেয়াদের পুরো পাঁচ বছরজুড়েই। ফলে ক্রমেই বিজয়ী দল বা জোটের জনপ্রিয়তায় ধস নামাই নিয়মে পরিণত হয়েছিল। মেয়াদের অর্ধেক বাকি থাকতেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ও বিভিন্ন উপনির্বাচনে ধরাশায়ী হয়ে যাচ্ছিল ক্ষমতাসীন দল বা জোটের প্রার্থীরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় এই নির্বাচনী মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলায় নেতিবাচক ভোটের ফায়দাভোগী হয়ে যাচ্ছিল একবার আওয়ামী লীগ আরেকবার বিএনপি।  ইতোমধ্যেই বলেছি, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দৃঢ়তা ও প্রজ্ঞার কারণে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছিল। নির্বাচনে খোদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সিভিল প্রশাসন এবং মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তারা প্রধান দু’দলের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর হাতিয়ার হয়ে গিয়েছিল। ২০০১ সালে যখন বিচারপতি লতিফুর রহমান নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে তিনিই প্রধান উপদেষ্টা হতে যাচ্ছেন তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাসখানেক আগেই  ‘হোমওয়ার্ক’ শুরু করে দিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা কাকে কাকে করবেন। এখন জানাজানি হয়ে গেছে যে এরকম কয়েকজন উপদেষ্টাও তার হোমওয়ার্কে অংশগ্রহণ করেছেন আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব লাভের আগেই। একইসাথে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি কয়েকজন আমলাও গোপনে তাদের নিজস্ব হোমওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছিলেন সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিভাবে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের রদবদল ও গণ-ট্রান্সফারের মাধ্যমে সাজানো যায়। ওই সময়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কুশীলবরা কীভাবে দু’মাসেরও কম সময়ে ১৫২৬ জন কর্মকর্তার ট্রান্সফার সুসম্পন্ন করেছিল ওই কাহিনি পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট কুশীলবদের কয়েকজনের পত্রপত্রিকায় প্রদত্ত জবানিতেই খোলাসা হয়ে গিয়েছিল। এর মাধ্যমে  বিএনপি ও জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের বসিয়ে ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বলা যাবে কি? এরপর বিএনপি দফায় দফায় দাবি তুলল, ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে সারা দেশে-নয়তো আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের মাস্তানরা নাকি ভোটকেন্দ্র দখল করে রাখবে! তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের এতৎসম্পর্কীয় সুপারিশ মেনে নিলেন প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন। সেনাবাহিনী মাঠে গিয়ে ধাওয়া দিল মাস্তান-পাতি মাস্তান-ক্যাডারদেরকে। কিন্তু, আওয়ামী ‘দুষ্টলোকদের’ খালি করা মাঠ যে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার ও মাস্তানরা দখল করে নিয়েছিল ওই সত্যটাও এতদিনে খোলাসা হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী বিপর্যয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল যে ক্ষমতাসীন দলের সাজানো বাগান এবং ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কায়দা-কানুন ভন্ডুল হয়ে যাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাণ্ডকারখানার মাধ্যমে; চরিত্রগতভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ক্ষমতাসীন দল-বিরোধী।  ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট আর ঝুঁকি নিতে চায়নি। তারা তাদের শাসনামলের প্রথম থেকেই সেনাবাহিনী, সিভিল প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী থেকে বিদায় করে দিল আওয়ামীপন্থি ও মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদেরকে। সাতজন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে জেনারেল মঈন ইউ আহমদকে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ করা হলো। বঙ্গবন্ধুর মাজার জেয়ারত করার অপরাধে অপমানজনকভাবে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে রাষ্ট্রপতি করা হলো প্রফেসর ইয়াজউদ্দিনকে। বিএনপির প্রাথমিক পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্পাদক বিচারপতি কে এম হাসানকে পুরস্কার হিসেবে হাইকোর্টে বিচারপতি করা হয়েছিল; আর তাকেই ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার অঙ্ক কষে বিএনপির ‘চাণক্য-প্রবররা’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স দু’বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছরে নির্ধারণ করে দিল। ধুরন্ধরদের এই ‘অতি চালাকি’ জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেল, শুরু হয়ে গেল হাসানবিরোধী প্রাণঘাতী আন্দোলন-সংগ্রাম। আন্দোলনের তীব্রতা উপলব্ধি করে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দুপুরেই বিচারপতি হাসান রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ব্যাপারে তার অসম্মতি জানিয়ে দিলেন। কিন্তু, ওই মহাগুরুত্বপূর্ণ খবরটা জাতিকে না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন মোবাইল টেলিফোনে তা জানালেন শুধু বেগম জিয়াকে। বেগম জিয়া তখন নয়াপল্টনের সভামঞ্চে। টিভি ক্যামেরায় আমরাও দেখলাম, তিনি কলটি রিসিভ করে ওই সভার বক্তৃতা না দিয়েই তড়িঘড়ি মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িবহর নিয়ে সোজা চলে গেলেন বঙ্গভবনে। টিভি সাংবাদিকরা তার ওই রহস্যজনক ‘বঙ্গভবন-গমন’ অনেকখানি কভার করাতে আমরা দর্শকরাও জানলাম ব্যাপারটা। ওই দিন রাত সাড়ে এগারটায় বঙ্গভবন থেকে জাতিকে জানানো হয়েছিল যে স্বাস্থ্যগত কারণে বিচারপতি হাসান প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ব্যাপারে অপারগতা জানিয়েছেন। পাঠকদের অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন, ২৮ অক্টোবরের  বিকাল থেকে শুরু করে রাত ১২টার মধ্যেই নারকীয় দাঙ্গাহাঙ্গামায় এ দেশের ১২ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন সারা দেশে-এসব মানুষের মৃত্যুর জন্য বেগম জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন কি তাদের নৈতিক দায় এড়াতে পারবেন? এরপর, তাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধান অনুসারে বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরীকে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার অনুরোধ না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে গেলেন। আজকের কলামের মূল বক্তব্যটা বলার প্রয়োজনেই ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৬-৭ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে এ দেশের মূল দুটো রাজনৈতিক দলের চাল-পাল্টাচালের কাহিনিটা বর্ণনা করতে হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বারবার ‘ম্যানিপুলেশনের’ শিকার হয়েছে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬-৭ সালে। সর্বোপরি ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করলো অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক, কিন্তু প্রয়োজন মনে করলে আরও দুটো নির্বাচন ওই ব্যবস্থায় হতে পারে। কিন্তু, সুযোগ বুঝে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে পুরো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে আওয়ামী লীগ। আর তখন থেকেই দেশের বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহালকে তাদের আন্দোলন-সংগ্রামের মূল দাবিতে পরিণত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ২০২৩ সালে এখন বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যতই জোরালো আন্দোলন করুক না কেন ভবিষ্যতে গণঅভ্যুত্থানে বাধ্য না হলে আর কোনো ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করবে না। জেনেশুনে পরবর্তী নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় কি কোনো সরকার চাইতে পারে? ড. মইনুল ইসলাম: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও  অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়                                        
৩০ অক্টোবর, ২০২৩

শনিবার বিজয় নগরে ১২ দলীয় জোটের মহাসমাবেশ
অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় একদফা দাবিতে আগামীকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ১২ দলীয় জোট। রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে (বিজয় চত্বরে) ১২ দলীয় জোটের ‘মহসমাবেশ’ হবে বলে আজ শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা। তিনি জানান, শনিবার দুপুর ২টায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও একদফা দাবিতে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে (বিজয় চত্বর) মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।  অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
২৭ অক্টোবর, ২০২৩

প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ইমাম উদ্দিন আহমদের ইন্তেকাল
প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও রেলওয়ে রিটায়ার্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ইমাম উদ্দিন আহমদ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তিনি ১৯৫১ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে রেলওয়েতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন। কর্মজীবনে রেলওয়ে, গণপূর্ত ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে গঠিত প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে রেলওয়ে রিটায়ার্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। ইমাম উদ্দীন ১৯২৬ সালের ১০ ডিসেম্বর সিলেটের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা খানবাহাদুর গৌছ উদ্দিন চৌধুরী আসাম লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। মা সারা খাতুন চৌধুরী।
২৫ অক্টোবর, ২০২৩

শাপলা চত্বর পাবে না জামায়াত
আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম-উলামার মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ সমাবেশ করবে দলটি। কর্মসূচি সফল করতে দলটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত এবং সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে জামায়াত শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি পাবে না বলে প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর ঘিরে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়ায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশের ঘোষণার মধ্যেই জামায়াত শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দেয়। আর এ ঘোষণা আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো। এর আগে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম ভয়াবহ তাণ্ডব চালায়। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই করতে দেওয়া হবে না। তবে শাপলা চত্বরের পরিবর্তে অন্য কোথাও সমাবেশ করতে চাইলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান কালবেলাকে জানিয়েছেন, সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে বিভাগ, নগর-মহানগর, থানা ও ইউনিটসহ সব স্তরে মিটিং করা হয়েছে। প্রশাসন অনুমতি না দিলেও ২৮ অক্টোবর যে কোনো মূল্যে সমাবেশ বাস্তবায়ন করা হবে। এমনকি কোনো কারণে যদি মতিঝিলে জায়গা না পাই, তবুও আশপাশের যে কোনো এলাকায় সমাবেশ করা হবে। এদিকে, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। গত কয়েক মাস ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক দলটি। সরকার পতনের এই আন্দোলনে সফল হতে বিএনপির টার্গেট অক্টোবর মাস। বিভিন্ন সময়ই দলীয় কর্মসূচি থেকে সে কথাই জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বৃহৎ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। বলা হচ্ছে, এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি থেকেই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে তারা। ইতোমধ্যে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করার বিষয়ে ডিএমপিকে অবহিত করেছে বিএনপি। তবে বিএনপিকেও নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে। তাদের রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে, বিএনপির সমাবেশ থেকে সহিংসতার আশঙ্কা করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য সহিংসতা মোকাবিলা করে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারাও। আওয়ামী লীগও এদিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। একইদিন আবার নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে শাহবাগে কর্মসূচি পালন করবে বামপন্থি দলগুলোর একাংশ। কারও টার্গেট ঢাকা দখলে রাখা আবার কারও লক্ষ্য প্রতিরোধ করা। তাই দখল কিংবা প্রতিরোধ উভয় অবস্থাতেই মাঠ দখলে মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলো। এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশের দিনে নাগরিকদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখাসহ যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থায় থাকার কথা জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা কর্মসূচির আড়ালে যদি কেউ সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
২৪ অক্টোবর, ২০২৩
X