অনলাইন জুয়া ও অর্থ পাচারে টিআইবির উদ্বেগ
দেশে অনলাইন জুয়ার বিস্তার, বেটিংয়ের প্রচার ও অর্থ পাচারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তরুণ সমাজকে এর কবল থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে অনলাইনে জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, সর্বোচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অনলাইন জুয়া বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। দেশের আইনে যে কোনো ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ হলেও নানা কৌশলে অনলাইন জুয়ার প্রচার ও প্রসার চলছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মূল ধারার সম্প্রচারমাধ্যমে, বিশেষ করে খেলাধুলার চ্যানেলসহ ডিজিটাল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাজি ও জুয়ার বিজ্ঞাপনের রমরমা প্রচার চলছে। এমনকি এ বছরের বিপিএলে একটি দলের জার্সিতে জুয়ার ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপনও দেখা যায়। এমন বিজ্ঞাপন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। টিআইবি মনে করে, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ই-ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাচার হয়। অনলাইন জুয়ার অ্যাপসের স্থানীয় এজেন্ট রয়েছে। অথচ এ পাচার রোধে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) কোনো দায়িত্বশীল সংস্থার উদ্যোগের কথা জানা যায় না। আইন অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের জুয়া প্রতিরোধ করতে সরকারের ওপর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে দেশে এখনো জুয়া প্রতিরোধে ব্যবহার হচ্ছে ১৫৭ বছরের পুরোনো আইন। সরকার জুয়া প্রতিরোধ আইন, ২০২৩ প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও এখনো তা খসড়া পর্যায়েই রয়ে গেছে।
১০ মে, ২০২৪

অনলাইন জুয়া হুন্ডির মাধ্যমে মুদ্রা পাচার বাড়ছে
অনলাইন জুয়া, হুন্ডিসহ নানা কারণে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাওয়ায় দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সদস্য এম আবদুল লতিফের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এদিন সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এবং ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেনের মাত্রা বহুলাংশে বেড়েছে। প্রযুক্তিগত এই উন্নয়নের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র অনলাইন জুয়া-বেটিং, গেমিং, ফরেক্স-ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও হুন্ডি প্রভৃতি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে একদিকে যেমন দেশ হতে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া-বেটিং ও হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধসহ সব ধরনের অর্থ পাচার রোধকল্পে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। অনলাইন জুয়া-বেটিং এবং হুন্ডির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৮৬টি ব্যক্তিগত এমএফএস হিসাব বিএফআইইউ কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে।
১০ মে, ২০২৪

অনলাইন জুয়া খেলায় জড়িতের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৫
যশোরের মনিরামপুরে অনলাইন ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অভিযানের সময় অপরাধের প্রধান আলামত হিসেবে পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুরে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার নেহালপুর ও মনোহরপুর এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় মনিরামপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নাজিউর রহমান (২৮), সিরাজুল ইসলাম (৩৯), শফিকুল ইসলাম (৩৯), তরিকুল ইসলাম (২৬) ও কামরুজ্জামান (৩৭)। জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা মনোহরপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ও নেহালপুর কাড়িবাড়ি মোড় নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তরকৃতরা অনলাইন জুয়ার সাব-এজেন্ট হিসেবে কাজ করত বলে জানা গেছে।
০১ মার্চ, ২০২৪

চিঠিপত্র / অনলাইন জুয়া বন্ধ কীভাবে
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশেষ করে তরুণ ও যুবসমাজ স্মার্টফোনের বদৌলতে লোভের বশবর্তী হয়ে সহজে বিপুল অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে অনলাইন ক্যাসিনো এবং বেটিং অ্যাপগুলোর পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে। প্রথমদিকে তারা কিছুটা লাভবান হলেও পরবর্তী সময়ে খোয়াচ্ছে হাজার হাজার টাকা। ফলে প্রতিনিয়ত পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহের ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে চুরি ও ডাকাতির সংখ্যা। এটির চূড়ান্ত পরিণতি খুনোখুনি পর্যন্ত রূপ নিচ্ছে। সামাজিক এ ব্যাধিটি ধীরে ধীরে জাতীয় সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। দেশের তরুণ সমাজকে এ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে দ্রুত এর বিহিত প্রয়োজন।
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিশ্বকাপে ফের সক্রিয় অনলাইন জুয়া চক্র
ভারতে চলছে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২২ গজের এ প্রতিযোগিতা কেন্দ্র করে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জুয়া কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চক্র। সহজে প্রচার পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ব্যবহার করছে তারা। অন্যদিকে, সম্মানহানি ও আইনি ঝামেলার ভয়ে অভিযোগ করছেন না ভুক্তভোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশে জুয়া-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম রুখতে সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আর লিঙ্কসহ অভিযোগ পেলে সাইট বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আইপিএল, বিপিএল, এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপের মতো ক্রিকেটের বড় আসরগুলোতে ব্যাপক আগ্রহ থাকে অনলাইন জুয়া চক্রগুলোর। ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগ কাজে লাগিয়ে কম সময়ে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেটবাজ৩৬৫, বেটউইন, ওয়ানএক্স বেটিং, জেটউইন ক্লাবসহ শতাধিক সাইট আছে, যেখানে অনলাইনে জুয়া খেলা যায়। এসব সাইট মূলত নিয়ন্ত্রণ করা হয় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকে। বাংলাদেশে রয়েছে তাদের এজেন্ট বা ‘বুকি’। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে অর্থ লেনদেন এবং পরবর্তী সময়ে ক্রিপ্টো ও হুন্ডির মাধ্যমে সেই অর্থ বিদেশে পাঠানোর কাজ করে এসব এজেন্ট। যেভাবে কাজ করে: রাজধানীর মিরপুর এলাকার এমন এক এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন কালবেলার এ প্রতিবেদক। ওই এজেন্ট বলেন, প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জুয়াড়িদের যুক্ত করা হয়। সেখানে আমাদের পরিচয় গোপন থাকে। হোয়াটসঅ্যাপের নম্বর এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো থাকে বিদেশি, তাই সহজে ‘ট্র্যাক’ করা যায় না। তারপর সেই গ্রুপ আর চ্যানেলেই পরের যোগাযোগগুলো হয়। টাকা আনা-নেওয়া হয় এমএফএসের মাধ্যমে। আমাদের টার্গেট থাকে মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা, যারা পুলিশের কাছে যাবে না। এসব সাইটের মাধ্যমে জুয়া খেলেন রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমি জুয়া খেলি বিশেষ বড় কোনো ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করি। কখনো ৫ হাজার টাকা আয় করি, আবার কখনো সব খোয়া যায়। মাঝে মাঝে একসঙ্গে অনেক টাকা পাই, সেই লোভেই আবার খেলি। প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের: অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের। অনুসন্ধান বলছে, জুয়ার সাইটের প্রচার এবং সাইটের লিঙ্ক কনটেন্টের ‘ডেসক্রিপশন’ বা ‘কমেন্ট বক্সে’ দেওয়ার জন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হয়। আবার কখনো তাদের না জানিয়েই কমেন্ট বক্সে সাইটের লিঙ্ক দিয়ে রাখে বুকিরা। একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর নিজেদের এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। জনপ্রিয় চ্যানেল ‘ফুডআপ্পি’র প্রতিষ্ঠাতা ফাবিয়া হাসান মনিষা বলেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো জুয়ার সাইট থেকে প্রমোশনের অফার পাই। ভিডিওর নিচের দিকে তাদের লোগো বা বিজ্ঞাপন প্রচার করা অথবা কমেন্ট বক্স বা ডেসক্রিপশনে তাদের সাইটের লিঙ্ক দেওয়ার প্রস্তাব আসে। ‘শামুক’ নামের একটি পেজের প্রতিষ্ঠাতা হালিমা ইয়াসমিন মুক্তা বলেন, আমাদের পেজে খুব বেশি ফলোয়ার নেই। মাস দুয়েক আগে পেজ মনেটাইজ হয়। এরপর থেকে ইনবক্সে জুয়া, ক্যাসিনো এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো প্ল্যাটফর্মের প্রমোশনের প্রস্তাব আসতে থাকে। আমরা যখন সাড়া দিই না, তখন দেখি ভুয়া আইডি থেকে ভিডিওর নিচে কমেন্টে জুয়ার সাইটের পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কমেন্ট নজরে এলে সেগুলো মুছে দিই, ফেসবুকের কাছে ‘রিপোর্ট’ করি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যা করছে: অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী সাইটগুলোর কার্যক্রম রুখে দিতে নিয়মিত তদারকি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। ইতোমধ্যে জুয়ার ১৮৬টি সাইটের লিঙ্ক এবং অ্যাপের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। সেইসঙ্গে জুয়ার সাইট পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে নেপাল যাওয়ার পথে সিআইডির হাতে আটক হয় সাইপ্রাসভিত্তিক ‘ওয়ান এক্স বেট’ এবং রাশিয়াভিত্তিক ‘বেট উইনারে’র বাংলাদেশ শাখার প্রধান মতিউর রহমান। ৩১ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী চক্রের ছয় সদস্যকেও গ্রেপ্তার করে এ সংস্থা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জুয়ার সাইটের প্রচারণার অভিযোগে ইউটিউবের পরিচিত মুখ প্রত্যয় হিরনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক আহমেদ বলেন, আমাদের তদারকি অব্যাহত আছে। নাগরিকদের কাছে যদি এ বিষয়ে কোনো তথ্য থাকে, তাহলে আমাদের সহযোগিতা করার বিনীত অনুরোধ করছি। কেউ প্রতারিত হলে দ্রুত যোগাযোগের পরামর্শও দেন তিনি। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর থেকে প্রতিবেদন পেলে জুয়া বা ক্যাসিনোর সাইট বন্ধ করা হয় বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। তবে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ-স্টোর থেকে স্মার্টফোনভিত্তিক অ্যাপ সরাতে পারে না এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সাইট মনিটরিংয়ের এখতিয়ার বিটিআরসির নেই। কোনো সংস্থা আমাদের এ ধরনের সাইটের লিঙ্ক দিলে পুরো সাইট বন্ধ করে দিতে পারি। সে ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে কোনো অ্যাপ আমরা বন্ধ করতে পারি না। আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ: এসব অনলাইন জুয়ার সাইটে যারা প্রতারিত হন, তাদের সিংহভাগই বিষয়টি গোপন রাখেন। আত্মসম্মান এবং বাড়তি আইনি ঝামেলার ভয়ে তারা কোনো অভিযোগ করেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক খায়ের মাহমুদ বলেন, নিজেরা ফেঁসে যাই কি না—এই ভয়ে অনেক সময় আমরা ভুক্তভোগী হয়েও আইনের আশ্রয় নিই না। সবার আগে জানতে ও বুঝতে হবে যে, আইন আমাদের সর্বদাই আশ্রয় লাভের অধিকার দিয়ে রেখেছে। কেউ যদি ভেবে থাকেন যে, অভিযোগ করলে তিনি উল্টো ফেঁসে যাবেন, বিষয়টা এমন নয়। আমার পরামর্শ থাকবে, অতি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো, নইলে আপনার কাছের আরেকজনের একই ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
১০ অক্টোবর, ২০২৩

বিশ্বকাপে ফের সক্রিয় অনলাইন জুয়া চক্র
ভারতে চলছে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২২ গজের এ প্রতিযোগিতা কেন্দ্র করে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে জুয়া কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চক্র। সহজে প্রচার পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ব্যবহার করছে তারা। অন্যদিকে, সম্মানহানি ও আইনি ঝামেলার ভয়ে অভিযোগ করছেন না ভুক্তভোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশে জুয়া-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম রুখতে সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করা হচ্ছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আর লিঙ্কসহ অভিযোগ পেলে সাইট বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আইপিএল, বিপিএল, এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপের মতো ক্রিকেটের বড় আসরগুলোতে ব্যাপক আগ্রহ থাকে অনলাইন জুয়া চক্রগুলোর। ক্রিকেটপ্রেমীদের আবেগ কাজে লাগিয়ে কম সময়ে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেটবাজ৩৬৫, বেটউইন, ওয়ানএক্স বেটিং, জেটউইন ক্লাবসহ শতাধিক সাইট আছে, যেখানে অনলাইনে জুয়া খেলা যায়। এসব সাইট মূলত নিয়ন্ত্রণ করা হয় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং সাইপ্রাস ও রাশিয়া থেকে। বাংলাদেশে রয়েছে তাদের এজেন্ট বা ‘বুকি’। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে অর্থ লেনদেন এবং পরবর্তী সময়ে ক্রিপ্টো ও হুন্ডির মাধ্যমে সেই অর্থ বিদেশে পাঠানোর কাজ করে এসব এজেন্ট। যেভাবে কাজ করে: রাজধানীর মিরপুর এলাকার এমন এক এজেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন কালবেলার এ প্রতিবেদক। ওই এজেন্ট বলেন, প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অথবা টেলিগ্রাম চ্যানেলে জুয়াড়িদের যুক্ত করা হয়। সেখানে আমাদের পরিচয় গোপন থাকে। হোয়াটসঅ্যাপের নম্বর এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলো থাকে বিদেশি, তাই সহজে  ‘ট্র্যাক’ করা যায় না। তারপর সেই গ্রুপ আর চ্যানেলেই পরের যোগাযোগগুলো হয়। টাকা আনা-নেওয়া হয় এমএফএসের মাধ্যমে। আমাদের টার্গেট থাকে মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা, যারা পুলিশের কাছে যাবে না। এসব সাইটের মাধ্যমে জুয়া খেলেন রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমি জুয়া খেলি বিশেষ বড় কোনো ক্রিকেট ম্যাচ থাকলে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করি। কখনো ৫ হাজার টাকা আয় করি, আবার কখনো সব খোয়া যায়। মাঝে মাঝে একসঙ্গে অনেক টাকা পাই, সেই লোভেই আবার খেলি।  প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের: অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের। অনুসন্ধান বলছে, জুয়ার সাইটের প্রচার এবং সাইটের লিঙ্ক কনটেন্টের ‘ডেসক্রিপশন’ বা ‘কমেন্ট বক্সে’ দেওয়ার জন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হয়। আবার কখনো তাদের না জানিয়েই কমেন্ট বক্সে সাইটের লিঙ্ক দিয়ে রাখে বুকিরা। একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর নিজেদের এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। জনপ্রিয় চ্যানেল ‘ফুডআপ্পি’র প্রতিষ্ঠাতা ফাবিয়া হাসান মনিষা বলেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো জুয়ার সাইট থেকে প্রমোশনের অফার পাই। ভিডিওর নিচের দিকে তাদের লোগো বা বিজ্ঞাপন প্রচার করা অথবা কমেন্ট বক্স বা ডেসক্রিপশনে তাদের সাইটের লিঙ্ক দেওয়ার প্রস্তাব আসে। ‘শামুক’ নামের একটি পেজের প্রতিষ্ঠাতা হালিমা ইয়াসমিন মুক্তা বলেন, আমাদের পেজে খুব বেশি ফলোয়ার নেই। মাস দুয়েক আগে পেজ মনেটাইজ হয়। এরপর থেকে ইনবক্সে জুয়া, ক্যাসিনো এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো প্ল্যাটফর্মের প্রমোশনের প্রস্তাব আসতে থাকে। আমরা যখন সাড়া দিই না, তখন দেখি ভুয়া আইডি থেকে ভিডিওর নিচে কমেন্টে জুয়ার সাইটের পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কমেন্ট নজরে এলে সেগুলো মুছে দিই, ফেসবুকের কাছে ‘রিপোর্ট’ করি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যা করছে: অনলাইনে জুয়া পরিচালনাকারী সাইটগুলোর কার্যক্রম রুখে দিতে নিয়মিত তদারকি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। ইতোমধ্যে জুয়ার ১৮৬টি সাইটের লিঙ্ক এবং অ্যাপের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। সেইসঙ্গে জুয়ার সাইট পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে নেপাল যাওয়ার পথে সিআইডির হাতে আটক হয় সাইপ্রাসভিত্তিক ‘ওয়ান এক্স বেট’ এবং রাশিয়াভিত্তিক ‘বেট উইনারে’র বাংলাদেশ শাখার প্রধান মতিউর রহমান। ৩১ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়ার সাইট পরিচালনাকারী চক্রের ছয় সদস্যকেও গ্রেপ্তার করে এ সংস্থা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জুয়ার সাইটের প্রচারণার অভিযোগে ইউটিউবের পরিচিত মুখ প্রত্যয় হিরনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার অপরাধ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক আহমেদ বলেন, আমাদের তদারকি অব্যাহত আছে। নাগরিকদের কাছে যদি এ বিষয়ে কোনো তথ্য থাকে, তাহলে আমাদের সহযোগিতা করার বিনীত অনুরোধ করছি। কেউ প্রতারিত হলে দ্রুত যোগাযোগের পরামর্শও দেন তিনি। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর থেকে প্রতিবেদন পেলে জুয়া বা ক্যাসিনোর সাইট বন্ধ করা হয় বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। তবে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ-স্টোর থেকে স্মার্টফোনভিত্তিক অ্যাপ সরাতে পারে না এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।  বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সাইট মনিটরিংয়ের এখতিয়ার বিটিআরসির নেই। কোনো সংস্থা আমাদের এ ধরনের সাইটের লিঙ্ক দিলে পুরো সাইট বন্ধ করে দিতে পারি। সে ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। তবে গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর থেকে কোনো অ্যাপ আমরা বন্ধ করতে পারি না।  আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ: এসব অনলাইন জুয়ার সাইটে যারা প্রতারিত হন, তাদের সিংহভাগই বিষয়টি গোপন রাখেন। আত্মসম্মান এবং বাড়তি আইনি ঝামেলার ভয়ে তারা কোনো অভিযোগ করেন না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক খায়ের মাহমুদ বলেন, নিজেরা ফেঁসে যাই কি না—এই ভয়ে অনেক সময় আমরা ভুক্তভোগী হয়েও আইনের আশ্রয় নিই না। সবার আগে জানতে ও বুঝতে হবে যে, আইন আমাদের সর্বদাই আশ্রয় লাভের অধিকার দিয়ে রেখেছে। কেউ যদি ভেবে থাকেন যে, অভিযোগ করলে তিনি উল্টো ফেঁসে যাবেন, বিষয়টা এমন নয়। আমার পরামর্শ থাকবে, অতি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো, নইলে আপনার কাছের আরেকজনের একই ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।    
১০ অক্টোবর, ২০২৩

অনলাইন জুয়া পরিচালনা চক্রের প্রধান গ্রেপ্তার
অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী একটি চক্রের প্রধান মতিউর রহমানকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডু যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, গত ৩১ আগস্ট মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অভিযান চালিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম মেল বেট, ওয়ান এক্স বেট এবং বেট উইনার নামে বেটিং সাইটে জুয়া পরিচালনাকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সে সময় মতিউরকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পরে বৃহস্পতিবার আরেক অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিমানবন্দর থেকে অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার
অনলাইন জুয়া পরিচালনাকরী চক্রের মূলহোতা মো. মতিউর রহমানকে (২৯) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডু যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।   শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। গ্রেপ্তার মতিউর শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা মুখলেসুর রহমানের ছেলে।  আজাদ রহমান জানান, গত ৩১ আগস্ট মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানায় অভিযান চালিয়ে অনলাইন প্লাটফর্ম মেল বেট, ওয়ান এক্স বেট এবং বেট উইনার নামে বেটিং সাইটে জুয়া পরিচালনাকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের নামে পল্টন থানায় মামলা করা হয়। কিন্তু ওইসময় মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মতিউর জানায় সে ২০১৭ সালে পড়াশোনা করার জন্য রাশিয়ায় যায়, সেখানে সে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বর্তমানে সোশ্যাল ওয়ার্কে মাস্টার্স করছে। সে ২০২১ সালে ওয়ান এক্স বেট এবং বেট উইনারের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে ৫০০০ ডলার সিকিউরিটি মানি দিয়ে ওয়ান এক্স বেট এবং ৩০০০ ডলার সিকিউরিটি মানি দিয়ে বেট উইনারের এজেন্টশিপ গ্রহণ করে।  বাংলাদেশে জুয়ার সাইট পরিচালনা করার জন্য আগে গ্রেপ্তার ছয়জনের সহায়তায় একটি চক্র গড়ে তোলে। এই চক্রের মাধ্যমে জুয়ার সাইট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার করেছে সে। গ্রেপ্তার মতিউরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য বের করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X