পতাকা আর আবেগ নিয়ে ফুটবল খেলছে ফিলিস্তিন
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের এক সমর্থক আচমকা ঢুকে পড়েছিলেন আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনের পতাকায় তৈরি মাস্ক আর গায়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানানো টি-শার্ট পরা সেই তরুণ বিরাট কোহলির কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তরুণের টি-শার্টের সামনে লেখা ছিল, ‘স্টপ বোম্বিং প্যালেস্টাইন’। আর পেছনে লেখা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’। সেই তরুণের মতো মাঠে না ঢুকলেও মঙ্গলবার রাতে কুয়েতের জাবের আল-আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি সমর্থক এবং তাদের শুভান্যুধায়ীরা। যদিও অস্ট্রেলিয়ার কাছে তাদের হার স্বীকার করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে ১-০ গোলে সকারুদের কাছে হেরেছে ইসরায়েলি বর্বরতার শিকার ফিলিস্তিন। ১৮ মিনিটে একমাত্র গোলটি করেন ডিফেন্ডার হ্যারি সট্টার। কুয়েতের জাবের আল আহমেদ স্টেডিয়ামে ৬০ হাজার দর্শক ধরে। সেখানে ফিলিস্তিনি পতাকা আর কেফিয়াহ স্কার্ফ পরা ফিলিস্তিনি তরুণদের দেখা গেছে নিজের দলকে উৎসাহিত করতে। তাদের সমর্থন জানিয়েছেন সাধারণ কুয়েতিরাও। ৪৫ বছর বয়সী কুয়েতি এক নারী বলেন, ‘প্যালেস্টাইন আমাদের হৃদয়ে আছে। বয়স্ক থেকে তরুণ—সবাই ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে। ছয় সপ্তাহ আগে হামাসের আক্রমণে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গাজায় বর্বর আক্রমণ শুরু করে নেতানিয়াহুর সরকার। ইসরায়েলের সেই বর্বর হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তেরো হাজার ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে গাজায়। খেলার মাঠে ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ চলছে। ৪০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি যুবক ইউসেফ লাব্বাদ বলেন, ‘ম্যাচ নিয়ে আমরা মোটেই ভাবিত নই। আমরা এখানে এসেছি একটা বার্তা দিতে। আমরা ফিলিস্তিনিরা সব সময় কেফিয়াহ আর পতাকা নিয়ে মাঠে আসব।’
২৩ নভেম্বর, ২০২৩

আবেগ কাজ করলেও দায়িত্ব পালন করেছি
পুলিশের খাতায় দুর্ধর্ষ ডাকাত ছিলেন শাহজাহান ভূঁইয়া। ডাকাতি ছাড়াও মামলা ছিল খুনের। বিচার শেষে সাজাও হয়েছিল তার। সাজার পর কারাগারে গিয়ে হয়ে ওঠেন জল্লাদ। এক সময় প্রধান জল্লাদ হিসেবে কারাভ্যন্তরে তার হাঁকডাক ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধী—এমন অন্তত ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন তিনি। অবশেষে ৩১ বছর ৬ মাস দুই দিন কারাভোগের পর সেই জল্লাদ শাহজাহান গতকাল রোববার দুপুরে মুক্তি পেয়েছেন। সাজা ভোগ শেষ হওয়ায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত করে। মুক্তি পেয়ে শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, নানা সময়ে তিনি এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে গেছেন। এবার মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে ভালো লাগছে। এখন তার বয়স ৭৩ বছর। তিনি বিয়ে করেননি। তিনি বলেন, ‘আমার এক বোন আছে। তাকে কখনো দেখিনি। কিন্তু ফোনে কথা হয়েছে। সে আমাকে কোনো দিন দেখতেও আসেনি। সুযোগ পেলে বোনের কাছে থাকব। তবে এখন কারাগারে পরিচয় হওয়া আমার এক বন্ধুর কাছে থাকব।’ গতকাল কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তাকে সাদা জামা আর সাদা প্যান্টের সঙ্গে কালো বেল্ট পরা অবস্থায় দেখা যায়। মেহেদিমাখা চুলগুলো পাতলা হলেও তার গোঁফ লম্বা ছিল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন প্রায় ৩২ বছর ধরে কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে থাকা এই শাহজাহান। কখনো মুক্তির আনন্দে হাসছিলেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহজাহান ভূঁইয়ার জন্ম ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশে। কলেজ শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অন্য একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। এ ছাড়া উভয় রায়ে তাকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে তার আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। অস্ত্র ও হত্যা মামলায় মোট ৪২ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত শাহজাহান কারাগারে ভালো আচরণ করায় ও ফাঁসির কাজে সহায়তা করায় সাজা কমে ৩১ বছর ৬ মাস হয়েছে। শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, তিনি অন্তত ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। তখন আবেগ কাজ করলেও দায়িত্বটাকেই বড় করে দেখেছেন। এখন তার থাকার কোনো জায়গা নেই। বাড়িঘর কিছু নেই। তাই সরকার যেন তার একটা ব্যবস্থা করে। এখন তার একটিই চিন্তা—ভালোভাবে চলতে চান। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে, আদর করেছে জানিয়ে বলেন, ‘আমি সেখানে ভালো ছিলাম। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে জল্লাদের কাজ দিয়েছিল। আমি সাহসী ছিলাম বলেই এ কাজ পেয়েছিলাম। কাজটি আমি না করলে কেউ না কেউ করতেন। এখন আমি চলে এসেছি, এ কাজ অন্যরা করবেন।’ মুক্তজীবনে সাংবাদিকদের কাছে স্মৃতিচারণও করেন শাহজাহান। বলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে এরশাদ শিকদার বলেছিলেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি, আর মুনীর একটি সিগারেট চেয়েছিলেন।’ কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম জানান, কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শাহজাহান ভূঁইয়া। একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা মামলা এবং আরেকটি অস্ত্র আইনে মামলা। এ দুটি মামলায় ১৯৯১ সালের ১৭ মে থেকে কারাগারে ছিলেন। এই সাজার মধ্যে প্রতি ফাঁসির জন্য দুই মাস কারা রেয়াত পেয়েছেন তিনি। কারাবিধি অনুযায়ী আচার-আচরণ এবং অন্যান্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন। তিনি বলেন, শাহজাহানের হাতে কোনো টাকা-পয়সা না থাকায় যে ১০ হাজার টাকা তার দণ্ড হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দিয়েছে। শাহজাহান ৬০ জনের ফাঁসি কার্যকর করছেন বলে দাবি করলেও এই কারা কর্মকর্তা বলেন, কারা রেকর্ড অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান। তিনি যাদের ফাঁসি কার্যকর করেছেন, তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি, যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও জেএমবির দুই জঙ্গিও রয়েছে। শারমিন রীমা হত্যার আসামি মুনীর এবং খুলনার আলোচিত ব্যক্তি এরশাদ শিকদারের ফাঁসিও দিয়েছেন তিনি।
১৯ জুন, ২০২৩
X