দিনাজপুরে আগাম জাতের আলুর বাম্পার ফলন
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন চাষিরা। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার উৎপাদন খরচ কম। আলুর বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আগাম জাতে আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। কৃষকের জমি থেকে ৪৩ টাকা কেজি দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলায় ২০ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার আগাম জাতের আলু হেক্টার প্রতি ফলন হয়েছে ১৭ টন। জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক ময়ছার আলী বলেন, এবার আগাম জাতের আলু লাগিয়েছি। দেড় বিঘা জমিতে মাত্র ৫৫ দিন পরে খেত থেকে নতুন আলু তুলতে শুরু করেছি। এ বছর আলুর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় কীটনাশক স্প্রে করতে হয়নি। দেড় বিঘা জমিতে আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করার জন্য হাটে নিয়ে যেতে হচ্ছে না। পাইকাররা জমি থেকে আলু ৪৩ টাকা কেজিতে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। দেড় বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েও প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ হবে আশা করছি। কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, আগাম জাতের আলু ১ বিঘা জমিতে লাগিয়েছি। ফলন ভলো হয়েছে গতবছর লাভ করতে পারি নাই এবার লাভবান হব। এবার এককেজি আলু জমি থেকে ৪৩ টাকা থেকে ৪৪ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করছি। গতবছর ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা বিক্রি করছি। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু লাগিয়েছি ইতোমধ্যে প্রায় ১০ কাটা জমির আলু ক্ষেত থেকে তুলতে শুরু করেছি। তিন বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকার মতো। আলু যে হারে এবার ফলন হয়েছে, তাতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লাভ হবে। গত বছর আলুর দামটা কম ছিল, উৎপাদন খরচটা বেশি ছিল। এবার আলুর বাজার ভালো, আবার ফলন ভালো হয়েছে। তাই এবার লাভ একটু বেশি হচ্ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিনহাজুল হক নবাব বলেন, কৃষকরা ফসলের মাঠ থেকে আগাম জাতের আলু উত্তলন শুরু করেছে। আলু চাষিদের কৃষি অফিস থেকে সব ধরনে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগাম জাতের আলুর ফলন তুলনামূলক কম হয় তারপরেও এবার ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। কৃষকরা বর্তমান বাজারে আলু দাম বেশ ভালো পাচ্ছে। এরপরের মৌসুমে আগাম জাতের আলু লাগানোর জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, আগাম জাতের আলু চাষিরা ৫৫ থেকে ৬০ দিনে ফসল উত্তোলনের পর আবার তার ভুট্টা ও বোর ধান লাগাবে। আগে ধান কেটে জমি ফেলে রাখতেন কৃষকরা এখন ৩টি ফসল উৎপাদন করছে কৃষকরা। এবার আগাম জাতের আলু হেক্টার প্রতি ফলন হয়েছে ১৭ টন। বাজারে আলু দাম ভালো থাকায় আগাম জাতের আলু চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।
০৫ মার্চ, ২০২৪

লালমনিরহাটে আলুর বাম্পার ফলন
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে আগাম জাতের আলু চাষ করে বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনের পাশাপাশি আশাতীত দাম পেয়ে এবার বেশ খুশি আলু চাষিরা। চলতি মৌসুমে আলু বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, মজুরি, সেচ সবকিছু মিলিয়ে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়েছে আলু চাষিদের। এবার ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন। জানা গেছে, প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদনের খরচ বাদ দিয়ে এক বিঘা জমিতে কৃষকের লাভ হচ্ছে গড়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা। কালীগঞ্জে  চলতি মৌসুমে প্রায় ১০১০ হেক্টর জমিতে আগাম স্থানীয় ৭ জাতের আলু চাষ হয়েছে। লালমনিরহাট জেলায় দুই ধরনের জমিতে আলু চাষ হয়ে থাকে। আগাম স্থানীয় ৭ জাতের আলু চাষ হয় জেলার বিভিন্ন গ্রামের ভিটেমাটির জমিতে। আর আমন ধান কাটার পর ব্যাপক হারে চাষ হয় এঁটেল ও দোআঁশ মাটির জমিতে। গত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ মৌসুম শুরু হয়। ৬০-৬৫ দিনে আগাম জাতের এ আলুর ফলন হয় ৫০-৬০ মণ প্রতি বিঘা জমিতে।  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন বলেন, যথাসময়ে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করার ফলে কৃষকরা সকল সমস্যা মোকাবিলা করে আলুর ভালো ফলনে সক্ষম হয়েছেন।  উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর চলতি রবি মৌসুমে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০১০ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১০৯০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন প্রতি শতাংশ জমিতে আড়াই মণ আলু উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি আলুর মূল্য ৫০ থেকে ৬০ প্রতি মণ আলু ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
১১ জানুয়ারি, ২০২৪

টাঙ্গাইলে আগাম জাতের আলুর বাম্পার ফলন
আলু আর ধান টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কৃষকদের প্রাণ। এবার সত্যিই প্রাণ ফিরে পেয়েছে ধনবাড়ী উপজেলার আলু চাষিরা। আগাম চাষের আলু তোলায় ব্যস্ত এখন কৃষক-কৃষাণীরা। অনুকূল আবওহায়া আর সময়মতো সার ও বীজ পাওয়ার কারণে এবার বাম্পার ফলনও হয়েছে। বাজারে আলুর দামও বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। আলু চাষিরা জানান, এখন যারা আলু তুলছেন তা বিক্রি করে লাভের মুখই দেখছেন। চাষাবাদ, সার, বীজ, সেচ ও শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ভালোই লাভ টিকছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর বাজার প্রতি মণে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে বৃদ্ধি পেলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন তারা ফলনের সাথে মোটা অংকের লাভের মুখও দেখবেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি, বলিভদ্র, যদুনাথ পুর, বীরতারা, বানিয়াজান, ধোপাখালি ইউনিয়নগুলোর  বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব মাঠে রোমানা, পাকরি ও এলগার জাতের আলু তুলতে শুরু করেছেন। ধনবাড়ী উপজেলার ধনবাড়ী বাজারে আলু বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, বাজারে প্রতি মণ পারকি আলু ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর রোমানা আলু ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা মণ। আলুর দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা খুশি। এভাবে চলতে থাকলে চাষিরা এবার লাভের মুখ দেখবেন। পাঁচ একর জমিতে আগাম জাতের এলগার আলু চাষ করেছেন ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি ইউনিয়নের মুশুদ্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আলুচাষি সুজন। তিনি বলেন, রোপণের ৬০ দিন বয়সে আমি আলু তুলেছি। জমিতে ফলন হয়েছে ৬০ মণ। ফসলের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ৫২০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। তাতে লাভ হব আশানুরূপ। মাঠে আরও আলু আছে। দশ-পনেরো দিন পরে সেগুলোও তুলতে হবে। এবার আলুর দাম যদি এ রকম থাকে তাহলে মোটামুটি লাভের মুখ দেখা যাবে। পাশাপাশি গত কয়েক বছরের লোকশান কিছুটা হলেও পুষিয়ে ওঠবে। মুশুদ্দি কামার পাড়া গ্রামের কৃষক মো. জমিরউদ্দীন বলেন, আলু রোপণ থেকে শুরু করে নিড়ানি, বাঁধানো, বহনসহ যাবতীয় কাজ করেছি আমিসহ পরিবারের লোকজন। বাইরের শ্রমিককে নিতে হয়নি। তাই অন্যের থেকে বিঘাপ্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ কম হয়েছে। ১ বিঘা জমির আলু তুলেছি। ফলন হয়েছে ৬০ মণ। ৬৬০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে প্রায় ৯-১০ হাজার টাকা লাভ হবে আশা করি। আলু বিক্রি করে এবার ভালোই লাগছে। ধনবাড়ী কাঁচামাল হাটের পাইকার শিহাব বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচামালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। আমদানির ওপর দাম ওঠা-নামার বিষয় নির্ভর করবে। তবে গত সপ্তাহ থেকে মোকামগুলোতে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম প্রতি মণে এক থেকে দেড়শ টাকা বেড়েছে।  ধনবাড়ী উপজেলার কৃষি অফিসার মো. মাসুদুর রহমান  বলেন, বাজারে রোমানা পাকরি ও দেশি পাকরি (লাল) আলু ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এই আলু এক সপ্তাহ পূর্বে ১০৫০ থেকে ১০৮০ টাকা মণ ছিল। আর মিউজিকা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৩০ টাকা মণ। এই আলু গত সপ্তাহে ছিল ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা মণ। সব খরচ বাদ দিয়ে এবার চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন। এবার আলুর দাম কম হওয়ায় কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বাইরের অনেক দেশই বাংলাদেশের আলু নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করছেন। সবকিছু মিলে দেশে-বিদেশে এবার আলুর চাহিদা রয়েছে। ধনবাড়ী উপজেলার কৃষি উপসহকারী ফরিদ আহমেদ বলেন, আগাম আলু চাষিদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রেখেছি, ভালো ফলনের জন্য পরামর্শ দেওয়ায় কৃষক সফলতা পেয়েছে।
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩
X