ইতিকাফ নামাজের নিয়ম
ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় রমজান মাসের শেষ দশক বা অন্য কোনো সময় জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহকে খুশি করার নিয়তে পুরুষের জন্য মসজিদে এবং নারীদের জন্য ঘরে নামাজের নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইবাদত করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করা ও স্থির থাকাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ অবস্থান করা, স্থির থাকা, কোনো স্থানে আটকে পড়া বা আবদ্ধ হয়ে থাকা। রমজান মাস ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ই আমলটি করা যায়। তবে রমজান মাসের সঙ্গে এর বিশেষ একটি সম্পর্ক রয়েছে।  ইতিকাফের উদ্দেশ্য : আত্মশুদ্ধির চর্চা ও আত্মার পবিত্রতা অর্জন করাসহ ইতিকাফ পালন করার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এ ছাড়া রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করার আরো বিশেষ একটি উদ্দেশ্য রয়েছে, তা হলো শবে কদরের তালাশ করা। এ সময় ইতিকাফ করার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে মহিমান্বিত এ রাতে আমলের সুযোগ লাভ করা যায়। ইতিকাফের প্রকারভেদ: সুন্নত ইতিকাফ:  রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। অর্থাৎ মহল্লার যে কোনো একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু মহল্লার একজন ব্যক্তিও যদি ইতিকাফ না করে তবে মহল্লার সবার সুন্নত পরিত্যাগের গোনাহ হবে। (দুররে মুখতার: ২/৪৪০)। রমজানের ২১ তারিখের রাত থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত এই ইতিকাফের সময়। কারণ রাসুল (সা.) প্রত্যেক বছর এই দিনগুলোতেই ইতিকাফ করতেন। এ কারণে এটাকে সুন্নত ইতিকাফ বলা হয়। ওয়াজিব ইতিকাফ: মান্নতের ইতিকাফ ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে।’ (সূরা হজ: ২৯) তাতে কোনো শর্ত থাকুক বা না থাকুক। যেমন- কেউ বললো, ‘আমার এই কাজ সমাধা হলে আমি ইতিকাফ করবো’, এতে যেমন ইতিকাফ ওয়াজিব হবে ঠিক তেমনই কেউ যদি বলে- ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ করবো’, এ অবস্থাতেও ইতিকাফ করা ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১৩, দুররে মুখতার: ২/৪৪১) সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে গেলে তা কাজা করা ওয়াজিব। নফল ইতিকাফ: উপরোক্ত দুই প্রকার ইতিকাফ ছাড়া বাকি সব ইতিকাফ নফল। এ ইতিকাফ মানুষ যেকোনো সময় করতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময়ের জন্য ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যতক্ষণ চায় করতে পারে। রোজারও প্রয়োজন নেই। এমনকি যখনই মসজিদে প্রবেশ করবে নফল ইতিকাফের নিয়ত করা সুন্নত। সর্বোত্তম ইতিকাফ: ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান মসজিদুল হারাম, এরপর মসজিদে নববী, এরপর মসজিদে আকসা। এরপর জুম‘আ মসজিদ, এরপর যে মসজিদে বেশি মুসল্লি সালাত আদায় করে থাকে। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন, ইতিকাফ সহীহ হবে এমন মসজিদে যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতের সঙ্গে আদায় করা হয়। যাদের সামর্থ্য আছে তারা যেনো মসজিদে হারামে ইতিকাফ আদায় করে। এটি সওয়াবের ও জামাআতের দিক থেকে সর্বোত্তম। ইতিকাফের শর্ত: মুসলমান হওয়া, পাগল না হওয়া, বালেগ হওয়া, নিয়ত করা, ফরজ গোসলসহ হায়েজ নেফাছ থেকে পবিত্র হওয়া, রোজা রাখা। মসজিদে ইতিকাফ করা। ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মতে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর মতে যে মসজিদে জামাআত সহকারে সালাত হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ জায়েজ নেই।  
২৩ মার্চ, ২০২৪

মসজিদুল হারামে ইতিকাফ পালনে মানতে হবে যেসব শর্ত
প্রতি বছর রমজান মাসে ওমরাহ ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের উদ্দেশ্যে মসজিদুল হারামে যান লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। পবিত্র এই মসজিদে ইতিকাফ পালনের লক্ষ্যও থাকে অনেকের। এসব পুণ্যার্থীর মধ্যে সৌদি নাগরিক যেমন থাকেন তেমনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমানরাও থাকেন। সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে মসজিদুল হারামে ইতিকাফের নিবন্ধন আগামী সপ্তাহে শুরু হবে বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে মজসিদুল হারামে ইতিকাফ পালন করতে আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। খবর গাল্ফ নিউজের। ইসলামের দুই পবিত্র মসজিদের রক্ষক সৌদি জেনারেল অথরিটি জানিয়েছে, সপ্তম রমজান থেকে মসজিদুল হারামে ইতিকাফের নিবন্ধন শুরু হবে। পবিত্র এই মসজিদে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই নিবন্ধন চলবে। তবে ঠিক কতজন মানুষ নিবন্ধন করতে পারবেন, তা জানায়নি সংস্থাটি। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সংস্থাটি বলছে, স্থিতিশীল ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে ইতিকাফ ও ইবাদতের জন্য এই প্রক্রিয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে মজসিদুল হারামে ইতিকাফ পালন করতে আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। পবিত্র এই মসজিদের নিয়ম-কানুন মেনে চলবে এই মর্মে আবেদনকারীকে সম্মতি দিতে হবে। ২০ রমজানের নির্ধারিত সময়ে ইতিকাফ শুরু করতে হবে এবং আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, ইতিকাফ হলো মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিছিন্ন হয়ে আল্লাহর ইবাদতের নিয়তে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। সাধারণত রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ পালন করা হয়। এই বছর সৌদি আরবে ১১ মার্চ পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে।
১৬ মার্চ, ২০২৪

রমজানে ইতিকাফ কখন করলে বেশি সওয়াব
রমজানের একটি গুরুত্বপুর্ণ আমল হলো ইতিকাফ । আর শেষ দশকে ইতিকাফ আরো বেশী ফজিলতময়। মূলত শবেকদর লাভ ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি শুধু ২৭ রমজান অথবা শেষ তিন দিন ইতিকাফ করে কেউ তবে সুন্নত আদায় হবে? কিংবা কখন ইতিকাফ কররে বেশী সওয়াব পাওয়া যাবে। শবে কদর সম্পর্কে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বিতর্কমুক্ত অভিমত হলো- শবেকদর শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কারও জন্য ইবাদত করা সম্ভব না হলে ২৭তম রাতে কিছুতেই উদাসীন থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে ওই দিন মাগরিব ও এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সে-ও শবেকদরের ফজিলত পেয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬) হজরত শুবা (রহ.) বলেন, উবাই ইবনে কাব (রা.) শবেকদরের রাতে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তা সম্পর্কে অবগত আছি। (আর তা হলো ২৭তম রাত) কেননা রাসুল (সা.) এ রাতে আমাদের নামাজে দাঁড়াতে আদেশ করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৬২) আমাদের দেশের অনেক এলাকায় দেখা যায়, তারা রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ না করে শুধু ২৭ তারিখে ইতিকাফ করে থাকে। এমনকি অনেক এলাকায় ২৭ তারিখের ইতিকাফ জরুরিও মনে করে। নফলের নিয়তে জরুরি মনে না করে ২৭ তারিখ বা অন্যকোনো দিনে ইতিকাফ করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। অবশ্য শুধু ২৭ তারিখে ইতিকাফকে জরুরি মনে করার অবকাশ নেই। ইতিকাফের দিনগুলোর আমল ইতিকাফের দিনগুলোতে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুআক্কাদা ছাড়াও সুন্নাতে গায়রে মুআক্কাদা ও অন্যান্য নফলগুলোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কারণ, এ মাসে নফল ফরজের সমতুল্য। ইতিকাফ অবস্থায় অবসর সময়গুলোতে নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ পাঠ করবেন ও কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করবেন। এবাদত করে ক্লান্ত হয়ে গেলে কিছু সময় বিশ্রাম করা যেতে পারে। ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রাভাব নিয়ে এবাদত করবেন না। বরং কিছু সময় বিশ্রাম ও আরাম করে উদ্যম এবং একাগ্রচিত্তে এবাদতে নিমগ্ন থাকাটাই ভালো। লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য প্রত্যেক ইতিকাফকারীকে ২১ তারিখের রাত থেকে ২৯ তারিখ রাত পর্যন্ত প্রত্যেক বেজোড় রাতগুলো কাজে লাগানো উচিত। যদি পুরো রাত জাগ্রত থাকা সম্ভব না হয় তা হলে অধিকাংশ সময়ই জাগ্রত থাকা উচিত। অনেক ২৭ রমজানের রাতের পর ইবাদতের প্রতি উদাসীন হয়ে যায়। এটা মারাত্মক ভুল। কেননা লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনা ২৯ তারিখেও আছে। এ ছাড়া রমজানের এক একটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান। হাদিস শরিফে রমজানের শেষ দিনগুলোতে এবং শেষ রাতগুলোতে অধিক ক্ষমার সুসংবাদ এসেছে। এ কারণে শাওয়ালের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত পূর্ণ ধৈর্য ও সবরের সঙ্গে এবাদতে মগ্ন থাকা উচিত। ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি, চার কুলসহ অন্যান্য তাসবিহ-তাহলিল আদায় করা। ইতিকাফের দিনগুলোর গুরুত্ব বুঝে সে দিনগুলোতে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। অভ্যন্তরীণভাবে দুনিয়াবি সব ব্যস্ততা থেকে নিজেকে অবসর করে ইবাদতে নিমগ্ন হতে হবে। বিশেষত মোবাইল থেকে যথাসাধ্য নিজেকে দূরে রাখা।
০৫ মার্চ, ২০২৪
X