পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মুদি দোকানির পাওনা ৩৪০ টাকা পরিশোধ না করায় দুই দফা হামলা চালানো হয় দরিদ্র দম্পতির ওপর। দ্বিতীয় দফা হামলার সময় ভুক্তভোগী মনির সরদারের সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুবি বেগমের তলপেটে আঘাত করে হামলাকারীরা। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের পর তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন।
এ ঘটনায় মনির বাদী হয়ে সদর ইউনিয়নের বকসির ঘটিচোরা গ্রামের মিরাজ (৩৫), নিজাম (৩২) ও মিলনের (৩০) বিরুদ্ধে ২ মে মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। এরপর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
মামলা সূত্র ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী মিরাজের মুদি দোকান থেকে বিভিন্ন সময় বাকিতে পণ্য কিনতেন তারা। এতে তার ৩৪০ টাকা পাওনা হয়। দিনমজুর মনির দোকানে গেলে মিরাজ পাওনা টাকা দিতে বলে। তবে কয়েকদিন কাজ না পাওয়ায় পরের দিন বুধবার দেবেন জানিয়ে বাড়ি চলে যান।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে মিরাজসহ তার তিন ভাই প্রথম দফায় মনিরের বাড়ি গিয়ে টাকা চায় এবং গালাগাল করে। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারা চলে যায়। কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় দফায় এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় মনিরের স্ত্রীর পেটে আঘাত করে মিরাজ। তার অপর দুই ভাই মনিরকে পুকুরে নামিয়ে পেটায়।
ভুক্তভোগী দম্পতির চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাতেই সিজারের মাধ্যমে রুবি বেগম মৃত সন্তান প্রসব করেন। এ ঘটনার পর থেকে মিরাজ ও তার ভাইয়েরা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ভুক্তভোগীর স্বামী মনির সরদার জানান, মুদি দোকানির পাওনা পরিশোধ না করায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। আমার সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর তলপেটে লাথি মারে তারা। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের পর মৃত সন্তান প্রসব করে আমার স্ত্রী।
সদর ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি মো. সুলতান শরীফ বলেন, শিশু হত্যার সঠিক বিচার চাই আমরা। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
মিরাজ হোসেনের (আসামি) স্ত্রী লাইজু আক্তার অভিযোগের কথা অস্বীকার করে কালবেলাকে জানান, দুই হাজার টাকা এবং মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় রুবির স্বামী মনির। সেটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। সকালে শুনি পেটের বাচ্চা নড়াচড়া করে না। তারপরে আমরা আর কিছু জানি না। আমরা শুনেছি, তার জরায়ুতে সমস্যা ছিল।
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল অফিসার ডা. সৌমিত্র সিনহা রায় কালবেলাকে জানান, রোগীর অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পেটের ভেতরে বাচ্চা মৃত অবস্থায় ছিল। যে কারণে নরমাল করা সম্ভব হয়নি। মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোন দিয়েছিলেন রোগীটি অনেক গরিব। তাই আমরা ফ্রিতে সিজার করে দিয়েছি।
মঠবাড়িয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গর্ভের মৃত সন্তানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন