সম্মিলিত চেষ্টায় এবার দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রা
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালুর মধ্য দিয়ে সড়ক-মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি, যানজট নিরসনে মহাসড়কে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিসহ পুলিশি তৎপরতায় সড়কপথে দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রা হয়েছে। সেইসঙ্গে এবারই প্রথম দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক উত্তরের পথে ড্রোন ক্যামেরায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যানবাহনের জটলায় টোলমুক্ত যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে একাধিক সেতুতে। তবে এর সঙ্গে দীর্ঘ ছুটি এবং লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলতে না দেওয়া দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রার বড় কারণ বলে মনে করেন অনেকেই। সড়কপথে এক কোটির বেশি মানুষ রাজধানী ছাড়ার হিসাব দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসাবে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে ১৫৫টি যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছিল। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ১২২টি যানজটপ্রবণ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়। তালিকা ধরেই সম্মিলিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রায় সাতটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিআরটিএ-বিআরটিসি-ডিটিসিএ ও ডিএমটিসিএল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে বিআরটিএ সদর দপ্তর কার্যালয়ে ঈদযাত্রা উপলক্ষে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এস্টেট) মো. সাইফুল ইসলাম ফোকাল পারসন হিসেবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। মূলত ৪ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে। এ ছাড়া ৪ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ দিন নিরাপদ যাতায়াত সরেজমিন মনিটরিং করতে ঢাকা মহানগরী এবং এ-সংলগ্ন জেলায় ৯ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা অভিযান পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে নিরাপদে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম ১৫-১৬ তারিখ বাড়ানো হয়। দুই দিন ১৬ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে নিরাপদ ঈদযাত্রায় বিআরটিএ সদর দপ্তরে খোলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোকাল পারসন ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শীতাংশু শেখর বিশ্বাস। ৪-১৪ তারিখ পর্যন্ত এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ১২৯ জন পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ছিল সিসিটিভিতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা। সড়ক-মহাসড়কে যে কোনো স্থানে সমস্যা দেখলেই নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তেমনি হাইওয়ে পুলিশ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ উত্তরের পথে ড্রোন ক্যামেরায় যানজট নিয়ন্ত্রণ করে, যা এবারই প্রথম। ড্রোন ক্যামেরায় সড়ক পরিস্থিতি বিআরটিএ, জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ একযোগে পর্যবেক্ষণ করে। সড়ক সচিব, একাধিক অতিরিক্ত সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, পুলিশপ্রধান, হাইওয়ে পুলিশপ্রধান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নিরাপদ ঈদযাত্রায় ধারাবাহিকভাবে মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সমস্যায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন তারা। এর সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ, বিআরটিএ, বিআরটিসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই মাঠে ছিলেন। মূলত সমন্বিত পদক্ষেপের কারণেই দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রা হয়েছে এ বছর। জানা গেছে, ঈদের এক দিন আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি সেতুতে যানজটের কারণে টোল ফ্রি করে দেওয়া হয় অল্প সময়ের জন্য। এতে দ্রুত যানজট নিয়ন্ত্রণে আসে। তেমনি প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ শেষে নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরছেন নগর ছেড়ে যাওয়া মানুষ। সড়কপথে ঢাকায় ফিরতে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানা গেছে। দুর্ভোগমুক্ত ঈদযাত্রা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী কালবেলাকে বলেন, নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা সাজানো হয়। রাজধানী ঢাকাসহ মাঠপর্যায়ে যাদের যে দায়িত্ব ছিল, তারা সবাই তা যথাযথভাবে পালন করেছেন। অনেকেই ঈদে রাস্তায় ছিলেন। তিনি বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ সুপার, ইউএনও, বিআরটিএ থেকে সবাই সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। মালিক ও শ্রমিক নেতারাও সহযোগিতা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানে কিছুটা যানজট হয়েছে সেখানেই অতিরিক্ত জনবল দেওয়া হয়েছে। নষ্ট গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব মহাসড়কে হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের তৎপরতা ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সেতুগুলো ঘিরে মাঝেমধ্যে কিছুটা যানবাহনের জটলা হলেও টোল ফ্রি করতে হয়নি। ঈদের পরে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কার্যক্রম আরও বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান সড়ক সচিব। ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে হাইওয়ে পুলিশ। জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শ্যামল কুমার মুখার্জী কালবেলাকে বলেন, নিরাপদ ঈদযাত্রায় হাইওয়ে পুলিশের প্রায় সব সদস্য মাঠে কাজ করেছেন। ৮ এপ্রিল গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় ৯ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত রাস্তায় যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। যেখানে যে সমস্যা হয়েছে, তা দ্রুত নিরসন করা হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল, ঈদযাত্রায় যেন যাত্রীদের কোনোভাবেই দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। ৯ তারিখ বিকেলের পর থেকে রাস্তার চাপ একেবারেই কমে যায় বলেও জানান তিনি। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ভোগান্তি নেই: ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রবেশ পথ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট। রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪ হাজার যানবাহন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে পারাপার হয়েছে। তবে কোনো ভোগান্তি ছিল না। কর্মক্ষেত্রে যাত্রীদের স্বস্তিতে ফিরতে ঘাটের পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, সোমবার ভোরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যায়। যানজট ও ভোগান্তি না থাকায় স্বস্তিতে ফিরছে ঢাকামুখী যাত্রীরা। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ কালবেলাকে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাস ৫২১টি, ট্রাক ২৯২টি, ছোট গাড়ি ১ হাজার ৬১৭টি এবং মোটরসাইকেল ১ হাজার ৫১৪টি পারাপার হয়েছে। দৌলতদিয়ায় ৭টি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩টি ঘাট সচল রয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট চালু আছে। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ফেরিঘাট শাখা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন কালবেলাকে জানান, ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষ ও যানবাহনের চাপ নেই। যাত্রী ও যানবাহন ফেরিঘাটে পৌঁছানো মাত্রই ফেরিতে উঠে চলে যাচ্ছে। এ নৌরুটে ছোট-বড় মিলে মোট ১৮টি ফেরি বর্তমানে চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের ম্যানেজার নুরুল আনোয়ার মিলন কালবেলাকে জানান, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে। এ লঞ্চগুলো দিয়েই যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে। রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ কালবেলাকে জানান, ঢাকামুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্নে পারাপার ও নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশ কাজ করছে। ঘাটের বিশেষ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে ট্রাফিক পুলিশ, ডিবি পুলিশ, গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ মিলিয়ে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু আছে।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

সদরঘাটেই শেষ যাত্রা পাঁচজনের ঈদযাত্রা
ভিড় এড়াতে ঈদের দিন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। নিরাপদ যাত্রায় বেছে নিয়েছিলেন নৌপথ। কিন্তু এ পথই কেড়ে নিয়েছে তাদের প্রাণ। শেষ পর্যন্ত প্রিয়জনদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। কাটানো হলো না ঈদ। ঈদযাত্রায় সদরঘাটেই হলো তাদের শেষ যাত্রা। ঈদের দিনেই সদরঘাটে নৌ দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মো. বেলাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৪) ও তাদের চার বছর বয়সী মেয়ে মাইশা। নিহত অন্যরা হলেন পটুয়াখালী সদরের জয়নাল আবেদিনের ছেলে রিপন হাওলাদার (৩৮) এবং ঠাকুরগাঁও সদরের নিশ্চিন্তপুর এলাকার আব্দুল্লাহ কাফীর ছেলে রবিউল (১৯)। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল বিকেলে সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামে দুটি লঞ্চ বাঁধা ছিল। বিকেল ৩টার কিছুক্ষণ আগে এ দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান-৬ নামে আরেকটি লঞ্চ পন্টুনে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় এমভি তাশরিফ-৪-এর রশি ছিঁড়ে পন্টুনে অপেক্ষমাণ পাঁচ যাত্রী গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পর ১২ এপ্রিল মৃতদেহগুলো তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানের পর পিরোজপুর, পটুয়াখালী আর ঠাকুরগাঁওয়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। ম্লান হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। স্বজনের মাতমে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। এ ঘটনায় ফারহান-৬ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার আবদুর রউফ, দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মোহাম্মদ সেলিম হাওলাদার, লঞ্চের পরিচালক শাহরুখ খান, তাসরিফ-৪ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মিজানুর রহমান ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে নৌ পুলিশ। শুক্রবার ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা চৌধুরী হিমেলের আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দুর্ঘটনার বিষয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঈদের দিন ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সার্ভেয়ারদের দুর্বলতা থাকলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ঈদের দিন আমরা উৎসবমুখর মুডে ছিলাম। সেখানে এ ধরনের একটি ঘটনা ঈদের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। তদন্ত কমিটির ঘটনাস্থল পরিদর্শন: ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (ক্রয় ও সংরক্ষণ) মো. রফিকুল ইসলামকে। এ ছাড়া নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. আজগর আলী এবং বন্দর শাখার যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেন কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন। শুক্রবার কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে রাতে কমিটির প্রধান রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করে একটি লঞ্চ বার্থিং করতে গিয়ে তীরে থাকা অন্য একটি লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। এই ছিঁড়ে যাওয়া রশির আঘাতেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। মায়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না বিল্লালের: মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, ঈদের দিন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার কর্মী বিল্লাল হোসেন। ঈদের দিন যাত্রীর চাপ কম থাকবে বলে এদিন বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সদরঘাটের লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পরিবারটির সবাই মারা যান। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাদের মরদেহ গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামে নেওয়া হলে পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। বেল্লাল হোসেনের মামাতো ভাই শাকিল হোসেন কালবেলাকে জানান, বেল্লাল হোসেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে লঞ্চে করে বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পরিবারটির সবাই শেষ হয়ে গেল। মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, তাদের পারিবারিক অবস্থা ভালো না থাকায় উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

শবযাত্রায় পরিণত হয়েছে ঈদযাত্রা
নরসিংদীতে কাভার্ডভ্যান আর মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী ও শিশুসহ নিহত ছয়জনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তারা সবাই ঈদের ছুটিতে মাইক্রোবাসে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ফিরছিলেন। বুধবার (১০ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীর টাটা পাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ছয়জনের মধ্যে একই বাড়ির চারজন ও প্রতিবেশী গ্রামের দুজন রয়েছে। নিহতরা হলেন- বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে মজিবুর রহমান (২৭), তার ভাগনি মীম আক্তার (২০), ভাগিনা আবু হুরায়রা (৯), তার চাচা জসিম (৩০) ও প্রতিবেশী জালালপুর গ্রামের হেলাল ও বাবুল। এ ঘটনার পর গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। নিহতদের মরদেহ একনজরে দেখার জন্য  বাড়িতে আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীসহ সবাই ভিড় করছে। তাদের এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।  নিহতের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। সেখানে লেপ তোষকের ব্যবসা করতেন। ঈদের ছুটিতে পরিবারের কাছে আসার পথে দুর্ঘটনায় সেসহ তার পরিবারের আরো তিনজন মারা যায়। মৃত্যুর খবর পেয়ে আমাদের ঈদ আনন্দ অনেকটা বেদনায় পরিণত হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। নিহতের বোন সাথি আক্তার বলেন, আমার ভাই আসার আগে মোবাইল ফোনে বলেছিল তোমাদের ঈদের দিন এসে আমি নিয়ে যাব আমাদের বাড়িতে। এরপর থেকে ফোন আসে মৃত্যুর খবর।  প্রতিবেশীরা জানান, এমন একটি আনন্দের দিনে মৃত্যুর মিছিলের যন্ত্রণা কোনোভাবেই সহ্য করার নয়। সড়কে এমন মৃত্যু আমরা আর কামনা করি না। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সরকার যেন কঠোর পদক্ষেপ নেয় সেই দাবি জানাচ্ছি। নিহতদের স্বজনরা জানান, ঢাকা থেকে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে চেপে নারী ও শিশুসহ মোট ১৩ জন যাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে আসছিলেন। যাত্রাপথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় ১৩ জনকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়। পরে ঢাকা মেডিকেলে আরও দুজন মারা যায়। এদিকে বিকেল ৩টায় নিহত মুজিবুর তার ভাগ্নে আবু হুরায়রা ও ভাগ্নে মিম আক্তারের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।   
১১ এপ্রিল, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় ট্রেনে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে : রেলমন্ত্রী
রেলমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কারণে ঈদে যাত্রীরা ট্রেনে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে রাজবাড়ীর পাংশায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। রেলমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন ঈদে যাত্রীরা যেন নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করেছি। আন্তরিকভাবে যদি কোনো কাজ করা যায়, আমার মনে হয় সে কাজে সফলতা আসে। তিনি বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ আমরা সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করেছি যাতে যাত্রীরা নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন। আমাদের সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ জন্য আমরা জনগণকে এবং রেলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা এবং নির্দেশনার কারণে তাকেও ধন্যবাদ জানাই। রেলমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যাত্রীদের ফিরতি টিকিটও দিয়েছি। ঈদে যেমন তারা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরেছেন। ঈদ শেষেও তারা একইভাবে কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন।
১০ এপ্রিল, ২০২৪

এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে : বিআরটিএ চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, এবারের ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে যানজট ও দুর্ঘটনা কম ছিল। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে।   বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান।  পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ঈদযাত্রার সপ্তম দিনে গাবতলীতে যাত্রী নেই বললেই চলে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা অনেক স্বস্তিদায়ক হয়েছে। যানজট ও দুর্ঘটনা এবার কম ছিল। ফিরতি যাত্রা যেন এমন নির্বিঘ্ন হয় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।  তিনি বলেন, গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার কারণে গত দুই দিন সড়কে যানজট ছিল। কোথাও বাস ধীরগতিতে চলেছে। অনেক পরিবহনের মধ্যে ২-৪টা পরিবহন অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চার্টে যে ভাড়া রয়েছে তা বিআরটিএ বাড়িয়ে নির্ধারণ করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম দুই দফায় ৩ টাকা কমেছে। সেটা বিবেচনায় নিয়ে ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩ পয়সা কমানো হয়েছে। ভাড়ার তালিকা আপডেট করে আমরা প্রতিটি কাউন্টারে দিয়েছি। 
১০ এপ্রিল, ২০২৪

ড. মো. শফিকুল ইসলামের নিবন্ধ / ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ ও স্বস্তির
ঈদ যেমন মুসলমানদের জীবনে খুশি নিয়ে আসে, ঠিক তেমনি ঈদে অনেক পরিবারে কালো মেঘ বা দুঃখও আসে। কারণ ঈদযাত্রায় অনেক পরিবারের কর্তা বা ছেলেমেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। যা কখনো মেনে নেওয়ার মতো না। সাধারণত ঈদে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ২৯ রমজান পর্যন্ত অফিস খোলা থাকবে। আগামী ৫ এবং ৬ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি। ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি। কিন্তু মাঝে ৮ ও ৯ এপ্রিল খোলা। দুদিন কর্মদিবস থাকায় যাত্রীর বড় অংশ আগেভাগে শহর ছাড়তে পারবে না। সড়কে ৯ এপ্রিল বিকেল থেকে চাপ বাড়বে।  ছুটি কমে যাওয়ায় একসঙ্গে যাত্রীর চাপ সড়কে পড়লে যানজটের ভোগান্তি অবধারিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য অনেক বেশি নজরদারি বাড়াতে হবে সড়কপথে। গত বছর ঈদে পাঁচ দিনে রাজধানী শহর ঢাকা ছেড়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ। এবছর অবশ্যই গতবছরের চেয়ে কম হওয়ার কথা না। তাই মানুষের ঈদযাত্রা যেন নিরাপদ হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া মানুষের যাতায়াত তুলনামূলক স্বস্তির হয়।  রাজনৈতিক এবং অন্যান্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এবারের ঈদে আরও বেশি মানুষের জনসমাগম হবে এবং বেশি মানুষ গ্রামমুখী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা’ মানুষের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। অতীতে করোনা মহামারির কারণে মানুষ কম ঈদযাত্রা করেছে। কিন্তু এখন তেমন কোনো খারাপ পরিস্থিতি নেই, তাই ঈদে গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদযাত্রায় ঈদের আগে ও পরে কয়েক দিন তীব্র যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ সরকারি ছুটি তিন দিন মাত্র। অসহনীয় যানজটে যাত্রীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।  এ ছাড়া পথে পথে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল তো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন মারা গেছেন। যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭ হাজার ৯০২ জন। এর দায় কার? প্রতিবছর ঈদ এলে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। কিন্তু যাত্রীদের দুর্ভোগ ও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি কমেনি।  সড়কে উন্নয়নের নানা কথা শুনতে পাই, কিন্তু বাস্তবে এর সুফল কি সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারছেন? এসব দুর্ঘটনা বা ভোগান্তি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মানুষ এখন রাস্তায় নামলে বাসায় ফিরে আসবে কি না সন্দেহ থেকে যায়। কারণ, প্রতিবছর সড়কে দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা খুব আশঙ্কাজনক।  এবছর ঈদযাত্রায় এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ যাতায়াত করতে পারে। এতে ৯ এপ্রিল থেকে ২০ এপিল পর্যন্ত ঈদবাজার, গ্রামের বাজার যাতায়াতসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির পরিবহনে বাড়তি প্রায় ৫০-৬০ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হতে পারে। সরকার অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা রোধ বা প্রাণহানি কমিয়ে আনা যায়নি। অথচ গত দশকে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে অনেক। যানজট ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গণপরিবহনে সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা না গেলে এবারের ঈদযাত্রায় খুবই খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে। যার ফলে অনেকের ঘরের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে। তাই সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের সবার সচেতন হতে হবে যাতায়াতের সময়। ঈদে কেনাকাটার জন্য যেভাবে মানুষ ঘর থেকে শপিংয়ের জন্য বের হচ্ছেন; তাতে মনে হয় এবারের ঈদযাত্রায় বিভাগীয় শহরে যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ। তাই রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে ফুটপাত হকার ও অবৈধ পার্কিংমুক্ত করা জরুরি। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকট, অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্যের চাপ কমাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চালাতে কিছু কিছু পরিবহন মালিক-চালক বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনেক বেশি তৎপর থাকতে হবে, যাতে কোনো অসাধু পরিবহন মালিক বা চালক বেশি ভাড়া আদায় করতে না পারে। ভাড়া নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও দৃষ্টান্তমূলক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতায় যাত্রাপথে দ্বিগুণ বা তিন গুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হয়নি। অর্থাৎ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রী হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। শুধু সড়কপথে এসব হয়, তা কিন্তু নয়; বরং নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি সারা দেশে নৌ ও ফেরিঘাটে নিয়োজিত ইজারাদারদের ঈদে যাত্রী পারাপারে বাড়তি টোল আদায়ের নৈরাজ্য আছে। এবারও তারা তৎপর হয়ে উঠতে পারে। যাত্রী হয়রানি বন্ধে নৌপরিবহন ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ একান্ত কাম্য।  শিমুলিয়া-বাংলাবাজার,পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে যানবাহন চলাচলে ফেরির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে ঈদের সময়। এ ছাড়া চলমান ফেরিগুলোর যথাযথ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা জরুরি। এবারের ঈদে কালবৈশাখীর শঙ্কা থাকায় নৌপথ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আনফিট নৌযান চলাচল বন্ধ করতে হবে। আগামী ২৫ রমজান থেকে লাখ লাখ যাত্রীর গণপরিবহন সংকট দেখা দিতে পারে। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ক্লাস্টার করে এটি সমাধান করা যেতে পারে।  চাকরিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের আগে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। বিকেন্দ্রীকরণ করলে ঢাকায় আসা-যাওয়া মানুষের সংখ্যা কমে যাবে, যার সুফল পাবে সব জনগণ। ড. মো. শফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
০৯ এপ্রিল, ২০২৪

উত্তরবঙ্গে ‌ভোগা‌ন্তি ছাড়াই স্ব‌স্তির ঈদযাত্রা
এবার ভিন্ন এক ঈদযাত্রা কর‌ছে উত্তরব‌ঙ্গের যাত্রী ও চালকরা। ঈদের ক‌য়েক‌দিন আগ থে‌কেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেখা‌নে চরম ভোগা‌ন্তি নি‌য়ে মহাসড়কে চলাচল কর‌তে হ‌তো সেখা‌নে ভিন্ন‌ চিত্র এবার। ঢাকা থে‌কে ছে‌ড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী প‌রিবহনগু‌লো বি‌রতিহীনভা‌বে চলাচল কর‌ছে। ফ‌লে কোনো ভোগা‌ন্তি বা যানজট ছাড়াই অনায়া‌সে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হচ্ছে মানুষজন। একইভা‌বে উত্তরবঙ্গ থে‌কে ছে‌ড়ে আসা ঢাকাগামী প‌রিবহনগু‌লোও স্বাভা‌বিক গ‌তি‌তে চলাচল কর‌ছে। সড়‌কের উন্নয়ন ও জেলা প্রশাসন ও পু‌লিশ প্রশাস‌নের সম‌ন্বিত উদ্যো‌গের কার‌ণে এবার ভোগা‌ন্তি ছাড়াই মানুষ বা‌ড়ি ফির‌ছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল‌ থে‌কে মহাসড়‌কের কোথাও কোনো প‌রিবহ‌নের ধীরগ‌তি বা চাপ দেখা যায়‌নি। ত‌বে গভীররা‌তে প‌রিবহ‌নের চাপ ছিল। এলেঙ্গা হ‌তে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কি‌লো‌মিটারের দুই লে‌নের সড়‌কটুকু নি‌য়ে দু‌শ্চিন্তা থাক‌লেও সে‌টি যান চলাচ‌লে এখন পর্যন্ত কোনো সমস‌্যা হয়‌নি। ওই সড়কটুকু শুধু ঢাকা থে‌কে ছেড়ে আসা প‌রিবহনগু‌লো উত্তরব‌ঙ্গের দি‌কে চলাচল কর‌ছে। আর উত্তরবঙ্গ থে‌কে ছে‌ড়ে আসা ঢাকাগামী প‌রিবহনগু‌লো এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতুর ১৩ কি‌লো‌মিটার সড়‌কে প্রবেশ কর‌তে দেওয়া হয়‌নি। ঢাকাগামী ওইসব প‌রিবহনগু‌লো ভুঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চ‌লিক বিকল্প সড়ক ব‌্যবহার ক‌রে ঢাকার দি‌কে চলাচল কর‌ছে। এতে য‌দিও প‌রিবহনগু‌লো‌তে বাড়‌তি ১৫ কি‌লো‌মিটার সড়ক ঘু‌রে যে‌তে হ‌চ্ছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু‌তে টোল আদায় বে‌ড়ে‌ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় সেতু‌তে ২৯ হাজার ৭৮০‌টি প‌রিবহ‌নের থেকে ২ কো‌টি ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা টোল আদায় হ‌য়ে‌ছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছে বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্বাহ‌ী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পা‌ভেল। যাত্রীরা জানান, টাঙ্গাইল অং‌শের মহাসড়‌কে কোথাও কোনো যানজট পাইনি। চির‌চেনা মহাসড়ক এবার ঈদে স্ব‌স্তি  দি‌য়েছে যাতায়া‌তে। ত‌বে আরও দুই দিন বা‌কি র‌য়ে‌ছে ঈদে। মানুষজন এখনো প্রচুর আস‌ছে। মহাসড়‌কের যে অবস্থা তা‌তে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বগুড়াগামী এসআই প‌রিবহ‌নের চালক ইয়াকুব আলী জানান, ঈদের আগের এই সময় মহাসড়‌কে ব‌্যাপক যানজট থাক‌ত। কিন্তু সড়ক উন্নয়ন আর প্রশাস‌নের হস্ত‌ক্ষে‌পে এবার যানজটমুক্ত। কোথাও কোনো সমস‌্যা হ‌চ্ছে না গা‌ড়ি নি‌য়ে স্বাভাবিক গ‌তি‌তেই চালা‌চ্ছি।  বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানার ওসি আলমগীর আশরাফ জানান, এলেঙ্গা হ‌তে সেতু পর্যন্ত কোথাও কোনো পরিবহ‌নের চাপ নেই। স্বাভা‌বিক গ‌তি‌তেই প‌রিবহনগু‌লো চলাচল কর‌ছে মহাসড়‌কে। প‌রিবহন চলাচল স্বাভ‌া‌বিক রাখ‌তে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবা‌হিনীর সদস‌্যরা দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছে।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে পুলিশ কাজ করছে
জনগণের ঈদযাত্রা যেন স্বস্তিদায়ক হয় সেজন্য পুলিশের সব ইউনিট এক যোগে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা থেকে বাইরে যাওয়ার যাত্রীদের একটা চাপ থাকবে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। একটি স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার জন্য আমরা নিরলস কাজ করছি। গতকাল রোববার সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আইজিপি বলেন, মহাসড়কে নছিমন, করিমনসহ ভটভটি জাতীয় বাহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং ওভার টেকিং না করতে তিনি চালকদের অনুরোধ করেন। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে বলেও জানান তিনি। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা বাসার নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা ফ্ল্যাট বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিয়োজিত করেন। সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক আছে কি না চেক করে নেবেন, যেন অপরাধ সংগঠিত হলে পাহারাদার না ধরতে পারলেও আমরা যেন অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারি। জাল টাকার বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি। এ ছাড়া কোনো প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করার পরামর্শ দেন আইজিপি। এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ঈদের সময় ছিনতাইকারীরা যেমন তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করে, তেমনি আমরাও আমাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছি। ছিনতাই নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিটি ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে কাজ করছে পুলিশ : আইজিপি
জনগণের ঈদযাত্রা যেন স্বস্তিদায়ক হয় সেজন্য পুলিশের সকল ইউনিট একযোগে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ঈদের সময় ঢাকা শহরে বিশেষ চাপ দেখা যায়। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষজন যাতায়াত করে। আমরা লক্ষ্য করেছি ইতোমধ্যে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা থেকে বাইরে যাওয়ার যাত্রীদের একটা চাপ থাকবে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। একটি স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার জন্য আমরা নিরলস কাজ করছি।  রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে সায়দাবাদ জনপথ মোড়ে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। আইজিপি বলেন, মহাসড়কে নসিমন, করিমনসহ ভটভটিজাতীয় বাহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। রাস্তায় আমাদের মোবাইল কোর্ট থাকবে। বেপরোয়া গতিতে যেন গাড়ি চালানো না হয় সেজন্য আমরা সকল চালককে অনুরোধ জানাব। চালকদের আরও বলব বিনা প্রয়োজনে আপনারা ওভার টেকিং করবেন না।  জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আইজিপি বলেন, আপনারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো বাহনের যাত্রী হবেন না। আমরা সবাই ঈদের আনন্দ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করার জন্য যাব। আমরা কেউ দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যেতে চাই না।  পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত টুরিস্ট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। টুরিস্ট পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশসহ পুলিশের সকল ইউনিট সুষ্ঠু সমন্বয় করে কাজ করবে।  ফাঁকা বাসার নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশপ্রধান জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি যাবেন। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা বাড়িতে কেউ যেন অপরাধ সংগঠিত না করতে পারে সেই জন্য আপনারা ফ্ল্যাট বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিয়োজিত করেন। সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক আছে কিনা সেগুলো চেক করে নিবেন যেন অপরাধ সংগঠিত হলে পাহারাদার না ধরতে পারলেও আমরা যেন গিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারি।  জাল টাকার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলে আইজিপি বলেন, ঈদের সময়ে দ্রুত কেনাকাটা হয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি চক্র জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়। ফলে জাল টাকার কারণে অনেকে প্রচারিত হন। তাই জাল টাকার বিষয়ে সবাই সতর্কতা অবলম্বন করবেন এবং পুলিশকে জানাবেন। এছাড়া কোনো প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ ফোন করে আপনারা পুলিশের সাহায্য নিতে পারবেন।  ছিনতাই নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ঈদের সময় ছিনতাইকারীরা যেমন তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করে তেমনি আমরাও আমাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছি। ছিনতাই নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিটি ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এই দেশে একটা সময় জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের হোলি খেলা চলছিল। আমরা সবার সঙ্গে মিলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। একইভাবে আমরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ছিনতাইকারীদের আমরা আইনের আওতায় আনছি। অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
০৭ এপ্রিল, ২০২৪

সম্পাদকীয় / ঈদযাত্রা নিরাপদ হোক
শহুরে মানুষের নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা ঈদের অন্যতম ঐতিহ্য। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে সবাই গ্রামে ফিরে যায়। ঈদে ঘরমুখো মানুষ প্রতি বছরই দুর্ভোগের শিকার হয়। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুক্রবার থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। আগামী কয়েকদিন সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকবে। কয়েকদিন ধরে গরমে এমনিতেই মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এ অবস্থায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠবে। কাজেই মহাসড়কে যাতে যানজটের কারণে মানুষের দুর্ভোগ না বাড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার রেলপথে শিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই বাড়ি যাচ্ছেন যাত্রীরা। রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। সদরঘাটে ঢাকা নদীবন্দরে নৌপথেও বেড়েছে যাত্রী। বঙ্গবন্ধু সেতুতে আগের চেয়ে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে দেশের নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতেও। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে হবে। যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ নেই, সেখানে যানবাহনের গতিবিধি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়া উচিত। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেপরোয়া গতিতে কিংবা জয় রাইডিং না করতে নিষেধ করা হয়েছে। এতে জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে খাবার খেতে বারণ করা হয়েছে। অদক্ষ, অপেশাদার, ক্লান্ত বা অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস ও গাড়ি চালাতে না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বাস মালিকদের। চালক যাতে নিয়ম মেনে গাড়ি চালান এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করেন, সেজন্য চালককে নির্দেশ দিতে হবে। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো যাবে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বের করা যাবে না। ওভার স্পিডে গাড়ি না চালাতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করতে বাসচালকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। নৌযানের ছাদে যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করা যাবে না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌযানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সড়ক, রেল এবং নৌ-মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ভাড়ার বেশি টাকা নিলে ও লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রতি বছরই ওঠে। এ বছর কেউ যাতে যাত্রীর চাপ ও পরিবহন সংকটের সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দের উপলক্ষ হলেও প্রতি বছর পথের নানা ভোগান্তি এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণে তা কোনো কোনো পরিবারের জন্য যেভাবে নিরানন্দ বয়ে আনে, সেটি দুর্ভাগ্যজনক। বছরে দুবার অনুষ্ঠিত ঈদে যাতে সবাই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে এবং উৎসব শেষে কর্মস্থলে যেতে পারে, সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বস্তুত সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থাপনা, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বাড়তি আয়োজন গ্রহণের মাধ্যমে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসবকে সবার জন্যই আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঈদযাত্রায় সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে পারে। সবার ঈদযাত্রা আনন্দময় হোক।
০৭ এপ্রিল, ২০২৪
X