কসবা টি আলী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা টি আলী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির তথ্য দিয়েছেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাহেবাবাদ কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির।  তিনি জানান, দলীয়কর্মী আজাদকে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে ২০০২ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমান চরম অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে হুমায়ুন কবির টি আলী ডিগ্রি কলেজ সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে ১৪ অক্টোবর কসবা পৌরসভায় অবস্থিত টি আলী (তফজ্জল আলী) ডিগ্রি কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে ইন্টারভিউ অনুষ্ঠিত হয়। বিধি মোতাবেক উপাধ্যক্ষ পদে কাম্য অভিজ্ঞতা ১২ বছর। উপাধ্যক্ষ পদে ১৬ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। ১৫ জন প্রার্থীই ছিলেন ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক। শুধু আবুল কালাম আজাদের শিক্ষকতায় কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে একটি সিগারেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। উপাধ্যক্ষ পদে তিনি ছিলেন বিধি মোতাবেক অভিজ্ঞতাহীন ও অযোগ্য প্রার্থী। এই পদটিতে রাজনৈতিক নিয়োগ হবে জানতে পেরে আটজন প্রার্থী তখন ইন্টারভিউতে অংশ নেননি। অনুষ্ঠিত ওই ইন্টারভিউতে অন্যান্য প্রার্থীরা ২৫ নম্বর পরীক্ষার মধ্যে সর্বোচ্চ পেয়েছিলেন ১১ নম্বর। অন্যরা ৯, ৬, ৭, ৮ ও ৬ পেলেও আবুল কালাম আজাদ পেয়েছিলেন মাত্র ৫ নম্বর। প্রাপ্ত নম্বরের তালিকায় ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যদের অনুস্বাক্ষরও আছে। প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে সব প্রার্থীর নম্বরকে টপকিয়ে প্রাপ্ত নম্বর ৫-এর স্থলে ১৬ করে তাকে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি সরকারের আমলে অনিয়ম করে আজাদকে প্রথম করে টি আলী কলেজ উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত উপাধ্যক্ষ বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে পুনরায় সাজানো ইন্টারভিউর মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চলমান প্রক্রিয়ায় ফুঁসে উঠেছে কসবার সচেতন মানুষ। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। ব্যবস্থাপনা কমিটির একজন সদস্য তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিতে একচ্ছত্র পক্ষপাত করলে এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভূঁইয়া জীবনের সঙ্গে ওই সদস্য তর্কে জড়ায়। এ ঘটনায় শহরের সচেতন মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ ওঠে, উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ৯ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে কলেজ পরিচালনা কমিটি ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের ভাগাভাগি করে নেন। যেন তার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগটি নিশ্চিত হয়ে যায়।  এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তিনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় তিনি বাদৈর ইউনিয়নের অনেক মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কসবা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির বলেন, অবৈধভাবে উপধ্যক্ষ নিয়োগ পাওয়া আবুল কালাম আজাদ ২২ বছর ধরে বেতনভাতা বাবদ প্রায় কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন। তিনি এই সরকারি অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউএনওর নিকট আবেদন জানিয়েছেন। এ বিষয়ে কসবা টি আলী ডিগ্রি কলেজের বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০০২ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে সর্বনিম্ন নম্বর পেয়েছি, এমন অভিযোগ ভুয়া ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ১৬ নম্বর পাওয়ায় আমাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিমুল এহসান খান বলেন, টি আলী কলেজের উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরিচালনা পর্ষদকে বলা হয়েছে এবং তারা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন।
০৬ অক্টোবর, ২০২৩
X