আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জিপিএ-৫ পেল মেয়ে, দুশ্চিন্তায় রিকশাচালক পিতা

এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মা-বাবার সঙ্গে সুরাইয়া আক্তার। ছবি : কালবেলা
এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে মা-বাবার সঙ্গে সুরাইয়া আক্তার। ছবি : কালবেলা

তার জীবনের ধাপে ধাপে এসেছে নানা বাধা। কখনো হোঁচট খেতে হয়েছে। আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু উপেক্ষা করে চালিয়ে গেছে পড়াশোনা। ফলও পেয়েছে। এবারের দাখিল পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এখন উচ্চশিক্ষিত হয়ে পরিবারের অভাব ঘুঁচিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চায় এ অদম্য মেধাবী সুরাইয়া।

বাবা রিকশাচালক, মা মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। বাবা-মা দুজনেরই নেই কোনো অক্ষরজ্ঞান। অভাব অনটনে কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে থেকেছেন। ঠিকমতো মাদ্রাসার বেতনও দিতে পারেনি। তবু পড়ালেখা বন্ধ করেনি সুরাইয়া আক্তার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া টেকনিক্যাল ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছে অধম্য মেধাবী সুরাইয়া আক্তার। মেয়ের প্রবল আগ্রহ আর মেধা থাকলেও আর্থিক অনটনের কারণে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে পরিবারে মধ্যে এক প্রকার শঙ্কা কাজ করছে।

তিন বোনের মধ্যে সুরাইয়া সবার বড়। সে ছাড়াও এক বোন ৮ম শ্রেণিতে, ছোট বোন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তার পিতার নাম দুলাল মিয়া। তাদের পরিবার আখাউড়া পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

অভাবের সংসারে অটোরিকশাচালক বাবার আয় যথেষ্ট না হওয়ায় পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেননি সে। তাইতো নিজের পড়াশোনার খরচ চলাতে ফাঁকে ফাঁকে অন্যকে প্রইভেট পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাননি সুরাইয়া।

মেধাবী সুরাইয়া আক্তার বলেন, আমি নিয়মিত মাদ্রাসায় গেছি। কোনো দিন মাদ্রাসা বন্ধ করিনি। দারিদ্র্যতার কারণে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। তাছাড়া মাদ্রাসার পাঠদানের পড়া মাদ্রাসাতেই বসে শেষ করতাম। তারপর নিয়ম করে বাড়তি পড়া পড়েছি। পড়াশোনার খচর চালাতে ছাত্রছাত্রীদের পাইভেট পড়িয়েছি। কারণ আমার পিতার সামান্য আয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ৩ বোনের পড়ালেখার খরচ জোগানো খুবই কঠিন ছিল।

সুরাইয়া আরও বলে, বাবা-মায়ের প্রচেষ্টা ও নিজেদের অদম্য ইচ্ছের কারণেই আজ ভালো ফলাফল অর্জন করেছি। তাছাড়া আমার মাদ্রাসার শিক্ষকরা আমাকে সার্বিকভাবে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। তারা আমার পাশে না থাকলে আমি হয়ত এ ফলাফল করতে পারতাম না। আমার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার। এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। ডাক্তার হয়ে যেন মানুষের সেবা করতে পারি।

এ দিকে মেয়ের ভালো ফলাফলে খুশি হলেও উচ্চশিক্ষা নিয়ে যেন মাথায় বাজ পড়েছে বাবা মো. দুলাল মিয়ার। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্নই দেখি। তবে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে দারিদ্র্যতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তার উচ্চশিক্ষাসহ পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারব কি না, তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি।

আখাউড়া টেকনিক্যাল ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, সুরাইয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে নিয়মিত মাদ্রাসায় আসত। পড়াশোনার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী ছিল। আমরা সবসময় তাকে সহযোগিতা করেছি। সে আমাদের মাদ্রাসার গর্ব। দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে সে যে সাফল্য অর্জন করেছে সত্যি তা গর্ব করার বিষয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ থেকে ঘরে বসেই মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ করবেন যেভাবে

‘পরিমার্জিত’ শান্তি পরিকল্পনায় একমত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন 

প্রাণ গ্রুপে বড় নিয়োগ, লাগবে না অভিজ্ঞতা 

চোর সন্দেহে শাহিনকে গণপিটুনি, অতঃপর...

অনলাইনে ইসরায়েলের পক্ষে কার্যকলাপের দায়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড

ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২৫ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

অবসর নিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক

১০

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার বিএনপির দুই নেতার

১১

ভূমিকম্প: প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ, ভাঙা হবে ২৪ ভবন

১২

পর্তুগালের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল ব্রাজিল

১৩

‘এলডিসি উত্তরণ ও বন্দর নিয়ে কেবল নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে’

১৪

দেশের ৮১ সরকারি কলেজ স্থান পেল ‘এ’ ক্যাটাগরিতে

১৫

স্ট্রোক করে চবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

১৬

চলন্ত ট্রেনে পপকর্ন বিক্রেতাকে হত্যা

১৭

আবাসিক হোটেলে অনৈতিক কর্মকাণ্ড, গ্রেপ্তার ২৪

১৮

বস্তিবাসীর জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও স্থায়ী পুনর্বাসনের আশ্বাস আমিনুল হকের

১৯

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে: সাকি

২০
X