বাবার চিকিৎসায় কিডনি বিক্রি করতে চায় জবি শিক্ষার্থী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষার্থী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত বাবার চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করতে চান। ওই শিক্ষার্থীর নাম ফতেহ আলী খান আকাশ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী।  মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে এ শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কিডনি বিক্রি করার জন্য সহযোগিতা চেয়ে একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। ওই পোস্টে ফতেহ আলী খান আকাশ লিখেছেন, আব্বুর হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। অক্সিজেন মিটার ৩৫ শতাংশে নেমে আসছে। জরুরি ভর্তি করাতে হবে। ডাক্তার বলছে পেইসমেকার লাগাতে হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কিন্তু এই মুহূর্তে পেইসমেকার লাগানোর মতো এত টাকা আমাদের কাছে নাই। তাই আমি আমার একটা কিডনি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছি। ঢাকায় কোথায় কিডনি বিক্রি হয়? এক কিডনি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব, আব্বুকেও বাঁচাতে পারব।  ফতেহ আলী খান আকাশ বলেন, আজ (বুধবার) সকালে বাবাকে শেরে বাংলায় হৃদ্‌রোগ হাসপাতালে ভর্তি করাবো। সেখানে বাবার চিকিৎসা শুরু হবে। বাবার শরীরে পেসমেকার লাগানোর কথা বলছেন চিকিৎসকরা, কিন্তু এ মুহূর্তে পেসমেকার লাগানোর মতো টাকা আমার কাছে নেই। সেজন্যই কিডনি বিক্রি করার জন্য ফেসবুকে আমার পোস্ট দেওয়া। আমার কিডনি বিক্রি করে হলেও বাবার চিকিৎসা করাতে চাই। এই স্ট্যাটাসের পর কেউ যোগাযোগ করেছে কিনা জানতে চাইলে আকাশ বলেন, ক্যাম্পাস থেকে এখনও প্রশাসন যোগাযোগ করেনি, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, ছোটভাই সবাই কল দিচ্ছে। বাংলা বিভাগের এক শিক্ষকও খোঁজ নিয়েছেন। ফতেহ আলী খান করোনা মহামারির সময় হাসপাতালে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের গান শুনিয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও গানের জন্যই জনপ্রিয় তিনি।   আকাশের সহপাঠী মহিউদ্দিন রিফাত বলেন, সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী। কতটা অসহায় পরিস্থিতির স্বীকার হলে ছেলে তার বাবার জন্য নিজের কিডনি বিক্রি করতে চায়? আঙ্কেলের জীবন বাঁচতে সবাইকে মানবিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি।
১৫ মে, ২০২৪

মুক্তিযোদ্ধা বাবার ঋণ পরিশোধে কিডনি বিক্রি করতে চান ছেলে
পিতার ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে নিজের একটি কিডনি স্বেচ্ছায় বিক্রি করতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র  দিনমজুর ছেলে। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল গ্রামের বাসিন্দা মো. নাসির তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে এ পোস্টটি করেন। ঘটনার বিস্তারিত জানতে নাসিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে জানান, আমার দিনমজুর পিতা মো. নুরুল ইসলাম ছিলেন রনাঙ্গন কাঁপানো একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার গেজেট নাম্বার-৩৪৯৩। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেক পদক পেয়েছেন তিনি। তিনি গৌরনদী সোনালী ব্যাংক থেকে সরকারি ভাতাও উত্তোলন করতেন। মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে আমার পিতার বাবার অর্থাৎ আমার দাদার নাম ভুলবসত আমজেদ আলী হাওলাদারের পরিবর্তে মৃত মোসলেম উদ্দিন মুন্সী লেখা হয়। ২০১৮ সালে ভুল সংশোধনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আমার পিতা আবেদন করেন। তার জীবদ্দশায় ভুল সংশোধন করে যেতে পারেননি। এরই মধ্যে ২০২০ সালে তিনি মারা যান। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। পিতা নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর সমাজসেবা অফিসে এমআইএস সংশোধন করতে গিয়ে দেখি আমার পিতার ছবির জায়গায় অন্য একজনের ছবি। এতে আমার সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ছবির ওই ব্যক্তি মুলাদী উপজেলার মধ্য গাছুয়া গ্রামের বাসিন্দা। সে গৌরনদীর সরিকল নিজাম উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক। তার নাম নুরুল ইসলাম এবং তার বাবার নাম মৃত মোসলে উদ্দিন। এরপর এমআইএস ফরম সংশোধনের জন্য ২০২১ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আমি লিখিত আবেদন করি।  আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি নিয়ে শুনানির জন্য আমাকে এবং মুলাদীর নুরুল ইসলামকে তার অফিস কক্ষে হাজির হতে বলেন। পরবর্তীতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস। ওই শুনানিতে মুলাদীর নুরুল ইসলাম ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হন। একপর্যায়ে সে (মুলাদীর নুরুল ইসলাম) ইউএনও’র কাছে মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পান। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু মুলাদীর ওই নুরুল ইসলাম প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে স্থানীয় কিছু অসৎ মুক্তিযোদ্ধার যোগসাজশে ফের পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেন। সম্প্রতি উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নাসির অভিযোগ করে বলেন, মুলাদীর নুরুল ইসলামের বাড়ি মুলাদী উপজেলায়। নিয়ম অনুযায়ী, তার গেজেট হবে মুলাদীতে। কিন্তু ওই নুরুল ইসলাম মুলাদীতে গেজেট না করে আমার পিতার নামের সঙ্গে তার নামের মিল থাকায় বিভিন্ন জালজালিয়াতির মাধ্যমে আমার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা পিতার গেজেট দিয়ে সে  নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আসছে।  তিনি আরও বলেন, আমার পিতা মৃত্যুর আগে সোনালী ব্যাংক গৌরনদী শাখা থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ উত্তোলণ করেন। ব্যাংক দুই লাখ তেতাল্লিশ হাজার টাকা আমার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা পিতার কাছে পাওনা রয়েছে। ওই ঋণের জামিনদার ছিলাম আমি। সে হিসেবে ব্যাংক থেকে আমার নামে নোটিশ দিয়েছে। সময়মতো টাকা দিতে না পারলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। মুলাদীর ওই নুরুল ইসলামের কারণে আমার পিতার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তিনবছর যাবত বন্ধ। এ নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। বর্তমানে স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে মানববেতর জীবনযাপন করছি। আমার এমন কোনো সম্পদ নেই যা দিয়ে পিতার ঋণ পরিশাধ করব। তাই স্বেচ্ছায় একটি কিডনি বিক্রির জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন, আবুল কাসেম ও মতিউর রহমানসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সরিকলের মৃত নুরুল ইসলাম একজন প্রকৃত ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার মৃত্যুর পর মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম সরিকলের মৃত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের গেজেট ব্যবহার করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আসছে। এ জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ ভাতা স্থগিত রয়েছে। ফলে মৃত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের ছেলে নাসির মানববেতর জীবনযাপন করছে। মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার যাতে ভাতা উত্তোলন করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তারা। সরিকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন মোল্লা বলেন, নাসিরের পিতা নুরুল ইসলাম একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ থাকায় অসহায় ওই পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন। কখনো শুনিনি নিজাম উদ্দিন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক মুলাদীর বাসিন্দা নুরুল ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখন তিনি কীভাবে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করছেন তা জানা নেই। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক ও মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে গেজেটে ৩৪৯৩ নম্বরটি তার বলে দাবি করেছেন। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু আবদুল্লাহ খান জানান, উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। নাসিরকে যাতে ব্যাংক থেকে চাপ প্রয়োগ করা না হয় এজন্য ম্যানেজারকে বলে দেওয়া হয়েছে।
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

হাসপাতালের খরচ মেটাতে কিডনি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন দিনমজুর
সুনামগঞ্জে জগন্নাথপুরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যেম স্ত্রীর সন্তান প্রসবের ব্যয় জোগাতে ব্যর্থ হয়ে কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে চেয়েছিলেন এক দিনমজুর। এজন্য তিনি এক সাংবাদিককে ফোন দিয়েছিলেন। তার উদ্যোগে পুলিশ সম্পৃক্ত হয়ে বিলের বেশিরভাগ মওকুফের ব্যবস্থা করে। জগন্নাথপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গত রাতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের আছিমপুর গ্রামের দিনমজুর শামছুল হক সিজার অপারেশনের জন্য তার স্ত্রীকে উপজেলা সদরের নগর মাতৃসদন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করেন। ভর্তির সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ শামছুল হককে জানায়, সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো বিল আসবে। তিনি তাতে রাজি হয়ে স্ত্রীকে ভর্তি করান। পরে ওই রাতে অপারেশনের মাধ্যমে এই দম্পতির ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এদিকে, দুদিনে ক্লিনিকের বিল আসে ১৬ হাজার ৬৫০ টাকা। এরপর থেকেই শামছুল হক ক্লিনিকের বিলের জন্য আত্মীয়স্বজনদের কাছে টাকা চাইতে শুরু করেন। শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন নিজের কিডনি বিক্রি করবেন।   কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপনের জন্য তিন পত্রিকার প্রতিনিধি সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিডনি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কিডনি বিক্রি করে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করবেন। শামছুল হক বলেন, অভাবের সংসার। দিন আনি, দিন খাই। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা চিন্তা করে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করি। ভর্তির সময় তারা বলেছিলেন বিল প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো আসবে। তখন মনে করেছিলাম টাকা জোগাড় করতে পারব। কিন্তু নিজের স্বজনসহ অনেকের কাছে হাত পেতেও কোনো সাহায্য পাইনি। কোনো উপায় না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজের কিডনি বিক্রি করবেন। শামছুল হক আরও বলেন, কিডনি বিক্রির কথা শোনার পর তিনি (সাংবাদিক) তখন থানার ওসির কাছে নিয়ে যান। পরে ওসি স্যার ক্লিনিক এসে বিল মওকুফের জন্য সুপারিশ করেন। আমার পরিবার ওসি মিজানুর রহমানে প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। নগর মাতৃসদন ক্লিনিকের এমআইএস অ্যান্ড কোয়ালিটি এসোরেন্স কর্মকর্তা রাকিবুর রহমান বলেন, ভর্তির সময় ওই ব্যক্তিকে অপারেশন বিল ১২ হাজার টাকা জানানো হয়। উনাকে আমরা বলেছিলাম সব মিলিয়ে বিল ২০ হাজার টাকার নিচে থাকবে। সেই অনুযায়ী বিল ১৬ হাজার ৬৫০ টাকা আসে। দুদিন পর থানার ওসি মিজানুর রহমান এসে কিডনি বিক্রির বিষয়টি জানালে মানবিক দিক বিবেচনা করে ৪ হাজার টাকা জমা নিয়ে বাকি টাকা মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। জগন্নাথপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ক্লিনিকে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। এরপর কর্তৃপক্ষকে শামছুল হকের আর্থিক অবস্থার কথা জানাই। এতে তারা অপারেশনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ওষুধের দাম দাবি করেন। পরে ওই দিনমজুরের কাছে থাকা ৪ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা মওকুফ করানো হয়।
২৩ নভেম্বর, ২০২৩

অর্ধশত ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে আনিছের চক্র
টাঙ্গাইলের আনিছুর রহমান নিজের কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। দেখেছিলেন কিডনি প্রতিস্থাপনের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। এরপর নিজেই গড়ে তুলেছেন কিডনি বিক্রির ভয়ংকর চক্র। তার চক্র গত চার বছরে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে আনিছ ও তার চক্রের আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে এসব কথা জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা। আনিছ ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য সদস্যরা হলো মো. আরিফুল ইসলাম রাজীব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন। গত বুধবার তাদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে করা চুক্তির এফিডেভিট কপি উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বিত্তবান গ্রহীতার কাছ থেকে কিডনিপ্রতি ৫০ লাখ টাকা নিত চক্রের সদস্যরা। তবে প্রতারণার শিকার ‘কিডনিদাতা’ ভুক্তভোগীকে দেওয়া হতো মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হতো। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ জানান, চিকিৎসার জন্য ভুয়া কাগজপত্রে ভারতে গিয়ে প্রতারিত হন আনিছ। অর্থের বিনিময়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন। তবে সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখে প্রলুব্ধ হয়ে দেশে ফিরে নিজেই কিডনি বেচাকেনার অবৈধ ব্যবসায় নামেন। সেখানে ভারতে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র গড়ে তোলেন। অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহ করে বৈধ ও অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ভারতে পাঠাত এই চক্রটি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনো তারা বলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই। কখনো মিথ্যা আশ্বাস দেয়, চিকিৎসার খরচ তারা বহন করবে। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মণ্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে অসহায় মানুষগুলো। সম্প্রতি সরকারি একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে দেশের প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রতারণার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। এই প্রতারণার সঙ্গে এ চক্রটি জড়িত কি না—প্রশ্নে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটির সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি। চার স্তরে ফাঁদ কিডনি প্রতারকদের : র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, চক্রের প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে। দ্বিতীয় স্তরে আনিছ ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে। তৃতীয় স্তরে রয়েছে গ্রেপ্তার আরিফ ও তুহিন। এরা আনিছের হয়ে প্রথম স্তরে থাকা সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে। পরে এরা তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর আনিছ ঢাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনপ্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে চতুর্থ স্তরে থাকা ‘সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল্সের’ মালিক সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব নেন। সে প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ডোনারকে প্রতিবেশী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করেন। পরে কিডনি ডোনারকে আনিছ প্রতিবেশী দেশে নিয়ে যান। কিডনি রেখে দেওয়ার পর ভিকটিমদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ৫০ লাখে কে কত পান : গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে অবস্থানরত একেকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি কেনেন; কিন্তু এটা দেশে থাকা আনিছের চক্রের সদস্যরা জানে না। কিডনি বিক্রির এই টাকার মধ্যে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দরিদ্র ডোনারকে দেওয়া হয়। ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্র্যাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মধ্যে। বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচারের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট।
২১ জুলাই, ২০২৩

অর্ধশত ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে আনিছের চক্র
টাঙ্গাইলের আনিছুর রহমান নিজের কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। দেখেছিলেন কিডনি প্রতিস্থাপনের চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। এরপর নিজেই গড়ে তুলেছেন কিডনি বিক্রির ভয়ংকর চক্র। তার চক্র গত চার বছরে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে আনিছসহ তার চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে এসব কথা জানায় সংস্থাটির কর্মকর্তারা। আনিছ ছাড়া গ্রেপ্তার অপর সদস্যরা হলো মো. আরিফুল ইসলাম রাজীব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন। গত বুধবার তাদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে করা চুক্তির এফিডেভিট কপি উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বিত্তবান গ্রহীতার কাছ থেকে কিডনিপ্রতি ৫০ লাখ টাকা নিত চক্রের সদস্যরা। তবে প্রতারণার শিকার কিডনি ‘দাতা’ ভুক্তভোগীকে দেওয়া হতো মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হতো।  সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ জানান, চিকিৎসার জন্য ভুয়া কাগজপত্রে ভারতে গিয়ে প্রতারিত হন আনিছ। অর্থের বিনিময়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন। তবে সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখে প্রলুব্ধ হয়ে দেশে ফিরে নিজেই কিডনি বেচাকেনার অবৈধ ব্যবসায় নামেন। সেখানে ভারতে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র গড়ে তোলেন। অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহ করে বৈধ ও অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ভারতে পাঠাত এই চক্রটি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচের অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনো তারা বলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই। কখনো মিথ্যা আশ্বাস দেয়, চিকিৎসার খরচ তারা বহন করবে। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মণ্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরে অসহায় মানুষগুলো। সম্প্রতি সরকারি একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে দেশের প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রতারণার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। এই প্রতারণার সঙ্গে এ চক্রটি জড়িত কি না, প্রশ্নে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটির সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি। চার স্তরে ফাঁদ কিডনি প্রতারকদের :  র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, চক্রের প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলে। দ্বিতীয় স্তরে আনিছ ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে। তৃতীয় স্তরে রয়েছে গ্রেপ্তার আরিফ ও তুহিন। এরা আনিছের হয়ে প্রথম স্তরে থাকা সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে। পরে এরা তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর আনিছ ঢাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনপ্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে চতুর্থ স্তরে থাকা ‘সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল্সের’ মালিক সাইফুল ইসলাম দায়িত্ব নেন। সে প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ডোনারকে প্রতিবেশী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করেন। পরে কিডনি ডোনারকে আনিছ প্রতিবেশী দেশে নিয়ে যান। কিডনি রেখে দেওয়ার পর ভিকটিমদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ৫০ লাখে কে কত পান : গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে অবস্থানরত একেকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি কেনেন; কিন্তু এটা দেশে থাকা আনিছের চক্রের সদস্যরা জানে না। কিডনি বিক্রির এই টাকার মধ্যে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দরিদ্র ডোনারকে দেওয়া হয়। ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্র্যাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মধ্যে। বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচারের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট।  
২০ জুলাই, ২০২৩

৫০ লাখে বিক্রি প্রতি কিডনি / অর্ধশত ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে আনিছের চক্র
টাঙ্গাইলের আনিছুর রহমান নিজের কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এরপর নিজেই  গড়ে তুলেছেন কিডনি বিক্রির ভয়ংকর চক্র। তার চক্র গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কিডনি বিক্রি করেছে। র‍্যাবের হাতে চক্রের প্রধান আনিছসহ তার চার সদস্য গ্রেপ্তার হলে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) র‍্যাব-১ এর কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য দেন। র‍্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বিত্তবান কিডনি গ্রহীতার কাছ থেকে কিডনি প্রতি ৫০ লাখ টাকা নিতেন আনিছুর। তবে কিডনি ‘দাতা’ ভুক্তভোগীকে দেওয়া হতো মাত্র পাঁচ লাখ টাকা। বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিত চক্রটি। আনিছ ছাড়াও গ্রেপ্তার অপর সদস্যরা হলো মো. আরিফুল ইসলাম রাজিব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন। বুধবার রাজধানীর ভাটারাসহ বিভিন্ন এলাকায় র‍্যাব-১ এ  অভিযান চালায়। এসময় তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকারনামা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে করা চুক্তির এফিডেভিট কপি উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ জানান, ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য ভুয়া কাগজপত্রে ভারতে গিয়ে প্রতারিত হন আনিছ। অর্থের বিনিময়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন। তবে সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখে প্রলুব্ধ হয়ে দেশে ফিরে নিজেই কিডনি বেচাকেনার অবৈধ ব্যবসায় নামেন। সেখানে ভারতে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র গড়ে তোলেন। অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহ করে বৈধ ও অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ভারতে পাঠাত এই চক্রটি। র‌্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে সর্বহারা হচ্ছে অসহায় মানুষ। আইনবহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের কার্যক্রমে চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। সম্প্রতি র‌্যাব সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জন্য বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে। র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে অবস্থানরত একেকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি ক্রয় করেন। এই টাকার মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পায় প্রতারিত দরিদ্র ডোনার। পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকার ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্র্যাভেল এজেন্ট এবং অন্যান্য প্রতারকদের মাঝে। বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত কিডনি পাচার সিন্ডিকেট। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারিদ্র্যসীমার নিচের অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনও তারা বলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই, কখনও মিথ্যা আশ্বাস দেয়, চিকিৎসার খরচ তারা বহন করবে। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মণ্য হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরে অসহায় মানুষগুলো।  যেভাবে ফাঁদে ফেলে কিডনি নিত র‌্যাব-১ অধিনায়ক বলেন, দেশে থাকা মূলহোতা আনিছ ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে।  চক্রের তৃতীয় দলটির সদস্য আরিফ এবং তুহিন প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ঢাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে চতুর্থ গ্রুপটির হোতা ‘সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস’-এর মালিক সাইফুল ইসলাম প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারাকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে। আরও পড়ুন: সন্তানের পিতৃপরিচয় চাইতে গিয়ে খুন হন শান্তনা এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী প্রথম চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারাকে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য মূলহোতা আনিছুর রহমান এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রবেশ করে এবং হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ-অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়। সম্প্রতি সরকারি একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে দেশের প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রতারণার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। এই প্রতারণার সঙ্গে এই চক্রটি জড়িত কি না প্রশ্নে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার চক্রটির সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি।  
২০ জুলাই, ২০২৩
X