ঢাকায় এখনো অচেনা শহীদের গণকবর
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের গুলি, গলা কেটে, বেয়নেট চার্জ করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা। এরপর লাশগুলো কোনো গর্ত, ডোবা বা ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছিল। গণহত্যা বা হত্যার শিকার শহীদের সেই গণকবরগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অরক্ষিত। এমনকি স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও খোদ রাজধানী ঢাকায় সংরক্ষিত হয়নি অনেক গণকবর। এমনকি এর অনেকগুলো এখন পর্যন্ত সরকাবিভাবে চিহ্নিতই করা হয়নি। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে গণহত্যা চালায়। এরপর হানাদার বাহিনী ঢাকার রমনা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকায় ৯ মাসজুড়ে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। বধ্যভূমি ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর সংরক্ষণে প্রকল্প থাকলেও গণকবর সংরক্ষণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নেই কোনো প্রকল্প। ঢাকায় গণহত্যায় অসংখ্য শহীদের গণকবর এখনো সংরক্ষিত হয়নি। অনেকের কাছে গণকবরগুলো অচেনা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মিরপুর-২-এর শিয়ালবাড়িতে অনেক বাঙালিকে হত্যা করা হয়। সেখানেই শহীদদের কবর দেওয়া হয়েছিল। গণকবরটি সরকারি জায়গায়। কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, গণকবরের চারদিকে দেয়াল তুলে গ্রিল দিয়ে আটকানো। গণকবরের নতুন কবর দেওয়া হয়েছে। গণকবরের মূল ফটকের ওপর সাইনবোর্ডে লেখা মাদবর বাড়ি পারিবারিক কবরস্থান। প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মো. সৈয়দ আলী মাদবর। স্থাপিত ১৯১২ সাল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, কবরস্থানের পাশে মাছ বাজার, মাংসের দোকানসহ, রাস্তার অর্ধেক অংশ বধ্যভূমি ও গণকবর হিসেবে চিহ্নিত ছিল। গণকবরের জায়গা দখল করে দোকানপাট, রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। গণকবরটি সৈয়দ আলী মাদবর দেখাশোনা করতেন। ডানপাশের দেয়ালের ওপরের সাইবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘এই মাদবর বাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে যদি কোনো মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে চান, তাহলে কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। যদি মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশের পক্ষে দাফনের কাজ সম্পাদনের জন্য টাকা পয়সা না থাকে, তাহলেই মাদবর বাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’ এই কবরস্থানের সভাপতি মো. রমজান আলী মাদবর কালবেলাকে বলেন, ‘একাত্তরে এখানে শহীদের লাশ ফেলা হয়েছে এটি সত্যি। এই জমির মালিক ছিলেন আমার বাপ-দাদারা।’ রূপনগরের মুক্তিযোদ্ধা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘এটি সরকারি জায়গা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের লাশগুলো এখানে ফেলা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন সাংবাদিকও ছিলেন। মো. সৈয়দ আলী মাদবর (সদা মাদবর) এই শহীদদের লাশগুলো এখানে কবর দিয়ে ডালপালা দিয়ে ঘেরাও করে দিয়েছিলেন। এরপর কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীরা গণকবরের চারদিকে দেয়াল তুলে দক্ষিণ দিকে গেট করে দিয়েছিলেন। সাইনবোর্ডে গণকবরের কথা উল্লেখসহ কয়েকজন শহীদ সাংবাদিকের নাম লিপিবদ্ধ ছিল। পরবর্তী সময়ে গণকবরের জায়গা দখল করে বাজার, দোকানপাট করা হয়েছে। গণকবরের স্থলে সাইনবোর্ডে পারিবারিক কবর বলে চালানো হচ্ছে।’ স্থানীয়রাও বলছেন, গণকবর ও বধ্যভূমি বেদখল হয়ে গেছে। একাত্তরে মিরপুরের গোলারটেকে অবাঙালিরা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। লাশগুলো ঈদগাহ মাঠের দক্ষিণের কুয়ায় ফেলে দিত। শহীদদের লাশে কুয়াটি ভরে যায়। ঈদগাহ মাঠ, মাঠের উত্তর পাশের নিচু ভূমিতে পড়ে থাকা শহীদের লাশ, পরে সব দেহাবশেষ একসঙ্গে করে গণকবর দেওয়া হয়। মিরপুরের উত্তর বিশিলের ১ নম্বর সেকশনের ১০ নম্বর রোডের বাসিন্দা হাজি আব্দুল কাদের কালবেলাকে বলেন, ‘অবাঙালিদের যোগসাজশে পাকিস্তানি সেনারা মিরপুরের গোলারটেকে হিন্দু পালপাড়ায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। গণকবরটি আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এর পাশেই নির্মাণ হয়েছে বহুতল ভবন।’ অবাঙালিরা মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে ব্যবসায়ী সলিমুল্লাহসহ ৯ জনকে হত্যা করে। মোহাম্মদপুর জামে মসজিদ কবরস্থানে তাদের সবার লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়। শহীদ সলিমউল্লাহর চতুর্থ ছেলে নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ এনামউল্লাহ বলেন, ‘এখানে যে শহীদদের গণকবর দেওয়া হয়েছে, এর সাক্ষী ছিলেন মোহাম্মদপুর জামে মসজিদের ইমাম লোকমান হোসেন।’ গেন্ডারিয়ার স্বামীবাগ বধ্যভূমিতে একাত্তরের ২৯-৩০ মার্চ অনেক শহীদের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। এরপরও পালাক্রমে অনেক শহীদের মরদেহ এখানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। জায়গাটি দেখলে বোঝা যায় না এখানে কোনো গণকবর রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের পেছন, সামনের খালি জায়গা ও ছাত্র সংসদ অফিসের সামনে শহীদদের লাশগুলো পুঁতে রাখা হতো। একাত্তরের ৯ মাসজুড়ে কতজন মানুষকে এখানে পুঁতে রাখা হয়েছে, এর সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্র সংসদের অফিসের সামনে মানুষের কঙ্কালের অস্তিত্ব পেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশকে সংবাদ দেয়। কোতোয়ালি থানার প্রধান রঘুনন্দন সাহা একদল পুলিশ নিয়ে স্থানটি খুঁড়ে ৭টি কঙ্কাল উদ্ধার করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গণকবরটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে গণকবর দেয়। শহীদদের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের দুই ছাত্রের পচাগলা লাশ দুটি এখানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। এখানে আরও শহীদের লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে। গণকবরের অস্তিত্ব এখন আর নেই। বংশালের মালিটোলার রাজাকার কাজী হাবিবুল হক ওরফে গেদা গুন্ডা। তার বাড়ির কুয়ায় অনেক মানুষকে হত্যার পর লাশগুলো ফেলে দেওয়া হতো। সরেজমিন দেখা যায়, দেয়াল তুলে দেওয়ায় কুয়ার অস্তিত্ব আর নেই। অন্যদিকে একাত্তরে ধোলাইখাল জায়গাটা ছিল একটি খাল। খালের পাড়ে গর্তে লাশগুলো পুঁতে রাখা হতো। এখন পাকা রাস্তা হওয়ায় আশপাশের দোকানের মালপত্র ট্রাকে ওঠানো-নামানো হয়। গণকবরের অস্তিত্ব আর নেই। শহীদ নাদেরের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী কালবেলাকে বলেন, ‘মালিটোলার রাজাকার গেদা গুন্ডা, মোগলটুলীর নাকা নাসিরউদ্দীন মালিটোলা, গোলক পাল লেইন, নবাবপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শহীদদের মরদেহ সূত্রাপুরের নাসিরউদ্দীন ধোলাইখালের পাড়ের গর্তে পুঁতে রাখত।’ ওয়ারীর কাপ্তানবাজার মুরগিপট্টিতে একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা মুরগি ব্যবসায়ীদের গুলি করে হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদাররা চলে গেলে মুরগিবাজারের পাশে একটি গর্তে তাদের মরদেহ পুঁতে রাখা হয়। কাপ্তানবাজার মুরগি পট্টির গণকবর ওভাবেই পড়ে রয়েছে। একাত্তরের ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রেসিডেন্ট হাউসে বন্দি প্রায় ১০০ বাঙালি ইপিআর সদস্যকে রমনা পার্কে হত্যা করে। সেখানেই গর্ত করে শহীদদের মরদেহগুলো পুঁতে রাখে। গণকবরটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। ইস্কাটন গার্ডেনে হানাদার বাহিনী নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশগুলো ক্যাম্পের পাশে পুঁতে রাখত। মুক্তিযোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল (বিচ্ছু জালাল) কালবেলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ইস্কাটন গার্ডেনে অসংখ্য নরকঙ্কাল পাওয়া যায়। গণকবরটি সংরক্ষণ করা হয়নি।’ একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে গণিত বিভাগের প্রভাষক এবং শহীদুল্লাহ হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক শরাফত আলী, পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অবিবাহিত আতাউর রহমান খান খাদিমসহ কয়েকজনকে হত্যা করে। গণকবরে আরও অনেক শহীদের সঙ্গে তাদের দুজনকেও মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। কবরটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। একাত্তরের পঁচিশে মার্চের রাতে পাকিস্তানি বর্বরবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। শামসুন নাহার হলের ফটকের সামনে ৪৫ জন শহীদের মরদেহ পুঁতে এর ওপর ট্যাঙ্ক চালিয়ে দিয়েছিল। শহীদ স্বজন মোশারফ হোসেনের মতে, শামসুন নাহার হলের ফটকের সামনে থেকে কবর সরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে স্থানান্তর করা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা একাত্তরের অক্টোবরে শেখদী গ্রামে ১১ হিন্দু ব্যক্তিকে হত্যা করে। শেখদী গ্রামে দণ্ডধর সরকারের ধানি জমিতে তাদের লাশগুলো পুঁতে রাখা হয়েছিল। যাত্রাবাড়ীর বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুজ্জামান বাবুল বলেন, ‘দালান-কোঠার ভিড়ে এই গণকবরের অস্তিত্ব এখন আর নেই।’ একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় দিনই ধলপুর ময়লা ডিপোর গর্তে অনেক শহীদের লাশ সুইপাররা মাটিচাপা দিয়েছিলেন। এই স্থানটিতে দেখলে গণকবরের অস্তিত্ব এখন আর বোঝা যায় না। হানাদাররা ডেমরা মডেল থানার শ্রমিক স্টাফ কোয়ার্টারের পেছনে ময়লার ট্যাঙ্কিতে শহীদের লাশগুলো ছুড়ে ফেলে দিতো। সরেজমিনে দেখা যায়, এই বধ্যভূমি-গণকবরে মিষ্টির কারখানার রান্নাবান্না হচ্ছে। গণকবরের অস্তিত্ব এখন আর নেই। কামারগোপ ডেমরা সমাজের নিজস্ব কবরস্থানে ২০ থেকে ২৫ শহীদ শ্রমিকের মরদেহ একসঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। গণকবরটি বাঁধানো নয়। একাত্তরের ১৩ বা ১৪ ডিসেম্বর খিলগাঁও তালতলা বি ব্লকে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর মর্টার শেল নিক্ষেপে এলাকার নিরীহ মানুষ শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা ও খেলাঘরের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান শহিদ বলেন, ‘এখানে ২৭ থেকে ২৮ জন শহীদের লাশ কবর দেওয়া হয়। গণকবরের ডান পাশে নারী এবং বাম পাশে পুরুষ শহীদদের কবর দেওয়া হয়েছিল।’ সরেজমিন দেখা যায়, গণকবরটি পাকা হলেও অযত্নে পড়ে রয়েছে। শিশুরা কবরের ওপরে উঠে খেলাধুলা করছে। গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন কালবেলাকে বলেন, ‘দখলের কারণে অনেক গণকবর বিলীন হয়ে গেছে। এত বছর পর, অনেক গণকবরের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রোকেয়া হলের গণকবরটির স্থানান্তরিত করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যা অনেকেই জানেন না।’ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, একাত্তরের শহীদদের বধ্যভূমি, গণকবর সংরক্ষণে আমরা প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু যে গণকবরগুলোতে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণে সময় লাগবে। কারণ তাদের তুলে গণকবর সংরক্ষণ করা কিছুটা কষ্টসাধ্য। যিনি ভবন নির্মাণ করেছেন তার বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা করলে তারা আবার ইনজাংকশন জারি করতে পারে। ফলে গণকবর সংরক্ষণের কাজটি ঝুলে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, এ জন্য আমাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। গণকবরের কোনোগুলো এখনো খালি জায়গায় বা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কোনোগুলোতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যে গণকবরে এখনো ভবন নির্মাণ হয়নি, সে জায়গাগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এখনি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারবে।
২৫ মার্চ, ২০২৪

লিবিয়ায় বিশাল গণকবর
আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় বিশাল একটি গণকবরের সন্ধান মিলেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম লিবিয়ায় এই গণকবর পাওয়া গেছে। এই গণকবরে অন্তত ৬৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ রয়েছে। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসির। বহু বছর ধরেই মানবপাচারের অন্যতম ভয়ংকর রুট হয়ে উঠেছে লিবিয়া। এই দেশ থেকে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে বছরে কত মানুষ মারা যায় তার সঠিক হিসাব জানাও কষ্টকর। শুধু ভূমধ্যসাগরে ডুবেই নয়, নির্যাতন আর জিম্মি অবস্থায় মারা যায় শত শত মানুষ। বিভিন্ন সময় পাচার চক্রের ভয়ংকর সব তথ্য উঠে এলেও, তা কোনোভাবেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএম বলছে, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে এসব অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের জাতীয়তা কী, তা এখনো অজানা। তবে তাদের বিশ্বাস, মরুভূমির মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে পাচার হওয়ার সময় এসব অভিবাসী মারা গেছে। অথবা তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করার চেষ্টা করা হয়। পরে তাদের সবার মৃত্যু হয়। এরপর দেওয়া হয় গণকবর। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, গণকবরটি দক্ষিণ-পশ্চিম লিবিয়ায় পাওয়া গেছে। এখন ঘটনাটি লিবিয়া তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে আইওএম। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘অভিবাসীদের নিখোঁজ বা প্রাণহানির প্রতিটি খবরই এক-একটি শোকার্ত পরিবারকে প্রতিনিধিত্ব করে। ওইসব পরিবার তাদের প্রিয়জনদের সন্ধান হয়তো এখনো করছে। এমনকি তারা অপেক্ষায় আছে স্বজনের সন্ধানের।’ বলা হচ্ছে, ‘ক্রমবর্ধমান এই মৃত্যু এবং অভিবাসীরা যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, মানব পাচার রোধে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না। আইওএম বলছে, সর্বশেষ এই গণকবরের সন্ধানের ঘটনা আবারও জানান দিয়েছে অভিবাসীদের চোরাচালান কতটা বিষফোড়া হয়ে উঠেছে। বিবিসি বলছে, ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ অভিবাসীর মৃত্যুর ঘটনার পর গণকবরের বিষয়টি সামনে এলো। এর আগে আইওএম এই মাসের শুরুতে বলেছিল, এক দশক আগে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সালটি ছিল অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর। গত বছর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অভিবাসন রুটে কমপক্ষে ৮ হাজার ৫৬৫ জন মারা গেছে।
২৪ মার্চ, ২০২৪

ড্রোন ফুটেজে উঠে এলো গাজায় গণকবর দেওয়ার দৃশ্য
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে একটি গণকবরে প্রায় ৮০ জন অজ্ঞাত ফিলিস্তিনির লাশ দাফন করা হয়েছে। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ড্রোনে ধারণ করা এই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এসব লাশ ইসরায়েল থেকে গাজায় পাঠানো হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের বরাতে এমন তথ্য দিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। এএফপির খবরে বলা হয়, এসব লাশের মধ্যে কোনো ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে কিনা, তা দেখতে হাসপাতালের মর্গ ও কবর থেকে তুলে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দক্ষিণ গাজার কেরেম শালোম সীমান্তপথ দিয়ে আবার গাজায় ফেরত পাঠানো হয়। পরে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন মুখপাত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিবিসির ভিডিওতে দেখা যায়, লাশবাহী গাড়ি থেকে একের পর এক মরদেহ নামানো হচ্ছে। পরে সেগুলো নিয়ে একটি গণকবরে দাফন করা হয়। এ সময় গণকবরের চারপাশে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে প্রায় ১১৪০ ইসরায়েলিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ২৫০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় বন্দি করে নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসকে নির্মূল এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। গত নভেম্বরে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে ১১০ ইসরায়েলি বন্দিকে হামাস মুক্তি দিলেও এখনো তাদের হাতে শতাধিক বন্দি আছেন। অন্যদিকে বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ২১ হাজার ১১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ।
২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

গাজায় হাসপাতাল চত্বরেই দেওয়া হচ্ছে গণকবর
ইসরায়েলের হামলার কারণে গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে অমানবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে হাসপাতালে নেই কোনো খাদ্য, পানি ও জ্বালানি। অন্যদিকে পুরো হাসপাতাল চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে ডুবে থাকা এ হাসপাতালে থেমে থেমে শুরু হচ্ছে গগনবিদারী কান্নার শব্দ। চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালে রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বাইরে নিয়ে গিয়ে তাদের দাফন করারও সুযোগ নেই। পচে গলে যাতে পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য বাধ্য হয়ে হাসপাতাল চত্বরেই দাফন করা হচ্ছে মরদেহ। এ পর্যন্ত আল শিফা হাসপাতাল চত্বরেই ১৭৯ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও রয়েছে। ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অর্ধেকের বেশি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি বলছে, জ্বালানি না থাকা, ক্ষয়ক্ষতি, হামলা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ২২টির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। যে ১৪টি হাসপাতাল খোলা আছে, চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটের করণে খুব শিগগিরই সেগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফা ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। হাসপাতালের প্রধান গেটে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নিয়েছে নেতানিয়াহু বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের ভেতরে ১৭৯ জনকে গণকবরে দাফন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশু রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালটির প্রধান মোহাম্মদ আবু সালমিয়াহ এ তথ্য জানান। এই অঞ্চলে বিপর্যয়কর মানবিক সংকটের কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবু সালমিয়াহ বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে তাদের গণকবর দিয়েছি। একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, হাসপাতালের সর্বত্র পচা লাশের দুর্গন্ধ। হাসপাতালের এক সার্জন বলেন, এখনকার পরিস্থিতি অমানবিক। আমাদের বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই, খাবার নেই। এর আগে আল শিফা হাসপাতালের সার্জন ডা. আহমেদ এল মোখল্লালতি বলেন, হাসপাতালের সামনে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক অবস্থান নিয়েছে। আমরা সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে আছি। এটি সম্পূর্ণ বেসামরিক এলাকা। এখানে শুধু হাসপাতাল ভবন, রোগী, চিকিৎসক ও অন্যান্য বেসামরিক লোকজন রয়েছে। ইসরায়েলি এই অবরোধ বন্ধ করা উচিত। পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতি দিলে ৭০ জিম্মিকে ছাড়বে হামাস : এদিকে পাঁচ দিনের টানা যুদ্ধবিরতি দিলে গাজায় আটকে রাখা সর্বোচ্চ ৭০ নারী ও শিশুকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডের পক্ষ থেকে সোমবার এ কথা জানানো হয়। হামাসের টেলিগ্রাম চ্যানেলে আল কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দার বক্তব্য ধারণ করা একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, এই যুদ্ধবিরতি হতে হবে পূর্ণমাত্রার এবং যুদ্ধবিরতির এই সময় গাজা উপত্যকার সবখানে ত্রাণসহ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ থাকতে হবে। উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিশ্চিহ্নের নামে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাড়ে সাত হাজারের বেশি নারী ও শিশু।
১৫ নভেম্বর, ২০২৩
X