আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ কার্যক্রম চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট টানা চতুর্থবার এবং পঞ্চম মেয়াদে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও সরকার গঠন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।  অন্যদিকে নির্বাচন বর্জন করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। ভোটের আগে বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে সহিংসতার ঘটনাও। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম।  বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন শিরোনামে বলা হয়েছে- ‘বিরোধীদের নির্বাচন বয়কটের মধ্যেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ভোট দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’  প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইকোনমিক টাইমস। দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন শিরোনামে বলা হয়েছে- ‘নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে : ১২ কোটি ভোটার বেছে নেবেন ২৯৯ জন সংসদ সদস্যকে।’  বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন শিরোনামে বলা হয়েছে- ‘পঞ্চম মেয়াদে জয়ের নিশ্চয়তায় নির্বাচন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।’  নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আল জাজিরার প্রতিবেদন শিরোনামে বলা হয়েছে- ‘বিরোধীদের নির্বাচন বর্জনের ম্যধ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।’  বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েট প্রেস (AP)। অ্যাসোসিয়েট প্রেসের প্রতিবেদন শিরোনামে বলা হয়েছে- ‘সহিংসতা এবং বিরোধীদের নির্বাচন বয়কটে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের নির্বাচন : ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।’ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ। ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৪২ হাজার কেন্দ্র। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোট হণ হচ্ছে। একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় একটি কেন্দ্রের নির্বাচন পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে।  উল্লেখ্য, নির্বাচনে মোট এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন এক হাজার ৫৩২ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৪৩৭ জন।  বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করার জন্য স্বতন্ত্র হিসেবে ‘ডামি’ প্রার্থী দিয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন দল এই দাবি অস্বীকার করেছে। এর আগে ২০১৪ সালেও নির্বাচনও বয়কট করেছিল বিএনপি।  বিরোধীদল বিএনপি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে এবং শনিবার থেকে দেশব্যাপী দুদিনের হরতাল ডেকেছে দলটি।   
০৭ জানুয়ারি, ২০২৪

জাজিরা উপজেলা নির্বাচন অফিস যেন ‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য’
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা নির্বাচন অফিস যেন এক অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী ও অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সব মিলিয়ে অফিসটি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভোটার জটিলতার কারণে নাগরিক নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ সব কাজেই গুনতে হয় টাকা। তবে অফিসে কর্মরত কামরুন নাহারের মাধ্যমে গেলে মুহূর্তেই মিলে সকল সমস্যার সমাধান। ভুল সংশোধন থেকে শুরু করে যে কোনো কাজেই তিনি করে দিতে পারেন। এ জন্য কামরুন নাহারের হাতে তুলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক সেবা নিতে আসা মানুষ। জাজিরা উপজেলার একাধিক বাসিন্দা ও সেবাপ্রার্থীর অভিযোগ, নির্বাচন অফিসে সব ধরনের সেবা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিতে হচ্ছে। ভোটার আইডি কার্ড স্থানান্তরের জন্য কোনো ফি না থাকলেও দিতে হচ্ছে টাকা। এর মধ্যে নাম এবং বয়সের ভুল সংশোধনে দিতে হয় দুই হাজার থেকে শুরু করে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। নতুন ভোটার হতে লাগে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। দালালদের দ্বারস্থ হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। উপজেলার নগর বাউলিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী সোবাহান মাদবর বলেন, গত আগস্ট মাসে আমার ও পরিবারের তিনজনের ভোটার আইডি কার্ড স্থানান্তরের জন্য নির্বাচন অফিসে আসলে আবেদনের কথা বলে নির্বাচন অফিসের স্টাফ কামরুন্নাহার ৯০০ টাকা রেখেছিলেন। ৩ মাস পরে আইডি কার্ড নেওয়ার জন্য আসলে আরও ১১০০ টাকা দাবি করেন কামরুন্নাহার। কিসের জন্য টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন খরচের কথা বলেন এবং আইডি কার্ড নিতে হলে বাড়তি ১১০০ টাকা দিতে হবে বলে জানান। ভুক্তভোগী উজ্জ্বল মৃধা ও হানিফ মোল্লা বলেন, আমাদের আইডি কার্ডে পিতা মাতার নামের সাথে একটু অমিল থাকায় সংশোধনের জন্য আবেদন করি, কিন্তু কাজ হয় না। পরে কামরুন নাহারের সাথে কথা হলে তিনি ১১০০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান। পরে টাকা বিনিময়ে কাজ করে দেন তিনি। টাকা ছাড়া কোনোভাবেই কাজ করতে পারিনি। আমরা এই সকল সমস্যার সমাধান চাই। বিকে নগর ইউনিয়নের পূর্ব কাজি কান্দির গ্রামের ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান বলেন, আমার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করে অফিসে গেলে আমার ফরমে একটি মোবাইল নম্বর লিখে দিয়ে বলে রাতে যোগাযোগ কইরেন। আমি আর যোগাযোগ না করার ফলে আমার আবেদন বাতিল করে দেয়। পরে আমি দালালের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আইডি কার্ড সংশোধন করি। জাজিরা ইউনিয়নের মেহের আলী মাদবর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া বেগম (৮২)। তিনি সকাল থেকে এসে বসে আছেন নির্বাচন অফিসের সামনে। জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, জমির দলিল করতে আইডি কার্ডের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কার্ডের জন্য নির্বাচন অফিসে এসে নিজেকে দেখি মৃতের তালিকায়। তাই ঠিক করার জন্য বসে আছি। আইডি কার্ডের কাজ চলমান এমন অনেকেই নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, নির্বাচন কর্মকর্তার একক নিয়ন্ত্রণে চলে এ অফিস। এতে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা তার ছত্রছায়ায় সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করছেন। ঘুষ বাণিজ্যের কাজও চলে নিয়মিত। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিলে এনআইডি কার্ড প্রণয়ন, সংশোধন, প্রদানসহ নানা কাজে জটিলতা সৃষ্টি করছেন তারা। এ বিষয়ে কামরুন নাহারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি অফিস থেকে পালিয়ে যান। পরে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলে তাকে পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে জাজিরা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তালুকদারকে জিজ্ঞেস করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের দেখে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে কামরুন নাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি টাকা নেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানি না। কেন টাকা নিয়েছে, সেটা তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। কামরুন নাহার অফিসের কোনো কর্মচারী না, আমরা তাকে এখানে আর রাখব না। আমাদের নতুন লোক কিছুদিন হলো চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বলেন,  কামরুন নাহারের টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত এবং ভুক্তভোগীকে তার টাকা ফিরত দেওয়া হয়েছে। কামরুন নাহার আমাদের নিয়মিত স্টাফ না, তাই তাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি কীভাবে সেখানে বসে সেবা দিয়ে আসছে এই বিষয়ে আমি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব, ইনশাআল্লাহ।
১১ ডিসেম্বর, ২০২৩
X