সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আব্দুর রহিম, জাজিরা (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাজিরা উপজেলা নির্বাচন অফিস যেন ‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য’

জাজিরা উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়। ছবি : কালবেলা
জাজিরা উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়। ছবি : কালবেলা

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা নির্বাচন অফিস যেন এক অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী ও অনিয়মের নানা অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলে পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হয়। সব মিলিয়ে অফিসটি এখন ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

ভোটার জটিলতার কারণে নাগরিক নানান সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নতুন ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল সংশোধন ও ভোটার স্থানান্তরসহ সব কাজেই গুনতে হয় টাকা। তবে অফিসে কর্মরত কামরুন নাহারের মাধ্যমে গেলে মুহূর্তেই মিলে সকল সমস্যার সমাধান।

ভুল সংশোধন থেকে শুরু করে যে কোনো কাজেই তিনি করে দিতে পারেন। এ জন্য কামরুন নাহারের হাতে তুলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক সেবা নিতে আসা মানুষ।

জাজিরা উপজেলার একাধিক বাসিন্দা ও সেবাপ্রার্থীর অভিযোগ, নির্বাচন অফিসে সব ধরনের সেবা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিতে হচ্ছে। ভোটার আইডি কার্ড স্থানান্তরের জন্য কোনো ফি না থাকলেও দিতে হচ্ছে টাকা। এর মধ্যে নাম এবং বয়সের ভুল সংশোধনে দিতে হয় দুই হাজার থেকে শুরু করে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। নতুন ভোটার হতে লাগে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। দালালদের দ্বারস্থ হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

উপজেলার নগর বাউলিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী সোবাহান মাদবর বলেন, গত আগস্ট মাসে আমার ও পরিবারের তিনজনের ভোটার আইডি কার্ড স্থানান্তরের জন্য নির্বাচন অফিসে আসলে আবেদনের কথা বলে নির্বাচন অফিসের স্টাফ কামরুন্নাহার ৯০০ টাকা রেখেছিলেন। ৩ মাস পরে আইডি কার্ড নেওয়ার জন্য আসলে আরও ১১০০ টাকা দাবি করেন কামরুন্নাহার। কিসের জন্য টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন খরচের কথা বলেন এবং আইডি কার্ড নিতে হলে বাড়তি ১১০০ টাকা দিতে হবে বলে জানান।

ভুক্তভোগী উজ্জ্বল মৃধা ও হানিফ মোল্লা বলেন, আমাদের আইডি কার্ডে পিতা মাতার নামের সাথে একটু অমিল থাকায় সংশোধনের জন্য আবেদন করি, কিন্তু কাজ হয় না। পরে কামরুন নাহারের সাথে কথা হলে তিনি ১১০০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান। পরে টাকা বিনিময়ে কাজ করে দেন তিনি। টাকা ছাড়া কোনোভাবেই কাজ করতে পারিনি। আমরা এই সকল সমস্যার সমাধান চাই।

বিকে নগর ইউনিয়নের পূর্ব কাজি কান্দির গ্রামের ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান বলেন, আমার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করে অফিসে গেলে আমার ফরমে একটি মোবাইল নম্বর লিখে দিয়ে বলে রাতে যোগাযোগ কইরেন। আমি আর যোগাযোগ না করার ফলে আমার আবেদন বাতিল করে দেয়। পরে আমি দালালের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আইডি কার্ড সংশোধন করি।

জাজিরা ইউনিয়নের মেহের আলী মাদবর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া বেগম (৮২)। তিনি সকাল থেকে এসে বসে আছেন নির্বাচন অফিসের সামনে। জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, জমির দলিল করতে আইডি কার্ডের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কার্ডের জন্য নির্বাচন অফিসে এসে নিজেকে দেখি মৃতের তালিকায়। তাই ঠিক করার জন্য বসে আছি।

আইডি কার্ডের কাজ চলমান এমন অনেকেই নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, নির্বাচন কর্মকর্তার একক নিয়ন্ত্রণে চলে এ অফিস। এতে কর্মকর্তা- কর্মচারীরা তার ছত্রছায়ায় সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করছেন। ঘুষ বাণিজ্যের কাজও চলে নিয়মিত। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না দিলে এনআইডি কার্ড প্রণয়ন, সংশোধন, প্রদানসহ নানা কাজে জটিলতা সৃষ্টি করছেন তারা।

এ বিষয়ে কামরুন নাহারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি অফিস থেকে পালিয়ে যান। পরে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে জাজিরা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তালুকদারকে জিজ্ঞেস করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের দেখে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে কামরুন নাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি টাকা নেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানি না। কেন টাকা নিয়েছে, সেটা তাকেই জিজ্ঞাসা করুন। কামরুন নাহার অফিসের কোনো কর্মচারী না, আমরা তাকে এখানে আর রাখব না। আমাদের নতুন লোক কিছুদিন হলো চলে আসছে।

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মান্নান বলেন, কামরুন নাহারের টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত এবং ভুক্তভোগীকে তার টাকা ফিরত দেওয়া হয়েছে। কামরুন নাহার আমাদের নিয়মিত স্টাফ না, তাই তাকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি কীভাবে সেখানে বসে সেবা দিয়ে আসছে এই বিষয়ে আমি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব, ইনশাআল্লাহ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়কের মাঝখানে গাছ রেখেই ঢালাই সম্পন্ন 

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবির ভিসি

৬৪ জেলার নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি

ম্যানইউর জয়হীন ধারা অব্যাহত, এবার ফুলহামের মাঠে ড্র

ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা-পেশাজীবীদের নিয়ে ‘আগামীর পথ’ অনুষ্ঠিত

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অনন্য কীর্তি

জুলাই যোদ্ধা শহীদ তানভীরের চাচা খুন

ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি

১০

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

১১

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

১২

ভূমি অধিগ্রহণে আটকে আছে ইউলুপ, ইউটার্নে মরছে মানুষ!

১৩

কনে দেখতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবি : নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

১৪

থাইল্যান্ডের ক্লাবে আবার ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম গার্ল’ অঞ্জলি

১৫

চাকসুতে সমকামিতা সমর্থক ও মাদকাসক্তদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি

১৬

ঠাকুরগাঁওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

১৭

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ শয্যার এইচডিইউ উদ্বোধন

১৮

এবার তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

১৯

রাকসুতে প্রথম দিনে ৫ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ 

২০
X