জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে বগুড়ায় নেওয়ার পথে ৪ হরিণের মৃত্যু
বগুড়ার টিএমএসএস অভয়ারণ্যের জন্য জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ৫টি হরিণ কিনে আনার সময় পথেই মারা গেছে ৪টি হরিণ। এ নিয়ে দুই চালানে মোট ১১টি হরিণ বগুড়ায় নেওয়ার পথে ৭টি হরিণের মৃত্যু হয়েছে।  টিএমএসএস কর্তৃপক্ষের ধারণা, পরিবহনের সময় হরিণকে সজ্ঞাহীন (অজ্ঞান) করতে যে অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা হয়, তার প্রভাবেই মারা গেছে হরিণগুলো। তবে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভাষ্য, চিত্রা প্রজাতির হরিণগুলো খুবই ভীত হওয়ায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি। ময়নাতদন্ত করলে (পোস্টমর্টেম) বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। গত রোববার ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ৫টি হরিণ ক্রয় করে টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ। বগুড়া শহরতলীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত টিএমএসএসর মমইন ইকোপার্কে গড়ে তোলা পশু অভয়ারণ্য বা চিড়িয়াখানার জন্য হরিণগুলো কেনা হয়।  রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ট্রাকে করে হরিণগুলো পাঠানো হয়। রাতে সেই ট্রাক বগুড়া এসে পৌঁছার পর খাঁচার ভেতরে থাকা চারটি হরিণকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। টিএমএসএস পশু অভয়ারণ্যের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাকিম আহম্মেদ শাহী জানান, রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ৫টি হরিণকে অ্যানেসথেসিয়া করে খাঁচায় তোলা হয়। পরে খাঁচাসহ ট্রাকটি বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে সাভারে থাকতেই একটি হরিণ মারা যায়। আর রাত আড়াইটার দিকে যখন খাঁচা নামানো হয়, তখন মোট চারটি হরিণকে মৃত পাওয়া যায়। অপর একটি সুস্থ থাকলেও অনেক দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। তিনি জানান, ইকোপার্কের ৯০ শতক জায়গার ওপর হরিণ প্রতিপালন বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে। চলতি বছর বন বিভাগ থেকে হরিণ প্রতিপালনের জন্য লাইসেন্স পায় টিএমএসএস। এরপর জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দুই চালানে ১১টি হরিণ ক্রয় করা হয়। এর মধ্যে গত ২৮ মে জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে ৬টি হরিণ ক্রয় করা হয়। সেই হরিণ হস্তান্তরের সময় অ্যানেসথেসিয়া করার সময় তাদের (চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের) হাতেই দুটি হরিণ মারা যায়। পরিবহনের সময় আরও একটির মৃত্যু হয়। গত ২৬ জুন ওই দুই হরিণের পরিবর্তে আরও দুটি হরিণ পাঠায় জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।  টিএমএসএস পশু অভয়ারণ্যের নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা (চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ) হরিণগুলোকে অ্যানেসথেসিয়া করছেন, সেটার প্রয়োগমাত্রা ঠিক আছে কিনা আমাদের জানা নেই। বগুড়ায় নেওয়ার পর হরিণগুলো খুবই দুর্বল থাকে। এ জন্য ধারণা করা হচ্ছে, অ্যানেসথেসিয়ার মাত্রা বা এই কাজের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে।’ এ বিষয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. নাজমুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘চিত্রা হরিণ খুবই সেনসেটিভ (সংবেদনশীল) ও ভীত প্রাণী। পরিবহনযোগে এসব নিয়ে যাওয়ার সময় খুবই লাফালাফি করে। এতে মাথায় আঘাত পেয়ে অনেক সময় মারা যায়। এ ছাড়া হার্ট অ্যাটাকেও মারা যেতে পারে।’ তবে হরিণ পরিবহনের সময় অতিরিক্ত কোনো এনেসথেসিয়া দেওয়া হয় না বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘টিএমএসএস থেকে বিষয়টি জানানোর পর সেখানে সদর উপজেলার একটি টিম পাঠানো হয়েছে। তারা মৃত হরিণগুলোর পোস্টমর্টেম করবেন। এরপর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’  তিনি আরও বলেন, হরিণ ভয় পেলে বা তাকে ধরতে গেলে হার্ট অ্যাটাক করে। পরিবহনের সময় একদিকে সড়কের ঝাঁকুনি, অন্যদিকে প্রাণিগুলোর লাফালাফি করার কারণে আঘাত থেকেও মারা গিয়ে থাকতে পারে। সবকিছু নিশ্চিত করতেই মৃত হরিণগুরোর পোস্টমর্টেম করা হবে।’
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
X