সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের ১০ কোটি টাকা লোপাট
পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগের পর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ব্যাংকের ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী। সুব্রত চক্রবর্তী টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ও ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে আকস্মিক পাঁচজন কর্মকর্তা অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসেন। অডিট শেষে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা গরমিল দেখতে পান। পরে ব্যাংকটির পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযুক্ত ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সূত্র আরও জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। রাতে সেখানে আসেন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে সাঁথিয়া থানায় নেওয়া হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে গতকাল শুক্রবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। অর্থ আত্মসাৎসহ অন্য বিষয়গুলো দুদক দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ওসি।
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

জনতা ব্যাংকের সোয়া ৫ কোটি টাকা লোপাট
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার জনতা ব্যাংক পিএলসির ৫ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে ওই শাখার ম্যানেজারসহ ৫ কর্মকর্তা ও অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  সোমবার (১ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।  মামলায় আসামি করা হয়েছে জনতা ব্যাংক পিএলসি তামাই শাখার ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন শেখ (৪২), সহকারী ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল করিম (৩৪), সাবেক ক্যাশ অফিসার মো. খালেদ ইউনুছ (৩১), অফিসার মো. রাশেদুল হাসান (৩৪), ক্যাশ অফিসার শাহ মখদুম উদ্দৌলা (২৯) ও অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জন।  বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত পাবনা জেলা কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।  সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, জনতা ব্যাংক পিএলসি তামাই শাখার ভল্ট থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ব্যাংকটির সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম গত ২৫ মার্চ বেলকুচি থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি দুদকের তপশিলভুক্ত অপরাধ হওয়ায় সেটি দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পাবনার উপপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। অভিযোগটি যাচাই বাছাই করে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর অনুমোদন দিলে ১ এপ্রিল মামলাটি দায়ের হয়। মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম, এরিয়া অফিসের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. আসাদুজ্জামান ও প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মনিরুজ্জামান গত ২০ মার্চ তামাই শাখা পরিদর্শনে যান। এ সময় শাখার ম্যানেজার আল আমিন শেখকে অনুপস্থিত দেখা যায়।  ক্যাশ যাচাই করে দেখা যায়, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় ব্যাংকের নগদ ক্যাশ, চেক বা ট্রান্সফারের মাধ্যমে ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক রাজশাহী বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক অরুন প্রকাশ বিশ্বাসসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।  পরে ২৪ মার্চ তামাই শাখার ম্যানেজার আল আমিন শেখ ব্যাংকে যোগদান করলে হিসাব দিতে ব্যর্থ হয়ে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। দায় স্বীকার করে তিনি পরিশোধের নিমিত্তে সানড্রি ডিপোজিট হিসাবে ২০ লাখ টাকা জমা দিলেও বাকি টাকা দিতে ব্যর্থ হন।  দুর্নীতি দমন কমিশন পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খায়রুল হক বলেন, জনতা ব্যাংকের ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি থানা থেকে আমাদের কাছে আসে। সেটি দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটির  প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। সেখান থেকে অনুমতি আসার পর মামলা রজু হয়েছে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুদক পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধরকে।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

ব্যাংক থেকে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট
নানা অনিয়মের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি ব্যাংক থেকে এ পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া এ অর্থ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি। অনিয়ম রোধ করা গেলে এ টাকায় বাজেট ঘাটতি মেটানো সম্ভব হতো। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে প্রথমসারির গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ হিসাব দিয়েছে সিপিডি। গতকাল শনিবার ঢাকার ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : চলমান সংকট ও করণীয়’ শিরোনামে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ হিসাব তুলে ধরেন। সিপিডির তথ্যমতে বলছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট হওয়ার কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। কোথায় কত টাকা গেছে? সিপিডির হিসাব অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপ নিয়ে গেছে ৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। জনতা, প্রাইম, যমুনা, শাহজালাল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিয়ে গেছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বেসিক ব্যাংক থেকে ২০১৫ সালে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ঘটনায় ৬০টি মামলা করেছে ১২০ জনের বিরুদ্ধে। জালিয়াতির মাধ্যমে অ্যাননটেক্স গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে থার্মেক্স গ্রুপ এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ৮১৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়, যদিও ব্যাংকটিতে ওই কোম্পানির ঋণ সীমা ছিল ২৬৪ কোটি টাকা। সিপিডি আরও জানায়, জনতা ব্যাংক থেকে ২০২০ সালে ঋণ সীমা লঙ্ঘন করে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ ১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালে গ্লোবাল ট্রেডিং ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এবি ব্যাংকে ১৬৫ কোটি টাকার মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করে দুদক মামলা করেছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার ২০২১ সালে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম করেন। এ ঘটনায় দুদক ৩৭টি মামলা করেছে তার বিরুদ্ধে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২০১৬ সালে ৭০১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয় অনিয়মের মাধ্যমে। ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এস আলম গ্রুপ বেনামি কোম্পানির মাধ্যমে। এ বিষয়ে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঋণ অনিয়মের অনুসন্ধানের জন্য উচ্চ আদালতে পিটিশন দাখিল করেন এক আইনজীবী। ইসলামী ব্যাংকে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে অপরিচিত নয়টি কোম্পানিকে নিয়ম লঙ্ঘন করে ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়। মিথ্যা তথ্যে রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিকে এ ঋণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভুয়া কোম্পানিকে ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকার ঋণ দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। অনিয়ম-খেলাপির প্রধান এই ঘটনাগুলোর বাইরেও অনেক ঋণখেলাপির ঘটনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে সিপিডি। ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকিং খাত বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত পুঁজিবাদের দখলে চলে গেছে। এ ধরনের পুঁজিবাদীরা তাদের আর্থিক অভিজাততন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করছে। ফলে এই শ্রেণি বা গোষ্ঠী ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করে একের পর এক ঋণ অনিয়ম করছে। যদিও ব্যাংকে টাকা রাখে সাধারণ জনগণ। সেই টাকা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব আমাদেরও। জনগণের অধিকার রয়েছে তা জানার।’ এমন বাস্তবতায় ব্যাংকিং খাতের নিয়মকানুন জোরদার করার বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা অনিয়ম করে ঋণ নিচ্ছে, তারাই আবার বাংলাদেশ ব্যাংকে নীতিমালা করার জন্য চাপ দেয়। অর্থাৎ কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছে ব্যাংক খাতের সুশাসন কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। এজন্য শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ বিভিন্ন ঋণখেলাপির ঘটনায় বিশাল পরিমাণ এ অর্থ বেরিয়ে গেলেও এর বিপরীতে ‘যৎসামান্য’ অর্থ আদায় হয়েছে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘শক্তিশালী’ করার ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানো না গেলে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। ফলে সুশাসনের অভাবে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অর্থ পাচার বেড়েই যাবে।’ ব্রিফিংয়ে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, তা পুরোটা নয়। ১০ বছর আগে খেলাপির পরিমাণ ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা থাকলেও গত সেপ্টেম্বর শেষে তা ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ ১০ বছরে খেলাপিঋণ বেড়েছে সাড়ে ৩ গুণেরও বেশি। এ ছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল, মামলা এবং অবলোপনের কারণে অনেককে ঋণখেলাপি হিসাবে দেখানো হয় না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘লুটপাট হওয়া অর্থের কতটা পাচার হয়েছে, তা বলা মুশকিল। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্যে দেখা যায়, প্রতিবছর দেশ থেকে গড়ে ৭-৮ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে।’ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সরকারি অর্থায়ন, ব্যাংকিং খাত, বিদেশি অর্থায়ন ও ঋণ, বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং শ্রম অধিকার ইস্যু নিয়ে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, যা আগামী নতুন বছরে এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে শেষ হবে না। বরং বাড়তে পারে। তাই এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের সঠিক নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রবৃদ্ধির মোহ কাটিয়ে বাস্তবতার নিরিখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নীতিনির্ধারকদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির এই ক্রান্তিকাল পার হওয়ার জন্য যথাযথ সংস্কার দরকার এবং পদক্ষেপ অবশ্যই রাজনৈতিক পর্যায় থেকেই আসতে হবে। এজন্য জনগণের কল্যাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ।’ সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমানে অর্থনীতিতে চার ধরনের সংকট রয়েছে, যার ফলে অর্থনীতি ক্রমে ভঙ্গুর থেকে ভঙ্গুরতর হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত বৈকল্যদশায় পড়েছে। মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার ছুটে চলা অব্যাহত রয়েছে, বহিঃখাত পঙ্গুত্বের ভেতরে পড়ছে আর শ্রম খাতে অন্ধত্ব বা স্থবিরতা বিরাজ করছে। এই সংকট উত্তরণে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন।’ এ অবস্থায় তিনি ১২টি বড় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেন। সেগুলো হলো—বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), প্রতিযোগিতা কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, বেপজা, শ্রম আদালত, শিল্প পুলিশ, বিজিবি, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (এবিবি), প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
২৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট : সিপিডি
২০০৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই ১৫ বছরে ব্যাংক খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে অনিয়মের মাধ্যমে বের করে নেওয়া এ অর্থ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি। ফলে এ অর্থে অনায়াসে বাজেট ঘাটতি মেটানো সম্ভব হতো। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলছে, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে ২৪টি ছোট-বড় অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে এসব অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। দেশের মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাংক খাতের অনিয়ম নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ তথ্য তুলে ধরেছে সংস্থাটি। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সিপিডি আয়োজিত অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনাবিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আয়োজিত অর্থনীতির চলমান সংকট ও করণীয়বিষয়ক ব্রিফিংয়ের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের চিত্র তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ। সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক খাতের সূচকগুলোর অবনমন হচ্ছে। খেলাপি ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য সূচকে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। গত ১৫ বছরের ব্যাংক থেকে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা বর্তমান মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। পরে এক সাংবাদিক জানতে চান, ব্যাংক থেকে যে অর্থ লুট করা হয়েছে, তার কতটা অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে, আর কতটা পাচার হয়েছে? জবাবে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশও করে না। তবে ধারণা করা যায়, এ অর্থের একটি অংশ পাচার হয়েছে, কিছু অংশ হয়তো অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে।’ বর্তমানে ব্যাংক খাত বৈকল্য অবস্থায় রয়েছে বলে মন্তব্য করে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক বলেন, অর্থনীতি ক্রমে ভঙ্গুর থেকে ভঙ্গুরতা হচ্ছে। অর্থনীতির চার খাতের মধ্যে ব্যাংক খাত বৈকল্য দশায় পড়েছে। মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়ার ছুটে চলা অব্যাহত রয়েছে, বহিঃখাত পঙ্গুত্বের ভেতরে পড়ছে আর শ্রম খাতে অন্ধত্ব বা স্থবিরতা বিরাজ করছে। সিপিডি বলছে, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখন বড় ধরনের চাপ বা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অতীতে অর্থনীতিতে এত ধরনের চাপ কখনো তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এ জন্য বড় ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থার দরকার। এ ধরনের সংস্কারের জন্য যে রাজনৈতিক ও নির্বাচন ব্যবস্থা দরকার, সেটি দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনের পরও অর্থনীতিতে কোনো সংস্কার হবে কিনা, এটি প্রশ্নসাপেক্ষ। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ব্যাংক খাত এখন ব্যক্তিস্বার্থের হাতে কুক্ষিগত হয়ে গেছে। এ কারণে এই খাতে সংকট আরও বাড়ছে। যারা এ খাত থেকে বড় বড় ঋণ নিচ্ছে, তারাই আবার ঋণ পুনঃতপশিলের নানা নিয়মকানুন তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করছে। শুধু ব্যাংক খাত নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে জিম্মি। ফলে এসব খাতে কতটা সংস্কার করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
X