শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বুনো হাতির তাণ্ডবে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর

গহিন বনে থেকে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার একটি গ্রামে চলে আসে বুনো হাতির দল। ছবি : কালবেলা
গহিন বনে থেকে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার একটি গ্রামে চলে আসে বুনো হাতির দল। ছবি : কালবেলা

দেশের উত্তরের জনপদ শেরপুর জেলা। এই জেলার তিনটি উপজেলা গারো পাহাড়বেষ্টিত। তার মধ্যে নালিতাবাড়ি উপজেলা অন্যতম। অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এ উপজেলায় হাতির আক্রমণ তুলনামূলক বেশি হয়। বুনো হাতির অব্যাহত তাণ্ডবে নালিতাবাড়িতে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর।

বোরো ধানের মৌসুমের শুরু থেকেই হাতির দল সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা তাদের পাকা ধান কাটতে শুরু করেছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। আবাদের শেষ প্রান্তে এসে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। তাই জানমাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে একদল বুনো হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। প্রথম দিকে ৪০ থেকে ৫০টি বুনো হাতি থাকলেও দিন দিন বংশবিস্তার করে এর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তারা বর্তমানে কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে একযোগে পাহাড়ি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতি করে চলছে।

বন বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলেও বেশিরভাগ মানুষ নানা জটিলতায় ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। বন বিভাগের ক্ষতিপূরণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো ক্ষতিগ্রস্তকে অবশ্যই নিজস্ব রেকর্ডিং জমিতে বসবাসকারী হতে হবে। কিন্তু অনেকেরই নিজের জমি থাকায় ভূমিহীন পরিবারগুলো বন বিভাগের খাসজমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে।

তাছাড়া বন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা না করারও অভিযোগ রয়েছে। তাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য শর্ত শিথিল করার দাবি এলাকাবাসীর। আবার অপরদিকে বসবাসকারী বৃহৎ এ জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। করতে পারছে না অন্য জায়গায় স্থানান্তর। ফলে আইনের বেড়াজালে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

বুরুঙ্গা আলম মিয়া ও তমছের আলীসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ক্ষুধার্ত হাতিগুলো খাবারের অভাবে পাগল হয়ে গেছে। কখন কোথায় আক্রমণ করছে বলা বাহুল্য। আগে বাড়িঘর ও ফসলে আক্রমণ করলে মশাল জ্বালিয়ে, ডাক চিৎকার করে, ভেপু বাজিয়ে, হইচই করে তাড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু এখন তারা এ বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন আর এসব দিয়ে কাজ হয় না। মূলত বনে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য না থাকায় হাতিগুলো ফসলের মাঠে চলে আসে। আবার মাঠে ফসল না থাকলে আমাদের বাড়িতে এসে তাণ্ডব চালিয়ে ঘরবাড়ি তছনছ করে গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় হাতিগুলোকে তাড়াতে গেলে পা দিয়ে মানুষ পিষে মারছে। আমরা গ্রামের মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলছি। এতেই বন্যহাতি আর মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। এর সমাধান প্রয়োজন।

মিজান মিয়া নামে এক স্কুলশিক্ষক জানান, বন্যহাতিগুলো যুগের পর যুগ বাংলাদেশের এ এলাকায় প্রায় প্রতি রাতে কোথাও না কোথাও তাণ্ডব চালায়। উত্তর দিকে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের হাজার হাজার কিলোমিটার বনভূমি রয়েছে। সেখানে হাতির পর্যাপ্ত খাদ্যও রয়েছে। দুই দেশের সরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ সমস্যা সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, হাতি দ্বারা নিহত পরিবারকে তিন লাখ, আহতকে এক লাখ এবং ফসল ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে সরকার। সরকার স্থায়ী সমাধানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এ ক্ষতিপূরণ চালিয়ে যাবে। তবে অনেকেই ক্ষতিপূরণের আওতায় আসছে না -এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা তো চাকরি করি। আইনের বাইরে তো আর কাজ করতে পারব না।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগের মাধ্যমে তাদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কেউ যদি ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকেন আবেদন করলেই নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাতি তাড়াতে মশাল জ্বালানোর কেরাসিন তেল, লাইটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনায় ধানমন্ডিতে দোয়া মাহফিল

রিকশাচালকদের চাঁদা বন্ধের আশ্বাস আমিনুল হকের

আলাউদ্দিন মৃধা হত্যা মামলার আসামি মিন্টু গ্রেপ্তার

দেশের প্রথম আন্তঃচেইন হোটেল ‘ডি মোর’ লয়্যালটি ক্লাবের যাত্রা শুরু

২৮ জেলে-মাঝিসহ ট্রলার নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে সুপার ওভারে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

হোয়াটসঅ্যাপে ফিরছে পুরোনো সেই ফিচার, যেসব সুবিধা পাবেন

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য কামনায় রাজধানীতে শীতবস্ত্র বিতরণ

পোল্যান্ডে প্যাট্রিয়টসহ সেনা মোতায়েন নেদারল্যান্ডসের

দরজার ধাক্কায় আঙুল ভেঙে ফেললেন তারকা খেলোয়াড়

১০

নরসিংদী কেন ভূমিকম্পের কেন্দ্র?

১১

বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টানে ভেদাভেদ নেই : ড. এমএ কাইয়ুম

১২

যতদিন ইনসাফ কায়েম না হবে ততদিন সংগ্রাম চলবে : সাদিক কায়েম

১৩

নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা 

১৪

গ্রামীণ ব্যাংকের আরও এক শাখায় অগ্নিকাণ্ডের চেষ্টা

১৫

নিলামে অংশ নিলেও ক্রিকেটার কেনার ইচ্ছে নেই এই ফ্র্যাঞ্চাইজির

১৬

তিন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল

১৭

শীতে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ে, এই ৪ নিয়ম মানলে বিপদ এড়ানো সম্ভব

১৮

ভূমিকম্পে হতাহতদের দেখতে হাসপাতালে বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক 

১৯

ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় জামায়াত আমিরের শোক

২০
X