বিজয় দিবসেও শ্রদ্ধা নিবেদন হয় না দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয় না মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি জাগরূক করে রাখতে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে। প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারি না থাকায় রাতের আঁধারে দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের অভয়াশ্রম। গতকাল শনিবার মহান বিজয় দিবসে সরেজমিন দেখা যায়, সেখানে কাপড় শুকাতে দেওয়া হয়। স্মৃতিস্তম্ভের চারদিকে ফেলা হয়েছে বাসাবাড়ির আবর্জনা। দূর থেকে দেখলে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ যেন ভাগাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া নির্মাণের পর থেকে ব্যবহার না করায় এরই মধ্যে নষ্ট হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভের পাশে নির্মাণ করা টয়লেটসহ অন্যান্য স্থাপনা। এদিকে দেবীগঞ্জের যে স্থানটিতে মুক্তিযুদ্ধের কোনো স্মৃতি নেই, সেই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ ছাড়া প্রশাসনের অবহেলায় এটি ময়লার ভাগাড় হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে ভূঁইয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভটি এখানে কীভাবে কার পরামর্শে করা হলো আমি জানি না। এখন যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেহেতু এটির যথাযথ মর্যাদা দেওয়া উচিত। স্মৃতিস্তম্ভে কাপড় শুকানো হচ্ছে, পাশেই ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জাতীয় বিভিন্ন দিবস, বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, দেওয়া হয় না কোনো ধরনের শ্রদ্ধাঞ্জলি। অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ থাকতেও বিজয় চত্বরের মঞ্চে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা নিয়েও উঠেছে সমালোচনা। এ বিষয়ে ইউএনও শরীফুল আলম বলেন, এটি কোন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে, সেটির খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে। স্মৃতিস্তম্ভে কারা ময়লা-আবর্জনা ফেলতেছে, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি এবং দ্রুত যথাযথভাবে এটি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের এ স্মৃতিস্তম্ভটির দ্রুত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করে প্রতিবছর বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হোক। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শহীদদের স্মৃতি চির জাগরূক রাখতে ২০১৯ সালে সারা দেশের মতো পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার বাবুপাড়া সংলগ্ন সরকারি খাসজমিতে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দেবীগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

দেবীগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস আজ
আজ দেবীগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ভুঁইয়ার নেতৃত্বে হানাদার মুক্ত হয় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে মুক্তিযোদ্ধারা দেবীগঞ্জ সদরের তিন দিক থেকে করতোয়া নদীর পশ্চিম পাড়, ভাজনী ও গোপাল বৈরাগী ঘাট এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ঘেরাও করে রাখেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাত মাস পর ৯ ডিসেম্বর ভোর ৬ টা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে পাকবাহিনীরা দেবীগঞ্জ থেকে পিছু হটে ডোমার হয়ে সৈয়দপুরের দিকে রওনা হয়। সেদিন বিকাল ৪টায় দেবীগঞ্জ আনসার ক্লাবের সামনে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দেবীগঞ্জ হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন দেবীগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলম প্রধান। দেবীগঞ্জের যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ভুঁইয়া সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরা প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে থেকে দেবীগঞ্জ মুক্ত দিবস পালন করে আসছি। ১৯৭১সালের ৯ ডিসেম্বর বিকেলে শফিউল আলম প্রধানসহ দেবীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে দেবীগঞ্জ হানাদার মুক্ত ঘোষণা করি। এরপর ১২ ডিসেম্বর দেবীগঞ্জ সার্কেল অফিসে পিস কমিটির লুটের ১০ কেজি রূপা, ৯২ ভরি স্বর্ণ ও ৯৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। পরে সেই সম্পদ দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করা হয়।’ প্রতি বছর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেবীগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৩
X