ঢাবিতে পঞ্চব্রীহি ধান নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত পাঁচবার ফলনশীল ধানগাছ নিয়ে ‘পঞ্চব্রীহি মাল্টি-হারভেস্ট রাইস: এ পাথওয়ে টু ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট মিটিগেশন’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।  বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস (কারস) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ)-এর সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেস সেমিনারটির আয়োজন করে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।  কারস-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ইসতিয়াক এম সৈয়দের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন 'পঞ্চব্রীহি'-এর উদ্ভাবক ড. আবেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী এবং সাবেক শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, একটি ধান গাছ থেকে পাঁচবার ফসল উৎপাদন করা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সফলতা।   তিনি বলেন, একদিকে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও বেশিরভাগ জমিতে এক ফসলি ধান উৎপাদনসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্য সংকট তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এই গবেষণা ও উদ্ভাবন আমাদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যৌথ সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারস এই জাতীয় গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং এর সুফল মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া, সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবন / এক রোপণে ৫ ফলনের পঞ্চব্রীহি ধান আশা জাগাচ্ছে কৃষকদের
কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কৃতীসন্তান, জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী নতুন করে উদ্ভাবন করেছেন পঞ্চব্রীহি ধান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধানের নতুন এ জাত নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের অর্থায়নে বিডিওএসএনের তত্ত্বাবধানে ১ বছরমেয়াদি বিডিওএসএন প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করা হয়েছে কুলাউড়ার হাজীপুরে। একবার রোপণকৃত এসব চারা থেকে পর্যায়ক্রমে পঞ্চম বারের মতো সর্বশেষ ফলন পাওয়া গেছে পঞ্চব্রীহি ধানের। আগামীতে পঞ্চব্রীহি ধানের এ বীজ দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে কাজ চলছে। বাণিজ্যিকভাবে পঞ্চব্রীহি ধানের বীজ সংগ্রহ করে নতুন জাতের ধানের এই ফসল ফলানোর আশায় রয়েছেন দেশের প্রান্তিক কৃষকরা। জানা যায়, ২০১০ সালে প্রথম কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে ২৫ বর্গমিটার জমিতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ড. আবেদ চৌধুরী। পরে ৩ বছরে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণায় দেখা যায় নির্দিষ্ট ধরনের এ জাত একইবার রোপণকৃত গাছে ৫ বার ফলন দিতে সক্ষম। স্থানীয় জাতের ধানের সাথে উন্নতমানের ধানের বীজ সংকরায়ন করে এই উচ্চফলনশীল ধানের জাত পাওয়া যায়।  নতুন পঞ্চব্রীহি ধানের জাত বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এখন ছড়িয়ে দেওয়ার উপযোগী হয়েছে বলেও জানান ড. আবেদ চৌধুরী। এ জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা চান। এ ধান ৩ গুণ কম খরচে উৎপাদন করা যাবে বলে জানান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এ জিনবিজ্ঞানী। পঞ্চব্রীহি ধান চাষে প্রথম বার ১১০ দিন পর ফলন আসে। পরের ফলন আসে ৪৫ দিন অন্তর। ১ বার বোরো, ২ বার আউশ ও ২ বার আমন ধানের ফলন পাওয়া যাবে। পঞ্চব্রীহি ধানে প্রথমবার হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৪ টন। ধানের চারা প্রতি ৪ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর গ্রামে নতুন জাতের ধানের চাষাবাদ পরিদর্শন করেছেন সাবেক শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাঈদা সুলতানা, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি রেজিস্ট্রার মো. ইয়াছিন আলী, কুলাউড়ার ইউএনও মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ও উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ। জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী তার উদ্ভাবিত ধানের সুফল সম্পর্কে তাদের নিকট বিস্তারিত তুলে ধরেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব ও হাওর কৃষি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক জানান, পঞ্চব্রীহি ধান আমাদের জন্য একটি আশার বিষয়। আমরা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড. আবেদ চৌধুরীর সাথে কাজ করতে চাই। সিলেটের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা জামান বলেন, পঞ্চব্রীহি ধান থেকে নতুন কিছু শিখতে পেরেছি। এই গবেষণাটি একদম অতুলনীয়।  বিডিওএসএন প্রকল্পের সুপারভাইজার তাহমিদ আনাম চৌধুরী বলেন, পরিক্ষামূলকভাবে কানিহাটি এলাকায় বোরো মৌসুমের ফসল উত্তোলন করার পর একই চারা হতে এ বছরে পঞ্চমবারের মতো ফসল উত্তোলন করা হয়েছে। ফলনকৃত একটি ধানের চারা থেকে প্রতি বার ১০০ থেকে ১১০ গ্রাম ধানের ফলন পাওয়া গেছে। জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, ঋতু নির্ভরতা ধানের হাজার বছরের চরিত্র। পঞ্চব্রীহি ধানকে ঋতু নির্ভরতা থেকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এ ধান সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়াও এ ধান উৎপাদনে কৃষকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। দেশের পতিত জমিতে সারা বছর পঞ্চব্রীহি ধানের ফসল উৎপাদনে আমি কৃষক ও তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জসিম উদ্দিন জানান, আমি সম্প্রতি কুলাউড়ায় যোগদান করার পর একাধিকবার পঞ্চব্রীহি ধান ফলন মাঠে পরিদর্শন করেছি। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের মাঝে পঞ্চব্রীহি ধানের চাষাবাদের জন্য জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর কাছে নতুন জাতের বীজ সংগ্রহের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি নতুন উদ্ভাবনকারী এই ধান ব্যবসায়িকভাবে ফলনে কৃষকরা অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হবেন। উল্লেখ্য, ড. আবেদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কৃতীসন্তান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধানবিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়াও তিনি ডায়াবেটিস প্রতিরোধক রঙিন ভুট্টা ও লাল রঙের চাল উদ্ভাবন করেছেন।
২৫ নভেম্বর, ২০২৩
X