গোপালগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তানসহ প্রসূতির মৃত্যু
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের সিজারিয়ান রোগীর ভুল চিকিৎসায় গর্ভের সন্তানসহ এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।   শনিবার (১৬ মার্চ) বিষয়টি জানাজানি হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার নারায়ণখানা গ্রামের ইউনাইটেড হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।  এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক তদন্তসাপেক্ষে দোষী ডাক্তার প্রভাষ মন্ডল ও ক্লিনিক মালিক জাহিদুল ইসলাম রিন্টুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জনিয়েছেন স্বজনেরা।   কোটালীপাড়ার নারায়ণ খানা ইউনাইটেড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার বলি আফরোজা বেগম (২০) উপজেলার শুয়াগ্রাম ইউনিয়নের কালারবাড়ি গ্রামের জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী। কোটালীপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. প্রভাষ মন্ডল এনেস্থেসিয়ার ইনজেকশন দেওয়ার পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই প্রসূতি। জানা যায়, দুপুর ১টার দিকে সিজার অপারেশন করার আগে ডা. প্রভাষ মন্ডল রোগীর শরীর অজ্ঞানের ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশনটি ঠিকমতো পুশ না হওয়ায় রোগীর হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে ঘটনাস্থলেই গর্ভের সন্তানসহ রোগী মারা যান।  রোগীর স্বজনেরা মৃত্যুর বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে  স্বজনদের মারধরের অভিযোগ ওঠে ডাক্তারের বিরুদ্ধে।   এ ব্যাপারে নিহত আফরোজা বেগমের মা মনিকা বেগম বলেন, আমার মেয়ে মারা যায়নি, আমার মেয়েকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।   অনুসন্ধানে জানা যায়, ডা. প্রভাষ মন্ডলের এনেস্থেসিয়ার কোনো ট্রেনিং বা সার্টিফিকেট নেই। তবুও তিনি এ কাজ করে আসছেন দিনের পর দিন। এনেস্থেসিয়ার ট্রেনিং না থাকা কোনো চিকিৎসক এনেস্থেসিয়ার ইনজেকশন রোগীকে দিতে পারবেন না এমন বিধিনিষেধ রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। অথচ ডা. প্রভাষ মন্ডল তা মানছেন না। রমজান মাসে একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসিবে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কোটালীপাড়া হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করার কথা। অথচ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় তিনি কীভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করেন এ প্রশ্ন এখন লোকমুখে। মেডিকেল ব্যাচের ৩৯তম বিসিএস এর এমবিবিএস চিকিৎসক ডা. প্রভাষ মন্ডল কোটালীপাড়া হাসপাতালে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। তখন মেডিকেল অফিসার হিসেবে তিনি হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখতেন।   ২০২২ সালে ডা. নন্দা সেন গুপ্তা ইউএইচএফপিও হিসেবে কোটালীপাড়া হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে ডা. প্রভাষ আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। পেয়ে যান কোটালীপাড়া হাসপাতালের ইউসি সার্জনের দায়িত্ব। অথচ এ দায়িত্ব পেতে হলে প্রশিক্ষণ থাকতে হয় সেগুলো তার কিছুই নেই।  কোটালীপাড়া হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন চালু হওয়ার পর প্রধান ডাক্তার নন্দা সেন গুপ্তার নির্দেশে ডা. প্রভাষ একাই রোগীদের শুরু করেন আল্ট্রাসনো। অথচ তার আল্ট্রাসনো করার কোনো ট্রেনিং বা সার্টিফিকেট নেই। এ সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আল্ট্রাসনোর আড়ালে গর্ভবতী মায়েদের তার পছন্দমতো ক্লিনিকে সিজার করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। এ ব্যাপারে নারান খানা ইউনাইটেড হাসপাতালের মালিক জাহিদুল ইসলাম (রিন্টু) বলেন, সকালে আমাদের হাসপাতালে এ রোগীটি ভর্তি হয়। আমরা তাকে স্যালাইন দেই। দুপুরের দিকে আমরা তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই আর সেখানেই তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।  কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. নন্দা সেনগুপ্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকার কারণে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
১৬ মার্চ, ২০২৪

প্রসূতির মৃত্যু অবৈধ ক্লিনিক সিলগালা
বরগুনার বামনায় নিবন্ধনহীন একটি ক্লিনিকের আবাসিক ডাক্তারের অপচিকিৎসার কারণে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার ডৌয়াতলা বাজার সংলগ্ন সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ক্লিনিক সিলগালা ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান। মৃত প্রসূতি মেঘলা আক্তার বৈকালিন বাজার এলাকার তারিকুল ইসলাম তারেকের স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গা-ঢাকা দেওয়ায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বরগুনা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ ফজলুল হক কালবেলাকে জানান, ওই ক্লিনিকের কোনো নিবন্ধন নেই কিংবা নিবন্ধনের জন্য কোনো আবেদনও করেনি। প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বামনা থানার ওসিকে বলা হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মরদেহের ময়নাতদন্ত ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বামনা থানায় মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
১৭ জানুয়ারি, ২০২৪
X