৩ হাজার গাছ কাটতে একাট্টা বন বিভাগ ও জেলা পরিষদ
গত দু’সপ্তাহ ধরে যশোরসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এ বিভাগের যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় সর্বত্র গাছ লাগানোর জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও ৩ হাজার গাছ কাটতে একাট্টা যশোর জেলা পরিষদ ও বন বিভাগ। গত ছয় বছরে সড়ক, মহাসড়ক উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ২শ গাছ কেটেছে যশোর জেলা পরিষদ। বর্তমানে যশোর নড়াইল সড়কে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৯৬১টি গাছ কাটা চলমান। এ ছাড়া যশোর সামাজিক বন বিভাগ সম্প্রতি ২ হাজার ৪৪টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সামাজিক সংগঠনগুলো। গত ২৫ এপ্রিল দুটি পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২ হাজার ৪৪টি বড় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয় যশোর সামাজিক বন বিভাগ। দরপত্র বিজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম। দরপত্রে উল্লেখিত এসব গাছের মধ্যে রেইনট্রি, বকাইন, মেহগনি, সেগুন, বাবলা, খৈয়েবাবলাসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। বন বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছে যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আজিজুল হক ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান ভিটু গণমাধ্যমের কাছে এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের গাছ সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর হতে আন্দুলিয়া পর্যন্ত ২৪৩টি বর্ষীয়ান বৃক্ষ, চাঁচড়া থেকে ভাতুড়িয়া, সাড়াপোল, তেতুলিয়া পর্যন্ত ৯৭৯টি বর্ষীয়ান বৃক্ষ, কেশবপুর উপজেলার বড়েঙ্গা বাজার থেকে পাচারই পর্যন্ত ৫০২টা, বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাখোলা থেকে তালবাড়ীয়া পর্যন্ত ৩১০টি বৃক্ষ বিক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করেছে। বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা বন বিভাগের এই অপরিণামদর্শী উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে বন বিভাগের দরপত্র আহ্বান বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে পরিবেশ বিধ্বংসী, গাছ বিধ্বংসীদের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি । সঙ্গে শহরের বেজপাড়া এলাকার কবরস্থানের গাছ নিধনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যশোরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, আমার যা বলার তা লিখিতভাবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলে দিয়েছি। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।  বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির প্রতিবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, দু’একটি সংগঠন তাদের কথা বলতেই পারে। গাছ কাটার তপশিল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখান থেকে পিছিয়ে আসার আপাতত কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি যশোর শহরের বেজপাড়া কবরস্থানের ৫০টি গাছ বিক্রি নিয়ে প্রতিবাদ জানায় সচেতন যশোরবাসী। অভিযোগ ছিল, কবরস্থান কমিটির সদস্যরা কোনো সরকারি দপ্তরের অনুমতি না নিয়েই ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ৫০টি ছোটবড় গাছ বিক্রি করে দেয়। যশোরে অতিতীব্র দাবদাহের মধ্যে উঠে এসেছে যশোর জেলা পরিষদের বিগত কয়েক বছরে ৪ হাজারের বেশি গাছ কাটার বিষয়। এ সময়ের মধ্যে তারা নতুন কোনো গাছ লাগায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছে কয় লেন রাস্তা হবে সেটা চূড়ান্ত না হওয়ায় ইচ্ছামতো তারা গাছ লাগাতে পারছে না। এমনকি তাদের গাছ লাগানোর কোনো নির্দেশনাও নেই। জেলা পরিষদের তথ্যমতে, গত ৬ বছরে চারটি সড়কের পাশ থেকে তাদের মালিকানাধীন ১৪ কোটি টাকা মূল্যের ৪ হাজার ২১০টি গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৮৯৫টি গাছ কাটা হয়েছে যশোর-খুলনা মহাসড়ক উন্নয়নের সময়। যার বিক্রয় মূল্য ছিল চার কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২১ সালে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের হৈবতপুর ব্রিজ এলাকা থেকে ৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের ১২টি গাছ কাটা হয়। সে বছর যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ৮৩৫টি গাছ কাটা হয়। যার মূল্য দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০২২ সালে যশোরের রাজারহাট থেকে চুকনগর মহাসড়কে ৫০৭টি গাছ কাটা হয়। যার মূল্য ছিল এক কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বর্তমানে যশোর-নড়াইল সড়কে চার কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৯৬১টি গাছ কাটা চলমান। এ ছাড়া ঐতিহাসিক যশোর রোডের (যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের) শতবর্ষী রেইনট্রি গাছসহ অন্যান্য গাছ বিক্রির উদ্দেশ্য তালিকাভুক্ত করেছে ৬৯৭টি। তবে ঐতিহাসিক যশোর রোডের এই শতবর্ষী গাছ না কাটার জন্য পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ও হাইকোর্টে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আপাতত গাছ কাটছে না জেলা পরিষদ। যশোর রোড উন্নয়ন ও শতবর্ষী গাছ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, সড়কের উন্নয়নের জন্য গাছ রেখেও পার্শ্ববর্তী দেশে উন্নয়ন চলছে। কিন্তু জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অপরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে সাবাড় করেছেন। হাজার হাজার গাছ কাটলেও তিনি কখনো গাছ লাগাননি। যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান জানান, যৌক্তিক কারণ ছাড়া গাছ কাটার সুযোগ নেই। মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদকে গাছ অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। সেই চিঠির আলোকে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদন দেয়। এরপরেই গাছ কাটার দরপত্র আহবান করা হয়। গাছ বিক্রির টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হয়।
০৩ মে, ২০২৪

মামলা দেওয়ায় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদকে গাড়িচাপায় হত্যা করা হয়
উখিয়ায় মাটিভর্তি ডাম্পার চাপায় মর্মান্তিকভাবে বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী কামালসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৫। সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হতে কামাল এবং উখিয়ার কোটবাজার থেকে হত্যাকাণ্ডের সহযোগী হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫’র মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী। গ্রেপ্তারকৃত মো. কামাল উদ্দিন (৩৯) উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের এবং হেলাল উদ্দিন (২৭) একই ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নূর আলম মাইজ্জার ছেলে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচএম সাজ্জাদ হোসেন গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, উখিয়ার রাজাপালং ইউপিস্থ হরিণমারা এলাকায় স্থানীয় হেলাল, গফুর ও বাবুলের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে। এ চক্রের অধীনে প্রায় ১০-১২টি ডাম্পার ও কয়েকটি মাটিকাটা ড্রেজার রয়েছে। প্রতি ডাম্পার মাটি ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিভিন্নজনের কাছে জমি ভরাটের জন্য বিক্রি করেন। চক্রের মূল হোতারা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রেখে বাকি টাকা ডাম্পারের মালিকদের গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ পরিশোধ করে দেয়। তিনি জানান, নিহত বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হরিণমারা বন অঞ্চলের দায়িত্বপূর্ণ বিট কর্মকর্তা হওয়ায় গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত একাধিক অভিযান চালিয়ে পাঁচটি মাটি কাটার ড্রেজারসহ কয়েকটি ডাম্পার জব্দ করে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে বন আইনে কয়েকটি মামলাও দায়ের করেছেন। ফলে অপরাধীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শায়েস্তা করতে পরিকল্পনা করেন। গত ৩১ মার্চ রাত অনুমান ২টার দিকে পাহাড় কাটার সংবাদ পেয়ে বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ তার আরেক সদস্য মো. আলীকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। স্থানীয় ফরিদ আহম্মদের দোকানের সামনে পৌঁছালে মাটিভর্তি ডাম্পারের ড্রাইভার বাপ্পিকে তার পাশে বসে থাকা কামাল বন কর্মকর্তাকে গাড়িচাপা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। পরে ঘাতক বাপ্পি মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও তার সহযোগীকে গাড়িচাপা দেয়। এতে ড্রাম্পারের চাপায় মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই সাজ্জাদ মারা যান এবং সহযোগী মোহাম্মদ আলী আহত হন। র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক সাজ্জাদ জানান, এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় র‌্যাব-১৫ মামলার ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কামাল ও হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামাল ও হেলাল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫’র অধিনায়ক। তাদের উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যা : প্রধান আসামি বাপ্পী গ্রেপ্তার
কক্সবাজারের বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান সজল (৩০) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) ভোররাতে এ অভিযান চালিয়ে উখিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।  উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল বলেন, আমরা বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তাকে সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ কক্সবাজার নিয়ে আসা হবে। রোববার (৩১ মার্চ) ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছিল একদল পাহাড়খেকো। খবর পেয়ে বনবিভাগের দোছড়ি বিটের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান সজলসহ কয়েকজন বনকর্মী ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনিসহ মোটরসাইকেল আরোহী দুইজনকে পাচারকারীদের মাটিভর্তি ডাম্পট্রাক চাপা দেয়। এতে সাজ্জাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে মারা যান এবং মোহাম্মদ আলী নামের এক বনরক্ষী আহত হন। এ ঘটনায় সোমবার (১ এপ্রিল) বিকালে বন বিভাগের উখিয়া রেজ্ঞ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার মোহাম্মদ কাশেমের ছেলে ও ডাম্পার ট্রাকটির চালক মো. বাপ্পী (২৩), একই এলাকার সুলতান আহম্মদের ছেলে ছৈয়দ আলম ওরফে কানা ছৈয়দ (৪০) ও তার ছেলে মো. তারেক (২০), রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার নুরুল আলম মাইজ্জার ছেলে হেলাল উদ্দিন (২৭), হরিণমারা এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে ছৈয়দ করিম (৩৫), একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে আনোয়ার ইসলাম (৩৫), আব্দুর রহিমের ছেলে শাহ আলম (৩৫), হিজলিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মো. বাবুল (৫০), একই এলাকার ফরিদ আলম ওরফে ফরিদ ড্রাইভারের ছেলে মো. রুবেল (২৪) এবং হরিণমারা এলাকার শাহ আলমের ছেলে কামাল উদ্দিন ড্রাইভার (৩৯)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে, এজাহারভূক্ত ৫ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিম (৩৫)। নিহত সাজ্জাদুজ্জামান সজল (৩০) কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। ওসি শামীম হোসেন বলেন, ১ এপ্রিল বন বিভাগের উখিয়া রেজ্ঞের এক কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় রেঞ্জার বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে। এ ঘটনায় প্রধান আসামিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার হয়েছে। 
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তা হত্যায় শাস্তি নিশ্চিত করা হবে
কক্সবাজারে দুষ্কৃতকারীদের ট্রাকচাপায় নিহত বন বিভাগের কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, পাহাড় কর্তনকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দায়ী সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। গতকাল রোববার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভিটিকান্দি গ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, সাজ্জাদুজ্জামানের মৃত্যুতে পরিবার যেন আর্থিক সংকটে না পড়ে সেজন্য মাস্টার্স পাস তার স্ত্রীর কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগ সবসময় তার পরিবারের পাশে থাকবে। সাজ্জাদুজ্জামানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে জানান সাবের হোসেন চৌধুরী। মন্ত্রী নিহত বন কর্মকর্তার বাবা মোহাম্মদ শাহজাহানের কাছে মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে চেক ও নগদে ১৫ লাখ টাকা হস্তান্তর করেন। পরে মন্ত্রী নিহতের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী, উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, উপপ্রধান বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বন) আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, বন সংরক্ষক আর এস এম মুনিরুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল সরকারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে আছে গতকাল ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর দূতাবাস, কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ-বাংলাদেশ অফিস এবং সোসাইটি ফর সোশ্যাল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট কুয়েতের সৌজন্যে মুগদা থানার ৭১ ও ৭২নং ওয়ার্ডের জনগণের মধ্যে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণের পক্ষে আছে এবং থাকবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, ফিলিস্তিন স্বাধীন হলেও আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব, বাংলাদেশের ভাইবোনরা আমাদের পাশে ছিলেন। এ সময় মুগদা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বাহার, সবুজবাগ থানার সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাসসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
০৮ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে : পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, কক্সবাজারের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে ‘মাটি পাচারকারীদের ড্রাম্প ট্রাকের চাপায়’ বনবিট কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা নৃশংস হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।  বুধবার (৩ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত ' এড্রেসিং দ্য চিলড্রেনস এনভায়রনমেন্টাল হেলথ উইথ এ পাট্টিকুলার ফোকাস অন লেড পয়জনিং ইন বাংলাদেশ' ‘শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী এ কথা বলেন।  জলবায়ু বাস সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রকল্প বাছাই ও বরাদ্দ প্রদানে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ফলে বিসিসিটির অতীতের ভুলভ্রান্তি পরিহার করা সম্ভব হবে। এর পূর্বে কর্মশালায় প্রদত্ত বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সীসা বিষক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে এবং বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সরকার ও তার মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।  তিনি বলেন, এ কাজে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। 
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১
কক্সবাজারের উখিয়ায় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যা মামলার আসামি ছৈয়দ করিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১ মার্চ) ভোরে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে রোববার (৩১ মার্চ) রাতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম হরিণমারা এলাকার ডাম্প ট্রাক (মিনি ট্রাক) চালক মো. বাপ্পী, একই এলাকার ছৈয়দ আলম ওরফে কানা ছৈয়দ ও তার ছেলে মো. তারেক, রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল এলাকার হেলাল উদ্দিন, হরিণমারা এলাকার ছৈয়দ করিম, একই এলাকার আনোয়ার ইসলাম, শাহ আলম, হিজলিয়া এলাকার মো. বাবুল, একই এলাকার মো. রুবেল এবং হরিণমারা এলাকার কামাল উদ্দিন। উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘রোববার রাতে বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের কর্মকর্তা শফিউল আলম বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। বন কর্মকর্তা হত্যার ঘটনার পর থেকে পুলিশ জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে।’ তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে সোমবার ভোরে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামি ছৈয়দ করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’ শনিবার (৩০ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি পাচার করছিল একদল মাটিখেকো। এমন খবরে বন বিভাগের দোছড়ি বিটের কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামানসহ দুজন মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় দুজনকে ডাম্প ট্রাক দিয়ে চাপা দেওয়া হয়। এতে সাজ্জাদুজ্জামান ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত হন মোহাম্মদ আলী নামে আরকেজন। সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। এ ঘটনায় আহত বনরক্ষী মোহাম্মদ আলী টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ঝিমংখালী এলাকার বাসিন্দা।
০২ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যাকারীদের বিচার চায় পরিবার
কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় কাটা ঠেকাতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের মা উম্মে কুলসুম ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। প্রতিমাসে ছেলের দেওয়া টাকায় চিকিৎসা হতো তার। রোববার (৩১ মার্চ) ছেলের মৃত্যুর খবরের পর থেকে সাজ্জাদুজ্জামানের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই কান্নাকাটি করছেন। মাকে রেখে কেন সাজ্জাদুজ্জামানকে আল্লাহ নিয়ে গেলেন, এগুলো বলে বিলাপ করছেন তিনি। সাজ্জাদুজ্জামান আড়াই বছর আগে নারায়ণগঞ্জের মুমতাহেনা সুমিকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে মাবির শাহ নামে ৯ মাস বয়সী শিশু সন্তান রয়েছে। স্বামী সাজ্জাদের মৃত্যুর পর থেকে অনেকটাই বাকরুদ্ধ সুমি আক্তার। তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছে না, সামনেও আসছেন না। সোমবার (১ মার্চ) দুপুরে সাজ্জাদুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের ভিটিকান্দি গ্রামে গিয়ে এ করুণ দৃশ্য দেখা গেছে। সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের দায়িত্বে ছিলেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগে যোগদান করেন তিনি। সাজ্জাদ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের ভিটিকান্দি এলাকার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। সাজ্জাদুজ্জামানের বাড়িতে কথা হয় তার বাবা মো. শাহজাহানের সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, রমজান মাসে প্রতি রাতে সেহরির সময় আমাকে ফোন করত। ওর মা আর আমার সঙ্গে অনেক সময় নিয়ে কথা বলত। পরিবার ও তার মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতো সে। সব শেষ শুক্রবার কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। মায়ের চিকিৎসার কথা বলেছিলাম। তিনি বলেন, সে বলেছিল কোনো চিন্তা যেন না করি। মাস শেষে বেতন পাওয়া মাত্র টাকা পাঠিয়ে দেবে। শনিবার (৩০ মার্চ) আর কথা হলো না। সেদিন সেহরির সময় ফোন এলো ঠিকই। সে ফোনে জানানো হলো সাজ্জাদুজ্জামান আর নেই। তাকে মাটিখেকোরা হত্যা করেছে। সাজ্জাদের ভাই কামরুজ্জামান কাজল কালবেলাকে বলেন, সাজ্জাদুজ্জামান আমার চেয়ে তিন বছরের ছোট। সংসারের প্রতি খুব দায়িত্বশীল ছিল। ছোট থেকেই পরোপকারী ছিল সে। অন্যায় মেনে নিতে পারত না। বিপদে কেউ ডাকলে রাত হলেও সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যেত। এদেশে আইন আছে, তার পরেও বন, পাহাড় উজার হচ্ছে। আইন, আইনের মত থাকছে। প্রভাবশালীরা বন উজার করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ঘটনার দিন সে পাহাড় কাটার খবর শুনে মোটরসাইকেল সহকর্মীসহ ঘটনাস্থলে যান। ফোর্সসহ যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সাজ্জাদ বলেছিল আগে গিয়ে পরিস্থিতি দেখবে, পরে প্রয়োজন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। কামরুজ্জামান বলেন, ডাম্পারচালক দূর থেকে তাদের আসতে দেখেছিল। সে দুজনকে হত্যা করার জন্য মোটরসাইকেলর ওপরে ডাম্পারটি উঠিয়ে দিয়ে সাজ্জাদ হত্যা করল। তিনি আরও বলেন, আমরা সাজ্জাদকে আর ফিরে পাব না। সে তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। আমরা সাজ্জাদুজ্জামানের হত্যার বিচার চাই। আমার ভাইয়ের বাচ্চার জীবন এখন কীভাবে চলবে। যদি ওর স্ত্রীর জন্য বন বিভাগে একটি চাকরির ব্যবস্থা করা হতো তাহলে হয়তো ওদের জীবনের অর্থনৈতিক বিপর্যয়টা ঠেকানো যাবে।  বনকর্মীরা জানান, ডাম্পারটি (ট্রাক) হরিণমারা এলাকার ছৈয়দ করিমের। বাপ্পি নামের এক যুবক সেটি চালাচ্ছিলেন। হত্যার জন্যই তাদেরকে ডাম্পার চাপা দেওয়া হয়।  রোববার (৩১ মার্চ) জোহর নামাজের পর কক্সবাজার শহরে বিভাগীয় বন বিভাগের কার্যালয় প্রাঙ্গণে সাজ্জাদুজ্জামানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় আসে। রাতে জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাকে। এর আগে শনিবার (৩০ মার্চ) দিবাগত রাতে হরিণমারায় পাহাড় কেটে বালু পাচার হচ্ছিল। এমন খবর পেয়ে সাজ্জাদুজ্জামান বন বিভাগের গাড়িচালক মো. আলীকে নিয়ে বাইকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় বালু পাচারকারীরা ডাম্পার দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদ ও আলীকে হত্যার জন্য চাপা দিয়ে পালিয়ে যান। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান সাজ্জাদুজ্জামান। আহত অবস্থায় চালক আলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
০২ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান হত্যার বিচার চায় পরিবার
বৃদ্ধা মা উম্মে কুলসুম ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রতি মাসে ছেলের পাঠানো টাকায় চলত চিকিৎসা। রোববার ছেলে সাজ্জাদুজ্জামানের মৃত্যুর খবরের পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন কুলসুম। তাকে দুনিয়াতে রেখে কেন ছেলেকে আল্লাহ নিয়ে গেল–তা বলে বিলাপ করছেন। সোমবার কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড় রক্ষায় অভিযানে গিয়ে খুন হওয়া বনবিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামানের বাবা মোহাম্মদ শাহজাহান। এ সময় তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান। গত শনিবার রাতে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় সাজ্জাদুজ্জামানকে (৩০) মাটিভর্তি ড্রাম্পার ট্রাক দিয়ে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বনবিটের দায়িত্বে ছিলেন। এদিকে এ ঘটনায় রোববার রাতে বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। এতে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর ছৈয়দ করিম নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর ইউনিয়নের ভিটিকান্দি এলাকার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে সাজ্জাদুজ্জামান ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগে যোগদান করেন। শাহজাহান বলেন, ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ শুক্রবার কথা হয়েছিল। ওর মায়ের চিকিৎসার কথা বলেছিলাম। বলেছিল কোনো চিন্তা যেন না করি। বেতন পাওয়ামাত্রই টাকা পাঠিয়ে দেবে। শনিবার আর কথা হলো না। সেদিন সেহেরির সময় ফোন এলো ঠিকই; সে ফোনে জানানো হলো সাজ্জাদুজ্জামান আর নেই। তাকে মাটিখেকোরা মেরে ফেলেছে।
০২ এপ্রিল, ২০২৪

পাহাড় কাটা বন্ধ করতে গিয়ে বন কর্মকর্তা খুন
কক্সবাজারে রাতের আঁধারে পাহাড়ের মাটি কেটে পাচারের খবরে অভিযানে যান উখিয়ায় বন বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান (৩০)। দুর্বৃত্তরা তার ওপর ডাম্প ট্রাক (মিনি ট্রাক) উঠিয়ে দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হত্যার পর গাড়িটি ঘুমধুম হয়ে বান্দরবান পালানোর সময় বিজিবি আটক করে। তবে ঘাতক চালক ও হেলপাররা পালিয়েছে। নিহত সাজ্জাদুজ্জামান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে। দুই বছর আগে বিয়ে করেন সাজ্জাদ। তার ৯ মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ঘাতক ডাম্পারটি বন বিভাগের তালিকাভুক্ত হরিণমারার পাহাড়খেকো ছৈয়দ করিমের। বাপ্পি নামে এক যুবক ওই ডাম্পার চালাচ্ছিল। বনরক্ষী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারের উখিয়ায় চলছে পাহাড়খেকোদের দাপট। তাদের থামাতে গিয়ে প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করলেও বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে। অনেক সময় মাটিদস্যুদের সঙ্গে বনকর্মীদের সংঘর্ষও হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় পাহাড় কাটার খবর শুনে এক সঙ্গীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে সেখানে ছুটে যান বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান। এ সময় মাটিবাহী একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) মোটরসাইকেল আরোহী সাজ্জাদকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। তার সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেলটির চালক মোহাম্মদ আলীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বনকর্মীরা জানান, ডাম্পারটি হরিণমারা এলাকার ছৈয়দ করিমের। বাপ্পি নামে এক যুবক ডাম্পারটি চালাচ্ছিল তখন। ইচ্ছাকৃতভাবে চালক ছৈয়দ করিম বিটকর্মীর মোটরসাইকেলে চাপা দেয়। কক্সবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা জানান, ঘটনার খবর পেয়েই উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল ও উখিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। নিহত সাজ্জাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসাইন বলেন, বন কর্মকর্তা হত্যার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বলেন, পাহাড়খেকোদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তথা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে। আমরা একজন দক্ষ বন কর্মকর্তাকে হারালাম।
০১ এপ্রিল, ২০২৪

বন কর্মকর্তা হত্যায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি নাগরিক সমাজের
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যায় জড়িতদের অতিসত্বর আইনের আওয়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজ। রোববার (৩১ মার্চ) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর পাঠায় নেতৃবৃন্দ। চিঠিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, প্রয়াত সাজাদুজ্জামান শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাভুক্ত রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বনের জমি রক্ষা করতে গিয়ে ভূমি দস্যুদের নির্মমতার শিকার হন। উখিয়া রেঞ্জের হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালু সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) সাজাদুজ্জামানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনায় আহত হন আরও এক বন কর্মকর্তা। এ ঘটনায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সাজাদুজ্জামানের অপহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এর আগে ২০২০ সালের ৭ আগস্ট মো. ইউসুফ উদ্দীন নামে মহেশখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা পাহাড় ও বনখেকোর হাতে অপহত্যার শিকার হয়েছিল। সে ঘটনারও সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়নি। পাহাড় ও বন খেকোদের দমন করতে না পারার ব্যর্থতা এসব অপরাধীকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। যারই ধারাবাহিকতায় মো. ইউসুফের পর সাজাদুজ্জামানকে আবারও অপহত্যার শিকার হতে হলো। নেতৃবৃন্দ নির্মম এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা প্রয়াত মো. ইউসুফ ও সাজাদুজ্জামানের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং আহত বন কর্মকর্তার চিকিৎসা দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে বনভূমি সুরক্ষায় ভূমিদস্যুদের বাড়তি ঝুঁকিতে থাকা কর্মীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানানোসহ দেশের বনভূমি রক্ষায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। চিঠিতে সই করেছেন- মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করি এর সমন্বয়কারী খুশী কবির, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞানবিভাগ ও ডিন, বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।
৩১ মার্চ, ২০২৪
X