চবিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হলো বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস
‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ডিজিটাল উদ্ভাবন অন্বেষণে মানুষ ও পৃথিবীর সমন্বয়’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বন্যপ্রাণী উৎসবের আয়োজন করা হয়। সোমবার (১১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী  প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও চিটাগাং ইউনিভার্সিটি বার্ড ক্লাবের (সিইউবিসি) যৌথ উদ্যোগে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এটি আয়োজন করা হয়।  এর আগে বেলা সাড়ে ১০টায় বৃক্ষরোপণ ও র‍্যালির মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়।  এতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে চবি শিক্ষার্থী (এস এম রিদোয়ান রহমান, রাতুল শারিয়ার প্রীতম ও ইসরাত জাহান), পাখিচেনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী এস এম রিদোয়ান রহমান ও চবির ইসরাত জাহান।  এ ছাড়া বন্যপ্রাণীবিষয়ক জিজ্ঞাসা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে জাবির সাঈদ ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ফরহাদ। বন্যপ্রাণীবিষয়ক প্রেজেন্টেশনে প্রথম স্থান অধিকার করে তাজনীন মেহজাবীন ও পাজল প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন সৈয়দা ইসরাত জাহান। অনুষ্ঠানে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৌহিদ হোসেন, ও বিশ্ব পরিব্রাজক অণু তারেক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সুপারনিউমেরারি অধ্যাপক, বন্যপ্রাণী গবেষণায় বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ড. এম ফরিদ আহসান।   উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, মানুষ ও পৃথিবীর প্রয়োজনে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম রক্ষা করা সম্ভব।
১১ মার্চ, ২০২৪

‘বাংলাদেশ থেকে ৩৩৪ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিপন্নের আশঙ্কা’
বাংলাদেশ থেকে ৩৩৪ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বিপন্নের আশঙ্কায় আছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।  বুধবার (৬ মার্চ) বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা জানান তিনি। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে প্রকৃতি থেকে ৩১টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আগামীতে আরও ৫৬টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। আমরা চাই না আমাদের দেশে আর কোনো প্রজাতি বিপন্ন হোক। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ২৫ শতাংশ বনায়ন থাকতে হয়, কিন্তু বাংলাদেশ এ দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তবে আমাদের যতটুকু বনায়ন আছে, তা রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে। এ সময় পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ জরিপ, বাঘের শিকার প্রাণীর বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তি ও স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের অপরাধ মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। উন্নত ট্র্যাকিং সিস্টেম, রিয়েল টাইম ডেটা অ্যানালিটিক্স, রেডিও কলারিং প্রভৃতির মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য রোধের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবান করার লক্ষ্যে বন অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত ব্যবহারের জন্য একটি বন্যপ্রাণী অপরাধ রিপোর্টিং টুল তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সারা দেশে বন্যপ্রাণী পাচার অপরাধ সংঘটনের চিত্র খুব সহজেই পাওয়া যাবে। আমাদের দেশের বন্যপ্রাণীগুলোকে রক্ষার জন্য অঙ্গীকার ও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।  এ অনুষ্ঠানে প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি  ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। আলোচনা করেন ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধান নির্বাহী, ওয়াইল্ডটিম এবং মুকিত মজুমদার বাবু চেয়ারম্যান প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।  
০৬ মার্চ, ২০২৪

বিপন্ন উপকূলের বন্যপ্রাণী / বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস আজ
আজ রোববার (৩ মার্চ) বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস, বিপন্ন উপকূলের বন্যপ্রাণী। একটা সময় অহরহ বন্য প্রাণীর দেখা মিললেও এখন আর বন্যপ্রাণীদের দেখা মেলেনা। এখন আর বসন্তে কোকিলের কুহূকণ্ঠের ধ্বনি শোনা যায়না। পঁচা আর মরা কোন প্রাণী খেতে শকুন কিংবা কাক আসেনা। এসব বন্যপ্রাণী এখন বিলুপ্তির পথে। খাদ্য আর বাসস্থানের সংকট প্রকট হওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠনের দায়িত্বশীলরা। তারা জানিয়েছেন নিষ্ঠুরভাবে বন উজাড়, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং পাখি শিকারিদের ফাঁদে উপকূল থেকে বন্যপ্রাণীদের আশংকাজনকভাবে বিলুপ্তি ঘটেছে। ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ৬৮ তম সাধারণ অধিবেশনে বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ৩ মার্চ ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালে প্রথম এ দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদগুলির প্রতি গণসচেতনা বৃদ্ধি করাই এ দিবসের মূল লক্ষ্য। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের গবেষণামতে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৩১টি। তবে এ সংস্থাটির দাবি বাংলাদেশে ১হাজার ৬০০ এর বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৯০টি একেবারে শেষ হওয়ার পথে। পরিবেশ ও প্রাণী নিয়ে কাজ করা সংবাদকর্মী মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, বন উজাড়ের পাশাপাশি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে বেশি বয়সের গাছ না থাকা এবং খাদ্য সংকটে অস্তিত্ব সংকটে এসব বন্যপ্রাণী। সচেতনতা বৃদ্ধি করে এসব প্রাণীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে সবাইকে। এ্যানিমেল লাভারস অব পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা শাখার সদস্য মিরাজ মিজু বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে বনাঞ্চলের ধ্বংস ও বন কর্মকর্তাদের উদাসিতায় বন উজাড় হওয়ায় অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর রেঞ্জের কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, উপকূল থেকে প্রতিবছরই কমছে বন্যপ্রাণী তবে আমরা সচেতন হলে কমে আসবে বিলুপ্তির পরিমাণ। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপকূলীয় বন বিভাগ) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আধুনিক নগরায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশংকাজনকভাবে বন্যপ্রাণীদের উপস্থিতি কমছে। আমরা বন উজাড় থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি সবসময়।
০৩ মার্চ, ২০২৪

বিপন্ন উপকূলের বন্যপ্রাণী
আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। জাতিসংঘভুক্ত দেশগুলো প্রতি বছর ৩ মার্চ এ দিবসটি পালন করে থাকে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে আশঙ্কাজনকভাবে কমছে বন্যপ্রাণী। বনভূমি উজাড় হওয়ার ফলে এসব প্রাণী লোকালয়ে প্রবেশ করায় পিটুনিতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এ ছাড়া নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় বিপন্ন হচ্ছে উপকূলের বন্যপ্রাণীও। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে এই দিনটিকে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালে প্রথম এ দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বের বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদকুলের প্রতি গণসচেতনতা বাড়ানো দিবসের মূল লক্ষ্য। একটা সময় অহরহ বন্যপ্রাণীর দেখা মিললেও এখন আর মেলে না। শোনা যায় না বসন্তে কোকিলের কুহু ধ্বনি। পচা আর মরা কোনো প্রাণী খেতে শকুন কিংবা কাক আসে না। এমনকি এসব বন্যপ্রাণী এখন বিলুপ্তির পথে। ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায় তিনশ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে আরও শখানেক। প্রকৃতির প্রতি মানুষের নৃশংসতা, পরিবেশদূষণ ও পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সময়ের সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা আরও জোরালো হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হতে পারে। ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশ (ডব্লিউটিবি) ও দ্য ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন) বাংলাদেশ শাখার এক জরিপে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে দেশের প্রায় দেড়শ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, মেরুদণ্ডী প্রাণীর ১৩টি, ৪৭ প্রজাতির দেশি পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর ও ৬৩ প্রজাতির সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণীর ১০টি মিলিয়ে প্রায় তিনশ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিপন্ন ৪৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। একইভাবে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে ১০৬ প্রজাতির নলবাহী উদ্ভিদ। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর ব্যাপক বিনাশ চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি বন্যপ্রাণী শিকার, বাসস্থান দখল করে হোটেল, মোটেল এবং রিসোর্ট নির্মাণ, খাদ্যাভাবসহ নানা কারণেই বন্যপ্রাণীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীরা বলছেন, খাদ্য আর বাসস্থানের সংকট প্রকট হওয়ায় বন্যপ্রাণীর এমন সংকট দেখা দিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন, নিষ্ঠুরভাবে বন উজাড়, নদীর নাব্য হ্রাস, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং পাখি শিকারিদের ফাঁদে উপকূল থেকে বন্যপ্রাণীর আশঙ্কাজনকভাবে বিলুপ্তি ঘটছে। পরিবেশ ও প্রাণী নিয়ে কাজ করা সংবাদকর্মী মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, বন উজাড়ের পাশাপাশি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে বেশি বয়সের গাছ না থাকা এবং খাদ্য সংকটের কারণে অস্তিত্ব সংকটে এসব বন্যপ্রাণী। সচেতনতা তৈরি করে এসব প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু সরকারিভাবেই নয়, স্থানীয় সচেতন মানুষকেও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। অ্যানিমেল লাভারস অব পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা শাখার সদস্য মিরাজ মিজু বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নানা স্থাপনা নির্মাণ, বন কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় বন উজাড় হওয়াও বন্যপ্রাণী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর রেঞ্জের কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, উপকূল থেকে প্রতি বছরই কমছে বন্যপ্রাণী। তবে আমরা সচেতন হলে বিলুপ্তর পরিমাণ কমে আসবে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপকূলীয় বন বিভাগ) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আধুনিক নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি কমছে, আমরা বন উজাড় থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি সব সময়।
০৩ মার্চ, ২০২৪

৬ জেলার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মাত্র একজন!
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, উদ্ধার ও উদ্ধার পরবর্তী সেবা কাজসহ সংশ্লিষ্ট বহুমাত্রিক কাজ করে থাকেন বন অধিদপ্তরে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হবিগঞ্জ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়। তবে হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়টিতে লোকবল সংকট প্রকট। মাত্র একজন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা দিয়ে চলছে হবিগঞ্জসহ বন কার্যালয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও পাঁচ জেলার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মযজ্ঞ। তবে দায়িত্বে বাইরে গিয়ে এই রেঞ্জ কর্মকর্তাকে সহায়তা করেন জেলা কার্যালয়ে থাকা একজন মালি ও একজন নৈশপ্রহরী।  লোকবল সংকটের কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করলেন ওই কার্যালয়ের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযানের সরকারি খরচ বা বাজেটও মিলছে না। তোফায়েল আহমেদ বলেন, হবিগঞ্জসহ আরো পাঁচ জেলার বন্যপ্রাণী উদ্ধার সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড করে থাকি। একজন মালি ও একজন নৈশপ্রহরী ছাড়া অফিসের আর কোনো স্টাফ নেই। যারা তাদের অফিসের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও আমাকে সহায়তা করেন। কিন্তু তিনজন দিয়েও এই বিশাল এলাকার দায়িত্ব সামলানো অসম্ভব।   কার্যালয়টির অফিসসূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলাসহ সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও নেত্রকোনা জেলার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারসহ যাবতীয় কাজ ওই বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হবিগঞ্জ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়  করে থাকে। এদের কার্য এলাকার মধ্যেই রয়েছে লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা, হাকালুকি হাওর, বাইক্কাবিলসহ অসংখ্য হাওর-বাওর ও অভয়ারণ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীদের বিচরণক্ষেত্র।  বন্যপ্রাণী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন পাখি প্রেমিক সোসাইটির যুগ্ম আহবায়ক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্যালয়ে তিনজন লোকবল দিয়ে ৬ জেলার বন্যপ্রাণী উদ্ধারে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে অত্র এলাকায় বন্যপ্রাণীর উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে।  বিশ্বজিৎ অভিযোগ করেন, তাছাড়া হবিগঞ্জ জেলার জাতীয় তথ্য বাতায়নেও বন অফিসের কোনো তথ্য নেই। ফলে হবিগঞ্জ অফিসের আওতাধীন কোনো জেলা থেকে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন না কোনো নাগরিক বা স্বেচ্ছাসেবী। এতেও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।  এ সময় অফিসটিতে দ্রুত লোকবল সংকট নিরসনের দাবি জানান তিনি।  এ বিষয়ে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সীমিত লোকবল দিয়েও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি বন্যপ্রাণীর সেবামান সুনিশ্চিত করতে। তবে হবিগঞ্জের ওই অফিসের লোকবল সংকট নিরসনে আমরা অধিদপ্তরের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করব।  
১৯ জানুয়ারি, ২০২৪

জনবল সংকটে হবিগঞ্জে বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযান ব্যাহত
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, উদ্ধার ও উদ্ধার পরবর্তী সেবাসহ এই সংশ্লিষ্ট বহুমাত্রিক কাজ করে থাকেন বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়। ওই কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজার জেলায় পর্যাপ্ত জনবল থাকলেও কিন্তু হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে লোকবল সংকটে রয়েছে। মাত্র একজন ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা, একজন বাগান মালি ও একজন নৈশপ্রহরী নিয়ে বেহালদশায় চলছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ। লোকবল সংকটের কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করলেন ওই কার্যালয়ের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযানের সরকারি খরচ এমনকি বাজেটও মিলছে না। তিনি বলেন, হবিগঞ্জসহ আরও ৫ জেলার বন্যপ্রাণী উদ্ধারসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড করে থাকি। একজন মালি ও একজন নৈশপ্রহরী ছাড়া অফিসে আর কোনো স্টাফ নেই। তারপরও জান প্রাণ দিয়ে বিশাল এলাকার অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলাসহ সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও নেত্রকোনা জেলার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারসহ যাবতীয় কাজ ওই বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হবিগঞ্জ বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় করে থাকে। এদের কার্য এলাকার মধ্যেই রয়েছে লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা, হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিলসহ অসংখ্য হাওর-বাঁওড় ও অভয়ারণ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণীদের বিচরণ ক্ষেত্র। অভিযোগ রয়েছে, হবিগঞ্জ জেলার জাতীয় তথ্য বাতায়নেও এই অফিসের কোনো নাম ও তথ্য অন্তর্ভুক্ত নেই। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা আইসিটি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন অফিস থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি কেউ। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সীমিত লোকবল দিয়েও আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি বন্যপ্রাণীর সেবা মান সুনিশ্চিত করতে। তবে হবিগঞ্জের ওই অফিসের লোকবল সংকট নিরসনে আমরা অধিদপ্তরের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ কররো ইনশাআল্লাহ। বন্যপ্রাণী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন পাখিপ্রেমিক সোসাইটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্যালয়ে তিনজন লোকবল দিয়ে ৬ জেলার বন্যপ্রাণী উদ্ধারে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে অত্র এলাকায় বন্যপ্রাণীর উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। আমরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেব। লোকবল সংকটের সমস্যা সমাধান না হলে সকলকে নিয়ে মানববন্ধনও করতেও রাজি আছি।
১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

তেঁতুলিয়ায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতামূলক সভা
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  রোববার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বন অধিদপ্তরের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আয়োজনে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় উপজেলার আজিজনগর এলাকায় এ সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।  এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের পাখি বিশেষজ্ঞ শিবলি সাদিক, চ্যানেল আইয়ের প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্স অফিসার হুমায়ুন করিব, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোখলেছুর রহমান, তেঁতুলিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের শরীরচর্চা শিক্ষক মোশাররফ হোসেন, পরিবেশকর্মী মাহমুদুল হাসান মামুন, প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী শিল্পী ফিরোজ আল সাবা প্রমুখ।  বক্তারা জানান, বাংলাদেশে যে হারে জনগণ বাড়ছে, সে হারে বনভূমি বাড়ছে না, বরং মানুষের প্রয়োজনে বন কেটে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও বিভিন্ন ভবন তৈরি করা হচ্ছে। ফলে বনজঙ্গলের পরিমাণ দিন দিন কমছে। বনজঙ্গল কমার সাথে সাথে কমছে সমাজের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় তথা অত্যাবশ্যকীয় বন্যপ্রাণী। তাই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার এখনই সময়। নতুবা এমন এক দিন আসবে যেদিন বন্যপ্রাণী বলতে কোনো প্রাণী থাকবে না। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হবে খাদ্যশৃঙ্খল বা খাদ্যজাল। যা মানুষসহ সমাজের জন্য খুবই ক্ষতির কারণ বলে অনেকে মনে করছেন।
১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী আমদানি-রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন ডেনজার স্পিশিচ অব ফায়োনা অ্যান্ড ফ্লোরা’ বা সাইটিস। গত বুধবার (২২ নভেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভা কনভেনশনের ৭৭তম সভায় সংস্থাটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সম্মতিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে সাইটিস নির্ধারিত আর কোনো পণ্য রপ্তানি করা যাবে না।  আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি সদস্য দেশগুলোকে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি অবগত করে সাইটিসের নিয়ম মানার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা বেশকিছু সুপারিশও করেছে।  বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণী পাচার, আমদানি, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন ডেনজার স্পিশিচ অব ফায়োনা অ্যান্ড ফ্লোরা’ বা সাইটিস। বাংলাদেশ ১৯৮১ সালে এই সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করে। এ জন্য তাদের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় বাংলাদেশকে। সাইটিসের শর্ত মেনে চলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সবসময় চেষ্টা করে। বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ মনে করে ‘সাইটিস চুক্তি’ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গত ১২ অক্টোবর রাজধানীতে একটি হোটেলে এক সেমিনারে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ। তবে হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এখন বাংলাদেশকে সংস্থাটির শর্ত পরিপালনে আরও যত্নবান হতে হবে। সংস্থাটির দেওয়া শর্ত ঠিকভাবে পালন করে আগামী ৭৮তম সভার ৯০ দিন আগে প্রতিবেদন আকারে জমা দিলে, এই নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।   সাইটিস নির্ধারিত পণ্যের মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী, উভচর প্রাণী, মাছ ও মেরুদণ্ডী প্রাণীসহ বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে। সাইটিস চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। ১২ অক্টোবর সেমিনারে বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘সাইটিসের বাস্তবায়ন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, জীবিকা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য উৎপাদনশীল বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য অপরিহার্য। দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য আমাদের অবশ্যই সাইটিসের চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।’  সেমিনারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. এস এম যোবায়দুল কবির বলেন, ‘দেশে টেকসই মৎস্য সম্পদ নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। মৎস্য বাণিজ্যে সাইটিস বাস্তবায়নে উন্নতি করার লক্ষ্যে অন্যান্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করতে আমরা আগ্রহী।’ ওই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউসিএস গ্লোবাল শার্ক অ্যান্ড রে কনজারভেশন প্রোগ্রামের পরিচালক লুক ওয়ারউইক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইন সংশোধনের মাধ্যমে হাঙ্গর ও শাপলাপাতা মাছের তালিকা হালনাগাদ করা, আন্তঃসংস্থা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং উন্নত জনসচেতনতার মাধ্যমে সাইটিস বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে।’  
২৯ নভেম্বর, ২০২৩

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ‘তীর’
কলেজ ক্যাম্পাসের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এক দিন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার এবং ক্যাম্পাসের গাছে গাছে আবাস গড়া পাখিদের নিরাপদ রাখতে একদল শিক্ষার্থী গড়ে তুলেছিলেন ‘তীর’ নামে পরিবেশবাদী এক সংগঠন। বগুড়ার কলেজ ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা সেই সংগঠনটির কাজ গত ১২ বছরে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের আটটি জেলায়। ধীরে ধীরে বন্যপ্রাণী রক্ষা, নদী ও জলাধার রক্ষাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষার আন্দোলনে রূপ নেওয়া ‘টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ (তীর)’ নামের সংগঠনটি এরই মধ্যে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন স্বর্ণপদক। গত বছরের ২১ মে ভোর সাড়ে ৫টায় বগুড়ার ওপর দিয়ে বয়ে যায় স্মরণকালের সর্বোচ্চ গতির ঝড়। ৮৮ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া মাত্র ৪ মিনিটের ঝড়ে ভেঙে পড়ে শত শত গাছপালা। লন্ডভন্ড হয়ে যায় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। মানুষের পাশাপাশি সেসময় চরম সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে পাখি ও বন্যপ্রাণী। এ খবর পেয়েই বেরিয়ে পড়েন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের একদল শিক্ষার্থী। তারা বগুড়া শহরের দুটি পৌর পার্কসহ কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বেশকিছু পাখি। সেসব পাখিকে চিকিৎসা দিয়ে পরে অবমুক্ত করা হয় মুক্ত আকাশে। এর আগে গত জানুয়ারি মাসে বগুড়া শহরের যেখানে-সেখানে কাক মরে পড়ে থাকতে দেখে শহরবাসী। বিষয়টি কলেজ শিক্ষার্থীদের নজরে এলে তারা সেই কাকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে জানা যায় যে, ডাস্টবিনের বিষাক্ত খাবার খেয়ে মরছে এসব কাক। পরে অনুসন্ধান করে তারা বের করে—শহরের অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্কের পাশের ডাস্টবিনে ফেলা হয়েছিল সেই বিষাক্ত খাবার। স্থানীয়দের মাঝে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান তারা। এতেই বন্ধ হয়ে যায় কাকের মৃত্যু। শুধু ঝড়ে পাখি উদ্ধার বা কাকের জীবন বাঁচানোই নয়, গত ১২ বছর ধরে কলেজের শিক্ষার্থীরা পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছেন। এজন্য তারা গড়ে তুলেছেন ‘তীর’ নামে সেই পরিবেশবাদী সংগঠনটি। এবারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি শিক্ষার্থীদের এই কাজের উদ্যমকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। গতবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তারা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সংগঠন হিসেবে পেয়েছে এই ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন-২০২১’ স্বর্ণপদক। ২০২২ সালের ৪ জুন প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে নিবেদিত সংগঠন পর্যায়ে তীরের সাবেক সভাপতি আরাফাত রহমানের হাতে এই পদক তুলে দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। পরিবেশ আর বন্যপ্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২০১১ সালে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে গড়ে উঠেছিল সংগঠনটি, সংক্ষেপে ক্যাম্পাসে যা পরিচিত ‘তীর’ নামে। ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হলেও এক সময় সংগঠনের কাজ আর ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সংগঠনের সদস্য শিক্ষার্থীরা আশপাশের আট জেলায় গিয়ে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন আঞ্চলিক কমিটি। পলিথিনমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আন্দোলন দিয়ে শুরু করে এখন তা বন্যপ্রাণী রক্ষা, নদী ও জলাধার রক্ষাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষার আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিগত ১২ বছর ধরে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংগঠনটি বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকাসহ গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওসহ পুরো উত্তরাঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনটি বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা, সেমিনার, বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, শিকারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি (জাল, ফাঁদ, ধনুক, গুলতি, বাটুল, এয়ারগান) উদ্ধারসহ নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তীর এ পর্যন্ত অন্তত ২০ প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী ও উভচর বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে। যার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার এবং ২০০টি বন্যপ্রাণীকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করে। তাদের উদ্ধারকৃত উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে অজগর সাপ, বালুবোরা সাপ, গন্ধগোকুল, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, সুন্ধিকাছিম, ভুবন চিল, কালিম পাখি, কুড়া ঈগল, নিম পেঁচা, পাতি সরালি পাখি, পাহাড়ি ময়না, শকুন, শামুকখোল পাখি প্রভৃতি। বগুড়া জেলার বিভিন্ন পাখি কলোনি ও জীব বৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকাতে—বিশেষ করে যমুনা নদী-সংলগ্ন সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চল, শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার পাখি কলোনি, শেরপুর উপজেলার রামনগর পাখি কলোনি, শাজাহানপুর পাখি কলোনি, কাহালু পাখি কলোনি, ধুনট উপজেলার বিলচাপড়ি পাখি কলোনিতে শিকার রোধে প্রচার-প্রচারণা, বিলবোর্ড স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যে ক্যাম্পাস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে শিক্ষার্থীরা, সেই সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসকে প্রশাসনের সহযোগিতায় তারা অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। তাদের এ ঘোষণার ফলে এখন দিনরাত কলেজ ক্যাম্পাস যেমন মুখর পাখির কলতানে, তেমনি সেখানে বিচরণ করে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। কলেজ চত্বরের শিক্ষার্থীরা জানান, তারা প্রতিনিয়ত সেখানে অন্তত ৭৫ প্রজাতির পাখির বিচরণ দেখেন। এর মধ্যে রয়েছে শামুকখোল, শঙ্খচিল, স্বর্গীয় দুধরাজ, বসন্তবৌরি, মৌটুসী, ভুবনচিল, ফিঙে, শালিক, বক, জলময়ূর, মুনিয়া, ঘুঘ ও কাঠঠোকরা। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীর মধ্যে কাঠবিড়ালী, বেজি, শেয়াল, গুইসাপ, ঢোড়া সাপের নিয়মিতই দেখা মেলে এ ক্যাম্পাসে। তারা যে শুধু বন্যপ্রাণীই দেখভাল করেন, তা নয়। প্রকৃতিকে বাঁচাতে তারা সবুজায়নের দিকেও দিয়েছেন নজর। এ পর্যন্ত ‘তীর’র সদস্যরা প্রায় ৫ হাজার গাছ লাগিয়েছেন ওই ক্যাম্পাসে, যার মধ্যে ২ হাজার গাছ টিকে আছে এখনো। ক্যাম্পাসে তাদের লাগানো গাছের মধ্যে টিকে আছে কাঁঠালচাঁপা, তাল, চাপালিশ, কৃষ্ণ ও রাধাচূড়া, জলপাই, আমলকী, পাকুড়, বট, জামরুল. পলাশ ও শিমুল। তীরের সভাপতি রাকিবুল হাসান জানান, ‘নিজেদের অর্থে ও উদ্যোগে তারা কাজ করছেন। এ পর্যন্ত বগুড়া ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আঞ্চলিক কমিটি গঠন করে সেসব এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজ চলছে।’ সাধারণ সম্পাদক রিফাত হাসান বলেন, ‘সংগঠনের ২১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ছাড়াও ১৫০ জন নিয়মিত সদস্য এবং তিন শতাধিক সহযোগী সদস্য আছেন। এর আগে কাজের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্বীকৃতি সনদও পেয়েছে তীর। আর এবারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বর্ণপদক জয়ে এ কাজে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা খুবই উচ্ছ্বসিত। এ স্বীকৃতি সব শিক্ষার্থীকে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উৎসাহ জোগাবে।’ সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাজাহান আলী জানান, শিক্ষার্থীদের প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত করতে ক্যাম্পাসভিত্তিক এ সংগঠনটি যথেষ্ট উদ্যোগী। এ কারণে তারা কলেজ ক্যাম্পাসকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করতে বললে সেই দাবির সঙ্গে কলেজ প্রশাসন একাত্ম হয়ে সেটি করেছে। তারা কলেজ ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে বাইরের জেলাতেও একই আদলে সংগঠন গড়ে তুলে প্রকৃতি, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছে। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে এমন একটি সংগঠন গড়ে উঠে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদক পাওয়া গর্বের বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
২৩ অক্টোবর, ২০২৩
X