সংশোধিত ব্যয় বাড়ল আরও ৩,৪২৪ কোটি / বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে চাপে পড়ছে বাজেট
দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে সাড়ে ১১ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের চাপ রয়েছে। এই ঋণ দেশি বা বিদেশি হোক, তা নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদসহ পরিশোধের বিধান রয়েছে। এই পুঞ্জীভূত ঋণের একটা অংশ প্রতি মাসে সরকার এখন সুদ-আসলে পরিশোধও করছে। তবে দেশি ঋণ যখন খুশি সরকার শোধ দিতে পারে; কিন্তু বিদেশি ঋণে নির্দিষ্ট সময়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে দিন যত পার হচ্ছে, এ ঋণ পরিশোধে সরকারের চাপও তত বাড়ছে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) গত ৯ মাসেই বিদেশি ঋণের সুদ-আসল মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার ২৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে আসল ১৬ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বাকি ১১ হাজার ৬০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা সুদ বাবদ দিতে হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের আসল ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং সুদ পরিশোধ বাবদ ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ৩৭ হাজার ৭৬ কোটি টাকা পরিশোধের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। এর অর্থ হচ্ছে, বাজেটে বৈদেশিক ঋণের দায় খাতে রাখা বরাদ্দের অর্থ দিয়ে চলতি অর্থবছরের বাকি ব্যয় সংকুলান হচ্ছে না। দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ কারণে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সরকার ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক বাজেটে বিদেশি ঋণের জন্য ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেটে সেটি ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণত বাংলাদেশের মতো কল্যাণমূলক উন্নয়নশীল দেশে সব সরকারেরই জনপ্রতিশ্রুতি থাকে। এ কারণে উন্নয়নের চাহিদাও বেশি হয়। বিশেষ করে এই বাস্তবতায় এ ধরনের দেশগুলোয় রাজনৈতিক সরকারের বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কম আয়ে বেশি উন্নয়নের চেষ্টা। ফলে সরকার বিভিন্ন সময় উন্নয়ন চাহিদা পূরণে বাড়তি ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের তাল মেলাতে প্রতি বছর যে বাজেট তৈরি করছে, তার ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাতের বাইরে বৈদেশিক বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ করে থাকে। দেশে সরকারের কাঁধে এখন যে ঋণের বোঝা, এটি তারই পুঞ্জীভূত আকার। যার ঋণ এখন প্রতি মাসেই সুদ-আসলে শোধ দিতে হচ্ছে। তবে বিদেশি ঋণে সুদ তুলনামূলক কম, পরিশোধের গ্রেস পিরিয়ডও বেশি। এ কারণে সরকার বিদেশি ঋণেই ঝুঁকছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছিল ১৬ হাজার ৯৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে আসল ছিল ১২ হাজার ২০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের যেখানে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে তার প্রায় আড়াই গুণ। সংশোধিত বাজেটে বিদেশি ঋণের দায় খাতে এই অতিরিক্ত বরাদ্দের কারণ জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি ঋণের প্রায় ৪৫ শতাংশই নেওয়া এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) মুদ্রায়, যা পরিশোধ করতে হয় সাধারণত মার্কিন ডলার কিংবা যুক্তরাজ্যের পাউন্ড স্টার্লিংয়ে; কিন্তু সম্প্রতি বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে এখন এই এসডিআর মুদ্রার সঙ্গে ডলার ও পাউন্ডের বিনিময় হার, ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য এবং ইউরোবর ও সোফর হার অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের ওপর সুদ পরিশোধের পরিমাণও আগের তুলনায় বেড়েছে। অর্থাৎ ডলার ও পাউন্ডের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে একই পরিমাণ বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয়ই এখন বাজেট ব্যবস্থাপনায় সরকারের বড় চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে, কিছু বাস্তবায়নাধীনও রয়েছে। যেগুলোর গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় এখন তার অর্থায়নকৃত ঋণের কিস্তি পরিশোধ এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এতে করেও নতুন-পুরোনো মিলে সরকারের কাঁধে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপও আগের তুলনায় বেড়েছে। এই বাস্তবতায়ও বাজেট সংশোধনীতে এ খাতের সুদ পরিশোধের অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এদিকে এই বৈদেশিক উৎসের ঋণ সরকারের নিজস্ব আয় থেকে পরিশোধ করার কথা; কিন্তু দেশীয় বাস্তবতায় সরকারের আয় কম। আবার আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রও কম। একমাত্র ভরসা হলো রাজস্ব খাত। সেখান থেকেও নানা কারণে কাঙ্ক্ষিত আয় আসছে না। যে কারণে সরকার নিজের আয় থেকে আংশিক পরিশোধ করে বাকিটা ঋণ নিয়েই ঋণের দায় শোধের চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সমস্যা হচ্ছে, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎসের আয় বাড়াতে পারছে না। আবার যে আয় করছে, তার বড় একটা অংশ ভর্তুকিতেই খরচ করে ফেলছে। আবার রাজস্ব আয় বাড়ানোর যে সংস্কার কাজ তারও গতি বাড়াতে পারছে না। এ বাস্তবতায় যে বিদেশি ঋণ আসছে, তা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে কিছুটা ধীরগতির কারণে হয়তো সেটি বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধ করে থাকতে পারে। তবে এতে করে বিদেশি ঋণের আকার যেমন বাড়বে, তেমনি সুদ পরিশোধ খাতেও বড় আকারের ব্যয় করতে হবে। এর থেকে বেরিয়ে সরকারের উচিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে যে রাজস্ব ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে, তা উঠিয়ে সরকারের রাজকোষ সমৃদ্ধ করা। এতে অন্তত প্রতি বছর যে মোটা অঙ্কের সুদ ডলারে পরিশোধ হচ্ছে, সেটি সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
২৮ এপ্রিল, ২০২৪

ক্ষমতার জন্য বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে বিএনপি : ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতা পাওয়ার জন্য বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।  ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতা পাওয়ার জন্য দাসত্ব করে, কিন্তু বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করলে কি ক্ষমতায় যাওয়া যায়? এখনো তাদের দুরভিসন্ধি হচ্ছে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যায়?  কাদের বলেন, বিএনপির ইতিহাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো নজির নেই। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, প্রহসনে পরিণত করেছে। গণতান্ত্রিক বিধিবিধান তারা দলের মধ্যেও কোনো দিন মানেনি। তারা বড় বড় কথা বলে, তারা কবে দলীয় কাউন্সিল করেছে? তারা কোথায় দলীয় কাউন্সিল করেছে? এর আগে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে তারা এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজীসহ অনেকে। 
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

ড. এ বি এম রেজাউল করিম ফকিরের নিবন্ধ / বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠাকরণে বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। কিন্তু কারও কারও কাছে এটি একটি বিদেশি ভাষা। বাংলা যখন বিদেশি ভাষা, তখন এর নাম হয় বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা (Bangla as Foreign Language)। বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা সম্পর্কে এ দেশে কোনো ধারণাগত কাঠামো গড়ে উঠেনি। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে নিজস্ব ধারায় বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার ব্যবহার চলছে এবং বিদেশি জ্ঞানরাজ্যের (academia) একটি ধারণাগত কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ভাষানীতি না থাকায় দেশাভ্যন্তরে এর কোনো ধারণাগত কাঠামো তৈরি হয়নি। বাংলাদেশে বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার পঠন-পাঠন ও চর্চা চলছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্য অন্যতম হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশস্থ বাংলা ভাষা ইনস্টিটিউট, ব্র্যাক ভাষা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানেও বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা ও প্রায়োগিকতা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই।  প্রসঙ্গত, বিষয়টি আরেকটু সবিস্তারে আলোচনা করা যাক। কোনো ভাষা স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে ধ্রুপদী ভাষা, জাতীয় ভাষা, রাষ্ট্র ভাষা, দাপ্তরিক ভাষা, দ্বিতীয় ভাষা, তৃতীয় ভাষা, ঐতিহ্য ভাষা, বিদেশি ভাষা ও আন্তর্জাতিক ভাষা ইত্যাদি নানা বিশেষণে বিশেষায়িত হতে পারে। পৃথিবীর লাখ লাখ বুলির মধ্যে কিছুসংখ্যক বুলিই এই সবগুলো বিশেষণ লাভ করেছে। বাংলা ভাষা তার মধ্যে অন্যতম। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের ভাষা-পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক ভাষা-পরিস্থিতিতে উপরোক্ত সবগুলো অভিধা লাভ করেছে। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা, রাষ্ট্রভাষা ও দাপ্তরিক ভাষা।  আবার এ ভাষা বম, চাক, চাকমা, কোচ, গারো, হাজং, খাসিয়া, খিয়াং, খুমি, লুসাই, মাহাতো, মারমা, মণিপুরী, মুন্ডা, মুরুং, ম্রো, পাহাড়ি, পাংখো, রাজবংশী, রাখাইন, সাঁওতাল, তঞ্চঙ্গ্যা, টিপরা ও ওঁরাও ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর কাছে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা।  অন্যদিকে বিদেশে অভিবাসিত বাংলা ভাষাভাষীদের নতুন প্রজন্মের কাছে এটি একটি ঐতিহ্য ভাষা।  উল্লেখযোগ্য যে, বিপুলসংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসনের মাধ্যমে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে। সেখানে তারা সমাজবদ্ধ বা বিচ্ছিন্নভাবে বাস করছে। বিদেশে অভিবাসিত বাংলা ভাষাভাষী সমাজের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের যুব জনগোষ্ঠীর কাছে এটি হলো ঐতিহ্য ভাষা।  অন্যদিকে বাংলা ভাষা বাংলাদেশে জাতীয় ভাষা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামে ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাজ্য ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বিধায় এটি আন্তর্জাতিক ভাষার অভিধা লাভ করেছে। সম্প্রতি ভারতের বিদ্যোৎসাহী শ্রেণি বাংলা ভাষার সাহিত্য সম্ভার, ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দানের জন্য দাবি তুলছে। বাংলাদেশ ও ভারতে বাংলা ভাষার মর্যাদা ভিন্ন হলেও, বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্য বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর রয়েছে।  উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ভাষা শহীদ দিবসের দিন ২১ ফেব্রুয়ারিকে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। পরবর্তীতে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৪তম অধিবেশনে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।  এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ও ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১১ই জুন যথাক্রমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য বাংলাদেশের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং প্রস্তাবটি জাতিসংঘে উপস্থাপনের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করে। বাংলাদেশ ও ভারতের দুটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা কর্তৃক একযোগে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে চালু করার দাবির বিষয়টি ইঙ্গিত করে যে-বাংলা ভাষা একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে গড়ে ওঠার মতো একটি প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা রয়েছে।  এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলা ভাষা মর্যাদা ও প্রায়োগিকতার মানদণ্ডে যুগপৎভাবে ধ্রুপদী ভাষা, জাতীয় ভাষা, রাষ্ট্র ভাষা, দাপ্তরিক ভাষা, দ্বিতীয় ভাষা, তৃতীয় ভাষা, ঐতিহ্য ভাষা, বিদেশি ভাষা ও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষারই একইসঙ্গে এতোগুলো অভিধা জোটেনি। আমাদের আশপাশের দেশের ভাষাগুলো সম্পর্কে এমন উদাহরণ সত্য।  হিন্দি ভাষা ভারতের দাপ্তরিক ভাষা। কিন্তু এটি ভারতের জাতীয় বা রাষ্ট্র ভাষা নয়। আবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের জনগণ হিন্দিকে দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিক পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা ও রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হলেও, এটি পাকিস্তানের ভাষা নয়। এটি মূলত ভারতের মুসলমানদের লিঙ্গুয়া-ফ্রাঙ্কা। ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা। ইন্দোনেশিয়ার কোনো জাতীয় ও রাষ্ট্রভাষা নেই। এর দাপ্তরিক ভাষা হলো ইন্দনেশীয় ভাষা। ইন্দোনেশীয় ভাষা মূলত: মালয় ভাষারই একটি ভিন্নরূপ। সে হিসাবে এটি ইন্দোনেশিয়ার নানান ভাষাভাষী জনগণের জন্য একটি বহিরাগত ভাষা।  বাংলা ভাষার এতোগুলো অভিধা জুটলেও, খোদ বাংলাদেশেই বাংলা ভাষা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে উঠেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় ও দাপ্তরিক কার্যক্রমে বাংলা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ চলছে। কিন্তু বাংলা ভাষার যে প্রচ্ছন্ন শক্তি রয়েছে, সে শক্তিই যেন এই ভাষাকে বিদেশি ভাষার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। ভাষা বিজ্ঞানী কাই চান (২০১৬) তার এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, কোনো ভাষার বিদেশি ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে কয়েকটি সূচকের ওপর। সে সূচকগুল হলো কোনো নির্দিষ্ট ভাষার আঞ্চলিক বিস্তৃতি, অর্থনীতি, সংজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসাবে কার্যকারিতা, জ্ঞান ও গণমাধ্যমে ভাষা হিসাবে ব্যবহারের বিস্তৃতি ও সেই ভাষা সংশ্লিষ্ট দেশের কূটনৈতিক সক্ষমতা ইত্যাদি। তার প্রস্তাবিত এই সূচকগুলো বিবেচনায় নিলে বাংলা ভাষার যৎসামান্য হলেও ভাষিক সক্ষমতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। সে জন্য বিশ্বের নানাদেশে বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার পঠন-পাঠন ও গবেষণা চলছে। তারমধ্যে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম হলো চীনস্থ গুয়াংঝু বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানস্থ টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশের বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার পঠনপাঠন চলছে।   যে কোনো দেশই তার জাতীয় ভাষাকে ঐতিহ্য ও ঐশ্বর্যের প্রতিরূপস্বরূপ বিদেশি ভাষা হিসেবে প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। সেই উদ্যোগকে বাস্তবায়নের জন্য একটি ভাষানীতি প্রণয়ন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো ভাষানীতি নেই। এমনকি জাতীয় এই ভাষাকে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠারও উদ্যোগ নেই। আবার ভারতের পক্ষে এই ভাষাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করা বাস্তব কারণেই সম্ভব নয়। কারণ, ভারতে বাংলাদেশের মতো বাংলা ভাষার মর্যাদা সমান নয়। কারণ ভারত প্রজাতন্ত্র যুক্তরাজ্যীয় ব্যবস্থায় পরিচালিত একটি রাষ্ট্র, যার দাপ্তরিক ভাষা হলো ইংরেজি ও হিন্দি। কাজেই লক্ষণীয় যে, ভারতের ভাষা-পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষার মর্যাদা ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার চেয়ে নিম্নে।  সুতরাং বাংলা ভাষাকে বিদেশি ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দায়িত্ব বর্তায় বাংলাদেশ সরকারের ওপর। এই দায়িত্বকে অবহেলা করা মানে বাংলা ভাষাকেই অবহেলা করা। কাজেই বাংলাদেশ সরকারের দায় ও দায়িত্ব হবে, বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষানীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাজেট প্রণয়ন করা। উদ্দিষ্ট এই ভাষানীতি বাস্তবায়নে যেসব ভাষা-পরিকল্পনা হাতে নেয়া প্রয়োজন তা হলো:  ১)বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার শিক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ নামক একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা। ২)বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে (উদাহরণস্বরূপ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট) বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের সুবিধার্থে গবেষক (research fellow) ও অভ্যাগত অধ্যাপক (visiting professor) পদ সৃষ্টি করে তাদের বৃত্তিসহ আমন্ত্রণ জানানো।  ৩)বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে বাংলা ভাষা শিক্ষা সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৪) বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শীত ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির সাথে মিল রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষা ভাষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য তিন সপ্তাহব্যাপী শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন আবাসিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা।  ৫) বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার পক্ষে একটি ভাষানীতি প্রণয়ন করা হলে, তা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে তার যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। কাজেই বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার পক্ষে একটি ভাষানীতি প্রণয়ন করা ও তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা।  লেখক: অধ্যাপক ডক্টর এ বি এম রেজাউল করিম ফকির, পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;  ভূতপূর্ব অতিথি শিক্ষক, টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়  ভূতপূর্ব গবেষণা ফেলো, জাপান রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউট
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সরকার হটানোর চক্রান্তে দেশি বিদেশি চক্র
দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক থাকার পরও তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি অপপ্রচার-মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে হটানোর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে আমরা লক্ষ করছি। তিনি বলেন, চিহ্নিত অপশক্তি দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার নস্যাৎ করতে নির্বাচনবিরোধী অপতৎরতায় লিপ্ত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির উদ্যোগে প্রচারপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রচারপত্র বিতরণ শেষে ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ সভায় যোগ দেন। গণতন্ত্র, শান্তি, উন্নয়ন নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী অপশক্তি আমাদের ভিত্তিমূলে আঘাত করতে যাচ্ছে। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান— মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও প্রগতিশীল শক্তির ঐক্য দিয়ে আমাদের তা প্রতিহত করতে হবে। উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের মাধ্যমে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ভোট দিয়ে আপনার নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, জনগণ সব শক্তির উৎস। সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশবিরোধী অপশক্তি বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যা করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং সেটাই আমাদের গণতন্ত্রের ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত। তিনি বলেন, বিএনপির নেতারা কেউ বলতে পারবে না, আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করেছে। হত্যা রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না। সেটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বারবার প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগ কাউকে হত্যা করে এখানে ক্ষমতার রাজনীতিকে চিরস্থায়ী করতে কখনো চেষ্টা করেনি।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সাগরে বিদেশি জাহাজ ঘিরে হঠাৎ বাড়ল ডাকাতের হানা!
গেল কয়েক বছর শান্ত থাকার পর ফের নতুন করে শুরু হয়েছে বঙ্গোপসাগরে বিদেশি জাহাজে ডাকাতদের হামলার ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছয়টি জাহাজে এই হানার ঘটনা ঘটেছে। তবে পাহারাদারদের গাফিলতির কারণে এমন কোনো ঘটনা ঘটছে কি না, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক। অন্যদিকে বন্দর চাইলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা।   গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এশিয়ায় জাহাজে চুরি-ডাকাতি ও দস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা রিক্যাপ (দ্য রিজিওনাল কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট অন কমব্যাটিং পাইরেসি অ্যান্ড আর্মড রবারি এগেইনেস্ট শিপস ইন এশিয়া)। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছয়টি জাহাজে হানা দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। এর মধ্যে চারটি ঘটনায় দুষ্কৃতকারীরা জাহাজে উঠে মালামাল লুট করেছে। আরও দুটি জাহাজে চুরি-ডাকাতির চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। একটি ছাড়া সবকটি ঘটনা ঘটেছে বঙ্গোপসাগরের চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায়।   জানা যায়, এ বছর ছয়টি ঘটনায় চারটিতে দুষ্কৃতকারীরা জাহাজে ওঠে মূল্যবান পণ্য চুরি-ডাকাতি করে। আর দুটিতে হানা দিলেও সফল হয়নি। ছয়টি ঘটনার মধ্যে পাঁচটি বিদেশি জাহাজে ও একটি দেশি জাহাজে হয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি কুতুবদিয়া এলাকায় ঘটে প্রথম ঘটনাটি। বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমটি ওমেরা লিগ্যাসি নামের একটি ট্যাংকারে হামলা চালায় ডাকাতরা। মালামাল চুরি করতে ট্যাংকারটি টার্গেট করেছিল দুষ্কৃতকারীরা। জাহাজের মাস্টার দ্রুতই বন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ ও কোস্টগার্ডকে অবহিত করেন। দুষ্কৃতকারীরা ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া নোঙর এলাকায়। এদিন লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এমভি মায়ের্সক হাই পং নামের একটি কনটেইনার জাহাজে চারজন দুষ্কৃতকারী ওঠে। তারা রশি চুরি করে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনার তিন দিনের মাথায় কুতুবদিয়া এলাকায় এমটি গ্যাস কারেজ নামের পানামার পতাকাবাহী আরেকটি জাহাজ নিশানা করে দুষ্কৃতকারীরা। এদিন নৌযানে করে এসে নয়জন  দুষ্কৃতকারী জাহাজে উঠে ওয়াচম্যানকে (পাহারাদার) বেঁধে ফেলে। তারা জাহাজের স্টোর থেকে মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। চতুর্থ ঘটনা ঘটে ৩ মার্চ মোংলা বন্দরের হিরণ পাইলট স্টেশন এলাকায়। লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এরা স্টার ট্যাংকারে হানা দেয় ৮-১০ দুষ্কৃতকারী। তাদের হাতে ছিল লম্বা ছুরি। পরে তারা পালিয়ে যায়। পঞ্চম ঘটনা ঘটে ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে। এদিন মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী এএসএল লেবান জাহাজে হানা দেয় তিন দুষ্কৃতকারী। তাদের দেখে জাহাজে সতর্কসংকেত বাজানো হয়। এ সময় নাবিকেরা একত্র হলে দুষ্কৃতকারীরা নৌযানে করে পালিয়ে যায়। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমভি মায়ের্সক চট্টগ্রাম নামের জাহাজে চুরির ঘটনা ঘটেছে। দুজন দুষ্কৃতকারী জাহাজের রং, সেফটি চেইন, ব্রাশফায়ার ও ফায়ার হোস চুরি করে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) মোস্তফা আরিফুর রহমান খান বলেন, বন্দরে জাহাজের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া দরকার। এ জন্যই শিপিং এজেন্টদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে শিপিং এজেন্টের নেতারা বলছেন, বন্দরের বেতার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা ভিটিএমআইএসের মাধ্যমে সচিত্র তদারক করা হয়। আবার জেটিতে রয়েছে নানা স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ রকম কড়া নজরদারির মধ্যেও জাহাজে চুরি-ডাকাতির ঘটনা কারা ঘটায় তা খতিয়ে দেখা দরকার।  চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দর জলসীমায় যেগুলো ঘটছে, তা ছিঁচকে চুরির মতো ঘটনা। ২৪ ঘণ্টা তদারকি করা হয় বন্দর জলসীমা। জাহাজে পাহারাদারও নিয়োগ দিচ্ছে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। পাহারাদারদের গাফিলতির কারণে এমন কোনো ঘটনা ঘটছে কি না, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।   বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খাইরুল আলম সুজন বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটছে কি না জানা নেই। তবে প্রত্যেকটি জাহাজের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাই নেওয়া হয়। আশা করি, আরও বাড়তি নাজরদারি নেওয়া হবে।   শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, প্রতিটি জাহাজে পাহারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বন্দর জলসীমা খুব কড়া নজরদারির মাধ্যমে তদারকি করা হচ্ছে। তারপরও ছিঁচকে চুরির মতো ঘটনা ঘটার কথা নয়। যেহেতু এ ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে তাই বন্দর চাইলে আমরা আরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করব।  কোস্ট গার্ড পূর্বাঞ্চলের জোনাল কমান্ডার মো. জহিরুল হক বলেন, সাগরে দস্যুতার অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে। কোস্টগার্ডের সদস্যরা সাগরে জেলেসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। আশা করি, স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমরা লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব। জানা যায়, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতেও চিহ্নিত কয়েকজন জলদস্যু সরদার কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। এ সময় বাঁশখালী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তৎপর পাঁচ শতাধিক জলদস্যু ৪৭০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ২২ হাজার গুলিসহ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপর থেকে সাগর-সুন্দরবন উপক‚ লজুড়ে জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু বর্তমানে দু-একটি ছোট দস্যুবাহিনী নতুন করে অপতৎপরতার চেষ্টা করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তারা ধরাও পড়ছে। চট্টগ্রাম নৌপুলিশ সুপার আফম নিজাম উদ্দিন বলেন, সাগরে কে জেলে, কে দস্যু চেনা মুশকিল! মাছ ধরতে গিয়ে গুম, খুন, লুট ও অপহরণসহ দস্যুদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন জেলেরা। তাদের কবল থেকে বাদ যাচ্ছে না দেশি-বিদেশি পণ্যবাহী জাহাজও। এক কথায় বলা যায়, অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলসীমা।
২১ এপ্রিল, ২০২৪

বিদেশি শ্রমিকদের সুখবর দিল কুয়েত
বিদেশি শ্রমিকদের জন্য সুখবর দিল কুয়েত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে বিদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক সংকট দূরীকরণ এবং শ্রমিক নিয়োগের খরচ কমাতে বিধিনিষেধ তুলে দিয়েছে দেশটি। এতে সব ধরনের বাধা কাটল। এমন খবরে আনন্দে ভাসছেন বিদেশি শ্রমিকরা। কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, কুয়েতের শ্রম বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে আগের পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন নিয়ম কার্যকর হবে আগামী ১ জুন থেকে। আগের নিয়ম অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিক নিয়োগ দিত, বিদেশ থেকে তারা যদি কোনো শ্রমিক আনতে চাইত তাহলে কুয়েতে থাকা শ্রমিকদের মধ্য থেকেই শ্রমিক নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। এছাড়া চাহিদার একটি নির্দিষ্ট অংশে শুধু নতুন বিদেশি শ্রমিক নিতে পারত। এতে শ্রম ব্যয় অনেক বেড়ে যায় দেশটিতে। যার প্রভাব পড়ে ভোক্তা পর্যায়েও। এমন পরিস্থিতিতে শ্রম ব্যয় এবং শ্রমিক সংকট কমাতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় বিদেশি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
চট্টগ্রাম নগরে পতেঙ্গা আউটার রিং রোড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের এক বিদেশি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন। সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীকে বহন করা পাজেরো গাড়িটি চরপাড়া এলাকায় পৌঁছালে চাকা ফেটে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে তা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম ফুতফাফোনে জায়ডালা (২৩) । তিনি লাওসের নাগরিক। পতেঙ্গা থানা পুলিশ সূত্র জানায়, দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চালানোর ফলে গাড়িটি রোড ডিভাইডারের সঙ্গে দ্রুতগতিতে ধাক্কা লেগে কয়েকটা পল্টি খেলে গাড়িতে থাকা তিনজন আরোহীর একজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহতদের চিকিৎসার জন্য নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। খবর পেয়ে পতেঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারে মৃত একজন বিদেশি নাগরিক। পতেঙ্গা থানার ওসি কবিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, গাড়িতে থাকা ওই শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বিদেশি ছাত্রী এবং তিনি লাওসের অধিবাসী। একইসঙ্গে আইনগত বিষয় প্রক্রিয়াধীন।
১৬ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৪৮০ কার্টন বিদেশি সিগারেটসহ আটক ২
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪৮০ কার্টন বিদেশি সিগারেট, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোনসহ ২ যাত্রীকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও শুল্ক কর্মকর্তারা। আটক দুই যাত্রী হলেন রাউজানের শহিদুল আলম ও আরমান হোসেন। বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গত সোমবার রাতে এয়ার অ্যারাবিয়ার দুটি আলাদা ফ্লাইটে চট্টগ্রাম আসেন তারা। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করা হয়। এরপর তল্লাশি করে দুজনের কাছ থেকে ৪৮০ কার্টন বিদেশি সিগারেট, প্রায় ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যাগেজ সুবিধা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা।
০৩ এপ্রিল, ২০২৪

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৪৮০ কার্টন বিদেশি সিগারেট জব্দ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪৮০ কার্টন বিদেশি সিগারেট, স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল ফোন জব্দ করেছে  শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ (সিআইআইডি) এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও শুল্ক কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় দুই যাত্রীকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন রাউজানের শহিদুল আলম ও আরমান হোসেন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোমবার রাতে এয়ার এরাবিয়ার দুটি আলাদা ফ্লাইটে তারা দুজন আলাদাভাবে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় তাদের চ্যালেঞ্জ করা হয়। পরে তল্লাশি করে তাদের কাছ থেকে ৪৮০ কার্টন বিদেশি সিগারেট, প্রায় ১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যাগেজ সুবিধা ব্যবহার করে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারা।
০২ এপ্রিল, ২০২৪
X