শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
অনিয়ম, দুর্নীতি আর ঋণ জালিয়াতির কারণে গত দুই বছর থেকে আলোচনায় দেশের ব্যাংক খাত। এ সমস্যা সমাধানে ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আপাতত পদ্মা, বিডিবিএল, ন্যাশনাল, বেসিক ও রাকাবের বাইরে অন্যকোনো ব্যাংক একীভূত হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করবে না এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সোমবার (১৫ এপ্রিল) সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ব্যাংক সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গত মাসে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডুবতে থাকা আরেক বেসরকারি ব্যাংক পদ্মা।  এরপর একে একে কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে ডুবতে থাকা সরকারি বেসিক ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার খবর বেরিয়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বেচ্ছায় একীভূত হতে চাওয়া ১০ ব্যাংকের বাইরে নতুন করে আর কোনো ব্যাংক একীভূত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই দশ ব্যাংক একীভূত করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে একীভূত করার প্রয়োজন দেখা দিলে তখন ভাবা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, ব্যাংক মার্জারের আমরা সরকারি-বেসরকারি ৫টি প্রপোজাল পেয়েছি। আপাতত এই প্রস্তাবগুলোর বাইরে আর নতুন কোনো প্রস্তাব আমরা নেব না। এই ৫টি প্রস্তাবের ব্যাংকগুলো একীভূত করার পরে প্রয়োজন হলে নতুন মার্জারে যাওয়া হবে। এগুলোর প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো ব্যাংক মার্জার করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংক একীভূত করতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অডিটর নিয়োগ, সম্পদ ও দায় ঠিক করা, শেয়ার দর ঠিক করা, শেয়ার অংশ র্নিধারণ ও আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই পাঁচ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) অভিজ্ঞতা নেবে, অভিজ্ঞাতারও প্রয়োজন আছে। তারপর দেখা যাবে। সাধারণত, দুটি ব্যাংক একীভূত করার সব ধরনের প্রস্তুতি ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে তিন-থেকে চার বছর লেগে যেতে পারে। ৫টি প্রস্তাবের মধ্যে কোন কোন ব্যাংক রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকগুলোর মধ্যে পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংক রয়েছে। বাকি নামগুলো তো গণমাধ্যমে চলে এসেছে।
১৫ এপ্রিল, ২০২৪

দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে জনগণের ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে দোষীদের রেহাই দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জনগণের ঘাড়ে সব দায় চাপানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অক্ষমতা। গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে; বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু করতে পারেনি। উপরন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন হঠাৎ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত হওয়ার জন্য কেন চাপ দিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। গতকাল শনিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাতে ব্যাংক একীভূতকরণের প্রভাব শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন ও অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক এবং জার্মান ফেডারেল শিক্ষা ও গবেষণা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প গবেষক জিয়া হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মনির হায়দার। মূল প্রবন্ধে জিয়া হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এক সময় খেলাপি ঋণ কম করে দেখাতে নিয়ম পরিবর্তন করেছিল। কিন্তু এখন তারা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থানকে তিনি লাঠি ও মুলা ঝোলানোর নীতি হিসেবে আখ্যা দেন। তার ভাষ্য, এই মুলাটা জুটতে পারে দুর্নীতিবাজ ও ঋণখেলাপিদের। লাঠিটা সম্ভবত পড়বে সাধারণ করদাতাদের পিঠে। অর্থাৎ দরিদ্র জনগণ বা সাধারণ করদাতাদের ওপর এর দায় বর্তাবে। তিনি আশঙ্কা করছেন, এর মধ্য দিয়ে ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি দেওয়া হতে পারে। পদ্মা ব্যাংকের মন্দ ঋণের দায় কে নেবে, সেটা বড় প্রশ্ন। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এই ঋণের দায় নেবে বলে সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির আইনি কাঠামো তৈরি করেনি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে তিনি বলেন, এই সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি সরকারি হবে। কিন্তু সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকে এক লাখ কোটি মন্দ ঋণের দায় নিতে হলে দেশের প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মাধ্যমে ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তা নিয়ে গণপরিসরে আলোচনা হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক জোর করে এই একীভূতকরণের দিকে এগোলে আদালতে তারা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। এই কোম্পানিতে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থায়ন করে, তাহলে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ড ছেড়েও এই অর্থের জোগান দিতে পারে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন দুর্বল ব্যাংকগুলো তালিকায় স্থান নাও পেতে পারে। পদ্মা ব্যাংকের অবস্থা সবাই জানে, কিন্তু এক্সিম ব্যাংকের অবস্থা যে খুব ভালো, তা-ও নয়। এই অবস্থায় ভাসা ভাসা পদক্ষেপ নেওয়া হলে পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হবে না। এমন বাস্তবতায় ব্যাংকিং কমিশন গঠন জরুরি। অর্থনীতিবিদ ও সিডনি পলিসি অ্যানালাইসিস সেন্টারের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক জ্যোতি রহমান বলেন, খেলাপি ঋণের এই বোঝা এক দিনে তৈরি হয়নি। খেলাপি ঋণের সমস্যার টেকনিক্যাল সমাধান পাওয়া সম্ভব; কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সমাধান। অর্থাৎ যাদের কারণে এই সংকট, তারা পার পেয়ে যায়, ভুক্তভোগী হয় জনগণ। সঞ্চালক মনির হায়দার বলেন, দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দায় নেয় না। সব খাতেই এটা দেখা যায়। ফারমার্স ব্যাংক যখন পদ্মা ব্যাংক হলো, তখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পদ্মা ব্যাংকে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হলো। এখন তাদের সেই বিনিয়োগের কী হবে। পদ্মা ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু অভূতপূর্ব ছাড় দিয়েছিল, যেমন ব্যালান্স শিট বা স্থিতিপত্র প্রকাশ না করার স্বাধীনতা। পদ্মা ব্যাংক যাদের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে, তাদেরও এ ধরনের কিছু ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে। এমন কিছু হলে তা শেষমেশ আমানতকারীদের স্বার্থের বিরুদ্ধেই যাবে।
২৪ মার্চ, ২০২৪

ডিসেম্বরের মধ্যে দুর্বল ও সবল ব্যাংক একীভূত হতে পারবে
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে যে কোনো সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে (মার্জার) পারবে দুর্বল ব্যাংক। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেভাবেই হোক না কেন, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় আমানতকারীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এই তথ্য জানান। মেজবাউল হক জানান, একীভূতকরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর শ্রেণি ঠিক করতে একটা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছরের ব্যালেন্স শিটের ওপর ভিত্তি করে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। সেই পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে মার্জার করা হবে। এ ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংকগুলোর দায়দেনার ব্যাপারে মার্জার নীতিমালায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি গোপন প্রতিবেদনের বরাদ্দ দিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, ‘কয়েকটি গণমাধ্যমে দুর্বল ও সবল ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন নয়। একটি বিভাগ তাদের নিজস্ব গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পর্যালোচনা করে থাকে। নিয়মিত আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সেটা করা হয়, যা ব্যাংকগুলোর প্রকৃত স্বাস্থ্য প্রকাশ করে না। তাই এটি দিয়ে কোনো ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয় বা তুলনা করা ঠিক হবে না। কোনো ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক স্বাস্থ্য নির্ণয় করা হয় ক্যামেলস রেটিংয়ের মাধ্যমে। যেটা বাংলাদেশ ব্যাংক কখনোই প্রকাশ করে না। তবে ক্যামেলস রেটিংয়ের দু-তিনটি সূচক প্রকাশ করে থাকে।’ গণমাধ্যমে আসা ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে ৯টি ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক। এর মধ্যেও তিনটি রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বিদেশি ও ৮টি দেশি ব্যাংক রয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধবার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকগুলোর এই স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ। এ ছাড়া ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এই ৫৪টি ব্যাংকের ছয়টি ষাণ্মাসিক তথ্যও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে তপশিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি হলেও প্রতিবেদনে ৫৪টি ব্যাংকের তথ্য নেওয়া হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মের অধীনে সব ব্যাংককে সংকলন করেছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তা হলো, মূলধনের পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণমান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন, তারল্য এবং বাজারের ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা। এতে ১ রেটিং সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়, আর ৫ রেটিং সবচেয়ে খারাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতিবেদনটির বিচারে রেড জোনের ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ (পুওর) এবং ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল (উইক)। আর গ্রিন জোনের ব্যাংকগুলো ভালো মানের (গুড)। সেই হিসাবে দেশে এখন সবলের চেয়ে দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যাই বেশি। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভালো অবস্থায় রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
১৩ মার্চ, ২০২৪

জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক একীভূত করতে আমরা বাধ্য
জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক একীভূত করতে ব্যাংক মালিকরা বাধ্য বলে জানিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তবে এখন পর্যন্ত একীভূত করার বিষয়ে কোনো নীতিমালা না হওয়ায় তারা চিন্তিত। যদিও দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ নীতিমালা জারি করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএবির নেতাদের আলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। বিএবি চেয়ারম্যান বলেন, মার্জার (একীভূত করা) নিয়ে সুন্দর কথা হয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মালয়েশিয়া বা ইউরোপ প্রতিটি দেশেই এ মার্জারটা হয়। কোনো কোনো ব্যাংক যে কোনো কারণে খারাপ হয়ে যেতে পারে। এটা সারা পৃথিবীতে হয়। আমেরিকায়ও হয়েছে। আমাদের এখানেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক খারাপ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ ব্যাংকই ভালো আছে। তিনি বলেন, ভালো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে খারাপ ব্যাংকগুলোকে একত্রীকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি জাতীয় স্বার্থে যে কোনো কাজ করতে বাধ্য। একত্রীকরণ হলে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। আমরা তো শেয়ারহোল্ডারস। আমরা এখানে আজীবন চেয়ারম্যান বা দায়িত্বে থাকব না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রক্রিয়া তো আমার বলতে পারব না। এটা গভর্নর বলতে পারবেন। তারা হোমওয়ার্ক করবেন। এজন্য আমরা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেছি। গভর্নর আমাদের বললেন, আমরা মার্জার শুরু করেছি। আমরা হয়তো এটা এক বছরের মধ্যে শেষ করতে পারব। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাংক নিয়ে আমাদের কথা হয়নি। কোন ব্যাংক খারাপ কি ভালো, এসব নিয়ে কোনো কথা হয়নি। বেশিরভাগ ব্যাংকই ভালো আছে। গভর্নর এবং অডিট কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে, এতে দেখা যায়—মোটামুটি ৯০ ভাগ ব্যাংকই ভালো আছে। হয়তো ১০ ভাগ খারাপ আছে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও সুশাসন নিশ্চিতের জন্য আমরা বেশ কয়েকটি নীতিমালা ইতোমধ্যে জারি করেছি। খেলাপি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ১১টি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ৬টি কর্মপরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়েছে। মেজবাউল হক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক’ ঘোষণা করেছি। এটা দেখে ব্যাংক নিজেই তার অবস্থা নির্ণয় করতে পারবে। ব্যাংককে কখন কোন ধরনের উন্নয়ন করতে হবে, এ ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েই তা নির্ণয় করতে পারবে। কোনো ব্যাংক যদি সেই সূচকগুলো উন্নয়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকশনের বিষয় আসবে। এ ফ্রেমওয়ার্কেই বিভিন্ন রকম পন্থা বলা আছে। তিনি বলেন, আমরা বরাবরই বলছি, এটা পৃথিবীব্যাপী একটি প্রচলিত পদ্ধতি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক মার্জার হয়েছে। ওইসব পদ্ধতির আলোকেই আমাদের দেশেও একটি লিখিত নীতিমালা জারি করা হবে। এটাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ নীতিমালা জারি হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। মুখপাত্র বলেন, কয়টি ব্যাংক একীভূত করা হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি পিসিএ নীতিমালা অনুযায়ী সবাই পদক্ষেপ নিয়ে ভালো অবস্থানে যেতে পারে। তাহলে এমনও হতে পারে, কোনো ব্যাংকই মার্জার হবে না।
০৫ মার্চ, ২০২৪
X