এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৩ এএম
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারি ৬ ব্যাংক একীভূত হচ্ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা জারি
সরকারি ৬ ব্যাংক একীভূত হচ্ছে

বেসরকারি খাতের এক্সিম ও পদ্মার পর একীভূত হতে যাচ্ছে সরকারি ৬ ব্যাংক। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে নানা সমস্যায় ধুঁকতে থাকা তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) একীভূত হবে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বাকৃবি) সঙ্গে মিশে যাবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এ চার ব্যাংকের বিষয়ে ঈদের আগেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংককে অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি মাসেই এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে ব্যাংক একীভূতকরণ (মার্জার) বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিডিবিএল ও রাকাবের বিষয়ে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে এই দুটি ছাড়াও সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল এবং কৃষির সঙ্গে রাকাবকে একীভূত করার নির্দেশনা জানিয়ে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ সভা ডেকে এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের। জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘যে সিদ্ধান্তই হোক না কেন, আপনারা জানতে পারবেন।’

অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আপাতত এ বিষয়টি গোপন রাখতে বলা হয়েছে। এ কারণে কোন পর্যায় থেকেই গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে না।

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদুল কবির কালবেলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না। তবে দুটি ব্যাংকেরই মালিক সরকার, তাই সরকার চাইলে একীভূত করতেই পারে। এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

ওই বৈঠকে উপস্থিত একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে। তার আগে আমাদের পর্যায়

থেকে কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে দুই কৃষি ব্যাংকের আইনে বলা আছে, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।’

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘কোন ব্যাংক কার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সে বিষয়ে অফিসিয়ালি আমাকে কিছু জানানো হয়নি। সুতরাং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে বিভিন্ন ব্যাংকের বিষয়ে আপনাদের মতোই আলোচনা শুনছি।’

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুধু সরকারি ব্যাংক নয় একীভূত হওয়ার আলোচনায় রয়েছে বেসরকারি খাতের অন্তত অর্ধ ডজন ব্যাংক। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক নিয়ে সবচেয়ে বেশি জল্পনা কল্পনা চলছে। ব্যাংকটির পরিধি বড় হওয়ায় ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হলে ওই ব্যাংকও দুর্বল হয়ে পড়ে কি না—তা নিয়ে চলছে আলোচনা। এ ছাড়া একীভূত হওয়ার আলোচনায় আছে এবি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে একীভূত হতে পারে। এর মধ্যে কেউ সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে আগামী বছরের মার্চ থেকে খারাপ ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মিশে যেতে বাধ্য করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করতে চারটি সূচকের ভিত্তিতে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগামী সপ্তাহে সরকারি চার ব্যাংকের একীভূতকরণ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে গোপনে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং পলিসি অ্যাডভাইজর ছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে কাউকে এসব আলোচনায় রাখা হচ্ছে না। এ কারণে কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত করা হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, সব আমানতকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যাংক একীভূতকরণের মাধ্যমে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের দায় ও সম্পদ মিলিয়ে দেওয়া হবে। তবে ভালো ব্যাংক যেন চাপে না পড়ে, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন নীতি-সহায়তা দেবে। এ ক্ষেত্রে খারাপ ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণে (এসএলআর) ছাড় দিতে পারে। আবার খেলাপি ঋণের বিপরীতে সাধারণভাবে যে হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়, এ ক্ষেত্রে রাখতে হবে কম। এ ছাড়া ভালো ব্যাংকে এসেই সব গ্রাহকের যেন আমানত ফেরত নেওয়ার চাপ তৈরি না হয়, সে জন্যও একটি ব্যবস্থা রাখা হবে। সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতিমালা জারি করেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা খুবই প্রয়োজন ছিল। তাই আমরা নীতিমালা ঘোষণা করেছি।’

নীতিমালায় যা আছে: বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, দুই বা এর অধিক ব্যাংক বা ক্ষেত্রমতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি একীভূত হওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তবে ওই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ পর্ষদে বিষয়টি উপস্থাপন করে নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করবে। এরপর তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশনের কাছে থেকে অনুমোদন নেবে। এরপর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক এবং হস্তান্তরকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার বা যে অংশ অধিগ্রহণ করা হবে তার নিরীক্ষা, আর্থিক এবং আইনি কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তার তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা ফার্ম থেকে এক বা একাধিক নিরীক্ষা ফার্মকে নিয়োগ প্রদান করবে। এ ক্ষেত্রে ওই নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কাজ সম্পন্ন করার খরচ বহন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম তার নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কার্যক্রম প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দাখিল করবে। এসব বিষয় সম্পাদনকালে তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রদত্ত অনুমোদন বাতিলও করতে পারবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) চাকরি হারাবেন। এ ছাড়া একীভূত হওয়া দুই ব্যাংকের মধ্যে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকের পরিচালক আগামী ৫ বছর অন্য কোনো ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবেন না। এ রকম বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক একীভূতকরণ নীতমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে চারটি সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যেসব ব্যাংক নিজ থেকে একীভূত হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন নীতি সহায়তা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সিআরআর, এসএলআর সংরক্ষণে ছাড় দেওয়া হতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইরানে ঘটে যাওয়া বড় বড় বিমান দুর্ঘটনা

হত্যার আশঙ্কায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন

রাইসির হেলিকপ্টারের যে সমস্যার কথা জানালেন তুর্কি পরিবহনমন্ত্রী

সমর্থকের বাড়িতে নৈশভোজ, চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অর্থদণ্ড

ভোটের আগের রাতে গোপন প্রচারণা, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রাইভেটকার আটক

বিলাসবহুল গাড়িতে সরকারি লোগো সাঁটিয়ে ৭ লাখ ইয়াবা পাচার

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

বাবার খোঁজে ভারতে যাচ্ছেন এমপি আনারের মেয়ে

ফোর্বসের তালিকায় স্থান পাওয়া ৯ তরুণকে ছাত্রলীগের শুভেচ্ছা

মোবাইল কিনে না দেওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

১০

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাজার বসিয়ে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবসা

১১

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু, ক্যাম্প কমান্ডারসহ প্রত্যাহার ৪

১২

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৮২ শতাংশ : বিবিএস

১৩

ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল শিশুর

১৪

জাল স্বাক্ষরে ওষুধ বিতরণের অভিযোগ

১৫

ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আরবদের মুনাফেকি ও সুপার হিরোদের অবদান

১৬

নোয়াখালীতে ৩০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ

১৭

নিপুনের পেছনে বড় কোনো শক্তি আছে : ডিপজল

১৮

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে চবিতে সাইক্লিস্টের র‍্যালি

১৯

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আইআইইউসি প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ

২০
X