পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই / শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে ব্যাংক একীভূতকরণ
ব্যাংক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১০টি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সুপরিকল্পিতভাবে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি না মেনে একীভূত করতে যাওয়ায় এরই মধ্যে হোঁচট খেয়েছে এ উদ্যোগ। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে একীভূতকরণের ভবিষ্যৎ নিয়েও। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও আগামী তিন বছরের মধ্যে আর কোনো নতুন ব্যাংক একীভূত করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগকে নীতিমালা না মেনে জোরপূর্বক একীভূতকরণ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কথার সঙ্গে কাজের মিল না থাকায় এসব একীভূতকরণে নাম আসা ব্যাংকের আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক থেকে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আমানত তুলে নিয়েছে। এতে তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এই উদ্যোগে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আমি খুব বেশি আশাবাদী নই। যদিও অনেক দেশেই ব্যাংক মার্জারের ঘটনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেসব দেশের অভিজ্ঞতা কাজে না লাগিয়ে জোরপূর্বকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্জারের কাজটি শুরু করেছে। আর আমাদের দেশের বাস্তবতায় একটি সবল ব্যাংক কখনোই একটি দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে চাইবে না—এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কারণ, সবল এবং দুর্বল উভয় ব্যাংকই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং দুর্বল ব্যাংকের শেয়ারের দায় সবল ব্যাংক নেওয়ার ঘোষণায় সেই ব্যাংকের শেয়ারের দামও কমে যাচ্ছে, যা আগামী দিনে আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জোর করে একটা ব্যাংককে অন্য একটা ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে দিলে তো ব্যাংক খাতের মূল সমস্যার সমাধান হবে না। খেলাপি ঋণে জর্জরিত পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা হচ্ছে। যেসব পরিচালকের কারণে পদ্মা ব্যাংকের আজকের এ পরিণতি তাদের কোনো শাস্তির আওতায় না এনে ৫ বছর পর নাকি তারা আবার এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে। এটা কোন কথা হলো? প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি না মেনে বাংলাদেশ ব্যাংক জোরপূর্বকভাবে তড়িঘড়ি করে মার্জ করে দিচ্ছে। এতে আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে তাদের আমানত তুলে নিচ্ছে। পুরো ব্যাংক খাতে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্জারের উদ্যোগটি হোঁচট খেয়েছে। ফলে কাজটি শেষ পর্যন্ত করতে পারবে কি না, সে বিষয়েও আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষতা ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। কারণ কোনো একটি দুর্বল ব্যাংককে মার্জ করতে হলে প্রথমে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব করতে হবে। তারপর যে ঘাটতি থাকবে সেটি কে পূরণ করবে, সেটিও উল্লেখ করতে হবে। তারপর কাজটি করতে হবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এসব কিছু না করেই একরকম জোরপূর্বকভাবে তাড়াহুড়া করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে পদ্ধতিতে কিছু দুর্বলতা আছে। দ্বিতীয়ত, যেসব দুর্বলতার কারণে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা হচ্ছে, সেখানে দুর্বল ব্যাংকগুলোর কোনো বক্তব্য থাকার কথা নয়। যদিও আমরা উল্টোটা দেখছি। দু-একটি দুর্বল ব্যাংক মার্জ না হওয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা নিয়েই সেটি করছে কি না—সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি আরও বলেন, একটা পর্যায়ে গিয়ে অবশ্যই জোর করেই মার্জ করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগে সেটির ঘাটতি রয়েছে বলেই মনে করছি। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত বলেন, ব্যাংক মার্জারের নামে বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত অধিগ্রহণ করছে। কারণ আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী একীভূত করা হলে দুটি ব্যাংকের অস্তিত্ব থাকবে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে তেমনটি বলা হচ্ছে না। সেখানে একটি সবল ব্যাংকের অধীনে দুর্বল ব্যাংকটি বিলুপ্ত করা হচ্ছে। এটাকে আসলে মার্জার বা একীভূতকরণ না বলে অ্যাকুইজিশন বা অধিগ্রহণ বলা যুক্তিযুক্ত হবে। দ্বিতীয়ত, পদ্মা ব্যাংক বেশি দুর্বল আর এক্সিম ব্যাংকের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বেলায়ও একই কথা বলা যায়। ফলে একটি দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে আর একটি দুর্বল ব্যাংক মার্জ করা হলে সেই ব্যাংকটি কীভাবে তার অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে? নাকি তুলনামূলক ভালো ব্যাংকটিও দুর্বল হয়ে পড়বে? ফলে পদ্মা-এক্সিম একীভূতকরণের বিষয়টি রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত কি না, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংককে কৌশলে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে চায় কি না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। তা না হলে সরকারি খাতের অনেক ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও কেন এটিকে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হচ্ছে? সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, তুলনামূলক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ নিয়ে সাধারণ আমানতকারীসহ অনেক ব্যাংকের পরিচালকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে ভালো ব্যাংকগুলো চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কারণ ভালো ব্যাংক যারা আছে, তারা তো নিয়মকানুন মেনে, কমপ্লায়েন্স মেনে, নানা ধরনের প্রতিকূলতা পার করে ভালো হয়েছে। ফলে তারা কেন একটি দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে? আবার প্রকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোর মালিক কারা—এ প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, প্রভাবশালীদের দুর্বল ব্যাংক প্রভাব খাটিয়ে মার্জার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। কয়েক বছর ধরে ডজনখানেকের বেশি ব্যাংক মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকটসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সমস্যাগ্রস্ত এসব ব্যাংককে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে গত ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক সই করে। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা-এক্সিম নিজেরা একীভূত করার ঘোষণা দিলে এরপর আরও ৮টি ব্যাংক মার্জারের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাংকের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই বাংলাদেশ ব্যাংক জোরপূর্বকভাবে মার্জারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে এসব ব্যাংকের বড় বড় আমানতকারী তাদের আমানত তুলে নিচ্ছে। ফলে তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে, পুঁজিবাজারেও এসব ব্যাংকের শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে। এসব ব্যাংকের শেয়ারের দর ফেসভ্যালুর নিচে অবস্থান করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বেসিক ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু মোহাম্মদ মোফাজ্জল কালবেলাকে বলেন, আমাদের না জানিয়ে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর আমাদের বড় বড় আমানতকারীরা তাদের আমানত তুলে নিচ্ছে। ফলে ব্যাংকটি আবার তারল্য সংকটে পড়েছে। বেসিক ব্যাংকের এই ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে সরকারকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, গত সোমবার ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারা ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় না। জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক একটি সুসংগঠিত ব্যাংক। একটি বিশেষ পরিবারের আধিপত্যের কারণে কিছু শাখায় বড় ঋণ আদায় হচ্ছিল না। আর কর্মকর্তারা সেই পরিবারের সর্বেসর্বা ক্ষমতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেননি। সাধারণ গ্রাহকের টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর আমি দায়িত্ব নিয়েছি। এখন তো ওই পরিবারের কর্তৃত্ব নেই। ব্যাংকের প্রায় ৩০০ শাখা-উপশাখার মধ্যে মাত্র হাতেগোনা ১১-১২টি শাখা ছাড়া সবগুলো মুনাফা করছে। এখন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার ফলে খেলাপি আদায় বেড়ে গেছে। সামনে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, খুব শিগগির খেলাপি সন্তোষজনক পর্যায়ে চলে আসবে। যদি না আসে, তখন একীভূত করা যেতে পারে। জানা গেছে, একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি সামলাতে গত ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ডেকে জানায়, আপাতত পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে কোনো একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না। ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা একীভূত হওয়ার বিষয়ে এমওইউ সই করেছে। এ ছাড়া সিটির সঙ্গে বেসিক, ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল, সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তও নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো ব্যাংক স্বেচ্ছায় না হলে জোর করে একীভূত করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে। তবে সেটা এখন করা হচ্ছে না। ন্যাশনালসহ ১০টি ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে কোনো ব্যাংক ভালো হলে একীভূত হবে না। এমনকি যদি সব ব্যাংক ভালো হয় তবে কোনো ব্যাংক একীভূত নাও হতে পারে।  
৩০ এপ্রিল, ২০২৪

প্রসঙ্গ ব্যাংক একীভূতকরণ
সংবাদে প্রকাশ যে, আরও তিনটি দুর্বল ব্যাংক তুলনামূলক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) একীভূত হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে। একীভূতকরণ নিয়ে এই চার ব্যাংকের মধ্যে চলতি সপ্তাহে চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত হতে যাচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। ঈদের পরই ব্যাংক দুটির মধ্যে একীভূতকরণ চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হয়েছিল এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে। বর্তমান একীভূতকরণের পর আলোচনায় রয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এভাবে একীভূতকরণের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের সংখ্যা ৪৪টি করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সারা বিশ্বে ব্যাংক, শিল্প কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ নতুন কিছু নয়। নানান অর্থনীতিতে নানান সময়ে এটা ঘটেছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক টালমাটালের সময়। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময়েও এটা আমরা লক্ষ করেছি। সাধারণত তিনটে কারণে এ জাতীয় একীভূতকরণ ঘটে থাকে। এক. ক্ষমতার বলয় প্রসারণের জন্য বড় বড় প্রতিষ্ঠান ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আত্মভূত করে থাকে; দুই. প্রতিযোগিতাকে হ্রাস করে একচেটিয়া বাজার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাস করে এবং তিন. আর্থিক সমস্যাসংকুল নানান প্রতিষ্ঠানকে অন্যান্য ভালো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করে বাজারে স্থিতিশীলতা ও আস্থা নিশ্চিত করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশে একই সঙ্গে এতগুলো ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলো কেন? কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ব্যাংকের সংখ্যা মোট অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং বজায় ক্ষমতার জন্য, দক্ষতার জন্য, সেবার মান বাড়ানোর জন্য এ সংকোচন অপরিহার্য ছিল। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি ব্যাংকের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি পুরো ব্যাংক খাতকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। সৃষ্টি হয়েছে উচ্চখেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি। সেইসঙ্গে অনাস্থা, তারল্য সংকট বেড়েই চলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে। অনেকেই বলছেন যে, বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাতে যে সমস্যা এবং অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান, সেটাকে হ্রাস করার জন্যই এ একীভূতকরণ। সেইসঙ্গে এটাও বলা হচ্ছে যে, অর্থনীতিতে আস্থা বৃদ্ধির জন্য এটার প্রয়োজন ছিল। কেউ কেউ মত দিয়েছেন যে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর জন্যই এ পদক্ষেপ। তবে অনেকেরই আশঙ্কা, একীভূত করার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেওয়া হতে পারে। এটাও শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে পুরো ব্যাংকিং কাঠামো ভঙ্গুর ও নাজুক। সুতরাং দুর্বল ব্যাংকগুলোকে যদি একীভূত না করা হয় এবং তারা যদি গনেশ ওল্টায়, তাহলে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটা টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণভাবে বাংলাদেশে ব্যাংকসমূহের একীভূতকরণ সম্পর্কে পাঁচটি কথা মনে রাখা দরকার। প্রথমত, প্রতিযোগিতা ও দক্ষতার নিয়মে সাধারণ কোনো ব্যাংক যদি আর্থিক দিক থেকে অকৃতকার্য হয়, তাহলে তাকে স্বাভাবিকভাবেই বিলুপ্ত হতে দেওয়া ভালো। যদি না সে ব্যাংকটি এমন বড় ও গুরুত্বপূর্ণ হয় যে তার বিলোপ পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার সামষ্টিক স্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ব্যাংকের একীভূতকরণ যদি একচেটিয়া বাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হয়, তবে তা পরিত্যাজ্য। একচেটিয়া বাজার গ্রাহককে প্রতিযোগিতামূলক সেবা দেবে না এবং এর ফলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেইসঙ্গে ব্যাংক খাতে একীভূতকরণ ঘটলে তা সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও কীরকম প্রভাব ফেলবে, তাও মূল্যায়িত হওয়া দরকার। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে বর্তমান ব্যাংক খাতে যেসব মৌলিক সমস্যা রয়েছে, তার জন্য কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। সেসব কষ্টকর কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিকল্প একীভূতকরণ হতে পারে না। চতুর্থত, ব্যাংক খাতে একীভূতকরণ ঘটলে দুর্বলতর ব্যাংকটির কর্মীদল, তাদের কর্ম নিরাপত্তা, আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। পঞ্চমত, একটি অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটে একটি ব্যাংক খাতের অনুকূল সংখ্যা আছে। মোট ব্যাংকের সংখ্যা সে সংখ্যাকে অতিক্রম করে গেলে সেখানে একটি নাজুকতার জন্ম হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নাজুকতা ও অস্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও কেন নতুন নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যালোচিত হওয়া প্রয়োজন। অন্য ভাষায়, একীভূতকরণের (অর্থাৎ ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা) মাধ্যমে যখন ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেখানে নতুন নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমোদনের যৌক্তিকতা কোথায়? এ ভিন্ন তিনটি বিষয়ের ওপরও দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এক, দুর্বল ব্যাংকগুলো শুধু বেসরকারি খাতেই নয়, সরকারি খাতেও আছে। যেমন—একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় দুর্বল ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। সুতরাং ব্যাংক নাজুকতা সব খাতেই রয়েছে। দুই, বিশ্বব্যাংকও ব্যাংক একীভূতকরণের পরামর্শ দিয়েছে এবং এ প্রক্রিয়াকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে না দিতে অনুরোধ করেছে। বলা প্রয়োজন, আশির দশকে আর্থিক খাত সংস্কার বিশ্বব্যাংকের সুপরামর্শে এবং প্রত্যক্ষ কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। কিন্তু নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছি? এ দায়ভাগে ওই প্রতিষ্ঠানটির অংশীদারত্ব কত, তাও যাচাই হওয়া দরকার। তিন, একীভূতকরণের সপক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই এটা করা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এটা বলা হয়েছে যে, একীভূত দুর্বল ব্যাংকগুলোর কর্মচারীদের চাকরি সুরক্ষিত এবং কাউকেই ছাঁটাই করা হবে না। সেইসঙ্গে সেসব ব্যাংকের আমানতকারীদের বলা হয়েছে যে, তাদের আমানত নিরাপদ। সার্বিকভাবে একটি স্থিতিশীলতার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের জন্য নতুন। এর নানান মাত্রিকতা এবং সম্ভাব্য প্রভাব তাই সুষ্ঠুভাবে নিরূপিত হওয়া দরকার। একটি যান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে বিষয়টি একটি প্রয়োগিক এবং মানবিক প্রেক্ষিত থেকেও দেখা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে পুরো ব্যাপারটি একটি সামগ্রিক আর্থিক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে দেখতে হবে। লেখক: ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয় ও দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগের সাবেক পরিচালক
২৯ এপ্রিল, ২০২৪

ব্যাংক একীভূতকরণ ও ব্যাংকিং শিল্পের পুনর্গঠন
করোনা পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যার ফলে বাংলাদেশে একসময়ের লাভজনক, দ্রুত বর্ধনশীল, গতিশীল এবং অত্যন্ত উদ্ভাবনী ব্যাংকিং খাত ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে নন পারফর্মিং অ্যাসেট বৃদ্ধি পায়, তারল্য সংকট দেখা দেয়। সেজন্য, ব্যাংকিং খাতকে সংস্কারের উদ্দেশ্যে দেশের সব দুর্বল বা খারাপ ব্যাংকগুলোকে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  ইতিমধ্যে মূলধনের পর্যাপ্ততা, শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য এমন পরিরকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও ভেঙে পড়া করপোরেট সুশাসন ফেরানোর তাগিদ। পাশাপাশি  দুর্বল ব্যাংকগুলোর উন্নতি না হলে সেগুলো অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জ) করার বার্তা রয়েছে। যার প্রথম উদ্যোগ হিসেবে এক্সিম ব্যাংক এবং পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণ। গত ১৪ মার্চ ব্যাংক দুটি একীভূতকরণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক এবং ইউসিবি ও ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বিভিন্ন কারণে ব্যাংকগুলো সংকটের সম্মুখীন হতে পারে। হতে পারে ব্যাংক রান কিংবা নন পারফর্মিং এসেট বৃদ্ধির মতো ঘটনা। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংক রানের মতো ঘটনা না ঘটলেও কিছু ব্যাংকে নন পারফর্মিং এসেট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মন্দ ঋণগুলো থেকে টাকা আদায় দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, আবার কেউ কেউ কৌশলগত ঋণখেলাপি হচ্ছে। স্বভাবত এ সকল  নন পারফর্মিং এসেট আর্থিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে, ব্যাংক একত্রীকরণ নীতিগুলি স্বতন্ত্র নীতি নয় বরং মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির অন্যান্য দিকগুলোর সঙ্গে একত্রে প্রণয়ন করা হয়। তাই ব্যাংক একত্রীকরণের ফলে খেলাপি ঋণের সংখ্যা হ্রাস পায় (উন্নত ঋণ স্ক্রীনিং এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা) এবং অর্থনীতির আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ ভালো ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি যদি আর্থিকভাবেও ভালো হয়, তাহলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংককে বাঁচাতে পারে। ২০২২ সালে একটি গবেষণায় একীভূত হওয়া ব্যাংকগুলো থেকে দুর্বল ব্যাংকের নন পারফর্মিং অ্যাসেট (NPA) নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষণায় দুর্বল একত্র হওয়া ব্যাংকগুলোর NPA পূর্বের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পায়। এ ছাড়াও একীভূত হবার ফলে বৃহত্তর ব্যাংকগুলোর ব্যর্থতার কম সম্ভাবনা থাকে এবং ঋণগ্রহীতাদের ভবিষ্যতে ঋণ প্রবাহ অব্যাহত থাকে। তাই লোন পারফরম্যান্সের উন্নতি দুর্বল একীভূত ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে যেখানে কৌশলগত ডিফল্ট হবার সম্ভাবনা কমে আসে। ২০০৭ সালে ফিলিপ বন্ড এবং অশোক রাইয়ের একটি গবেষণায় ‘Borrower Run’- কে ব্যাংকের স্বাস্থ্যের অবনতির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ঋণগ্রহীতা যে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে, প্রাথমিকভাবে অনুমান করে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু যদি মনে করে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটি ভেঙে পড়বে, তাহলে ভবিষ্যতে ব্যাংকটি থেকে ঋণ পাওয়ার আশা কমে যাবে।  সে পরিস্থিতিতে অনেক ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও ঋণ পরিশোধ করতে চায় না কিংবা বিলম্বে ঋণ পরিশোধ করে যাকে ‘Borrower Run’ বলে। ‘Borrower Run’ কে কৌশলগত খেলাপিও বলা হয়। ফলে কিছু ঋণগ্রহীতার খেলাপি হওয়ার প্রত্যাশা বৃহত্তর স্কেলে খেলাপি ঋণকে আরও বাড়িয়ে তুলে। ঋণগ্রহীতার আস্তার সংকটের জন্যই এমন হয়। ১৯৯৪ সালে ম্যাক্সিকান ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছিল। তার অন্যতম কারণ ছিল কৌশলগত খেলাপি এবং ঋণগ্রহীতাদের সমন্বয় ব্যর্থতা। সেজন্য, শক্তিশালী ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের শৃঙ্খল উন্নত হতে পারে এবং ঋণগ্রহীতার আস্তার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরবর্তী সময়ে মূল্যস্ফীতির কারণে গ্রাহকের চাহিদার জন্য অর্থের প্রয়োজন পড়ে। নগদ টাকার সংকট মেটাতে গ্রাহকরা সিভি ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা আমানত ভাঙতে শুরু করে। ব্যাংকটি নগদ তহবিল জোগান দিতে সমস্যায় পড়ে। খবর ছড়িয়ে পড়ে, ব্যাংকটির যতটা অর্থ প্রয়োজন, ততটা জোগাড় করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকে তারল্য সমস্যা সৃষ্টি হয়ে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। মূলত ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্তার সংকটের জন্য এমন হয়। তাই, পরবর্তীতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ফার্স্ট সিটিজেন ব্যাংকের সাথে, সিগনেচার ব্যাংক ফ্ল্যাগস্টার ব্যাংকের সাথে এবং ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক চেজের সাথে একীভূত করা হয়।  ব্যাংকিং সেক্টরের সামগ্রিক পতন রোধ করতে ব্যাঙ্কগুলিকে প্রায়শই বড় এবং আরও স্থিতিশীল ব্যাঙ্কগুলোর সঙ্গে একীভূত করা হয়। কারণ, একত্রীকরণ সত্ত্বা দুটি পূর্বের পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ কর্মক্ষমতার দিকে পরিচালিত করে। এছাড়াও ব্যাংকগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য একীভূত করা প্রয়োজন। মূলত একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক বাজারের গতিশীলতাকেও প্রভাবিত করে।  সে লক্ষ্যে ভারত ও চীনের অর্থনীতিতে ব্যাংকের একত্রীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতে পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলোকে একত্র করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পদক্ষেপগুলির লক্ষ্য ছিল ভালো, দক্ষ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য বড় আকারের ব্যাংক তৈরি করা। জাপানে ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে আর্থিক সংকটের পর সরকার ব্যাংক একত্রীকরণে পদক্ষেপ নেয়। স্কেল অর্থনীতির মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন এবং ভবিষ্যতে ব্যাঙ্কগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এটি করা হয়েছিল।  মূলত একত্রীকরণ ব্যাঙ্কিং সেক্টরের কাঠামোকে পরিবর্তন করে যা ব্যাংকের ঋণ প্রদানের আচরণ, বাজারের প্রতিযোগিতা এবং মুদ্রানীতি ট্রান্সমিশন মেকানিজমকে প্রভাবিত করে। যদিও ব্যাংক একীভূতকরণে সাধারণ গ্রাহকদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। তাদের রক্ষিত আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে। যে সব গ্রাহক আর্থিক পরিষেবার ওপর নির্ভর করত তাদের অনেকেই ভাবতে পারে সেগুলো নাও থাকতে পারে। তবে সে উদ্বেগগুলো কম বাস্তবতা। ব্যাংক একীভূতকরণ শুধু ব্যাংকিং শিল্প জগতে ব্যাংকের সংখ্যা হ্রাস করার একটি পন্থা নয় বরং অন্তর্নিহিত সমন্বয়, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ অর্থ সরবরাহ, সুদের হার এবং মূল্যস্ফীতির মতো কারণগুলোকে প্রভাবিত করে। যার ফলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। একীভূতকরণের মূল চালিকাশক্তি ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, বর্ধিত অর্থনীতি, বাজারের অংশীদারিত্ব যা একটি ব্যাংকের সম্প্রসারণকে ত্বরান্বিত করে এবং নতুন শাখা স্থাপনের বিকল্প হতে পারে। একই শিল্পের মধ্যে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা হ্রাস পাবে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নত হবে। সৃষ্ট নতুন ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে আরও পণ্য এবং পরিষেবা অফার করতে পারে। যদিও, মূল লক্ষ্য খারাপ ঋণের ফলে উদ্ভূত আর্থিক সংকট কমানো এবং তা থেকে বেরিয়ে আসা। একীভূতকরণের সঙ্গে ব্যাংকি শিল্পের পুনর্গঠন লাভজনকতার পাশাপাশি গ্রাহক পরিষেবা আরও বিস্তৃত হবে। তবে, ব্যাংকগুলো সকল গ্রাহকদের শক্তিশালী স্মার্ট ব্যাংকিং প্রতিশ্রুতি দিয়ে একীভূতকরণের চেষ্টা করে। সঠিকভাবে তা না হলে একীভূতকরণের উদ্দেশ্য ম্লান হয়ে যেতে পারে। কারণ, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি আঁটসাঁট সময়সীমার মধ্যে গ্রাহকদের পরিবর্তন ঘটায়। অন্জন কুমার রায়: ব্যাংক কর্মকর্তা
২৬ এপ্রিল, ২০২৪

দায়মুক্তির নতুন মুখোশ ব্যাংক একীভূতকরণ
ব্যাংক একীভূতকরণে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি ব্যাংক একীভূতকরণের নামে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ আহ্বান জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি জানিয়েছে, প্রস্তাবিত একীভূতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণে জর্জরিত দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যে ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করা হয়েছে, তা সংকটের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির জন্য দায়ী মহলকে ‘দায়মুক্তি’ প্রদানের নামান্তর। এতে সংস্থাটি আরও বলে, দুর্বল ব্যাংকগুলো রক্ষার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূতকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, যা আর্থিক খাতে সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু সংবেদনশীল ও জটিল এ কাজটি করতে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত মানদণ্ড ও রীতিনীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজের ঘোষিত নীতিমালা না মেনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। টিআইবি বলছে, স্বেচ্ছাচারীভাবে চাপিয়ে দেওয়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং এ প্রক্রিয়ায় থাকা ভালো ব্যাংকগুলোর অস্বস্তি, একীভূত হতে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংকের অনীহা, সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে শঙ্কা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা গভীর করেছে, যা একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিকে শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই নিজ উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, আবার এ প্রক্রিয়ায় নাম আসা সবল ব্যাংকগুলো স্বীয় উদ্যোগে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এতে যুক্ত হতে সম্মত হয়েছে, তা-ও নয়। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঘোষিত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া দুর্বল ব্যাংকের সম্পদ ও দায়-দেনার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়া আপাত সবল ব্যাংকের ঘাড়ে একীভূতকরণের নামে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যা ঘটছে, তা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্যারাসিটামল প্রয়োগের নামান্তর। একীভূতকরণের নামে একদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির জন্য যারা দায়ী, তাদের যেমন সুরক্ষা দিয়ে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিকে গভীরতর করা হচ্ছে, অন্যদিকে সবল ব্যাংকগুলোর সাফল্যের পরিণামে খারাপ ব্যাংক হজম করিয়ে দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে।’ দুর্বল ব্যাংককে বাঁচানোর এ প্রক্রিয়া হিতে বিপরীত হবে কি না, আশঙ্কা প্রকাশ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একীভূতকরণের আলোচনায় সরকারি-সরকারি, বেসরকারি-সরকারি এবং বেসরকারি-বেসরকারি তিন ধরনের ব্যাংকই রয়েছে। এক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় এ ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একীভূত করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, কিংবা কোন সবল ব্যাংকের সঙ্গে কোন দুর্বল ব্যাংক একীভূত হবে, তা কীভাবে ঠিক করা হয়েছে, তা-ও স্পষ্ট নয়।’ টিআইবি মনে করে, ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন কার্যকর জবাবদিহিভিত্তিক সুশাসন। এটি নিশ্চিত করা ছাড়া শুধু একীভূত করলেই সংকট মোকাবিলা করা যাবে বা গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা পাবে কিংবা খেলাপি ঋণ কমে আসবে—এমন ভাবনা সত্যিই অলীক।’ একীভূতকরণ নীতিমালায় দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকদের পাঁচ বছর পর ফের একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফেরত আসার সুযোগের সমালোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, ‘এ বিধান দুর্বল ব্যাংকের সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির বদলে পুরস্কৃত করা এবং এক ধরনের দায়মুক্তি দেওয়ার বিধান। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকের নিরীক্ষাকালে নতুন কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির চিত্র উঠে এলে সে বিষয় গোপন রাখার যে বিধান নীতিমালায় রাখা হয়েছে, তা শুধু আর্থিক অনিয়মের চিত্রকেই ধামাচাপা দেবে না, একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে, যা এক কথায় অন্যায়কে সুরক্ষা দেওয়ার শামিল।’ এভাবে একীভূতকরণের নামে যা ঘটছে, তা হতাশাজনক এবং ঋণখেলাপিদের হাতে ব্যাংকিং খাতের অব্যাহত জিম্মিদশার পরিচায়ক বলে জানিয়েছে টিআইবি।
২৪ এপ্রিল, ২০২৪

ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি
ব্যাংক একীভূতকরণে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে মনে করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড না মানায় প্রস্তাবিত একীভূতকরণ প্রক্রিয়াগুলো স্থগিত করতে বলেছে সংস্থাটি।  মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এই মন্তব্য করেছে। এতে সংস্থাটি বলে, ব্যাংকিং খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলো রক্ষার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূতকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, যা আর্থিক খাতে সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু সংবেদনশীল ও জটিল এই কাজটি করতে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত মানদণ্ড ও রীতিনীতি এবং এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজের ঘোষিত নীতিমালা না মেনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। টিআইবি বলছে, স্বেচ্ছাচারীভাবে চাপিয়ে দেওয়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং এ প্রক্রিয়ায় থাকা ভালো ব্যাংকগুলোর অস্বস্তি, একীভূত হতে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংকের অনীহা, সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে শঙ্কা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা গভীরতর করেছে। যা একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিকে শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। টিআইবি মনে করে, প্রস্তাবিত একীভূতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণে জর্জরিত দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যে ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করা হয়েছে, তা সংকটের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির জন্য দায়ী মহলকে “দায়মুক্তি” প্রদানের নামান্তর। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই নিজ উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, আবার এ প্রক্রিয়ায় নাম আসা সবল ব্যাংকগুলো স্বীয় উদ্যোগে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এতে যুক্ত হতে সম্মত হয়েছে তাও নয়। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঘোষিত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তিনি বলেন, ‘তা ছাড়া, দুর্বল ব্যাংকের সম্পদ ও দায়-দেনার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়া আপাত সবল ব্যাংকের ঘাড়ে একীভূতকরণের নামে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যা ঘটছে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্যারাসিটামল প্রয়োগের নামান্তর। একীভূতকরণের নামে একদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির জন্য যারা দায়ী তাদের যেমন সুরক্ষা দিয়ে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিকে গভীরতর করা হচ্ছে, অন্যদিকে সবল ব্যাংকগুলোর সাফল্যের পরিণামে খারাপ ব্যাংক হজম করিয়ে দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে।’ দুর্বল ব্যাংককে বাঁচানোর এই প্রক্রিয়া হিতে বিপরীত হবে কি-না আশঙ্কা প্রকাশ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একীভূতকরণের আলোচনায় সরকারি-সরকারি, বেসরকারি-সরকারি এবং বেসরকারি-বেসরকারি তিন ধরনের ব্যাংকই রয়েছে। এক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় এই ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একীভূত করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, কিংবা কোন সবল ব্যাংকের সঙ্গে কোন দুর্বল ব্যাংক একীভূত হবে, তা কীভাবে ঠিক করা হয়েছে- তাও স্পষ্ট নয়।’ টিআইবি মনে করে, ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন কার্যকর জবাবদিহি-ভিত্তিক সুশাসন। এটি নিশ্চিত করা ছাড়া, শুধু একীভূত করলেই সংকট মোকাবিলা করা যাবে বা গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা পাবে কিংবা খেলাপি ঋণ কমে আসবে- এমন ভাবনা সত্যিই অলীক।’ একীভূতকরণ নীতিমালায় দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকদের পাঁচ বছর পর পুনরায় একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফেরত আসার সুযোগের সমালোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।  তিনি বলেন, ‘এ বিধান দুর্বল ব্যাংকের সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির বদলে পুরস্কৃত করা এবং এক ধরনের দায়মুক্তি দেবার বিধান। পাশাপাশি, দুর্বল ব্যাংকের নিরীক্ষাকালে নতুন কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির চিত্র উঠে এলে সে বিষয় গোপন রাখার যে বিধান নীতিমালায় রাখা হয়েছে, তা শুধু আর্থিক অনিয়মের চিত্রকেই ধামাচাপা দেবে না, একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। যা এক কথায় অন্যায়কে সুরক্ষা দেওয়ার শামিল।’ এভাবে একীভূতকরণের নামে যা ঘটছে, তা হতাশাজনক এবং ঋণখেলাপিদের হাতে ব্যাংকিং খাতের অব্যাহত জিম্মিদশার পরিচায়ক বলে জানিয়েছে টিআইবি।
২৩ এপ্রিল, ২০২৪

দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ প্রস্তাব এখনো আসেনি: অর্থমন্ত্রী
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব এখনো অর্থমন্ত্রীর কাছে আসেনি জানিয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগে প্রস্তাব আসুক। তারপর দেখা যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনারসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এমন তথ্য দেন। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও জানান, উন্নত অর্থনীতিতে অহরহ ব্যাংক একীভূতকরণ হয়ে থাকে। সেই প্রেক্ষিতে দেশে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ ভালো। এমনটি হতেই পারে। এ সময় আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালোই করছে; তারা যেসব শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ তার বেশিরভাগই পূরণ করেছে। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা আজ (গতকাল) এসেছিল। তারা আবার মার্চ মাসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। আশা করছি, বাংলাদেশ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেয়ে যাবে।’ কিস্তির বাইরে নতুন কোনো বাজেট সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে। পরিস্থিতি ভালো, দেখা যাক, কী হয়—বাংলাদেশ পরীক্ষায় পাস করেছে। ভালো করার লক্ষণগুলো কী—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো করছি—এটাই তো ইতিবাচক বিষয়; ফেল করলে কি আমরা বলব যে পাস করেছি।’ এ ছাড়া ডলারে বিনিময় হার নির্ধারণের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারভিত্তিক নয়, যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কথা হয়েছে, সেটাই চলবে।
০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ প্রস্তাব এখনো আসেনি: অর্থমন্ত্রী
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব এখনো অর্থমন্ত্রীর কাছে আসেনি জানিয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগে প্রস্তাব আসুক। তারপর দেখা যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় হাইকমিশনারসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এমন তথ্য দেন। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও জানান, উন্নত অর্থনীতিতে অহরহ ব্যাংক একীভূতকরণ হয়ে থাকে। সেই প্রেক্ষিতে দেশে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ ভালো। এমনটি হতেই পারে। এ সময় আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালোই করছে; তারা যেসব শর্ত দিয়েছে, বাংলাদেশ তার বেশিরভাগই পূরণ করেছে। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা আজ (গতকাল) এসেছিল। তারা আবার মার্চ মাসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। আশা করছি, বাংলাদেশ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেয়ে যাবে।’ কিস্তির বাইরে নতুন কোনো বাজেট সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে। পরিস্থিতি ভালো, দেখা যাক, কী হয়—বাংলাদেশ পরীক্ষায় পাস করেছে। ভালো করার লক্ষণগুলো কী—এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো করছি—এটাই তো ইতিবাচক বিষয়; ফেল করলে কি আমরা বলব যে পাস করেছি।’ এ ছাড়া ডলারে বিনিময় হার নির্ধারণের প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারভিত্তিক নয়, যে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কথা হয়েছে, সেটাই চলবে।
০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
X