ভারতের নির্বাচন দেখার আমন্ত্রণ পেল আ.লীগ
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ৭টি ধাপে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই নির্বাচনে তাদের সার্বিক প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখানোর জন্য বিদেশি কিছু রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে একমাত্র আওয়ামী লীগকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ভারতে বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে।  অন্যদিকে, বাংলাদেশে পরপর ৪টি জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এই সময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যুগান্তকারী উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন পুরো পৃথিবীকে অবাক করেছে।  ভারতের ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র ভারত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি যে আস্থাশীল এবং আওয়ামী লীগকে যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও তাদের প্রকৃত বন্ধু মনে করে, এই আমন্ত্রণ সেই ইঙ্গিতই বহন করে।  বিজেপির নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচারণা পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে তারা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য অনুরোধ করেছে। এই আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য ড. সেলিম মাহমুদকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ভারত সফরে মনোনীত করেছেন। এই সফরটি মূলত পাঁচ দিনের। ১ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত। এই সফরে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধির সঙ্গে বিজেপির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক রয়েছে। দিল্লির বাইরে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণা সরেজমিনে দেখানোর জন্য বিজেপি আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিকে ছত্রিশগড়ে নিয়ে যাবেন।  প্রসঙ্গত, ভারতের নির্বাচন ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে যা ১ জুন পর্যন্ত চলবে। ৪ জুন ভোটের ফলাফল ঘোষিত হবে। 
০১ মে, ২০২৪

কেন ৪৪ দিন ধরে চলবে ভারতের নির্বাচন
ভারতে শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ১৯ এপ্রিলে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলবে ১ জুন পর্যন্ত। মোট ৯৭ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এই নির্বাচনে। সংখ্যার বিচারে যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও বেশি। ৪৪ দিন ধরে চলা এই নির্বাচনের ফল ঘোষিত হবে ০৪ জুন। পৃথিবীতে এত বিশাল আয়োজন দ্বিতীয়টি আর নেই।  ভারতের নির্বাচনে কেন এত সময় লাগে- এর মূল কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, ভারতের বিশাল আকার এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। দ্বিতীয়ত, বিস্ময়কর হলেও এই বিপুল ভোটার সংখ্যার প্রত্যেকে যাতে তাদের ভোট দিতে সক্ষম হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫১-৫২ সালে ভারতের প্রথম নির্বাচনে ভোট সম্পন্ন করতে প্রায় চার মাস সময় লেগেছিল। আবার ১৯৮০ সালে সময় লেগেছিল মাত্র চার দিন। ২০১৯ সালে লোকসভার নির্বাচন সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল ৩৯ দিন যা এযাতকালে ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নির্বাচন ছিল। ভারতের মোট নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা ৯৬৯ মিলিয়ন যা সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি। মোট ৫৪৩ জন বিধায়ককে বেছে নেওয়ার জন্য সাত ধাপে ভোটগ্রহণ হবে। ভারতের ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি ফেডারেল অঞ্চলে আলাদা আলাদা পর্বে ভোট হবে। প্রতিটি পর্ব এক দিনের, প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ হবে ১৯ এপ্রিল এবং সর্বশেষ পর্বের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ০১ জুন। কিছু কিছু রাজ্য একদিনে তাদের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করবে। তবে কোথাও ভোট দিতে কয়েক দিনও সময় লাগতে পারে। ২০ কোটি জনসংখ্যার উত্তর প্রদেশ ভারতের বৃহত্তম রাজ্য। শুধু এই একটি প্রদেশের লোকসংখ্যা মোটামুটি ব্রাজিলের মোট জনসংখ্যার আকারের সমান। ৭ দিন ধরে ভোটগ্রহণ হবে এই প্রদেশে। ভোটের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ভারতের নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে, প্রত্যেক ভোটারের বাড়ির ২ কিলোমিটারের মধ্যে একটি ভোট গ্রহণের বুথ রয়েছে। এমনকি কোনো এলাকার একজন ভোটারও যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এজন্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অনেক দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ভ্রমণ করতে হবে। এমনটিই বলছেন, ভারতের নির্বাচনবিষয়ক গবেষক চাক্ষু রায়। নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মী মিলিয়ে এই নির্বাচনের কাজ করবেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ। তারা দেশের মরুভূমি এবং পর্বতমালা অতিক্রম করে প্রত্যেকটি গ্রাম এবং বসতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। কখনো কখনো নৌকায় চড়ে এমনকি হেঁটে তারা প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য এটা বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ। ২০১৯ সালে যখন ভারতে শেষবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, তখন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের একটি দল চার দিনে ৪৮০ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। তারা চীনের সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েছিলেন যাতে সেখানকার বাসিন্দারা তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এই দীর্ঘ পথের বেশিরভাগই তাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল হেঁটে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের একটি দল ২০১৯ সালের নির্বাচনে হিমালয়ের ১৫ হাজার ২৫৬ ফুট উঁচুতে অবস্থিত একটি গ্রামে পৌঁছেছিলেন। এটি বিশ্বের কোথাও সর্বোচ্চ অবস্থানে স্থাপন করা ভোটকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এবারও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও স্থাপন করা হবে ভোটকেন্দ্র। যার মধ্যে একটি দক্ষিণ কেরালা রাজ্যের একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভিতরে এবং আরেকটি পশ্চিম গুজরাট রাজ্যের একটি শিপিং কনটেইনারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে বহু-পর্যায়ের নির্বাচনের পেছনে একটি মূল কারণ হলো নিরাপত্তা। হাজার হাজার ফেডারেল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, যারা সাধারণত সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত থাকেন তারাও নির্বাচনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। সহিংসতা প্রতিরোধ করতে এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভোটিং মেশিন পরিবহনের জন্য রাজ্য পুলিশের সাথে তাদের মোতায়েন করা হবে। ভারত! নদী, পাহাড়, বরফ, জঙ্গল কি নেই এই দেশে। নিরাপত্তা বাহিনীকে ভোটের সরঞ্জাম এই দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছতে হবে। এবারের নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেছেন, আমরা প্রত্যেকটা এলাকায় পৌঁছতে চেষ্টা করব যাতে ভোটারদের কষ্ট করতে না হয়। কৃতিকা পাথি : অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের একজন রিপোর্টার। ভাষান্তর- মুজাহিদুল ইসলাম  
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার নিবন্ধ / বাংলাদেশের দৃষ্টিতে ভারতের নির্বাচন
ভারতের ১৮তম সাধারণ লোকসভা নির্বাচন শুরু হচ্ছে কাল। চলবে ১ জুন পর্যন্ত, যা মোট ৫৪৩ জন সংসদীয় প্রতিনিধিকে নির্বাচন করবে। নির্বাচন সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এবং ৪ জুন ফল ঘোষণা করা হবে। ভারতের এ লোকসভা নির্বাচনকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচন, কারণ প্রায় ১০০ কোটি ভোটার এ নির্বাচনে ভোট দেবেন। বর্তমান শাসক দল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির মোকাবিলা করছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ১২টি দলের জোট। পুরো নির্বাচনের বড় আকর্ষণ নরেন্দ্র মোদি, যিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদের ঝান্ডা উড়িয়ে ২০১৪ সালে বিপুল বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় বসে নিজেকে আর দলকে আরও সংহত করেছেন এ সময়ে। যদি এবারও তিনি জয়লাভ করেন, তাহলে ভারতের ইতিহাসে জওহরলাল নেহরুর মতো তিনিও টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার রেকর্ড গড়বেন। ভারতের এ নির্বাচন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আগামীকাল শুরু হয়ে জুনের ৪ তারিখে গিয়ে ফল হবে। এ নির্বাচন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচনও। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে খরচ হয়েছিল ৮.৫ বিলিয়ন ডলার। এবার স্বাভাবিক কারণেই আরও বেশি হবে। লাখ লাখ ভোটকেন্দ্রে ভোটের আয়োজন করে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। ভারতের শাসনব্যবস্থা ব্রিটিশ ও মার্কিন শাসন পদ্ধতির সংমিশ্রণ। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ২৮টি অঙ্গরাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি ইউনিয়ন হলো ভারতের সরকার। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি, যিনি সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন ও শপথবাক্য পাঠ করান। ভারতের সংসদের দুটি কক্ষ। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা। এ কক্ষের সদস্যরা অঙ্গরাজ্যগুলোর বিধানসভা ও লোকসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তাদের মেয়াদ ছয় বছর। নিম্নকক্ষের নাম লোকসভা। এর সদস্যরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। হিসাব-নিকাশ বলছে, আবারও নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসতে চলেছেন। ভোটের বছরে রাম মন্দিরের উদ্বোধন করে মোদি সরকার ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দু ভোটারদের মন জয় করে নিয়েছেন বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী এবং বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজজীবনে ভারতীয় প্রভাবের কথা বিবেচনায় রেখে বলা যায় ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় এবং বিএনপিসহ তার মিত্রদের আন্দোলনকে উড়িয়ে নিজ দল ও নিজের পছন্দমতো অন্য দলের মধ্যে আয়োজন করে নির্বাচন সম্পন্ন করে আবার ক্ষমতায় শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল মনেই করে যে, আন্তর্জাতিক মহলের সব চাপ নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসাতে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার। বিরোধী দলের এমন ভাবনার সমর্থন পাওয়া যায় সরকারি দলের কোনো কোনো নেতার কথায়ও। গত ১৬ মার্চ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারত পাশে ছিল বলেই বাংলাদেশের নির্বাচনে বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র অশুভ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি। ভারতের প্রতি অভিমান বা ক্রোধ থেকে সামাজিকমাধ্যমে বিএনপিপন্থি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দেয়, যার কিছু কিছু প্রভাবও লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে এর রাজনৈতিক প্রভাবটাই বেশি চোখে পড়ছে। বিএনপি দলীয়ভাবে এ প্রচারে যোগ না দিলেও ফেসবুকে বিএনপির যত পেজ আছে সেগুলোতে ভারতীয় পণ্য বয়কট ও ভারতবিরোধী প্রচুর প্রচারণা চালাও হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাই রুহুল কবির রিজভী আহমেদ নিজের গায়ের চাদর ফেলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রচারে যোগ দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের তো বলেছেনই যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচালিত ‘ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইন’ সমীচীন নয়। আরও অনেক নেতা মন্তব্য করেছেন। মন্তব্য করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। ২৭ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যে বিএনপি নেতারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন, তাদের স্ত্রীদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে এবং সেগুলো কেন পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সাড়ে তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভারতের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাজে আগ্রহ অনেক। যদিও নির্বাচনে মোদির জয়লাভ নিশ্চিত জেনে সাধারণ মানুষের আগ্রহে কিছুটা হলে ভাটা পড়েছে, বাস্তবতা হলো—এরপরও মানুষ সেদিকে নজর রাখছে। ভারতে সংখ্যালঘু নিপীড়নের খবরে বাংলাদেশে উদ্বেগ বাড়ে এবং তার কিছু প্রতিফলনও দেখা যায় এ দেশে। ভারতের নির্বাচনের ঠিক আগে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করার জন্য সক্রিয় হয়েছে। এ পদক্ষেপের ফলে সেখানকার মুসলমানরা যে অবস্থায় নিপতিত হবেন তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা কীরকম পরিস্থিতিতে পড়বেন সেটাও বিবেচনার মধ্যে আসছে। উভয় দেশের রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজে বিষয়টি আলোচনায় থাকছে। সিএএ বাস্তবায়নের পর ‘এনআরসি’ বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বাস্তবায়নেরও পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির। এই এনআরসি কার্যকর হলে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে বহু মুসলিম ভারতের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ সীমান্তে। ভারতের এ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টটি (সিএএ) অতি সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ওই তিন দেশের যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পারসিদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছিলেন, তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ফলে স্বাভাবিক কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ২০১৪ সালের পর থেকে যারা গত প্রায় সাড়ে ৯ বছরে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের ফেরত আসতে হবে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ভারতের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। ঐতিহ্যগতভাবে মূলত কংগ্রেসের সঙ্গেই আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর সেই সরকারেরও জোরালো সমর্থন পেয়েছে আওয়ামী লীগ। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসায় তখন বিএনপি ও জামায়াত সেই বিজয়কে উদযাপন করেছিল এটা ভেবে যে, আওয়ামী লীগের প্রতি বিজেপির সমর্থন এতটা নিরঙ্কুশ হবে না। কিন্তু গত দশ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অনেক অমীমাংসিত ইস্যু রয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন। দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তিস্তাসহ আলোচনায় থাকা আটটি নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। বেশি জলঘোলা হয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে। চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায় তা আর বাস্তবায়ন করা যায়নি। একটি বড় ইস্যু সীমান্ত হত্যা। বারবার আশ্বাস দিয়েও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বন্ধ করছে না। এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসেও দুজনকে হত্যা করেছে বিএসএফ। বিএসএফ বাহিনী কেন এত হত্যা প্রিয় সেটা ভারত সরকারেরই বলা দরকার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে শান্তিতে রেখেও বাংলাদেশের নাগরিকরা ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক সুবিধা নিচ্ছে ভারত। ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে আমাদের সরকার। ভারতকে সেই সুযোগ দেওয়া হলেও স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে নেপাল কিংবা ভুটানে পণ্য রপ্তানি করার জন্য এখনো অনুমতি পায়নি বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষ মনেই করে যে, ‘একতরফাভাবে’ অনেক কিছু দেওয়া হলেও তার বিনিময়ে বাংলাদেশ ‘তেমন কিছু’ পায়নি ভারত থেকে। তাই এসব নানা সমীকরণে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভারতীয় লোকসভা নির্বাচন ব্যাপক আগ্রহের একটা বিষয়। নরেন্দ্র মোদি আবার আসেন বা অন্য কেউ যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে কি বাংলাদেশের বিষয়গুলো ভিন্নভাবে দেখা হবে? লেখক: প্রধান সম্পাদক, গ্লোবাল টেলিভিশন
১৮ এপ্রিল, ২০২৪
X