যেভাবে নির্মিত হলো মসজিদে নববী
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ রাসুল (সা.)-এর পবিত্র রওজা সংযুক্ত থাকায় মসজিদে নববীর প্রতি মুসলমানদের শ্রদ্ধা ও আবেগ অত্যন্ত বেশি। এই মসজিদের পাশেই ছিল মুহাম্মাদ (সা.)-এর ঘর। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মসজিদটির নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, মসজিদে নববীকে ঘিরেই ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিলো। ৬২২ সালে মক্কা থেকে ৮ দিনের দীর্ঘ যাত্রার পর মদীনার উপকণ্ঠে কুবা নামক স্থানে এসে অবতরণ করলেন হজরত মোহাম্মদ (সা.)। কয়েক দিন পরেই শুরু হয় মসজিদ নির্মাণকাজ। ৬২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় সাত মাস সময় লাগে কাজ শেষ হতে।  মদিনায় প্রবেশের পর রাসুল (সা.)-এর উট যে জায়গাটিতে বসে পড়েছিল, সেখানেই তৈরি করা হয় ঐতিহাসিক মসজিদে নববি। মদিনার দুই এতিম বালক সাহল ও সোহাইলের কাছ থেকে ১০ দিনারের বিনিময়ে জায়গাটি কিনে নেওয়া হয়। টাকা পরিশোধ করেন হজরত আবু বকর (রা.)। জমির ছোট এক অংশে রাসুল (সা.)-এর ঘর এবং বাকি অংশজুড়ে তৈরি করা হয় মসজিদ। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, মদিনায় পৌঁছার পর বনি আমর ইবনে আওফ গোত্রের এলাকার উঁচুভূমিতে চৌদ্দ রাত অবস্থান করেন রাসুল (সা.)। এ সময় বনি নাজ্জারের লোকজন তাকে ঘিরে ছিল। সবার মনে একটাই আকুতি, নবীজি (সা.) যেন তাদের মেহমান হন। আল্লাহর কুদরতি ফায়সালাকারী উট আবু আইয়ুব আনসারির বাড়িতে এল। সেখানেই নবীজি (সা.) অবস্থান করলেন। আনাস (রা.) বলেছেন, যেখানে নবীজির (সা.) উট থেমেছিল, তার সীমানায় ছিল একটি বাগান। বাগানটিতে ছিল খেজুরগাছ, কিছু কবর আর ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ। বাগান মালিকদের অনুমতি পেয়ে নবীজি (সা.) নির্দেশ দিলেন, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলো, কবরগুলো খুঁড়ে ফেলো এবং ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দাও। জায়গাটি পরিষ্কার করে শুরু হয় মসজিদের নির্মাণ কাজ। হিজরতের পর মদিনায় বিদ্যুৎগতিতে ইসলামের প্রসার ঘটতে লাগল। মসজিদে নববীতে জায়গা দ্রুতই সংকীর্ণ হয়ে আসতে লাগল মুসল্লিদের ভিড়ে। অতঃপর ৭ম হিজরীতে খাইবার যুদ্ধের পর রাসূল (সা.) মসজিদটিকে প্রস্থে ৪০ হাত এবং দৈর্ঘ্যে ৩০ হাত সম্প্রসারণ করলেন। এতে মসজিদটি ২ হাজার ৫০০ বর্গ মিটারের একটি বর্গাকার গৃহে পরিণত হল। এরপর ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে মসজিদে নববীকে সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এর গম্বুজে যে নীল আস্তরণ, ১৮১৭ সালে কিছু সংস্কারের পর সেটা লাগিয়েছিলেন তুর্কী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ। এখন পর্যন্ত সেই রং জ্বল জ্বল করছে। ১৯৩২ সালে সৌদি শাসনামল শুরু হওয়ার পর মসজিদে নববীর অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে।
০৭ এপ্রিল, ২০২৪

রোজাকে সামনে রেখে প্রস্তুত মসজিদে নববী
সামনে পবিত্র রমজান। এর আগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে মসজিদে নববীর কর্তৃপক্ষ। রমজানে আগত মুসল্লিদের স্বাগত জানাতে সব ধরনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে।  চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১১ মার্চ সৌদি আরবে পবিত্র রমজান শুরু হবে। রমজানে মসজিদে নববী থেকে প্রতিদিন ৮৫ লাখ ইফতার বিতরণের আয়োজন সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া পবিত্র এই মাসে মসজিদে নববী থেকে ২৫ লাখ জমজমের পানি বিতরণ করা হবে। এ জন্য ১৮ হাজার কন্টেইনার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  পবিত্র রমজানে মক্কা নগরীতে ওমরা করার জন্য মুসল্লিরা ভিড় করেন। এজন্য রমজানকে ওমরার মৌসুম বলা হয়। ওমরা পালন শেষ মুসল্লিরা মসজিদে নববী পরিদর্শনে মদিনা ভ্রমণ করে থাকেন।  গত বছর ২৮ কোটি মুসল্লি পবিত্র নগরী মদিনা ভ্রমণ করেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। 
০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 জিনিয়াতের প্রতারণার ফাঁদ / মসজিদে নববী থেকে লাইভে বাংলাদেশে সাবান বিক্রি
পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববীর পাশে বসে মুখে সাবান লাগিয়ে ফেসবুক লাইভে থাকেন বাংলাদেশি নারী জিনিয়াত। মসজিদে নববীর মিনার দেখিয়ে নিজের তৈরি করা সাবানের গুণগান প্রচার করেন তিনি। ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে হজে গিয়ে ক্রেতাদের জন্য দোয়া চাওয়া ও সাবান কোরবানির মতো প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জিনিয়াত। শুধু তাই নয়; মক্কায় গিয়ে আল্লাহর ঘর কাবাকে দেখিয়ে নিজের ক্রিম বিক্রির বিজ্ঞাপন তৈরি করেন জিনিয়াত। মুখ নয়, পুরো শরীর দুধের মতো সাদা করারও গ্যারান্টি দেন তিনি। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, এটা কোনো দিনই সম্ভব নয়।  ‘কাশ্মীরি বিউটি বাই জিনিয়াতের’ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জিনিয়াত জাহান। কোনো প্রকার ল্যাব ছাড়াই, ঘরে বসে নিজের হাতে সাবান, লোশন ও ক্রিম তৈরি করেন তিনি। যাতে নেই বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন। সাফরোন গট মিল্ক শোপ সাবান তৈরিরে রীতিমতো ভাইরাল জিনিয়াত। এরপর তৈরি করছেন ক্রিম, নারকেল তেলসহ নানা রকমের প্রসাধনী। নিজের তৈরি সাবান কতটা হালাল তা বোঝাতে ওমরায় গিয়ে নিজেই ব্যবহার করেন তিনি। তার ভাষ্য, যেহেতু ওমরায় এসে এই সাবানটা ‘আমরা ব্যবহার করছি, বুঝতেই পারছেন এটা কতটা হালাল।’  ফেসবুক লাইভে জিনিয়াত দাবি করেছেন, তার সাবান নাকি বাংলাদেশের সবাই একবার করে হলেও ব্যবহার করেছেন। মসজিদে নববীর ভিডিও দেখিয়ে হাতে লোশন নিয়ে ফেসবুকে লাইভে হাজির হন জিনিয়াত। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে বলেছি আমার পণ্য যে যে নিয়তেই ব্যবহার করে না কেন। তার যেন সমস্ত সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।’ ইন্না ইল্লাহি... রাজিউন বলে নিজের সাবানকে কোরবানি করে তার মাগফিরাতও কামনা করেন জিনিয়াত।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মান নিয়ন্ত্রিতহীনভাবে তৈরি করা এসব প্রসাধনী ব্যবহারে মুখে ব্রোন, মেছতা ও ঘাসহ হচ্ছে ত্বকের চিরস্থায়ী ক্ষতি। এসব প্রসাধনী ব্যবহারে বাড়ছে স্কিন ক্যান্সারসহ নানা রকমের রোগের ঝুঁকি।   ইউনাইটেড হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ  ডা. তাসনিম খাম কালবেলাকে বলেন, ‘এই ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের হচ্ছে মারাত্মক রকমের ক্ষতি। প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগী আসছে যারা এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে স্কিনের ক্ষতি করে ফেলেছেন।’ ঢাকার আভিজাত শপিংমলে রয়েছে জিনিয়াতের শো রুম। সেখানে গিয়ে দেখা যায় পুরো শো রুমে সাজানো সাবান, ক্রিম, সানস্ক্রিন ক্রিম, কোকোনাট ওয়েলসহ বহু কিছু।  নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্য তৈরি করতে নিতে হয় বিএসটিআই বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি। তার কোনো পণ্যের গায়ে নেই বিএসটিআইয়ের সিল। শুধু তাই নয়, কোনো পণ্যের গায়ে উৎপাদন বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখও নেই। এমন পণ্য বাজারজাতে রয়েছে শাস্তির বিধান।  বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক মো. রিয়াজুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘সাবান, ক্রিম তৈরি করে বাজারজাত করতে অবশ্যই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগবে। কেউ অনুমোদনবিহীন পণ্য তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরেমহাপরিচালক (অতি. সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান কালবেলা বলেন, ‘অনলাইনে বিক্রি হওয়া এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের সাবধান হতে হবে। এসব পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে নানা রকমের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের কাছেও এমন অনেক অভিযোগ এসেছে।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জিনিয়াতের শো রুম গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং অফিসার মাহাদির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সাবানটি ত্বকের জন্য অনেক বেশি ভালো কাজ করে।’ বিএসটিআইয়ের অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু আছে, কিছু নেওয়া হচ্ছে।’  তবে কোথা থেকে অনুমোদন তা স্পট করে বলতে পারেননি তিনি।  বর্তমান সময়ে অনলাইনে জমজমাট ‘কাশ্মীরি বিউটি বাই জিনিয়াতের’ মতো এমন বহু নামধারী প্রতিষ্ঠান। যারা প্রতিনিয়তই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজির হন নানা রকমের পণ্য নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের কোনো পণ্য ব্যবহার না করার আহব্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
X