বাকৃবিতে গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন
সম্প্রতি গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সংসদ। রোববার (১২ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড়ে মানববন্ধনের আয়োজন করে সংগঠনটি।  মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক তারেক আবদুল্লাহ বিন আনোয়ারসহ ছাত্রইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত বিশ্বাস।   মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আজ সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান। সারা দেশে যখন গাছের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে, ঠিক তখনই বাকৃবিতে ক্রমাগত বৃক্ষ নিধনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। উন্নয়নের নামে গাছ কাটার এ সংস্কৃতি পরিবেশের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না। উন্নত পদ্ধতিতে গাছ না কেটেও ভবন নির্মাণ করা যায় কিংবা বিকল্প জায়গায় ভবন নির্মাণ করা যায়। কিন্তু তা না করে কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার পদ্ধতিকেই গ্রহণ করেছে। বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গাছ লাগানো হয়নি। আবার লাগানো হলেও তা যথাযথ পরিচর্যা করা হয়নি। অথচ গাছ কাটার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো বাছবিচার নেই। এ সময় সাধারণ সম্পাদক তারেক আবদুল্লাহ বিন আনোয়ার বলেন, গাছ না কেটে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে অবকাঠামো নির্মাণ এবং নতুন বৃক্ষরোপণ ও তাদের যথাযথ পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। যদি ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এ বৃক্ষনিধনের আত্মঘাতী কর্মসূচি থেকে সরে না আসে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সবাইকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতিক সময়ে বাকৃবি ক্যাম্পাসে বড় বড় গাছ কাটার ঘটনা ঘটছে। অবকাঠামো নির্মাণের নামে এসব বৃক্ষ নিধনের ঘটনা ঘটেছে। গত ২ মে ভেটেরিনারি অনুষদ সংলগ্ন প্রাঙ্গণে প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ কেটে ফেলা হয়। এ ছাড়াও প্রায় ২ বছর আগে প্রক্টর অফিসের সামনের মে ফ্লাওয়ার গাছ কাটা হয়। বেশকিছু দিন পূর্বে তাপসী রাবেয়া হলের সামনেও গাছ কাটা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফার্স্ট গেট থেকে ফসিল পর্যন্ত রাস্তাটির চার লেন উন্নীতকরণের প্রকল্পে এ রাস্তার ২ ধারের অনেক পুরোনো কৃষ্ণচূড়া গাছ কেটে ফেলা হয় এবং বড় বড় গাছ কাটার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের রয়েছে।
১২ মে, ২০২৪

সার্বজনীন পেনশন‌ বাতিলের দাবিতে খুবি শিক্ষকদের মানববন্ধন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সার্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন‌ প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষকরা। রোববার (১২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শিক্ষকরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল দাবি করেন। তারা বলেন, এমন বৈষম্যমূলক পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইবে না। মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় না আসলে মেধাবী শিক্ষার্থীও তৈরি হবে না। এর মাধ্যমে একটি মেধাশূন্য জাতি তৈরি হবে। দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, সাধারণ শিক্ষকদের এই দাবি সমগ্র শিক্ষক জাতির দাবি। আমরা চাই মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসুক। কিন্তু তাদের জন্য প্রণোদনামূলক বেতন যদি না থাকে তাহলে মেধাবীরা এ পেশায় আসবে না। আমাদের দুটো দাবি হলো এই সার্বজনীন পেনশন স্কিমকে প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দিতে হবে, যেন মেধাবী শিক্ষকরা জাতি গঠনে অংশগ্রহণ করতে পারে। মানববন্ধনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এস এম ফিরোজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক মো. শরীফ হাসান লিমনসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
১২ মে, ২০২৪

সাত দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের মানববন্ধন
রেশনিং পদ্ধতি চালুসহ বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল ঘোষণা, অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা প্রদান, টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল, সচিবালয়ের ন্যায় পদ-পদবি এবং অভিন্ন নিয়োগবিধি বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়ভিত্তিক সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে গঠিত জোট-বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এ মানববন্ধন করেন। সে সময় সরকারি কর্মচারীরা বলেন, সরকার যে বেতন-ভাতা দিচ্ছে, সেটা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। সচিবালয়ের মতো পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। এ ছাড়াও সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ি ভাড়া, রেশনিং পদ্ধতি চালু, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা ও টিফিন প্রদানের অনুরোধ জানান।
১১ মে, ২০২৪

সর্বজনীন পেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপণ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতি। বৃহস্পতিবার (৯ মে) বেলা ১১টার দিকে শাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবীরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গত ১৩ মার্চ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয় পেনশন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যেখানে বলা হয়েছে, সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ধারা ১৪ এর উপধারা-২ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এর অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী, তারা যে নামেই অভিহিত হন না কেন, আগামী ১ জুলাই ও তার পরে নতুন যোগদান করবেন, তাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি মনে করে, এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। ঘোষিত প্রজ্ঞাপন শিক্ষক সমাজের জন্য অবমাননাকর এবং বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাখ্যান করে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিও জানায় শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিয়ে বলেন, সর্বজনীন বলতে আমরা বুঝি সবার জন্য, কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের ওপর যে স্কিম চালু করা হচ্ছে এটা খুবই বৈষম্যমূলক। এ প্রজ্ঞাপন অতি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। তা ছাড়া তিনি আগামী ১৩ মে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌন মিছিলে অংশগ্রহণ করার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।  বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘একটা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এটম বোমার প্রয়োজন হয় না, শুধু শিক্ষকদের সুবিধাবঞ্চিত করাই যথেষ্ট। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে শিক্ষকদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে যার ফলে দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। মেধাবীরা দেশে থাকুক এটা হয়তো একটা শ্রেণি চাচ্ছে না এবং এদেশে শিক্ষকদের কদর করা হয় না বলেই তারা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বৈষম্যমূলক সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
১০ মে, ২০২৪

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন
গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে বৈষম্যমূলক দাবি করে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন পালন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। সোমবার (৬ মে) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবন সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন চত্ত্বরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে সকল শ্রেণির কর্মচারীদের এই সংগঠনটি। মানববন্ধনে তারা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত একটি বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন সকল শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- 'সকল স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং উহাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরিতে যে সকল কর্মকর্তা বা কর্মচারী, তাহারা যে নামেই অভিহিত হউন না কেন, ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নূতন যোগদান করিবেন, তাহাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভূক্ত' করবে উল্লেখ আছে। হঠাৎ করেই এমন একটি প্রজ্ঞাপন জারির ফলে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়েছে।  তারা বলেন, এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কর্মচারীরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। একই বেতন স্কেলের আওতাধীন কর্মচারীদের জন্য ভিন্ন নীতি সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এছাড়া, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়সহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে শিক্ষা ও গবেষণাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতনভূক্ত কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সমর্থন করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হন ও কারাবরণ করেন। এছাড়া, কর্মচারীদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উন্নত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ব্যাহত হবে। কেননা, এর ফলে যোগ্য ও দক্ষ জনবল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চাকরি করতে আগ্রহী হবেন না।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদের দাবি, এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দুরভিসন্ধি রয়েছে কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার। যে মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় এসে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মচারী সমাজও তাঁর উন্নয়ন যাত্রায় বিপুল উৎসাহ নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছেন, ঠিক সেই মুহুর্তে বিদ্যমান সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে আমাদের আন্দোলনের পথে ঠেলে দেওয়ার পুরনো কৌশল শুরু হয়েছে বলে আমরা মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের কর্মচারীরা অনতিবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা ও অসন্তুষ্টি লাঘবের এবং নবম জাতীয় বেতনস্কেলের দাবি জানাচ্ছে।  মানববন্ধন কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ সরোয়ার মোর্শেদ এবং কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. মোবারক হোসেনসহ অনেকেই অংশ নেন।
০৬ মে, ২০২৪

ফিলিস্তিন ইস্যুতে চবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন মুভমেন্টে’ সংহতি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘বয়কট ইসরায়েল’ বলে স্লোগান দিতে দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সোমবার (৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ফিলিস্তিনের চলমান স্বাধীনতা আন্দোলন শুধু মুসলিমদের ইস্যু নয়, এটা গোটা মানবজাতির মানবতার ইস্যু। আজকের এই মানববন্ধনে উপস্থিত হতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। সবচেয়ে বড় মূল্যবান বিষয় হলো ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো, অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়ানো। ফ্যাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইশতিয়াক হোসেন মজুমদার বলেন, সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক বিষয় হলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিশেষত স্বয়ং ইসলরায়েলের সবচেয়ে বড় দোসর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে ও ইসলরায়েলের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আন্দোলন করছে। অথচ আরবরা জাতি ভাই হয়েও আজ নির্বিকার, আরব শাসকগোষ্ঠীসহ জনগণ পর্যন্ত ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে আছে। তাদের এই ভণ্ডমী একদিন তাদের পতনের কারণ হবে, ইনশাআল্লাহ। যে জাতি স্পেন বিজয় করতে পারে, সে জাতি আজ নিজের বোনের আর্তনাদ শুনতে পায় না। আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নিয়ামত উল্লাহ ফারাবী বলেন, আমেরিকা গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা সেজে আমাদের মানবাধিকার শেখাতে আসে, অথচ খোদ তাদের ঘরেই প্রতিনিয়ত মানবতা লঙ্ঘন হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, অথচ মার্কিন প্রশাসন সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখতে পায় না। গত ৮ মাসের জুলুমের করাল গ্রাসে আমাদের ৩৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ভাই শহীদ হয়েছেন, শহীদদের কাতার আরও লম্বা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব বিবেক এখনও আইসিইউতে রয়ে গেছে। আমরা আজকের মানববন্ধন থেকে ইসরাইল ও তাদের দোসরদের সকল পণ্য বয়কট ঘোষণা করছি।
০৬ মে, ২০২৪

মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
সাধারণ মানুষের আবেগকে পুঁজি করে আশ্রয়ের নামে ৯০০ অসহায় অজ্ঞাত মানুষের কিডনি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের অভিযোগ তুলে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।  শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, মিরপুর এলাকায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের নামে মিল্টন সমাদ্দার বাঙালি জাতির আবেগের সঙ্গে খেলা করেছে। সে এই শিশু ও বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া অসহায় ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষের কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করেছে। আমরা এই কুলাঙ্গারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই কুলাঙ্গারকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। তারা অভিযোগ করে জানান, মিল্টন সমাদ্দার বাঙালি জাতির আবেগকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও বিদেশে থাকা বিভিন্ন প্রবাসীদের কাছ থেকে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের নামে বিপুল পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে একজন প্রতারক, আমরা চাই দ্রুত তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়।   মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং পল্লবী থানা যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল কালবেলার প্রিন্ট ভার্সনে ‘মানবিক মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর মিল্টন সমাদ্দার’ শিরনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। কালবেলার পাঠকদের জন্য সংবাদটি হুবহু তুলে ধরা হলো- মিল্টন সমাদ্দার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচিত একটি নাম। মানবতার সেবক হিসেবে তার পাঁচটি ফেসবুক পেজে অনুসারী (ফলোয়ার) সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। অসহায় মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম। রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়। মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়াও মেলে প্রচুর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু এটাই মিল্টনের আসল চেহারা নয়। মানবিকতার আড়ালে তিনি যা করেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, প্রচার করছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। লাশ দাফন করার যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতেও আছে বিরাট গরমিল। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ। মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিল অর্থের লোভ। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হিসাব মেলে না মরদেহের, অভিযোগ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরির: মিল্টন সমাদ্দারের ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, তার আশ্রমে সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ অসুস্থ রোগী থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে মিল্টন দাবি করেন। মিল্টন জানান, যাদের দাফন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০০ জন তার আশ্রমে মারা গেছেন। আর বাকি ৩০০ মরদেহ রাস্তা থেকে এনে তিনি দাফন করেছেন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে দাবি তার। তবে কালবেলার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সরেজমিন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সেখানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এসব মরদেহের ডেথ সার্টিফিকেট কালবেলার হাতে রয়েছে। এ ছাড়া রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ১৫টির মতো মরদেহ দাফনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে আজিমপুর কবরস্থানে ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের দাফন হয়নি বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার দায়িত্বরতরা। তাহলে মিল্টন সমাদ্দারের দাবি অনুযায়ী ৯০০ মরদেহ দাফন করা হলে বাকি ৮৩৫টি মরদেহ কোথায় গেছে? ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে অবস্থানকালে কারও মৃত্যু হলে তার সার্টিফিকেট দেন মাহিদ খান নামের একজন চিকিৎসক। তবে তার স্বাক্ষর এবং সিলের সঙ্গে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ নেই। বিএমডিসির বিধি অনুযায়ী চিকিৎসকের স্বাক্ষর এবং সিলে নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে মোহাম্মদ আব্দুল মাহিদ খান নামে একজন চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায়। কমফোর্ট হাসপাতালে তার চেম্বার রয়েছে। তবে সরেজমিন ওই হাসপাতালে গিয়ে উল্লেখিত চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। করোনার সময় এ বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে প্রশ্ন করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন। মিল্টন সমাদ্দারকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার পরিচালক তোফাজ্জল হোসেন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘মিল্টন এক সময় বাসা ভাড়া শোধ করতে পারতেন না। এখন তিনি এগুলো করে কোটি কোটি টাকার মালিক। দামি গাড়িতে চড়েন। আড়ালে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চুরি করেন। আমাদের বায়তুর সালাম মসজিদে ওর মরদেহ ফ্রি গোসল করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিছু মরদেহ গোসল করানোর পর দেখা যায়, সবগুলোর শরীরে কাটা দাগ। এ বিষয়ে মিল্টনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তা থেকে মানুষ তুলে আনার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যাদের কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভালো থাকে, তাদের যথাযথ চিকিৎসা করানো হয়। তাদের জন্য ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর সুস্থ হলে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়া হয়। সুস্থ মানুষ কিন্তু কিছুদিন পরে দেখি মারা যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘বারেক চাচা মরদেহ গোসল করাতেন। চাচা বলেছেন, তিনি একবার ওর আশ্রমে গিয়ে এক ব্যক্তিকে সুস্থ সবল দেখে এসেছেন। এর দু-তিন দিন পরই মসজিদে গোসল করানোর জন্য ওই ব্যক্তির মরদেহ আসে। ওই লাশের শরীরেও পেটের দিক দিয়ে কাটা দেখা যায়। এরপর বারেক চাচাও মরদেহ গোসল করাতে অস্বীকৃতি জানান।’ অনেক খোঁজাখুঁজির পর দক্ষিণ পীরেরবাগ আমতলা বাজারে গিয়ে সন্ধান মেলে সেই বারেক চাচার। মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাকে ফোন করা হলে তিনি নিচে নামছেন জানিয়ে বাসার নিচে অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু এরপরই ফোন বন্ধ করে দেন। কয়েক ঘণ্টা পর ইন্টারকমে ফোন করে একজন লোক মারা গেছেন বলা হলে তিনি নিচে নামেন। তবে আশ্রম থেকে আসা মরদেহ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি। বারেক নামের এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি আগে তার মরদেহ গোসল করাতাম। এখন করাই না।’ এর কারণ জানতে চাইলে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে কোনো যোগাযোগ নেই।’ ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ কাজ করেছেন—এমন একজন বলেন, ‘কোনো রোগী অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় না। এখানে রেখেই চিকিৎসা করা হয়। কারণ, তিনি চান না কেউ পুরোপুরি সুস্থ হোক। এটা তার ব্যবসা।’ ওই ব্যক্তির কথার মিল পাওয়া যায় মৃতদের ডেথ সার্টিফিকেটেও। যতজনকে দাফন করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের প্যাডে। একটি আশ্রমে এত মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে মন্তব্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহাবুব কালবেলাকে বলেন, ‘এত মানুষ মারা যাওয়া অস্বাভাবিক। তার মানে উনার এখানে প্রোপার চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া উনি কতজনকে হাসপাতালে রেফার করেছেন, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। উনার এখানে তো সবাই মারা যেতে পারে না। কেউ বেশি অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে, চিকিৎসা করাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আশ্রম হসপিটালাইজড হলে সেখানে স্পেশালাইজড চিকিৎসক কে আছেন, সেটা দেখতে হবে। থাকলেও তিনি নিয়মিত যান কি না, সেটাও দেখতে হবে। প্রোপার চিকিৎসা হলে এত মানুষ মারা যাওয়ার কথা নয়।’ আর্থিক হিসাবে চরম অস্বচ্ছতা: সাধারণ মানুষের দানের টাকায় পরিচালিত অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয় সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরে আওতাধীন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়। মিল্টন সমাদ্দারও তার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের অনুমোদন সমাজসেবা থেকে নিয়েছেন। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে অডিট এবং দুই বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি নবায়নের কথা থাকলেও তিনি সেটি করেন না। মিল্টন সমাদ্দারের পাঁচটি ফেসবুক পেজে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ১৬টি নম্বর দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে খোলা হিসাবের মাধ্যমে চলে আর্থিক লেনদেন। এসব মোবাইল ব্যাংকিং এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে কালবেলা। এতে দেখা যায়, প্রতি মাসে কোটি টাকার মতো জমা হয়। তবে মিল্টনের আশ্রমে থাকা সর্বসাকল্যে ৫০ জন মানুষের দেখাশোনার জন্য এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় হয় কি না—সেই প্রশ্ন উঠেছে। সরেজমিন মিল্টনের আশ্রম পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিভিন্ন বিষয় প্রচার-প্রচারণার জন্য মিল্টনের রয়েছে ১৬ জনের একটি দল। এরা বিভিন্ন মানবিক গল্পের ভিডিও তৈরি করেন। এরপর সেসব ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেন। শুধু তাই নয়, তার পাঁচটি ফেসবুক পেজ নিয়মিতভাবে ডলার খরচ করে বুস্ট করা হয়। এজন্য গত এক সপ্তাহেই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে হিসাব পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যক্তিকে মারধর, জমি দখলের অভিযোগ: মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে মারধরের প্রমাণ মিলেছে কালবেলার অনুসন্ধানে। তার আশ্রমের ভেতরে রয়েছে নিজস্ব বন্দিশালা। সেখানে আছে লাঠিসোটা, পাইপসহ মারধরের নানা উপকরণ। চুন থেকে পান খসলেই তার লাঠিয়াল বাহিনী হামলে পড়ে। সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরের আগের দিন ১০ এপ্রিল সাভারের কমলাপুর এলাকার বাহেরটেকে নিজের কেনা জমি দেখতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের স্বীকার হন মো. সামসুদ্দিন চৌধুরী নামের ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মেয়ে এবং মেয়ের জামাই। বাধা দিতে গিয়ে মারধরে স্বীকার হন তারাও। মারধরে মেয়ের জামাই ফয়েজ আহমেদের হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় এবং সামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সামসুদ্দিনের মেয়ে সেলিনা বেগমও মারধরের হাত থেকে রক্ষা পাননি। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে প্রায় এক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম কালবেলাকে জানান, ‘আমাদের জমি সে কম দামে ক্রয় করতে চেয়েছে। জমি না বিক্রি করায় সে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। মিল্টন সরকারি রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে রেখেছে। যে কারণে আমাদের গাড়ি যাচ্ছিল না। পরে সরকারি রাস্তায় বেড়া দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তার লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে এসে বেধড়ক মারধর করে। এরপর আমার বাবা আর স্বামীকে মিল্টনের আশ্রমের ভেতরে নিয়ে একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখে। সেখানে অনেক লাঠিসোটা, পাইপ ও ছুরি ছিল। পাইপ দিয়ে একজনের পর একজন করে পেটাতে থাকে। মিল্টন নিজেও একটু পরপর এসে মারধর করে। আমি তখন মিল্টনের পায়ে ধরে আমার স্বামী ও বাবাকে ছেড়ে দিতে বললে আমাকেও বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে লোকজন এগিয়ে এলে আমাদের ছেড়ে দেয়।’ এ ঘটনায় মিল্টন সমাদ্দারকে প্রধান আসামি করে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লাহ বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন। মামলার তদন্ত চলছে। আমরা মিল্টন সাহেবের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েছি। এখনো দেয়নি।’ গার্মেন্টসে চাকরি খোঁজার নাম করে গত শুক্রবার সারাদিন সাভারের বাহেরটেক এলাকা ঘুরে ভয়ংকর সব তথ্য পাওয়া গেছে। পুরো এলাকাজুড়ে মিল্টন সমাদ্দার এক আতঙ্কের নাম। তার ভয়ে নিজের বাড়িতে যান না স্থানীয় খ্রিষ্টানপাড়ার অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে একজন হেমন্ত রোজারিও। মিল্টনের আশ্রমের পাশে তার একটি জমি রয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ওই জমি ক্রয় করেছেন। পরে মিল্টন সমাদ্দার জমিটি কিনে নিতে চান। তবে তিনি বিক্রি করতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে জটিমি জোর করে দখলে নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেন মিল্টন। বাধা দিতে গিয়ে হেমন্ত রোজারিও মারধরের শিকার হন। মিল্টন নিজে তাকে মারধর করে। এরপর স্থানীয় লোকজনের বাধায় ওই স্থাপনা ভেঙে ফেলা হলেও এখনো ভয়ে-আতঙ্কে নিজের জমিতে যেতে পারেন না। গত শুক্রবার দুপুরে হেমন্তের বাড়িতে গিয়ে তার চোখেমুখে ভয় ও আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়। তার মা, বোন ও স্ত্রীর অবস্থাও একই রকম। হেমন্ত রোজারিও কালবেলাকে বলেন, ‘আমি ওই জমি কিনেছি। আমি গরিব মানুষ। মিল্টন সাহেব আমার জমি কিনতে চাইছে। আমি বেচি নাই। আমার জমি জোর করে দখল করে একটা ঘর বানাইছে। বাধা দেওয়ায় আমারে ধইরা মারছে। পরে আমারে বলছে, তুই ওই জমিতে আসবি না। এলে তোরে মাইরালামু।’ নন্দন রোজারিও নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘উনাকে এখানে আশ্রম বানাতে আমরাই সাহায্য করেছি। উনি আমার জায়গায় জিনিসপত্র রেখে আশ্রমের কাজ করেছে। ভালো কাজ করে বলে আমরা কিছু বলি নেই। পরে দেখি এসবের আড়ালে তার অন্য উদ্দেশ্য। তিনি এখানকার খ্রিষ্টানদের জমি দখলের উদ্দেশ্যে এসেছেন। কেউ জমি বেচতে না চাইলেই তার উপরে নেমে আসে নির্যাতন। ওর লোকজন তাকে মারধর করে।’ এর আগে কল্যাণপুরের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকেও মারধর করেছেন মিল্টন সমাদ্দার। এরপর উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজির মামলা করেন। এ ছাড়া নুর আলম মানিক নামের এক ব্যক্তি নিজের বোনকে আনতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। নিরুপায় হয়ে তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পরে পুলিশ এসে তাকে আশ্রম থেকে উদ্ধার করে। সেই সময়ের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের সামনেই মিল্টন সমাদ্দার ওই ব্যক্তিকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করছেন। নুর আলম মানিক কালবেলাকে বলেন, ‘আমার বোনের মানসিক সমস্যা ছিল। আমি ফেসবুকে আমার বোনের ভিডিও দেখে চিনতে পেরে তাকে আনার জন্য মিল্টনের আশ্রমে যাই। আমি জুতা পায়ে দিয়ে তার আশ্রমের ভেতরে ঢোকায় সে আমার গায়ে হাত তোলে। আমাকে তার লোকজন বেধড়ক মারধর করে। জুতা ছিল মূলত উসিলা। সে আসলে আমার বোনকে দিতে চাইছিল না। এটি তার একটা ব্যবসা।’ এ ছাড়া মিল্টনের বিরুদ্ধে একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে। মিল্টনের মারধরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি তার জন্মদাতা পিতাও। ২০০১ সালে নিজের পিতাকে বেধড়ক মারধর করেন মিল্টন। সেই ঘটনার জেরে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল বলে এলাকাবাসীরা জানান। বরিশালের উজিরপুরের বৈরকাঠি গ্রামের শাহাদাত হোসেন পলাশ কালবেলাকে বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার তার নবাবাকে বেধড়ক মারধর করে। এ কারণে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে সে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে ওঠে। এখন শুনতাছি, উনি নাকি মানবতার ফেরিওয়ালা। এটা শুনে আমরা আশ্চর্য হয়েছি।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ: সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরাও একাধিকবার মিল্টনের তোপের মুখে পড়েছেন। গত ১১ এপ্রিল শ্যামলীর রিং রোডে সেন্ট্রাল মেডিকেলের গেটের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক মিল্টন সমাদ্দারকে বিষয়টি জানান। ফোন পেয়ে আসেন মিল্টন সমাদ্দার। এরপর ওই ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলার সময় নিউজ করার জন্য ভিডিও করতে গিয়ে মিল্টনের তোপের মুখে পড়েন একটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদক। সে সময় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। পরে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফের তোপের মুখে পড়েন অন্য একটি নিউজপোর্টালের অপরাধ বিভাগের প্রধান। হোয়াটসঅ্যাপে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে মেসেজ করেন মিল্টন সমাদ্দার। আশ্রিতদের হিসাব অতিরঞ্জিত: গত রোববার কল্যাণপুরের অফিসে মিল্টন সমাদ্দারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সে সময় তিনি জানান, তার আশ্রমে বর্তমানে ১৩০ জন নারী, ১২৬ জন পুরুষ, ৪২ জন প্রতিবন্ধী শিশু, মানসিক ভারসাম্যহীন মায়েদের ৬ জন সন্তান এবং তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ৭টি শিশু রয়েছে। তার হিসাবে সব মিলিয়ে আশ্রিতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১১ জন। তবে পরিচয় করে গোপন গত শুক্রবার সাভার এবং রোববার পাইকপাড়ার আশ্রম এলাকা ঘুরে মিল্টন সমাদ্দারের দেওয়া হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি। গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি খোঁজার কথা বলে সাভারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর সামনের একটি চায়ের দোকানে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন এ প্রতিবেদক। সে সময় আশ্রমের দ্বিতীয় তলায় ৩ জন, তৃতীয় তলায় ২ জন এবং চতুর্থ তলায় ৩ থেকে ৪ জনকে দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, আশ্রমে সর্বোচ্চ ২৫-৩০ জন থাকতে পারেন। এ ছাড়া পাইকপাড়ার আশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২০ জনের মতো লোক আছেন। বরিশালে চার্চ দখল: বরিশালে ‘চন্দ্রকোনা খ্রিষ্টান মিশনারি চার্চ’ দখল চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। দখলের উদ্দেশ্যে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিল-স্বাক্ষর জাল করে চার্চের নতুন কমিটি গঠন করে বরিশাল জেলা প্রশাসকে একটি চিঠি দেন। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় মিল্টন সমাদ্দারকে। কমিটির বাকি সদস্যদের প্রায় সবাই মিল্টনের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না চার্চের দায়িত্বরত যাজকরা। পরে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়, এ ধরনের কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়নি। এরপর তারা কোর্টে মামলা করলে কোর্ট জালিয়াতি করে চার্চ দখল করতে চাওয়া ব্যক্তিদের ওই চার্চের সীমানায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন। সরেজমিন বরিশালে গিয়ে ওই চার্চের যাজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দার চার্চ দখল করে সেখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বানাতে চেয়েছিলেন। তাতে ব্যর্থ হওয়ায় যাজকদের মারধরের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। হেনসন দানিল হাজরা নামে আরেক সহকারী যাজক কালবেলাকে বলেন, ‘চার্চ দখল করার জন্য আমাকে গুম করে যাজকদের নামে মামলা দিয়েছিল মিল্টন। মামলায় আমি গুম হয়ে গেছি দেখানো হয়। আসামি করা হয় আমার সহকর্মীকে। আমার বাবাকে ম্যানেজ করে মিল্টন এ কাজ করেন। তারা আমাকে গুম করে ফেলতে চেয়েছিল; কিন্তু পারেনি। পরে আমি পালিয়ে এসপি অফিসে হাজির হয়ে জানাই, আমি গুম হইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিল্টন ও তার বড় ভাই মোল্লা বাড়ির ব্রিজের ওপরে মসজিদের পাশে আমাকে একবার বেধড়ক মারধর করেন।’ অন্য আরেক যাজক কালবেলাকে বলেন, ‘এই চার্চ দখল করার জন্য মিল্টন সমাদ্দার আমাদের শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেছেন। মারধর করেছেন। আমাদের নামে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। যদিও সব মামলাই কোর্টে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার নিয়ে নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল কালবেলাকে বলেন, ‘সারা দেশে এমন ৬৯ হাজার সংগঠনের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সবকিছু জানা আসলে সম্ভব হয় না। তবে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে আমরা খতিয়ে দেখব।’ সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য গতকাল বুধবার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে ফোন করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘সাভারে আমার আশ্রমে বর্তমানে ২৫৬ জন লোক আছে।’ মরদেহ দাফনের হিসাবে গরমিল সম্পর্কে একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। আর্থিক হিসাবে অসংগতি, জমি এবং চার্চ দখলের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘আমি চিনি না। আপনি সাংবাদিক কি না, সেটা আমি কীভাবে বুঝব?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেন। আমার কোনো সমস্যা নাই, সারা দেশের মানুষ জানুক। তবে সেটা প্রোপার ইনভেস্টিগেশন করে করেন।’
২৭ এপ্রিল, ২০২৪

মেট্রোরেল সাভার পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন
সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনি/ নবীনগর পর্যন্ত মেট্রোরল প্রকল্প সম্প্রসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাভার পৌর এলাকার বাসিন্দারা।  বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১১টায় সাভার উপজেলা পরিষদের আমতলায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে স্থানীয় কয়েকশ নাগরিক যোগ দেন। এতে সাভার নাগরিক কমিটির সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মো. কামরুজামান খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া হক, সাভার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষানুরাগী সালাহউদ্দিন খান নঈম, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিজানুর রহমান মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী স্বরণ সাহা, প্রভাত ডি রোজারিও, বন্ধুরহাট যুব সংগঠনের আলোকুর রহমান, জাগরণী থিয়েটারের সভাপতি আজিম উদ্দিন প্রমুখ। বক্তারা এমআরটি-৫ প্রকল্প সাভার হেমায়েতপুর থেকে সাভার পৌর এলাকার রেডিও কলোনি/নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানান। এই প্রকল্পে সরকার যদি কোনোরকম জটিলতা মনে করে তাহলে এমআরটি-৬ প্রকল্প উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে বিরুলিয়া হয়ে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবি জানানো হয়। পর্যায়ক্রমে তা নবীনগর জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সম্প্রসারণের দাবিও জানান বক্তারা।  কর্মসূচিতে সড়কের ওপর দিয়ে সম্ভব না হলে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোরেলের যে প্রকল্প রয়েছে সেই প্রকল্পে সাভার অংশ যুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। ক্র্যাব সভাপতি মো. কামরুজামান খান জানান, মেট্রোরেলের প্রকল্প সাভার পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরাবর আবেদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে এ ব্যাপারে অবগতপত্র দেওয়া হয়েছে।  সেইসঙ্গে রেলমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকে পত্র দিয়ে এবং সরাসরি সবকিছু অবগত করা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত সাভারবাসী রেলসেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারের লাখ লাখ মানুষ মেট্রেরেলের সুবিধা প্রত্যাশা করেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান বক্তারা।
২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ঢাবি শিক্ষার্থীর বাবার ওপর হামলা, বিচার চেয়ে মানববন্ধন
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী লিটনের বাবা বশির আহমেদের ওপর রাতের আঁধারে অতর্কিত হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ঢাকাস্থ সুবর্ণচর উপজেলার শিক্ষার্থীরা।  সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। হামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী বশির আহমেদের ছেলে ও ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী লিটন মানববন্ধনে বলেন, আমার বাবা যখন রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন সন্ত্রাসীরা বাবার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমার বাবা দীর্ঘ আট-দশ দিন যাবৎ আইসিইউতে ভর্তি রয়েছে। যাদের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা হামলার মদদদাতা ও হামলাকারীদের বিচার চাই। লিটনের বোন মোর্শেদা আক্তার কাকলী বলেন, গত ১২ এপ্রিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে বাবার ওপর হামলা চালানো হয়। গত দশ দিন ধরে বাবা আইসিইউতে। আজ যদি আমার বাবার কিছু হয়ে যেত, হাজার প্রতিবাদের বিনিময়েও কি আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারত? আজ এখানে আমার বাবার হামলার বিচারের জন্য দাঁড়াতে হবে তা আমি বা আমার পরিবার কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তারাও তো কোনো না কোনো বাবার সন্তান। তাদের মা-বাবার কাছে আমার প্রশ্ন, এ কেমন সন্তান গড়ছেন আপনারা? আমাদের সমাজ এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, সামান্য ক্ষমতার লোভ আর এক-দুই হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে একজন ষাটোর্ধ্ব মানুষকে খুনের চেষ্টা করতে বিবেকে বাঁধল না? তিনি আরও বলেন, আমরা হাসপাতালে বেডে বসে প্রতিনিয়ত দোয়া করি, যেন কোনো সন্তান এই ধরনের অসহায় পরিবেশে না পড়ে। আমরা হাসপাতালের বেডে বসে বিচার চেয়ে যাই। আমার বাবা যদি রাজনীতি ব্যবহার করে অঢেল টাকা ও ক্যারিয়ার গড়তে, তাহলে হয়তো চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বিচার হয়ে যেত। বাবা সৎ পথে চলে আমাদের পড়াশোনা করিয়েছে বিধায় আমরা অসহায় হয়ে আছি। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের কাছে আমাদের বাবার ওপর হামলার বিচার চাই। একই সঙ্গে কেউ যেন চাইলেই কারও ওপর এমন নির্মম হামলা করতে না পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।  সাংবাদিক ইউসুফ আরেফিন বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে বশির আহমেদকে চিনি। তিনি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। তিনি তার তিন ছেলেমেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। তার মতো এমন গুণী মানুষকে হামলা করল কারা? সুবর্ণচর শান্তির জনপদ। সেখানে কখনো মামলা-হামলা মারামারি হয়নি। হঠাৎ করেই এই শান্ত জনপদের কী হয়েছে? একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদের ওপর রাতের আঁধারে কেন এই ধরনের হামলা? হামলাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, প্রশাসন তাদের গ্রেপ্তার করছে না। আমি অবিলম্বে এই হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। মানববন্ধন কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি শেখ মোহাম্মদ আরমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সুবর্ণচরের বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সিনিয়র এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আকবর আলী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
২২ এপ্রিল, ২০২৪

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কয়রায় মানববন্ধন
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধসহ নানা বিষয় নিয়ে খুলনার কয়রায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোমবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-সিডিও কর্তৃক মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।   এ সময় বক্তারা বলেন, উপকূলের তরুণদের সম্পৃক্ত করে সুন্দরবনের গাছ কাটা বন্ধে ও উপকূলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গ্রিনকোস্ট মুভমেন্টের উদ্দেশ্য। এই মুভমেন্টের মানববন্ধনে মূলত সুন্দরবনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি সুন্দরবনের বৃক্ষ ও প্রাণীসম্পদ রক্ষার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়াও উপকূলে গাছ কাটা ও পাখি শিকার বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এই মানববন্ধনে মুন্ডা সম্প্রদায়ের তরুণরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও আলোকিত তরুণরা অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবু হেনা কামাল তার বক্তব্য বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো। সুন্দরবন আছে বলেই উপকূলের মানুষ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পায় এবং সুন্দরবনে জেলে ও মৌয়ালরা উপার্জন করতে পারে। সুন্দরবনকে রক্ষার পাশাপাশি আমাদের উপকূলের জীববৈচিত্র্য রক্ষার দিকে মনোযোগী হতে হবে। সুন্দরবনকে সব হুমকি থেকে বাঁচাতে স্থানীয় এবং বন বিভাগের সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।  কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং এই মুভমেন্টের উদ্যোক্তা ইমরান হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সুন্দরবন আমাদের অন্যতম শক্তি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সুন্দরবন ঝড়ের গতিবেগ কমিয়ে দেওয়ার কারণে উপকূলে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। এ ছাড়াও সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো। সুন্দরবনের হরিণ শিকার করছে কিছু অসাধু মানুষ। এটি সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন ও উপকূলের গাছ এবং প্রাণিসম্পদ রক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি আগামীতে উপকূলকে সবুজায়ন করার উদ্দেশ্যে এই আন্দোলনটি মূলত শুরু করা হয়েছে। কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, এই আন্দোলনটি মূলত সুন্দরবনকে কেন্দ্রে করে শুরু করা হলেও পরবর্তীতে এটাকে আরও বিস্তৃত করা হবে।
১৫ এপ্রিল, ২০২৪
X