সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র, আশ্বাস বাংলাদেশের
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সব বৈঠকে দেশটিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার (১৬ অক্টোবর) সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতারের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেনও আশ্বস্ত করেছেন। সোমবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠকের পর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্র সচিব। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- বাইডেন প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশ্বস্ত হয়েছে কিনা। জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) জিজ্ঞেস করতে পারেন। তবে এটি বারেবারে বলছে তারা। বাংলাদেশও বারেবারে নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এর আগে সোমবার সকালে দুই দিনের সফরে বাংলাদেশ এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া সন্ধ্যায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আফরিন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে কক্সবাজার যাবেন তিনি। কালই ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে মার্কিন এ কর্মকর্তার। আফরিন আক্তারের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক মাসুদ আলমের বৈঠকের পর ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক বার্তায় বলা হয়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে দেখতে চায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। আমরা দুই দেশের শক্তিশালী বহুমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, দুই দেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদারত্ব, মধ্যপ্রাচ্য, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সাম্প্রতিক সফর, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা হয়েছে। এ ছাড়া আলোচনা হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে জনগণের ভোট প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে। এদিকে আজ সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আলোচনায় মার্কিন প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একই রকম। তারা চাচ্ছে আগামী নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং সহিংসতামুক্ত হয়। নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সংলাপ একটি রাজনৈতিক বিষয়। সংলাপ হবে কি হবে না, এ বিষয়টিতে আফরিন কোনো প্রশ্ন করেননি। নাগরিক সমাজের স্থান সংকুচিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তারা বলেছে, পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকার সমর্থন করে। সুপারিশগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ কি করছে বা কি করবে, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি। পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশ বাংলাদেশ সমর্থন করে কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা তা এখনো বিচার বিশ্লেষণ করছি। নির্বাচন কমিশনও এটা দেখছে। এ মুহূর্তে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য নেই। যুক্তরাষ্ট্র কি সংলাপ চায়– উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সংলাপের কথা যুক্তরাষ্ট্র বলেছে। নতুন করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে বৈঠকে কোনো পক্ষ কিছু বলেনি। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় কোনো চুক্তি হবে কিনা–উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ মুহূর্তে নতুন করে কোনো চুক্তির সম্ভাবনা দেখছি না। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কিনা– উত্তরে তিনি বলেন, তারা যদি অযাচিতভাবে এ বিষয়ে কথা বলে এবং সেটি যদি আমরা মনে করি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, তখন আমরা ভিয়েনা সনদের কথা বলি। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বা উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে যদি কোনো মন্তব্য থাকে অভ্যন্তরীণ আলোচনায়, সেটা আমরা সবসময়ে উত্তর দিতে প্রস্তুত। কিন্তু জনসম্মুক্ষে কিছু বললে আমাদের আপত্তি রয়েছে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব র‍্যাব ও এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, প্রত্যাবাসন যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও সুরক্ষিত এবং টেকসই হয়। এ ছাড়া রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আমলে নিতেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
১৬ অক্টোবর, ২০২৩
X