দেশে মুক্ত গণমাধ্যম অনুপস্থিত : মঈন খান
‘একদলীয় শাসনে বাংলাদেশে আজ মুক্ত গণমাধ্যম অনুপস্থিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে রোববার (৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। মঈন খান বলেন, ‘আজকে জাতিসংঘের যে সিদ্ধান্তের কথা আমরা বলছি, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস, সেই মুক্ত গণমাধ্যমে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য কি? সেটা কিন্তু জাতিসংঘের দলিলে লেখা আছে। মুক্ত গণমাধ্যমের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো অর্জিত গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের কারণেই কিন্তু জাতিসংঘ মুক্ত গণমাধ্যমের কথা চিন্তা করেছে, ঘোষণা করেছে এবং পালনও করছে। কাজেই সে গণতন্ত্র যদি দেশে না থাকে, দেশে যদি একদলীয় শাসন কায়েম হয়ে থাকে, যদি মানুষের মুক্ত চিন্তা-বিকাশের কোনো সুযোগ না থাকে, যদি মানুষকে বাধ্য করা হয় একই লাইনে চলার জন্য, তাহলে কোনো স্বাধীনতা থাকে না। রেলগাড়ি যেমন একই লাইনে চলে, ডানেও যেতে পারে না, বায়েও যেতে পারে না। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে যেখানে একই লাইনে আওয়ামী লীগের নীতি অনুযায়ী, কথা অনুযায়ী, বক্তব্য অনুযায়ী, চিন্তাধারা অনুযায়ী চলতে বাধ্য করা হয় সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকতে পারে না।’ তিনি বলেন, আজকে এ কথা আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে বাংলাদেশ যে আদর্শে সৃষ্টি হয়েছিল সে গণতন্ত্র রক্ষার মূল কবজ হচ্ছে মুক্ত সংবাদমাধ্যম। সে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে আজকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হোক আজকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা। গণমাধ্যম বা মিডিয়া সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যে কথা বলেছিলাম আজ তার পুনরাবৃত্তি করা প্রয়োজন। সেটা হচ্ছে, দ্য মিডিয়া ইজ মোর পাওয়াফুল বাই দ্য স্টেট। আমি এ কথা বলি এবং আমি বিশ্বাস করি মিডিয়া একটি রাষ্ট্রের শক্তির চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী। কেন বলছি এই কথা? আমি সেটা ব্যাখ্যা দিয়ে বলছি, বিকজ দ্য মিডিয়া ক্যান ডু অ্যান্ড আন-ডু স্টেট এক্সরসাইজ। অর্থাৎ সরকার যতবড় শক্তিশালী হোক তারা যদি অন্যায় করে সে অন্যায়কে প্রকাশ করে দিয়ে মিডিয়া সেই রাষ্ট্রকে গড়তে পারে, ভাঙতে পারে। আজকের সরকার এই সত্যকে যত শিগগিরই উপলব্ধি করবে আমি বলব এটা তাদের জন্য তত মঙ্গল। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, আজকে দেশের কি অবস্থা সেটা আমরা-আপনারা সবাই জানি। আজকে যদি গণমাধ্যমকে আমরা মুক্ত করতে চাই, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা আনতে চাই, তাহলে  প্রথম আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সে দেশে গণমাধ্যম মুক্ত থাকে না এবং গণমাধ্যমের কর্মীরা কখনো স্বাধীন হবে না। আমি জোর গলায় বলছি, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কর্মীরা আজকে স্বাধীন নন। তারা আর্থিক সংকটে জর্জরিত। তাদের আজকে চাকরির নিশ্চয়তা নেই। যখনই সাংবাদিকরা সত্য কথা বলতে চায় তখন তাদের চাকরি চলে যায়। গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের মতো এ রকম নিরাপত্তাহীন অবস্থায় বাংলাদেশে আর কোনো মানুষ নাই। আজকে কথায় কথায় মামলা হচ্ছে, সাগর-রুনি হত্যাকারীর বিচার হচ্ছে না, ৬০ জন সাংবাদিক হত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে না, বন্ধ পত্রিকাগুলো খোলার কোনো ব্যবস্থা নাই। পাঁচ হাজার পত্রিকা বন্ধ করে, হাজার হাজার নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে আপনি মুক্ত গণমাধ্যমের কথা বলছেন হাসতেও কষ্ট লাগে, এটা চলতে পারে না।    বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভয়াবহ সংকটকাল অতিক্রম করছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এমন সংকটকাল গণমাধ্যমকে পার করতে হয়নি। গণমাধ্যমের টুঁটি এমনভাবে চেপে ধরা হয়েছে যে, এর স্বাধীনতা প্রায় বিপন্ন।  ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম, ফেডারেল সাংবাদিক সহসভাপতি খায়রুল বাশার, একেএম মহসিন, সিনিয়র সহকারি মহাসচিব বাছির জামাল, এহতেসামুল হক শাওন, কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা রফিক মুহাম্মদ, রাশেদুল হক, দিদারুল আলম, শাহনাজ পলি, খন্দকার আলমগীর হোসেন, সাঈদ খান বক্তব্য রাখেন।
০৫ মে, ২০২৪

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ২ ধাপ পেছাল
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর ২৭ দশমিক ৬৪ স্কোর নিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের পরে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) গতকাল শুক্রবার এ সূচক প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে এবার শীর্ষস্থান দখল করেছে নেপাল; ৬০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ৭৪তম অবস্থানে রয়েছে। এর পরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ। ৫২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দেশটির অবস্থান ১০৬তম। এবারের তালিকায় প্রথম অবস্থান থেকে ছিটকে তৃতীয় স্থান পেয়েছে ভুটান। ৩৭ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। এই তিন দেশের বৈশ্বিক অবস্থান যথাক্রমে ১৫০, ১৫২ ও ১৫৯তম। গত বছরের ১৬১ থেকে দুই ধাপ এগিয়ে এবার ১৫৯তম অবস্থান পেয়েছে ভারত। আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তলানিতে রয়েছে। ২৬ ধাপ পিছিয়ে দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ১৭৮তম, পয়েন্ট মাত্র ১৯ দশমিক ০৯। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কর্মস্থল হিসেবে মিয়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি। মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা হয়। এই সূচকে পাঁচটি বিষয় আমলে নেওয়া হয়। এগুলো হলো- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, যাতে রাজনৈতিক সূচকের উল্লেখযোগ্য হ্রাস থেকে নিশ্চিত হয়েছে। এ বছর এই সূচকের বৈশ্বিক গড় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।
০৪ মে, ২০২৪

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস / কেমন আছেন গাজার সাংবাদিকরা?
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস আজ (৩ মে)। বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আজ আলোচনা হচ্ছে। এ আলোচনায় গাজার সাংবাদিকদের অনেকটা আড়াল করে রাখছে পশ্চিমারা। অথচ সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে ফিলিস্তিনের গাজাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করে রেখেছে ইসরায়েল।  আলজাজিরার ভাষায়, গাজা সাংবাদিকদের জন্য এক মৃত্যুপুরী। কাজ করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক। সংবাদমাধ্যমটির শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রথম সাত মাসে ১০০-এর বেশি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) ও দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টের (আইএফজে) হিসাব এটি।  তবে গাজার মিডিয়া অফিসের হিসাবে, এ পর্যন্ত ১৪০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ যুদ্ধ শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।  অপরদিকে ৩৪ হাজার ৫৯৬ জন নিহত এবং ৭৭ হাজার ৮১৬ জন গাজাবাসী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৮ হাজারের বেশি নিখোঁজ। অনেক গণকবর এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। অপরদিকে নিজ দেশের প্রশাসন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা বিবেচনায়ও চাপে আছে ফিলিস্তিনিরা। আজ প্রকাশিত রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) সূচকে ফিলিস্তিনের অবস্থান ১৫৭তম। দেশটির বৈশ্বিক স্কোর ৩১ দশমিক ৯২।  সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো- ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা হয়। এর মাধ্যমে মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিতে দেশগুলোকে এক প্রকারের বৈশ্বিক চাপে ফেলা হয়। এদিকে আরএসএফ’সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু ইসরায়েলের কাছে তারা কোনো পাত্তাই পাচ্ছে না। আরএসএফের মধ্যপ্রাচ্য ডেস্কের প্রধান জোনাথন ড্যাঘের এপ্রিলে এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজার সাংবাদিকদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে। যারা চাইবে তাদের অবশ্যই সরিয়ে নিতে হবে এবং গাজার গেটগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জন্য খুলে দিতে হবে। ফিলিস্তিনি সাংবাদিকতাকে জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করতে হবে। শুক্রবার নিহত সাংবাদিকদের স্মরণে এক বিবৃতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা একজন সাংবাদিককে হারাই তখন বাইরের বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের চোখ ও কান হারাই। আমরা কণ্ঠহীনদের জন্য একটি কণ্ঠস্বর হারাচ্ছি।’ বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের জানমাল রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সত্যের মূল্য উদযাপনের জন্য এবং যারা সাহসের সঙ্গে কাজ করে তাদের রক্ষা করার জন্য।’
০৩ মে, ২০২৪

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আরও দুই ধাপ পেছাল বাংলাদেশ 
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে পাকিস্তানের চেয়েও পেছনে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। গতবারের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে ২৭ দশমিক ৬৪ স্কোর নিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম।  বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) শুক্রবার (৩ মে) এই সূচক প্রকাশ করেছে। ২০২৪ সালের সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের পেছনে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।  আরএসএফ জানায়, দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে এবার শীর্ষস্থান দখল করেছে নেপাল; দেশটি ৬০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট নিয়ে ৭৪তম অবস্থান দখল করেছে। ৫২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে এর পরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ। দেশটির অবস্থান ১০৬তম অবস্থানে।  এবারের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম অবস্থান থেকে ছিটকে গেছে ভুটান। দেশটির অবস্থান এবার তৃতীয়। ৩৭ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। এই তিন দেশের বৈশ্বিক অবস্থান যথাক্রমে ১৫০, ১৫২ ও ১৫৯তম। বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো- ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কর্মস্থল হিসেবে মিয়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রসঙ্গত, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা হয়। এই সূচকে পাঁচটি বিষয় আমলে নেওয়া হয়। এগুলো হলো- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা।
০৩ মে, ২০২৪

‘অপতথ্য রোধে সরকার, পেশাদার গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ একসঙ্গে কাজ করতে পারে’
অপতথ্য রোধে সরকার, পেশাদার গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ অংশীদার হয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বৃহস্পতিবার (২ মে) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ মাইডাস সেন্টারে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন উপলক্ষে ইউনেস্কো, টিআইবি এবং আর্টিকেল নাইন্টিন আয়োজিত ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটের প্রেক্ষাপটে মুক্ত গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের সমালোচনা করা সমস্যা নয়। সত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যে কোনো সমালোচনা করলে সেটা সরকার স্বাগত জানায়। যখন পরিকল্পিতভাবে অপতথ্যের প্রচার করা হয়, দেশের উন্নয়ন থামানোর জন্য সাংবাদিকতার অপব্যবহার করা হয়, অপতথ্য প্রচারের জন্য পরিবেশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেটিই সমস্যা তৈরি করে। এক্ষেত্রে অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা বন্ধে সরকার, পেশাদার গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজ একসঙ্গে অংশীদার হয়ে কাজ করতে পারে। তিনি আরও বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের সর্বস্তরে অপতথ্যের অস্তিত্ব বিরাজ করে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুবই কার্যকর, যখন এর ব্যবহার করা হয়। অপতথ্যের বিস্তৃতির মাধ্যমে যখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার করা হয়, তখন এটি অত্যন্ত নেতিবাচক হয়। এটি সমাজে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে নেতিবাচকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জনগণের ক্ষতি করে। এ ব্যাপারে আমাদেরক সতর্ক থাকতে হবে। অপতথ্য প্রতিরোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আমাদের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের মাধ্যমে এ বিষয়গুলোর সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। আমরা গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করেছি, জীবন উৎসর্গ করেছি এবং একটি দেশ তৈরি করেছি। তিনি বলেন, যখন আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলবো তখন সেটা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে হতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যাতে কোনো গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য অপব্যবহার না হয়। যখনই আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করব, তা যেন গণমাধ্যমের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে হয়, অপব্যবহারের ক্ষেত্রে নয়। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বিস্তৃতির জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন এবং গণমাধ্যমের দ্রুততার সঙ্গে বিকাশ হয়েছে। সরকারের যদি গণমাধ্যম্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে থাকতো তাহলে সরকার গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চাইত না। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকারের একটি উদাহরণ। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার জলবায়ু ও পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে ১০০ বছরের পরিকল্পনা ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তার ২১০০ সালে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী না হলেও, বাংলাদেশ এর অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে, তাই যারা এর বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের সরকার মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই পরিবেশ সুরক্ষা পক্ষে প্রতিবেদন বা সাংবাদিকতা সরকার অবশ্যই স্বাগত জানাবে। কারণ ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী আগামী ১০০ বছরে দীর্ঘমেয়াদে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা, ভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ নিয়ে সরকার কাজ করছে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার আমরা পরিবেশের সুরক্ষা দিতে চাই। যারা এর বাইরে অন্য কিছু করবে তাদের ব্যাপারে সাংবাদিকরা সঠিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে সেটাকে সরকার স্বাগত জানাবে। কারণ এটি পরিবেশের ব্যাপারে সরকারের কেন্দ্রীয় অঙ্গীকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সরকার শুধু উন্নয়নে বিশ্বাস করে না বরং টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করে, যা পরিবেশগত সুরক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে। তিনি বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে মৌলিক সততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যে কোনো ধরনের সমালোচনা সব সময় স্বাগত জানাবে এবং দেশের যে কোনো প্রান্তের প্রতিবেদক বা সাংবাদিককে সুরক্ষা দেবে। সত্য ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে এমনকি সরকারের সমালোচনা করলেও সেটি সরকার প্রশংসা করবে ও স্বাগত জানাবে। প্যানেল আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ও অফিস প্রধান সুজান ভাইজ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক। প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন আর্টিকেল নাইন্টিন-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম। প্যানেল আলোচনার পূর্বে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন করেন দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান শামসুদ্দিন ইলিয়াস এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক উসরাত ফাহমিদা।
০২ মে, ২০২৪
X