মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আপস করা হবে প্রবৃদ্ধিতে
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল লক্ষ্য থাকবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। বড় চ্যালেঞ্জ হবে, গত এক বছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ থেকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। এজন্য আসন্ন বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পদক্ষেপে কিছুটা আপস করা হবে। আর মুদ্রানীতি এবং রাজস্ব নীতির নিয়ন্ত্রিত পদক্ষেপের মাধ্যমে ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতিকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ধরে রাখার চেষ্টা থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, এভাবেই অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল সোমবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেট পদক্ষেপ এবং প্রাথমিক ব্যয়ের একটি খসড়া উপস্থাপন করেন। এ সময় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদষ্টো ড. মসিউর রহমান, অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ অর্থ বিভাগের বাজেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বাজেট আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী খসড়া বাজেটের বিভিন্ন পদক্ষেপ, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ও বরাদ্দের নানা দিক অবহিত হন। উপস্থাপিত এই খসড়াকে আরও যুগোপযোগী ও কল্যাণমুখী করতে প্রধানমন্ত্রী অর্থ বিভাগকে অন্তত দশ দফা নির্দেশনা দেন। চূড়ান্ত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনাসংবলিত সুপারিশের সবকটিই বাজেট পদক্ষেপে অন্তর্ভুক্ত করতে আজ মঙ্গলবার থেকেই কাজ শুরু করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। চলতি মাসের মধ্যেই খসড়া বাজেট চূড়ান্ত করা হবে, যা আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। সূত্র মতে, বাজেটের খসড়া প্রস্তাব অবহিত করে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আরও জানানো হয়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটটি বেশ বড় রকমের ছিল। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটকে সংশোধন করে ৭ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে হয়েছে। এই বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শ হলো বাজেটকে বাস্তবসম্মত করার। তাই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার খুব বেশি বড় করতে চায় না অর্থ বিভাগ। সেটি ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার প্রাথমিক প্রাক্কলন সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত হিসাবে এটি আরও কমতে পারে। তবে বাজেটের আকার যেটাই হোক, ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য চলতি অর্থবছর থেকে ১৫-১৬ শতাংশ বাড়ানোর পদক্ষেপ থাকবে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন ব্যয় কম হবে, পরিচালন বাজেট কমবে না। উচ্চসুদবাহী ঋণ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকবে। সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগ থেকে আসন্ন বাজেটের রূপরেখা জেনে প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন। তবে বাজেটে আরও বেশি কার্যকর করতে এ সময় অর্থ বিভাগের প্রতি প্রধানমন্ত্রী অন্তত ১০ দফা নির্দেশনা রেখেছেন। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে—জনগণের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজেটে প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ, সামাজিক সুরক্ষায় ভাতার বাড়াতে পারলে ভালো, তবে যতটা সম্ভব উপকারভোগীর আওতা বাড়িয়ে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় নিয়ে আসা। এর জন্য বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ যৌক্তিক উপায়ে বাড়ানো। একটি গ্রাম একটি শহরের লক্ষ্য বাস্তবায়নে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান, উৎপাদন বাড়াতে কৃষি ও খাদ্যে ভর্তুকি বৃদ্ধি, অন্যান্য খাতে সেটি যৌক্তিকীকরণ করা। এ ছাড়া সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন হার বাড়াতে মনিটরিং জোরদার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ, কর না বাড়িয়ে কর আদায়ের আওতা বাড়ানো এবং নিয়মিত করদাতাদের হয়রানি বন্ধ, আমদানি-রপ্তানিতে বিশেষ নজর। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং এলক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাত এগিয়ে নিতে বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট বাস্তবায়ন করা। বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামাজিক সুরক্ষা খাতে উপকারভোগীর আওতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কালবেলাকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় আসুক দেশের সব মানুষ। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের চলমান যে সামাজিক সুরক্ষামূলক ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে, তার আওতা বাড়িয়ে বাদ পড়াদের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভাতার পরিমাণ ৫০০ না ১ হাজার সেটি বড় বিষয় নয়। সমাজে বিভিন্ন স্তরে পিছিয়ে থাকা এসব মানুষকে নিয়ে সরকার যে ভাবে, এই অন্তর্ভুক্তি তার একটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তো হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান কালবেলাকে জানান, প্রতি বছর বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগে তার সম্ভাব্য রূপরেখা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। কারণ, বাজেটের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দেওয়া অঙ্গীকার ধারাবাহিকভাবে পূরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সবার। সব নাগরিক যাতে ভালো থাকে, ভালো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পায়, যেভাবে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ে, বাজেটে যাতে তার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকে সেই বিষয়ে অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনাগুলোর প্রতিফলন আগামী বাজেটে থাকবে। এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, বাজেট পদক্ষেপের সম্ভাব্য যে রূপরেখা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবসম্মত। কারণ এই মুহূর্তে প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টার চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্য রাখাই ভালো। বাজেটের আকার ছোট হবে, ঘাটতি কম হবে, রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্য–এগুলো সবই ভালো দিক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোও যুগোপযোগী। শেষ পর্যন্ত বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটলে নিশ্চয়ই আগের চেয়ে ভালো বাজেট হতে পারে। এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ কমিটির বৈঠক থেকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য ব্যয়ের আকার প্রাক্কলন করা হয়। এতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। মোট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ, যা জিডিপি অনুপাতে গত এক দশকে এটিই হবে সবচেয়ে ছোট বাজেট। এ ছাড়া আগামী বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নামিয়ে আনা হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায়। অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ ধরা হচ্ছে ৯৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে লক্ষ্য ধরা হয় ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। তবে উচ্চসুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে সেটি ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধে ব্যয় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি প্রাথমিকভাবে জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। তবে সংশোধিত বাজেট ৭ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণে ঘাটতি কমে জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
১৪ মে, ২০২৪

খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়াল
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার সব চেষ্টার মধ্যেও গত এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। চার মাস পর আবারও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে উঠল। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি গত মাসে কিছুটা কমেছে। সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে।   সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। বিসিএসের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। এর আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তার আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ চার মাস পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার দশ শতাংশ ছাড়াল। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কমেছে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে, আগের মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের ঘরে আনার জন্য ক্রমাগত সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসছে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের কষ্ট বেশি হয়েছে গত মাসে। গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২, যেখানে শহরাঞ্চলের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪৬। গ্রাম ও শহর দুই অঞ্চলেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আবার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর, যা ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সবার চাপ বাড়ায়। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে গেলে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
১৩ মে, ২০২৪

বাংলাদেশে সিন্ডিকেটের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যা প্রয়োজন
মূল্যস্ফীতি কি?  অর্থনীতিবিদরা আগের বছর বা মাসের সঙ্গে অথবা কোন নির্দিষ্ট সময়কালের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করে খাদ্য, কাপড়, পোশাক, বাড়ি, সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বৃদ্ধির যে পার্থক্য যাচাই করেন সেটাই মূল্যস্ফীতি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি দিয়ে যেটা বোঝা যায় তা হলো, কোন একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে পরবর্তী আরেকটি সময়ে দাম কেমন বেড়েছে? যেমন ধরুন একটা জিনিসের দাম ২০২৩ সালে ছিল ৫ টাকা, পরবর্তী বছর তা হয়েছে ৬ টাকা। এভাবে বিভিন্ন জিনিসের মূল্য বৃদ্ধির তথ্য একটি পদ্ধতির মাধ্যমে গড় করে মূল্যস্ফীতি বের করা হয়।''। কয়েকভাবে মূল্যস্ফীতি বের করা হয়।  উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই মূল্য কী ছিল আর এই বছরের ১৫ জুলাই কী মূল্য আছে - এই দুইয়ের শতকরা ব্যবধান। আরেকটি হচ্ছে, এক বছরে জিনিসপত্রের গড় মূল্য আর পরের বছরের ১২ মাসে গড় মূল্যের তুলনা করেও মূল্যস্ফীতি বের করা হয়। মূল্যস্ফীতির কারণ:  মূল্যস্ফীতির কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হল- •    বাংলাদেশের মতো যেসব দেশে আমদানি বেশি করতে হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে এখানেও দাম বাড়বে। •    আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আগের মতো থাকলেও কোন কারণে ডলার যদি অবমূল্যায়িত হয়, তাহলেও দেশে মূল্যস্ফীতি হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির এটাও একটা কারণ। •    আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও পরিবহণ খরচ, উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে সেটার কারণে দেশে উৎপাদিত পণ্যর দাম বাড়ে। আবার যখন একটি পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্যেরও দাম বাড়তে শুরু করে। যেমন তেলের দাম বাড়লে পরিবহণ খরচ বাড়ে, কাঁচামালের দাম বাড়লে পণ্যের দাম বাড়ে। •    কোন পণ্যের চাহিদা বেশি থাকার পরেও প্রাকৃতিক বা অন্য কোন কারণে যোগান কমে গেলে মূল্য বাড়তে পারে। •    দেশে অতিরিক্ত টাকার যোগান তৈরি হলেও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তখন মানুষ বেশি টাকা দিয়ে হলেও পণ্য কিনতে শুরু করে। •    অনেক সময় বাজারে কারসাজির মাধ্যমে পণ্য বা সেবার দাম বেড়ে যায়- একে আমরা সিন্ডিকেটের মূল্যস্ফীতি বলতে পারি । উল্লেখ্য সিন্ডিকেটের মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বাজার অর্থনীতির স্বাভাবিক কৌশল কাজে আসে না।  বাংলাদেশে যেভাবে সিন্ডিকেট করে বাজারে কারসাজি করা হয়:  বিবিসি বাংলা ১২ আগস্ট ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় যার কিছু অংশ নিম্নরূপ –  “এখানে বড়রা সব একজোট। আমরা ছোটোরা এমনকি এই বড়দের কাছ থেকেও আমরা নিজেদের ইচ্ছে মতো পণ্য নিতে পারি না। বরং তারাই আমাদের ঠিক করে দেয় কোন পণ্য আমরা কার কাছ থেকে কত দরে কিনবো। এভাবেই কয়েকজন মিলে সব করায়ত্ত করেছে,” - বলছিলেন চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ী। আমদানির প্রতিটি ধাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেট: বাংলাদেশে চিনি, ডাল, তেলসহ সতেরটি পণ্যকে নিত্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব মূল পণ্যগুলো আলাদা করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এগুলোর মার্কেট শেয়ার বড় কয়েকজন আমদানিকারকদের হাতে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে একটি চক্র জরুরি নিত্যপণ্য আমদানি করা থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে তার একটি ‘ভয়াবহ চিত্র’ পাওয়া গেছে। “বড় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে ব্যবসা ভাগাভাগি করছে বলেই আমরা ছোটোরা রেস থেকে ছিটকে গেছি। তাদের অবাধ্য হয়ে কোনো ব্যবসাই আমরা এখানে করতে পারবো না।" বলছিলেন একজন ব্যবসায়ী। “এখানে সিন্ডিকেটের বাইরে কিছু কল্পনাও করা যায় না,” - বলেন তিনি। এমন কয়েকজন ব্যবসায়ী যে ধারণা দিয়েছেন তা হলো - বড় ভলিউমে পণ্য আমদানি করা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একজোট হয়েছে। এখন মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা ওই বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে নিজের ইচ্ছে মতো পণ্য কিনতে পারেন না।  উদাহরণ স্বরূপ - একজন উদ্যোক্তা ভাবলেন, তিনি একশ কোটি টাকার চিনি বা লবণ কিনবেন। সেজন্য বড় ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে তারাই ঠিক করে দেন যে কোন পণ্য কত দামে কার কাছ থেকে কিনতে হবে। এতে রাজী না হয়ে উদ্যোক্তাটি যদি মনে করেন তিনি ব্রাজিল থেকে একশ কোটি টাকার চিনি আনবেন, সে অনুযায়ী তিনি আমদানি করলেও - বড় গোষ্ঠীরা "তার আমদানি মূল্যের চেয়ে কম দামে বাজারে চিনি ছেড়ে" তাকে লোকসানের মুখে ফেলে দেবে। আবার বড় চক্রের বাইরে থেকে কেউ আমদানি করতে এলসি খুলতে চাইলেও ব্যাংক রাজী হবেনা। এমনকি বাধা আসবে কাস্টমস-ভ্যাটসহ নানা দফতর থেকে। আর ভয়ংকর ব্যাপার হলো, সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে বা তাদের সিগন্যাল ছাড়া কোনো পণ্য আনলে সেগুলো বন্দরে আনার জন্য লাইটার ভেসেল পর্যন্ত পাওয়া যায় না। এমনকি শ্রমিক গোষ্ঠীও এসব পণ্য খালাসে কাজ করতে আগ্রহী হয়না। ফলে অন্যদের আমদানি করা পণ্য কতদিন সাগরে বা জাহাজে পড়ে থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। আবার খালাস হলেও কাস্টমস ও কর বিভাগ ছাড়পত্র দেবে কিনা - তা নিয়েও সংশয় থাকে। “এভাবে প্রতিটি পদে পদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে সিন্ডিকেট। টাকা থাকলেও এদের সাথে কেউ পেরে উঠবে না। এমনকি সরকার একটু দাম নির্ধারণ করে দিলে তারা পণ্য হয়ত জাহাজেই রেখে দেবে কিছুদিন - যাতে সংকটে পড়ে সরকারই চাপ দেয় যে দাম যাই হোক, পণ্য আনুন,” বলছিলেন একজন ব্যবসায়ী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত সিন্ডিকেট বলতে যাদের বোঝানো হয় তারা একদিকে যেমন বড় আমদানিকারক, আবার নানা ভাবে ব্যাংকগুলোর মালিকানা বা ব্যবস্থাপনার কর্তৃত্বেও আছেন তারাই। আবার সাগরের বড় জাহাজ থেকে বন্দরে খালাসের জন্য ব্যবহৃত লাইটার জাহাজগুলোও তাদের কিংবা তাদের সহযোগীদের। ফলে শ্রমিকরাও মালিকদের বাইরে গিয়ে অন্য কারও জন্য কাজ করতে পারেন না বিপদে পড়ার ভয়ে। সব কিছুই এই সিন্ডিকেটের হওয়ায় সরকারের রাজস্ব বিভাগের লোকজনও থাকেন চাপের মুখে। “আপনার যত টাকা থাকুক, এদের বাইরে গিয়ে কেউ পণ্য আনার জন্য কোনো ব্যাংকে এলসি খুলতে পারবেন না। কারণ ব্যাংকও তাদের। হাই কানেক্টেড (উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ) না হলে ব্যাংক কারও এলসি খুলবে না,” বলছিলেন ওই ব্যবসায়ী। আবার কথিত সিন্ডিকেট কোন পণ্য এনে যাদের মাধ্যমে বাজারজাত করবে - সেসব প্রতিষ্ঠানও নামে-বেনামে তাদের পরিবারের লোকজনেরই। এমনকি বড় বড় বাজারগুলোর জন্য এসব পণ্যের ডিলারশিপও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট লোকজনের হাতে। মজুতদারি ও সিন্ডিকেট নিয়ে আইনে যা আছে:  ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মজুদদারি নিষিদ্ধ করে এ অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ২(ঙ) ধারায় মজুদদারির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘মজুদদারি বলতে বোঝায়, কোনও আইন দ্বারা বা আইনের আওতায় কোনও ব্যক্তি মজুদ বা গুদামজাত করার সর্বোচ্চ পরিমাণের বেশি দ্রব্য মজুদ বা সংরক্ষণ করা।’  এ আইনের ২৫ (১) ধারার বিধানে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘কেউ মজুদদারি বা কালোবাজারে লেনদেনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তার আজীবন কারাদণ্ড বা চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যদি প্রমাণ হয় যে, মজুদদার কোনও লাভের জন্য পণ্য মজুদ করেনি, তাহলে ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।’ পরিশেষে বলতে হয়, সিন্ডিকেটকেও মজুতদারির মত ভয়ংকর অপরাধ হিসেবে আইনের মাধ্যমে ঘোষণা করা একান্ত প্রয়োজন, একইসাথে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে আইনের পূর্ণ প্রয়োগ প্রয়োজন। মনিটরিং এর জন্য আধুনিক ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়া ব্যবসায়ীদের বর্তমান স্টক, আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার তারিখ ও বর্তমান অবস্থান বিষয় স্পষ্ট ও ডিজিটাল রিপোর্ট প্রয়োজন।  অন্যদিকে স্থানীয়দের স্টক ব্যবস্থাপনা ও নগদ (ক্যাশ ও ব্যাংক) টাকার পরিমাণ ও কোথায় অবস্থিতি তার উপর ডিজিটাল রিপোর্ট একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় ভালো মানের সফটওয়্যার তৈরি ও সেখানে সবার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এলসির ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারে তথ্যের সঠিক ইনপুট বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এভাবে একটি দক্ষ ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। অন্যদিকে সামাজিক নেতাদের মাধ্যমে মানুষের জীবন ও মৃত্যুর অনিবার্যতা সম্পর্কে ধারণা দেয়া প্রয়োজন এবং মজুতদারি ও সিন্ডিকেটের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন।     মো. মশিউর রহমান: ব্যাংকার
১০ মে, ২০২৪

অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমবে না
বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। আর এই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অন্যতম দায়িত্ব। প্রায় দুই বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক নানামুখী সংকটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব নীতি ও পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার কোনোটাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হচ্ছে না। যদিও বিশ্বের অধিকাংশ দেশই বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। গত জুলাইয়ে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোও কার্যকর হচ্ছে না, যা গত মঙ্গলবার মনিটরি পলিসি কমিটির (এমপিসি) সভায় উঠে এসেছে। তাই ডলারের দর বাড়ানো, নীতি সুদহার বাড়ানো এবং ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন তিন সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এসব পদক্ষেপের কোনোটাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হবে না। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে ডলারের দর এক লাফে ১১০ থেকে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, সেগুলো কার্যকর হবে না। কারণ, ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এটা এখানেই থেমে থাকবে না, আরও বাড়বে। যতদিন পর্যন্ত হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ না হবে। দেশ থেকে পুঁজি পাচারের জন্য এই রেমিট্যান্স যারা কিনছে, তাদের কাছে ডলারের দর কোনো বিষয় নয়। তারা আগের মতোই হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স কিনে নেবে। সেই ডলার পুঁজি পাচারকারীদের বিদেশি অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। পুঁজি পাচারকারী এবং হুন্ডির বিরুদ্ধে যদি সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ডলারের দাম স্থিতিশীল হবে না। আমার মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, সেগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া সুদের হার যেটা বাজারভিত্তিক করা হয়েছে, সেটা যদি ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে সুদের হার আরও বাড়বে। এতে উৎপাদনকারীরা চাপে পড়বে। জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমার মনে হয় না বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন যে নীতিগুলো নিয়েছে, তা কার্যকর হবে। কারণ ডলারের দর বাড়ায় আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। অন্যদিকে সুদের হার বাজারভিত্তিক করায় ঋণের সুদ আরও বাড়বে। এ ছাড়া সরকারও ব্যাংক খাত থেকে আগামী দুই মাসে বেশি ঋণ নেবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা চাপে পড়বে। তাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে; যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, আগে যে নীতিগুলো নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সেগুলো কোনো নীতিই ছিল না। কারণ দীর্ঘদিন সুদহার ৯-৬ এ ধরে রেখে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়িয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিয়েছে। এরপর সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট বা স্মার্ট নামে যেটা চালু করেছে, তাতে সুদহার বাড়ছে। তবে খুব ধীরগতিতে, যা বর্ধিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হচ্ছে না। তাই এখন ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এটা আরও আগেই করার দরকার ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন যে নীতিগুলো নিয়েছে, সেগুলো যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে মূল্যস্ফীতি কমা উচিত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাজারে কোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যদি সেটা করে, তাহলে এসব নীতিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজে আসবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমলেও আমাদের দেশে তা কমেনি। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আসলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এতদিন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সব সময় জোগানের দিকটিই বেশি বিবেচনায় নিয়েছে। এতদিন তারা ভিন্ন দর্শন নিয়ে কাজ করেছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখেনি। ফলে আবার সনাতন পদ্ধতিতেই ফিরতে হয়েছে। তবে পাচারকারীদের কাছে ডলারের দর কোনো বিষয় না। তারা যে কোনো দরেই পাচার করবে। তাই টাকাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থ পাচার ঠেকাতে সরকার যদি কার্যকর ভূমিকা না নেয়, তাহলে এসব নীতি কতটা কার্যকর হবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
১০ মে, ২০২৪

দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ
সাধারণত দেশের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ; কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জরিপের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। বিআইডিএসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস কার্যালয়ে এক বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে সংস্থাটির মহাপরিচালক বিনায়ক সেন এ তথ্য জানান। ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে বিনায়ক সেন বলেন, সম্প্রতি বিআইডিএসের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলার তথ্য নেওয়া হয়েছে। এরপর একটি পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। বাড়তি এ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্নআয়ের মানুষ অসুবিধায় রয়েছে। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিআইডিএসের মহাপরিচালক জানান, তাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাছের দাম। গত এক বছরে মাছের দাম ২০ শতাংশের ওপর বেড়েছে। এরপর রয়েছে পোলট্রি মুরগির দাম। দেশের পোলট্রি খাদ্যের বড় অংশই আমদানিনির্ভর। গত দুই বছরে আমদানি করা এসব খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে, যা শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। বিনায়ক সেন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সুদহার বাড়ানো বা এ রকম পৃথক পদক্ষেপ নিলে হবে না। এর সঙ্গে শুল্ক কমানোসহ সমন্বিতভাবে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। পোলট্রি খাদ্যে শুল্ক কমানো প্রয়োজন। এটি কমানো হলে তা মাছ ও মুরগির মতো পণ্যের দাম কমাতে সহায়ক হবে। এতে মূল্যস্ফীতিও কমবে। এ খাতে শুল্ক কমিয়ে অন্য খাত থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।
১০ মে, ২০২৪

বন্ডের বিপরীতে টাকা ছাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়ে না
বিদ্যুৎ ও সারের বকেয়া পরিশোধে সরকার ২৬ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যুতের বকেয়ার জন্য ১৭ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। এই বন্ড বাণিজ্যিক ব্যাংক হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যাচ্ছে। সেসব বন্ডের বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও বন্ডের মাধ্যমে বাজারে টাকা ছাড়লে মূল্যস্ফীতি বাড়বে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। গতকাল রোববার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়নের পথ অনুসন্ধান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারের সাবেক অর্থসচিব মুসলিম চৌধুরীর করা এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর এ কথা বলেন। মুসলিম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন হচ্ছে। অথচ, সরকার বিদ্যুৎ ও সারের বকেয়া পরিশোধে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেছে। সেসব বন্ড দিয়ে ব্যাংকগুলো এসএলআর সংরক্ষণ করছে। দেশের মানি মাল্টিপ্লেয়ার যদি বর্তমানে ৫ হয় তাহলে অর্থনীতিতে এটা ১ লাখ কোটি টাকার হিট করবে। বাড়বে মূল্যস্ফীতি। আর এতে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি দুটোই ব্যর্থ হবে। এর জবাবে গভর্নর বলেন, আমরা সরকারি বন্ড সরাসরি ক্রয় করে বাজারে টাকা ছাড়ছি না। ব্যাংকগুলো সরকারের বন্ড ক্রয় করে ওই বন্ডের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। ব্যাংকগুলোর টাকার সংকট হওয়ায় আমরা তাদের ধার দিচ্ছি। সরকারের ইস্যু করা এসব বন্ডের বিপরীতের বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়লেও মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাব পড়বে না। সুতরাং অর্থনীতিতে ১ লাখ কোটি টাকার হিট করার সুযোগ নেই। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবীর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. এম তারেক।
০৬ মে, ২০২৪

মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাগে রাখা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতি
উন্নত দেশগুলোর হানাহানির দায় চোকাচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণে দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এবং মূল্যস্ফীতি চড়েছে। তবে সরকারের নানা উদ্যোগে দেশে কৃষক ও উৎপাদক পর্যায়ে জিনিসপত্রের দাম কমে এসেছে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে এখনো মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গত বুধবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠক শেষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে আইএমএফ যে পূর্বাভাস দিয়েছে—এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশ। উই আর কামিং ব্যাক অন ট্র্যাক। আমাদের করণীয়গুলো কার্যকর করা যাচ্ছে। এগুলো ধীরে ধীরে রেসপন্স করবে, রাতারাতি নয়। এর জন্য কিছুটা সময় লাগছে। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রশ্নে তিনি বলেন, এক সঙ্গে দুই লক্ষ্য অর্জন হয় না। এদিকে, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে ধনী দেশগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, গরিব দেশগুলোর দুরাবস্থার জন্য ধনী দেশগুলো দায়ী। সে কারণেই জি২০ ভুক্ত উন্নত দেশকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিষয় এবারও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে। আলোচকরা বলছেন, পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে কেবল সরকার নয় বেসরকারি উদ্যোগেও জলবায়ু তহবিল গঠন করতে হবে। বৈঠকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার ডুফলো বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণতার অন্যতম শিকার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত গরম এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বন্যা দেশটিতে লেগেই আছে। অপরাধ না করেও জলবায়ু পরিবর্তনের সাজা বাংলাদেশ পাচ্ছে।
১৯ এপ্রিল, ২০২৪

রমজানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ
রমজানে মাসে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে লাগাম ছাড়িয়েছিল। যার প্রভাব পড়েছে মাস শেষের মূল্যস্ফীতিতে। মার্চ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৬৭। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত মার্চ মাসের ভোক্তা মূল্য সূচকে এ তথ্য জানা গেছে। মার্চে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮১ শতাংশের অর্থ হলো- ২০২৩ সালের মার্চে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, এ বছরের মার্চে তা ১০৯ টাকা ৮১ পয়সায় কিনতে হয়েছে। বিবিএসের তথ্য বলছে, মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। মার্চে এসব পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৩। বিবিএসের মার্চের তথ্য বলছে, রমজান মাসে গ্রামের তুলনায় শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি। গ্রামে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৮, যেখানে শহরের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শহরে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৮, গ্রামে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে তিন কারণে বাংলাদেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য, বাংলাদেশে এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। চলতি অর্থবছরও এ উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকবে। এ মূল্যস্ফীতি বাড়ার পেছনে তিনটি মূল কারণ থাকতে পারে বলে মনে করে তারা।  এ তিনটি কারণ হলো- ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, বিদেশি মুদ্রার সংকটের কারণে আমদানি সংকোচন ও জ্বালানি সংকট বহাল থাকবে, যার কারণে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির রাশ আরও টেনে ধরা দরকার বলেও সংস্থাটি অভিমত দিয়েছে।
০৯ এপ্রিল, ২০২৪

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি কাজে আসছে না
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি কাজে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান নিয়ে আমরা উভয় সংকটে আছি। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। এজন্য সংকোচননীতিতে হাঁটতে হচ্ছে আমাদের। তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৮ শতাংশ জনগণ কর্মসংস্থানহীনতায় ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে মুদ্রা সরবরাহ কমালে কর্মসংস্থান আরও কমবে। এতে কর্মসংস্থান নিয়ে আমাদের বড় ধরনের বিপদে পড়তে হবে। আবার মুদ্রা সরবরাহ বাড়ালে বা টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ এর বেশি হলেই গরিব মানুষ বিপদে পড়ে। অথচ এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক গভর্নর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে তাদের আর্থিকভাবে চরম বিপদে পড়তে হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতি গত মাসে কিছুটা কমেছে। অথচ এটা নিয়ে আমরা উল্লাস শুরু করেছি। কিন্তু এটা হওয়ার কথা নয়। আমাদের মূল্যস্ফীতি আরও অনেক কমিয়ে আনতে হবে। ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা একটা ভাঁওতাবাজি। বাংলাদেশের মতো দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার কোনো সুযোগ নেই। এ দেশে দ্রব্যমূল্য এবং আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে হলে অবশ্যই সব কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে চাহিদা ও জোগানের সমন্বয় রেখেই এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। সরকারের শস্য সংগ্রহ অভিযান প্রায় ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, কিছু মিল মালিক এবং অল্পসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা মিলে এ অভিযানকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে সরকারি কর্মকর্তারা কৃষকের থেকে কম দামে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করছে। এতে তারা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানো হলে ভোক্তারা উপকৃত হয়। অথচ এ দেশে শুল্ক কমানোর পরও দ্রব্যের মূল্য কমে না। অর্থাৎ শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোগ করে সেই অসাধু ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীরাই। কারেন্সি সোয়াপের প্রক্রিয়াটা ভুল বলে মনে করেন সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন। কারণ ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, তা অটোমেটিকভাবে রিজার্ভে যুক্ত হয়। কিন্তু সোয়াপ করার জন্য ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ডলার পাচ্ছে কোথায়? তাহলে কি তারা মানি লন্ডারিং করছে? আর বাংলাদেশ ব্যাংক কি তাদের সহযোগিতা করছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, এখন আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স সারপ্লাস। ব্যাংকগুলোর হাতে চার বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার হোল্ডিং রয়েছে। এসব ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রেখে তারা তারল্য সহযোগিতা নিতে পারছে। আবার তাদের প্রয়োজন হলে এখান থেকে ডলার নিয়ে যেতে পারবে তারা। এতে করে বাজারের তারল্য সমস্যা সহজ সমাধান পাওয়া যাবে।
০৮ মার্চ, ২০২৪

ফেব্রুয়ারিতে সামান্য কমেছে মূল্যস্ফীতি
ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। ফলে কিছুটা কমেছে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার। গত মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি জানুয়ারি থেকে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে মূল্যস্ফীতির এ হালনাগাদ তথ্য জানা গেছে। মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশের অর্থ হলো—২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে পণ্যের দাম ১০০ টাকা ছিল, সেটিই ২০২৪ সালের একই সময়ে কিনতে হয়েছে ১০৯ টাকা ৬৭ পয়সায়। ফেব্রুয়ারিতে দেশের খাদ্যের গড় মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ, জানুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
০৭ মার্চ, ২০২৪
X